হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২১

এই চিঠিটা পড়েন একটু। 

গােটা গােটা অক্ষরে লেখাআধপাতার একটা চিঠিসবুজ নামে একটি ছেলেকে লেখাসবুজের সঙ্গে সে সিনেমায় যেতে পারবে নাবাসার সবাই সন্দেহ করবেরুনুই লিখেছে মাস তিনেক আগেস্তম্ভিত হয়ে গেলাম

শঙ্খনীল কারাগার 

কই পেয়েছ এই চিঠি?সবুজ কাল রাতে আমাকে দিয়ে গিয়েছে। 

কথা বলতে আমার সময় লাগলআর বলবইবা কী? শুকনাে গলায় বললাম, আমাকে কী করতে বল ? বিয়ে ভেঙে দিতে চাও? নামানে এত আয়ােজন, এত কিছু, মানেতুমি কি রুনুর সঙ্গে নিয়ে কথা বলতে চাও? নানা, কী বলব আমি? তবে

আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে ঝুনুকে আমি বিয়ে করতে পারিসে কী করে হয়! সব করা হয়েছে রুনুর নামেআজ হঠাৎ করে...’ আপনি ভালাে করে ভেবে দেখুন, তা হলে সব রক্ষা হয়‘ 

সব দিক রক্ষার তেমন দরকার নেইএকটা মেয়ে একটা চিঠি লিখে ফেলেছেএই বয়সে খুব অস্বাভাবিক নয় সেটা। 

সবুজ আমাকে আরাে বলেছে কী বলেছে

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২১

না, সে আমি আপনাকে বলতে পারব নাসে তাে মিথ্যা কথাও বলতে পারেআপনি বরঞ্চ ঝুনুর সঙ্গে 

আমি তাহলে রুনুর সঙ্গে একটা কথা বলিনারুনুকে আর কী বলবে? যা বলবার আমিই বলব। 

আমি রুনুর দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছিলাম নাআসন্ন উৎসবের আনন, তার চোখেমুখেসমস্ত ব্যাপারটার জন্যে রুনুকেই দায়ী করা উচিতকিন্তু কিছুতেই তা পারছি নারুনুকে আমি বড়াে ভালােবাসিঘটনাটা তাকে এক্ষুণি জানান উচিত

কিন্তু কী করে বলব, ভেবে বুক ভেঙে গেলরাবেয়াকেই জানালাম প্রথমরাবেয়া প্রথমটায় হকচকিয়ে গেলশেষটায় কেঁদে ফেলল ঝরঝর করেরাবেয়া বড়াে শক্ত ধাঁচের মেয়ে, চোখে পানি দেখেছি খুব কম। 

 রাবেয়া বলল, তুই রুনুকে সমস্ত বলওকে নিয়ে বাইরে কোথাও বেড়াতে যাবাবাকে আমি বলব‘ 

রুনুকে এক চাইনীজ রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলামফ্যামিলি কেবিনে তার মুখােমুখি বসে আমার গভীর বেদনা বােধ হচ্ছিলরুনুই প্রথম কথা বলল, দাদাতুমি কি কিছু বলবে? না শেষ বারের মতাে ভালাে খাওয়াবে?

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২১

না রে, কিছু কথা আছেবুঝতে পারছি, তুমি কী বলবেবল ? তুমি কিটকির কথা কিছু বলবে, তাই না

নাকিটকির কথা নয়। আচ্ছা রুনু ধরতাের বিয়েটা যদি ভেঙে যায় কোনাে কারণে? মনে কর বিয়েটা হল না। 

এসব বলছ কেন দাদা, কী হয়েছে? তুই সবুজ নামে কোনাে ছেলেকে চিঠি লিখেছিলি? রুনু বড়াে বড়াে চোখে অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ধীরে ধীরে 

বলল, হ্যাঁ, লিখেছিলামতার জন্য কিছু হয়েছে

হ্যাঁ, মনসুর তােকে বিয়ে করতে চাইছে নাকী বলে সে?‘ 

সে বুনুকে বিয়ে করতে রাজিরুনু চেষ্টা করল খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলতেকিন্তু মানুষের মন ভেঙে গেলে সে আর যাই পারুক, স্বাভাবিক হতে পারে নাখাবার নাড়াচাড়া করতে করতে রুনু সিনেমার কথা তুলল, কোন বন্ধু এক কবিকে বিয়ে করে রােজ রাতে

এক গাদা আধুনিক কবিতা শুনছে, সেকথা খুব হেসে হেসে বলতে চেষ্ট করল, ঝুনু কেন যে এত মােটা হয়ে যাচ্ছে, নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলএবং এক সময় খাবারটা এত ঝাল’ বলে রুমাল বের করে চোখ মুছতে লাগলআমি চুপ করে বসে রইলামরুনু ধরা গলায় বলল, দাদা, তুমি মন খারাপ করাে নাতােমার মন খারাপ দেখলে আমি সত্যি কেদে ফেলব। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২১

আমি বললাম, কোথাও বেড়াতে যাবি রুনু

কোথায়? সীতাকুন্ড যাবি? চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে দূরের সমুদ্র খুব সুন্দর দেখা যায়রুনু কাতর গলায় বলল, যাব দাদা, কবে নিয়ে যাবে? চল, কালই যাইনা, ঝুনুর বিয়ের পর চলঝুনুর সঙ্গে এই ছেলের বিয়ে আমি হতে দেব নাতুমি বুঝতে পারছ না দাদাখুব বুঝছিবিয়ে হলে ঝুনু খুশি হবেহােক খুশি, এই নিয়ে আমি আর কোনাে কিছু বলতে চাই না রুনু। 

রুনুকে নিয়ে বের হয়ে এলামতখন সন্ধ্যা উৎরে গেছেরাতের নিয়ন আলাে জ্বলে গেছে দোকানপাটেঝকঝক করছে আলােরুনু খুব ক্লান্ত পায়ে হাঁটতে লাগলআমি তাকে কী আর বলি। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২২

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *