হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৯

আহ্ বাবা, কি বলেন, লজ্জা লাগেতাহলে থাকমনে মনে তাের গুণ গাইবাবা চুপ করেন‘ 

সবচেয়ে ছােট যে নিনু সেও দেখতে দেখতে বড়াে হয়ে গেলমার চেয়েও রূপসী হয়েছে সেপাতলা ঠোট, একটু থ্যাবড়া নাক, বড়াে বড়াে ভাসা চোখ সব সময় ছলছল করছেতাে সেদিন হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াতবলে আপন মনে গান করত, আর আজ একা একা স্কুলে যায়সাবলীল গর্বিত হাঁটার ভঙ্গিএকটু পাগলাটে হয়েছে সেস্কুল থেকে ফিরে এসেই বইখাতা ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে, তারপর জাপটে ধরে রাবেয়াকে। 

শঙ্খনীল কারাগার

ছাড় ছাড়, কি করিস? ছাড়না, ছাড়ব নাকী বাজে অভ্যেস হয়েছে তাের! হােক‘ 

হাতমুখ ধুয়ে চা খাপরে খাব, এখন তােমাকে ধরে রাখব। 

বেশ থাক ধরেরাবেয়া আপাকি? কোলে নাওএত বড়াে মেয়ে, কোলে নেব কি রে বোেকা! নানা, নিতেই হবে। 

তারপর দেখি নিনু রাবেয়ার কোলে উঠে লাজুক হাসি হাসছেআমার সঙ্গেও বেশ ভাব হয়েছে তাররাতের খাওয়াদাওয়া হয়ে গেলে আমার বিছানায় উঠে এসে বালিশ নিয়ে কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে। 

কি হচ্ছে রে নিনু? যুদ্ধযুদ্ধ খেলছিদাদাকি?গল্প বলবে কখন? আরাে পরে, এখন পড়াশােনা করনা, আমি পড়ব না, যুদ্ধযুদ্ধ খেলব‘ 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৯

বেশ খেলতুমি খেলবে, দাদা

আস না? এই বালিশটা তুমি নাওহ্যাঁ, এবার মার তাে দেখি আমাকে

রাবেয়ার আগের হাসিখুশি ভাব আর নেইসারাক্ষণ দেখি একা একা থাকেঅনেক রাত পর্যন্ত তার ঘরে বাতি জ্বলেরাত জেগে সে কী করে কে জানে? রাবেয়াটার জন্যে ভারি কষ্ট হয়বিয়ে করল না শেষ পর্যন্তমেঘে মেঘে বেলা তাে আর কম হয় নিআমি মনেপ্রাণে চাই তাকে হাসিখুশি রাখতেমাঝে মাঝে বলি, রাবেয়া সিনেমা দেখবি?” 

নাচল না, যাই সবাই মিলেকত দিন ছবি দেখি নাতুই যা রুনুঝুনুদের নিয়েকত কাজ ঘরেরযা কাজ, রুনুঝুনুই করতে পারবেআয়, তুই আর আমি দু জনে যাইনা রে, ইচ্ছে করছে নাতাহলে চল, একটু বেড়িয়ে আসি। 

কোথায়

তুই যেখানে বলিসআজ থাক। 

আমি অস্বস্তিতে ছটফট করিরাবেয়ার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও সাজ্জা হয়যেন তার মানসিক দুঃখকষ্টের অনেকটা দায়ভাগ আমার। 

এক দিন রাবেয়া নিজেই বলল, চল খােকা, বেড়িয়ে আসি। 

আমি খুশি হয়ে বললাম, চল, সারা দিন আজ ঘুরববল কোথায় কোথায় যাবি

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৯

প্রথম যাব আমার এক বন্ধুর বাসায়একটা রিক্সা নে” 

রিক্সা যেবাড়ির সামনে থামল, তা দেখে চমকালামরাজপ্রাসাদ নাকি? বাড়ির সামনে কি প্রকাণ্ড ফুলের বাগানআমি বললাম, রাবেয়া, তুই ঠিক জায়গায় এসেছিস তাে? কার বাড়ি এটা

আবিদ হােসেনের, যে ছােটবেলায় আমাকে গাড়িতে করে স্কুলে পৌছে 

বাসা কী করে চিনলি ? এসেছিলাম তাে তাঁর সঙ্গে বাসায়। 

আবিদ হােসন বাসায় ছিলেন নাএক জন বিদেশিনী মহিলা খুব আন্তরিকভাবে আমাদের বসতে বললেনকী দরকার, বারবার জিজ্ঞেস করলেনচমৎকার বাংলা বলেন তিনি। 

রাবেয়া বলল, কোনাে প্রয়ােজন নেইএমনি বেড়াতে এসেছিছােটবেলায় তিনি আমার খুব বন্ধু ছিলেন। 

ভদ্রমহিলা কফি করে খাওয়ালেনবেরিয়ে আসবার সময় মস্ত বড়াে বড়াে টি গােলাপ তুলে তােড়া করে দিলেন রাবেয়ার হাতেএক জন অপরিচিত বিদেশিনীর এমন ব্যবহার সত্যিই আশা করা যায় না। 

রাবেয়া বেরিয়ে এসে বলল, চল খােকা, এই ফুলগুলি মার কবরে দিয়ে আসিএই তিনটা দিবি তুই, বাকি তিনটা দেব আমি

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *