হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৭

সেখানেকিটকির যে এত বন্ধু আছে, তা 

জানতাম নাহেসে হেসে সবার সঙ্গেই সে কথা বললকিটকিকে মনে হচ্ছিল একটি সবুজ পরীসবুজ শাড়ি, সবুজ জুতাে, সবুজ ফিতেএমন কি কাঁধের মস্ত ব্যাগটাও সবুজ

শঙ্খনীল কারাগার 

রাবেয়াকে বললাম, কিটকিকে কী সুন্দর মানিয়েছে, দেখেছিস? তুই এমন মিল করে সাজ করিস না কেন

সাজ দেখে যদি তাের মতাে কোনাে পুরুষহৃদয় ভেঙে যায়, সেই ভয়েখালা লাউঞ্জের এক কোণায় বসে ছিলেনইশারায় কাছে ডাকলেনচললাম রে তােদের ছেড়েফিরবেন কবে

কে জানে কবে! কর্তার মর্জি হলেই ফিরবপাঁচ বছরের মেয়াদকিরে রাবেয়া, হাসছিস কী দেখে

রাবেয়া হাত তুলে দেখাল, এক মেমসাহেব তার বাচ্চা ছেলেটিকে নিয়ে বিষম বিব্রত হয়ে পড়েছেনবাচ্চাটা দমাদম ঘুষি মারছে মাকেকিছুতেই শান্ত করান যাচ্ছে না। 

সবাই হাসিমুখে দেখছে নাপাবললেন, তুই (। বড়ো ছেলেমানুষ রাবেয়াবয়স কত হল তোর? অামি | অন সেভেনে পড়ি, তখন তাের জন্ম হলতার মানেসে কিতোর যে ত্রিশ পেরিয়েছেকী ব্যাপার? বুড়ি হয়ে গেলি যে, বিয়ে এখনাে হল না? কি মুশকিল‘ 

রাবেয়া সুন্তিত হয়ে তাকিয়ে রইলআমি চোখ তুলে রাবেয়ার দিকে তাকাতে পারছিলাম নাএমন অবিবেচকের মতাে কথা বুঝি শুধু মেয়েদের পক্ষেই বলা সম্ভবরাবেয়ার চোখ চকচক্ করছে, কে জানে কেঁদে ফেলবে কিনাআমি হাত ধরলাম রাবেয়ার। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৭

আমরা যাই খালা, খালুজান কোথায়? বুকিংকী যেন আলাপ করছেনতাঁকে সালাম দিয়ে দেবেনখােদা হাফেজ। 

কিটকির সঙ্গে গেটে দেখা, তার এক বান্ধবীর সঙ্গে হাে হাে করে হাসছিল, যাই কিটকি। 

সে কি? প্লেন ছাড়তে এখনাে চল্লিশ মিনিটনা রেএকটু সকাল সকাল যেতে হবে, কাজ আছেরাবেয়া আপা এমন মুখ কালাে করে রেখেছেন কেন?রাবেয়া থতমত খেয়ে বলল, তুই চলে যাচ্ছিস, তাইচিঠি দিবি তাে

রাবেয়া আমার বছরের বড়ােবছর একত্রিশে পড়েছেঅথচ কি বাচ্চা মেয়ের মতাে হাত ধরে আসছে আমার পিছে পিছেমাথায় আবার মস্ত ঘােমটাও দিয়েছেরিক্সায় উঠে জড়সড় হয়ে বসে রইল সে। 

রাবেয়া, চুপ করে আছিস যে? | তুই নিজেও তাে চুপ করে আছিস। 

তুই মুখ কালাে করে রাখলে বড়াে খারাপ লাগেতুই কি মনে কষ্ট পেয়েছিস

রাবেয়া ফিসফিস করে বলল, ‘আমি কখনাে কারাে কথায় কষ্ট পাই নাআজ খালার কথা শুনে বড়াে খারাপ লাগছে‘ 

নির্জন রাস্তায় রিক্সা দ্রুত চলছেরিক্সার দুলুনিতে রাবেয়াটা কাঁপছে অল্প অল্পমাথায় গন্ধ তেল দিয়েছে বুঝি, তার মৃদু সুবাস পাচ্ছিরাস্তায় কী ধুলাে! রাবেয়ার বাঁ হাত অবসন্নভাবে পড়ে আছে আমার কোলে। 

খালার কথা এখনাে মনে গেঁথে রেখেছিস, খালার কি মাথার ঠিক আছে?না, তা নয়যাই হােকবাদ দে, অন্য কথা বল। 

কী কথা?কিটকির জন্য তাের খারাপ লাগছে

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৭

তা লাগছেযতটা ভাবছিস ততটা নয় রাবেয়া অল্প হেসে চুপ করলতার যে এতটা বয়স হয়েছে, মনেই হয় নাতাে সেদিন যেন কারা দেখতে এলবুড়াে ভদ্রলােক মাথা দুলিয়ে বললেন, মেয়ে আপনার ভালাে, লক্ষ্মী মেয়ে, দেখেই বুঝেছিবয়সও বেশি নয়, তবে কিনা আজকালকার আধুনিক ছেলে, তাদের কাছে রূপ মানেই হলাে ধবধবে ফর্সাবলেই ভদ্রলােক হায়নার মতাে হে হে করে হাসতে লাগলেন। 

গান জান মা?কোনাে বাজনা? এই ধর গিটারফিটার? আজকাল আবার এসবের খুব কদর। 

জ্বি না, জানি নাএবার বরের এক বন্ধু এগিয়ে এলেনআপনি কি মডার্ণ লিটারেচার কিছু পড়েছেন? না, পড়ি নিইবসেনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? জ্বি না, শুনি নি। 

বিয়ে ভেঙে গেলআরাে একবার সব কিছু ঠিকঠাকছেলেটিও ভালাে, অথচ রাবেয়াই বেঁকে বসল। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৭

ছেলে বিয়ে করব নাকেন বল তাে? ছেলে দেখে পছন্দ হচ্ছে না? নানা, পছন্দ হবে না কেন, বেশ ভালাে ছেলে। 

তবেবেতন কম পাচ্ছে বলে ? ছিঃ, সেজন্যে কেন হবে? আর বেতন কমইবা কি? ঠিক করে বল তাে, অন্য কোনাে ছেলেকে ভালাে লাগে ? গাধা! সিনেমা দেখে দেখে তাের মাথা খারাপ হয়ে গেছেকী জন্যে বিয়ে করবি না, বলছেলেটা বড় বাচ্চাবয়সে ওর দেড় গুণ বড়াে আমিআমার ভীষণ লজ্জা করছেতাছাড়া একটা কথা তােকে বলি খােকা

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৮ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *