হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৮

বল| বিয়েটিয়ে করতে আমার একটুও ইচ্ছে হয় নাওটা একটা বাজে ব্যাপারঅজানাঅচেনা একটা ছেলের সঙ্গে শুয়ে থাকা, ছিঃ। 

রিক্সা দ্রুত চলছেরাবেয়া চুপ করে বসেরােদের লালচে আঁচে রাবেয়ার মুখটাও লালচে হয়ে উঠেছেকী ভাবছে সে কে বলবে। 

রুনু টেবিলল্যাম্প জ্বালিয়ে কী যেন একটা লিখছিলআমাকে দেখেই হকচকিয়ে উঠে দাঁড়াললেখা কাগজটা সন্তর্পণে আড়াল করে বলল, কি দাদা

শঙ্খনীল কারাগার

কোথায় কি ? কী করছিলি?‘ 

রুনু টেনে টেনে বলল, অঙ্ক করছিলামবলতে গিয়ে যেন কথা বেধে গেল মুখেএকটু বিস্মিত হয়েই বেরিয়ে এলামরুনু কি কাউকে ভালােবাসার কথালিখছে? বিচিত্র কিছু নয়ওর যা স্বভাব, অকারণেই একেওকে চিঠি লিখে

ফেলতে বাধবে নারুনুঝুনু দু’ জনেই মস্ত বড়াে হয়েছেআগের চেহারার কিছুই অবশিষ্ট নেইস্বভাবও বদলেছে কিছুটাদুজনেই অকাতরে হাসেসারা দিন ধরেই হাসির শব্দ শুনিকিছুনাকিছু নিয়ে খিলখিল লেগেই আছে। 

 মাগাে, ঝুনুকে এই শাড়িতে কাজের বেটির মতাে লাগছে! হি হি হি!’ 

রুনু, দেখ দেখ, রাবেয়া আপা কী করছে, হি হি হি। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৮

আপা শােন, আজ সকালে কি হয়েছে, আমিহি হি হি, রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিহি হি হি 

আবার অতি সামান্য ব্যাপার নিয়ে ঝগড়ামুখ দেখাদেখি বন্ধকিছুক্ষণের ভেতর আবার মিটমাটলুকিয়ে লুকিয়ে ম্যাটিনিতে সিনেমা দেখাসাজগােজের দিকে প্রচণ্ড নজরসব মিলিয়ে বেশ একটা দ্রুত পরিবর্তনআগের যে রুনুঝুনুকে চিনতাম, এরা যেন সেই রুনুঝুনু নয়বিশেষ করে সেই গােপন চিঠিলেখার 

ভঙ্গিটা খট করে চোখে লাগে। 

রাবেয়া মােড়ায় বসে সােয়েটার সেলাই করছিলতাকে বললাম, আচ্ছা, কোনাে ছেলের সঙ্গে কি রুনুর চেনাজানা হয়েছে নাকি?‘ 

রাবেয়া কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, কিটকির কথা রাত দিন ভেবে ভেবে তাের এমন হয়েছেকিটকির চিঠি পাস নি নাকি?” 

না, আমার কেমন যেন সন্দেহ হলশরীফ সাহেবের ছেলেটা দেখি প্রায়ই আসে, মনসুর বােধ হয় নাম। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৮

 আসে আসুক নাযখন ন্যাংটা থাকত, তখন থেকে বাড়িতে এসে খেলেছে রুনুঝুনুর সঙ্গে। 

যখন খেলেছে তখন খেলেছেএখন রুনুঝুনুও বড়াে হয়েছে, নিজেও বড়াে হয়েছে‘ 

কি বাজে ব্যাপার নিয়ে ফ্যাচ ফ্যাচ করছিস! বেশ তাে, যদি ভালােবাসাবাসি হয়, বিয়ে হবেমনসুর চমৎকার ছেলেইঞ্জিনীয়ারিং পাশ করে কোথায় যেন চাকরিও পেয়েছে। 

এক কথায় সমস্যার সমাধান করে রাবেয়া সেলাইমন দিল। 

মটারও ভীষণ পরিবর্তন হয়েছেমস্ত জোয়ানপড়াশােনায় তেমন মন নেইপ্রায়ই অনেক রাতে বাড়ি ফেরেকি এক কায়দা বের করেছে, বাইরে থেকেই টুকুস করে বন্ধ দরজা খুলে ফেলে। 

পত্রিকায় নাকি মাঝে মাঝে তার কবিতা ছাপা হয়যেদিন ছাপা হয়, সেদিন লজ্জায় মুখ তুলে তাকায় নাযেন মস্ত অপরাধ করে ফেলেছে এমন হাবভাবচমৎকার গানের গলা হয়েছেগানের মাষ্টার রেখে শেখালে হয়তাে ভালাে গাইয়েমাঝে মাঝে আপন মনে গায়কোনাে কোনাে দিন নিজেই অনুরােধ করি

মন্টু একটা গান কর তাে৷‘ 

কোনটা? চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছেরবীন্দ্রসংগীত না, একটা আধুনিক গাই, শােনবাতি নিবিয়ে দে, অন্ধকারে গান জমবে। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৮

বাতি নিবিয়ে গান গাওয়া হয়এবং গানের গলা শুনলেই বাবা টুকটুক করে হাজির। বাবার শরীর ভীষণ দুর্বল হয়েছেহাঁপানি, বাতসব একসঙ্গে চেপে ধরেছেবিকেলবেলায় একটু হাঁটেন, বাকি সময় বসে বসে কাটেরাবেয়া রাত আটটা বাজতেই গরম তেল এনে বুকে মালিশ করে দেয়তখন বাবা বিড়বিড় করে আপন মনে কথা বলেনরাবেয়া বলে, একা একা কী বলছেন বাবা? 

না মা, কিছু বলছি না, কী আর বলবএকটু আরাম হয়েছে

হবে না কেন মা? তাের মতাে মেয়ে যার আছে, তার হাজার দুঃখকষ্ট থাকলেও কিছু হয় নালক্ষ্মী মা আমারআমার সােনার মা। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৯

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *