সেখানে। কিটকির যে এত বন্ধু আছে, তা
জানতাম না। হেসে হেসে সবার সঙ্গেই সে কথা বলল। কিটকিকে মনে হচ্ছিল একটি সবুজ পরী। সবুজ শাড়ি, সবুজ জুতাে, সবুজ ফিতে–এমন কি কাঁধের মস্ত ব্যাগটাও সবুজ।।
রাবেয়াকে বললাম, ‘কিটকিকে কী সুন্দর মানিয়েছে, দেখেছিস? তুই এমন মিল করে সাজ করিস না কেন?
‘সাজ দেখে যদি তাের মতাে কোনাে পুরুষ–হৃদয় ভেঙে যায়, সেই ভয়ে। খালা লাউঞ্জের এক কোণায় বসে ছিলেন। ইশারায় কাছে ডাকলেন। ‘চললাম রে তােদের ছেড়ে। ‘ফিরবেন কবে?
কে জানে কবে! কর্তার মর্জি হলেই ফিরব। পাঁচ বছরের মেয়াদ। কিরে রাবেয়া, হাসছিস কী দেখে?
রাবেয়া হাত তুলে দেখাল, এক মেমসাহেব তার বাচ্চা ছেলেটিকে নিয়ে বিষম বিব্রত হয়ে পড়েছেন। বাচ্চাটা দমাদম ঘুষি মারছে মাকে। কিছুতেই শান্ত করান যাচ্ছে না।
সবাই হাসিমুখে দেখছে নাপা। বললেন, ‘তুই (৩। বড়ো ছেলেমানুষ রাবেয়া। বয়স কত হল তোর? অামি | অন সেভেনে পড়ি, তখন তাের জন্ম হল। তার মানে––সে কি। তোর যে ত্রিশ পেরিয়েছে। কী ব্যাপার? বুড়ি হয়ে গেলি যে, বিয়ে এখনাে হল না? কি মুশকিল।‘
রাবেয়া সুন্তিত হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি চোখ তুলে রাবেয়ার দিকে তাকাতে পারছিলাম না। এমন অবিবেচকের মতাে কথা বুঝি শুধু মেয়েদের পক্ষেই বলা সম্ভব। রাবেয়ার চোখ চকচক্ করছে, কে জানে কেঁদে ফেলবে কিনা। আমি হাত ধরলাম রাবেয়ার।
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৭
‘আমরা যাই খালা, খালুজান কোথায়? ‘বুকিং–এ কী যেন আলাপ করছেন। ‘তাঁকে সালাম দিয়ে দেবেন। খােদা হাফেজ।
কিটকির সঙ্গে গেটে দেখা, তার এক বান্ধবীর সঙ্গে হাে হাে করে হাসছিল, ‘যাই কিটকি।
সে কি? প্লেন ছাড়তে এখনাে চল্লিশ মিনিট। “না রে––একটু সকাল সকাল যেতে হবে, কাজ আছে।‘ রাবেয়া আপা এমন মুখ কালাে করে রেখেছেন কেন?‘ রাবেয়া থতমত খেয়ে বলল, ‘তুই চলে যাচ্ছিস, তাই। চিঠি দিবি তাে?
রাবেয়া আমার ছ’ বছরের বড়াে। এ বছর একত্রিশে পড়েছে। অথচ কি বাচ্চা মেয়ের মতাে হাত ধরে আসছে আমার পিছে পিছে। মাথায় আবার মস্ত ঘােমটাও দিয়েছে। রিক্সায় উঠে জড়সড় হয়ে বসে রইল সে।
‘রাবেয়া, চুপ করে আছিস যে? | ‘তুই নিজেও তাে চুপ করে আছিস।
‘তুই মুখ কালাে করে রাখলে বড়াে খারাপ লাগে। তুই কি মনে কষ্ট পেয়েছিস?
রাবেয়া ফিসফিস করে বলল, ‘আমি কখনাে কারাে কথায় কষ্ট পাই না। আজ খালার কথা শুনে বড়াে খারাপ লাগছে।‘
নির্জন রাস্তায় রিক্সা দ্রুত চলছে। রিক্সার দুলুনিতে রাবেয়াটা কাঁপছে অল্প অল্প। মাথায় গন্ধ তেল দিয়েছে বুঝি, তার মৃদু সুবাস পাচ্ছি। রাস্তায় কী ধুলাে! রাবেয়ার বাঁ হাত অবসন্নভাবে পড়ে আছে আমার কোলে।
‘খালার কথা এখনাে মনে গেঁথে রেখেছিস, খালার কি মাথার ঠিক আছে?” ‘না, তা নয়। যাই হােক––বাদ দে, অন্য কথা বল।
কী কথা?‘ ‘কিটকির জন্য তাের খারাপ লাগছে?
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৭
‘তা লাগছে। যতটা ভাবছিস ততটা নয়।‘ রাবেয়া অল্প হেসে চুপ করল। তার যে এতটা বয়স হয়েছে, মনেই হয় না। এ তাে সেদিন যেন কারা দেখতে এল। বুড়াে ভদ্রলােক মাথা দুলিয়ে বললেন, ‘মেয়ে আপনার ভালাে, লক্ষ্মী মেয়ে, দেখেই বুঝেছি। বয়সও বেশি নয়, তবে কিনা আজকালকার আধুনিক ছেলে, তাদের কাছে রূপ মানেই হলাে ধবধবে ফর্সা।‘ বলেই ভদ্রলােক হায়নার মতাে হে হে করে হাসতে লাগলেন।
‘গান জান মা?‘ কোনাে বাজনা? এই ধর গিটার–ফিটার? আজকাল আবার এসবের খুব কদর।
জ্বি না, জানি না।‘ এবার বরের এক বন্ধু এগিয়ে এলেন। ‘আপনি কি মডার্ণ লিটারেচার কিছু পড়েছেন? “না, পড়ি নি। ‘ইবসেনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? ‘জ্বি না, শুনি নি।
বিয়ে ভেঙে গেল। আরাে একবার সব কিছু ঠিকঠাক। ছেলেটিও ভালাে, অথচ রাবেয়াই বেঁকে বসল।
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৭
ও ছেলে বিয়ে করব না। ‘কেন বল তাে? ছেলে দেখে পছন্দ হচ্ছে না? ‘না–না, পছন্দ হবে না কেন, বেশ ভালাে ছেলে।
তবে। বেতন কম পাচ্ছে বলে ? ‘ছিঃ, সে–জন্যে কেন হবে? আর বেতন কমই–বা কি? ‘ঠিক করে বল তাে, অন্য কোনাে ছেলেকে ভালাে লাগে ? ‘গাধা! সিনেমা দেখে দেখে তাের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ‘কী জন্যে বিয়ে করবি না, বল।‘ ‘ছেলেটা বড় বাচ্চা। বয়সে ওর দেড় গুণ বড়াে আমি। আমার ভীষণ লজ্জা করছে। তাছাড়া একটা কথা তােকে বলি খােকা––
Read More