এই চিঠিটা পড়েন একটু।
গােটা গােটা অক্ষরে লেখা। আধপাতার একটা চিঠি। সবুজ নামে একটি ছেলেকে লেখা। সবুজের সঙ্গে সে সিনেমায় যেতে পারবে না। বাসার সবাই সন্দেহ করবে। রুনুই লিখেছে মাস তিনেক আগে। স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।
‘কই পেয়েছ এই চিঠি?‘ ‘সবুজ কাল রাতে আমাকে দিয়ে গিয়েছে।
কথা বলতে আমার সময় লাগল। আর বলবই–বা কী? শুকনাে গলায় বললাম, আমাকে কী করতে বল ? বিয়ে ভেঙে দিতে চাও? ‘না––মানে এত আয়ােজন, এত কিছু, মানে–– “তুমি কি রুনুর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে চাও? ‘না–না, কী বলব আমি? “তবে?
‘আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে ঝুনুকে আমি বিয়ে করতে পারি।‘ ‘সে কী করে হয়! সব করা হয়েছে রুনুর নামে। আজ হঠাৎ করে...’ ‘আপনি ভালাে করে ভেবে দেখুন, তা হলে সব রক্ষা হয়।‘
‘সব দিক রক্ষার তেমন দরকার নেই। একটা মেয়ে একটা চিঠি লিখে ফেলেছে। এই বয়সে খুব অস্বাভাবিক নয় সেটা।
‘সবুজ আমাকে আরাে বলেছে ‘কী বলেছে?
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২১
না, সে আমি আপনাকে বলতে পারব না। ‘সে তাে মিথ্যা কথাও বলতে পারে। ‘আপনি বরঞ্চ ঝুনুর সঙ্গে
‘আমি তাহলে রুনুর সঙ্গে একটা কথা বলি।‘ ‘না। রুনুকে আর কী বলবে? যা বলবার আমিই বলব।
আমি রুনুর দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছিলাম না। আসন্ন উৎসবের আনন, তার চোখে–মুখে। সমস্ত ব্যাপারটার জন্যে রুনুকেই দায়ী করা উচিত। কিন্তু কিছুতেই তা পারছি না। রুনুকে আমি বড়াে ভালােবাসি। এ ঘটনাটা তাকে এক্ষুণি জানান উচিত।
কিন্তু কী করে বলব, ভেবে বুক ভেঙে গেল। রাবেয়াকেই জানালাম প্রথম। রাবেয়া প্রথমটায় হকচকিয়ে গেল। শেষটায় কেঁদে ফেলল ঝরঝর করে। রাবেয়া বড়াে শক্ত ধাঁচের মেয়ে, চোখে পানি দেখেছি খুব কম।
রাবেয়া বলল, ‘তুই রুনুকে সমস্ত বল। ওকে নিয়ে বাইরে কোথাও বেড়াতে যা। বাবাকে আমি বলব।‘
রুনুকে এক চাইনীজ রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলাম। ফ্যামিলি কেবিনে তার মুখােমুখি বসে আমার গভীর বেদনা বােধ হচ্ছিল। রুনুই প্রথম কথা বলল, “দাদা, তুমি কি কিছু বলবে? না শেষ বারের মতাে ভালাে খাওয়াবে?
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২১
“না রে, কিছু কথা আছে। ‘বুঝতে পারছি, তুমি কী বলবে।‘ ‘বল ত? ‘তুমি কিটকির কথা কিছু বলবে, তাই না?
‘না। কিটকির কথা নয়। আচ্ছা রুনু ধর––তাের বিয়েটা যদি ভেঙে যায় কোনাে কারণে? মনে কর বিয়েটা হল না।
এসব বলছ কেন দাদা, কী হয়েছে? ‘তুই সবুজ নামে কোনাে ছেলেকে চিঠি লিখেছিলি? রুনু বড়াে বড়াে চোখে অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ধীরে ধীরে
বলল, ‘হ্যাঁ, লিখেছিলাম। তার জন্য কিছু হয়েছে?
‘হ্যাঁ, মনসুর তােকে বিয়ে করতে চাইছে না। ‘কী বলে সে?‘
সে বুনুকে বিয়ে করতে রাজি। রুনু চেষ্টা করল খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে। কিন্তু মানুষের মন ভেঙে গেলে সে আর যাই পারুক, স্বাভাবিক হতে পারে না। খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে রুনু সিনেমার কথা তুলল, কোন বন্ধু এক কবিকে বিয়ে করে রােজ রাতে।
এক গাদা আধুনিক কবিতা শুনছে, সেকথা খুব হেসে হেসে বলতে চেষ্ট করল, ঝুনু কেন যে এত মােটা হয়ে যাচ্ছে, এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল। এবং এক সময় ‘খাবারটা এত ঝাল’ বলে রুমাল বের করে চোখ মুছতে লাগল। আমি চুপ করে বসে রইলাম। রুনু ধরা গলায় বলল, ‘দাদা, তুমি মন খারাপ করাে না। তােমার মন খারাপ দেখলে আমি সত্যি কেদে ফেলব।
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২১
আমি বললাম, কোথাও বেড়াতে যাবি রুনু?
কোথায়? ‘সীতাকুন্ড যাবি? চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে দূরের সমুদ্র খুব সুন্দর দেখা যায়। রুনু কাতর গলায় বলল, ‘যাব দাদা, কবে নিয়ে যাবে? ‘চল, কালই যাই। ‘না, ঝুনুর বিয়ের পর চল।। ‘ঝুনুর সঙ্গে এই ছেলের বিয়ে আমি হতে দেব না। ‘তুমি বুঝতে পারছ না দাদা–– ‘খুব বুঝছি। ‘বিয়ে হলে ঝুনু খুশি হবে। ‘হােক খুশি, এই নিয়ে আমি আর কোনাে কিছু বলতে চাই না রুনু।
রুনুকে নিয়ে বের হয়ে এলাম। তখন সন্ধ্যা উৎরে গেছে। রাতের নিয়ন আলাে জ্বলে গেছে দোকানপাটে। ঝকঝক করছে আলাে। রুনু খুব ক্লান্ত পায়ে হাঁটতে লাগল। আমি তাকে কী আর বলি।
Read More