হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৬

রাবেয়া রেগে গিয়ে বলত, মারব থাপ্পড়বাবাকে জোকার বলছে! দেখছ বাবামেয়ের কেমন ফিচলে বুদ্ধি হয়েছে

 বাবা বলতেন, ঝুনুর আমার এই এতটা বুদ্ধিযাও তাে রুনুঝুনু, একটু নাচ দেখাও

শঙ্খনীল কারাগার  কিটকির কাছে শেখা আনাড়ি নাচ নাচত দুজনেমা মুখে মুখে তবলার বােল দিতেনবাবা বলতেন, বাহা রে বেটি, বাহাকী সুন্দর শিখেছে, বাহ্ বাহ! এবার মন্টু সােনা, একটি গান গাও। 

বলার অপেক্ষামাত্রমন্টু যেন তৈরি হয়েই ছিল, সঙ্গে সঙ্গে শুরু– 

কাবেরী নদীজলে.শুধু এই গানটির সে ছয় লাইন জানে! ছয় লাইন শেষ হওয়ামাত্র বাবা বলতেন, ঘুরেফিরে ঘুরেফিরে!‘ 

মন্টু ঘুরেফিরে একই কলি বার বার গাইতভালাে গানের গলা ছিলছেলেমানুষ হিসেবে গলা অবশ্যি মােটা, চড়ায় উঠতে পারত না, তবে চমৎকার সুরজ্ঞান ছিল| মাঝামাঝি সময়ে দেখা যেত রাবেয়া এক ফাঁকে চা বানিয়ে এনেছেবিশেষ উপলক্ষ বলেই রুনুঝুনুমন্টু আধ কাপ করে চা পেত সেদিনসুখের সময়গুলি 

খুব ছােট বলেই অসম্ভব আকর্ষণীয় ছিলফুরিয়ে যেত সহজেই, কিন্তু সৌরভ থাকত অনেক নেদিন। 

 ভাবতে ভাবতে রাত বেড়ে গেলমানুষের চিন্তা যতই অসংলগ্ন মনে হােক, কিন্তু তলিয়ে দেখলে সমস্ত কিছুতেই বেশ একটা ভালাে মিল দেখা যায়বৃষ্টির রাতে গল্প বলা থেকে ভাবতে ভাবতে কোথায় চলে এসেছিবৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণচারদিকে ভিজে আবহাওয়া, ঠাণ্ডা বাতাস বইছেবিদ্যুৎচমকানিতে ক্ষণিকের জন্য নীলাভ আলাে ছড়িয়ে পড়ছেগলা পর্যন্ত চাদর টেনে ঘুমিয়ে পড়লাম। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৬

মা গাে, এত ঘুমুতেও পারেন

কিটকি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে সামনেকাল সারা রাত ঘুমান নি, না

দেরিতে ঘুমিয়েছিতুই যে এত সকালে? শাড়ি পরেছিস, চিনতে পারছি না মােটেইরীতিমতাে ভদ্রমহিলা। 

আগে কী ছিলাম? ভদ্রলোেক

না, ছিলি ভদ্রবালিকাবেশ লম্বা দেখাচ্ছে শাড়িতে, কত লম্বা তুই? পাঁট ফুট এক ইঞ্চিবস, মুখ ধুয়ে আসিকলঘরে যাওয়ার পথে রাবেয়ার সঙ্গে দেখা, চায়ের ট্রে নিয়ে যাচ্ছে ভেতরে। 

খােকা, কিটকি বেচারি কখন থেকে বসে আছে, ঘুম ভাঙে না তােররাতে কি চুরি করতে গিয়েছিলি

হাতমুখ ধুয়ে এসে বসলাম কিটকির সামনেসবুজ রঙের শাড়ি পরেছেঠোঁটে হালকা করে লিপিষ্টিক, কপালে জ্বলজ্বল করছে নীল রঙের টিপকিটকি বলল, বলুন তাে, কী জন্যে এই সাতসকালে এসেছি

কোনাে খবর আছে বােধ হয়

বলুন না, কী খবর? দল বেঁধে পিকনিকে যাবি, তাই না? কিছুটা ঠিকআমরা ম্যানিলা যাচ্ছি। 

কোথায় যাচ্ছিস?‘ 

ম্যানিলাপাঁচ বৎসরের চুক্তিতে আৱা যাচ্ছেন এই ডিসেম্বরেকী যে ভালাে লাগছে আমার

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৬

 খুশিতে ঝলমল করে উঠল কিটকিবুকে ধক করে একটা ধাক্কা লাগল আমার খুব খুশি লাগছে তাের

হ্যাঁ, খুবআমাদের জন্যে খারাপ লাগবে না? লাগবে না কেন, খুব লাগবেআমি চিঠি লিখব সবাইকেকিটকি, দেখি তাের হাতহাত কি দেখবেন ? ইতস্তত করে হাত বাড়িয়ে দেয় কিটকিলাল টুকটুকে এতটুকু ছােট্ট হাত। 

হাত দেখতে জানেন আপনি? এত দিন বলেন নি তাে? ভালাে করে দেখবেন কিন্তুসব বলতে হবে। 

কিটকির নরম কোমল হাতে হাত রেখে আমি আশ্চর্য যাতনায় ছটফট করতে থাকি। 

কী দেখলেন বলুন? বলুন না। 

এমনি, আমি হাত দেখতে জানি নাতবে যে দেখলেন?কি জন্যে দেখলাম, বুঝতে পারিস নি? তুই তাে ভারি বােকাকিটকি হাসিমুখে বলল, বুঝতে পারছিকী বুঝতে পারলি? বুঝতে পারছি যে, আপনিও বেশ বােকা। 

কিটকিরা ডিসেম্বরেতারিখে চলে গেলএ্যারােড্রামে অনেক লােক হয়েছিলরাবেয়াকে নিয়ে আমিও গিয়েছিলাম

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৭

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *