হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৩

খুব মনে আছেআমি চুপচাপ বসে আছি ছাদেতােমরা তাে কেউ ছাদে খুঁজতে আস নিসারা দিন একা একা বসেছিলামরাত হতেই ভূতের ভয়ে নেমে 

এসেছি‘ 

 তারপর কী হল বল তাে রুনু?

শঙ্খনীল কারাগার 

আরেকটা চড় খেলামচড়টা কে দিয়েছিল মনে আছে? হ্যাঁ, তুমিসশব্দে দুজনে হেসে উঠলাম। 

কে? কে হাসছে ? তাকিয়ে দেখি রাবেয়া টলতে টলতে আসছেতােরা! বেশ ভয় পেয়েছিহঠাৎ করে হাসলিধক করে উঠছে বুকটাবস রাবেয়া, গল্প করি‘ 

না, ভাের হয়ে আসছে দেখছিস নাসবাই চাটা খাবেএত মানুষের ব্যাপার, আমি রান্নাঘরে যাই। 

চল আপা, আমিও যাই। 

আমি একা একা বসে রইলামভােরের কাকের কাকা শােনা যাচ্ছেআকাশ ফর্সা হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে। 

বুঝতে পারছি মনের ভেতর জমে থাকা অবসাদ কেটে যাচ্ছেঠিক ভাের হবার মুহূর্তে মনের গ্লানি কেটে যায়সুন্দর সুখের স্মৃতিগুলি ফিরে আসেকিটকি লিখেছে, গতকাল নৌকায় করে মাইল উত্তরের ক্যানসি সিটিতে গিয়েছিলাম বেড়াতেমা! আমাদের দেশের ময়লা ঘিঞ্জি চাঁদপুরের মতাে দেখতেএটিকে আবার বাহার করে বলা হচ্ছে সিটিশহরটা বাজে, বমি আসেকিন্তু শহর থেকে বেরুলেই চোখ ভরে ওঠেনীল সমুদ্র, নীল নীল পাহাড়, ঘন নীল আকাশউহ কী অদ্ভুত! আপনি যদি আসতেন, তাহলে খুব ভালাে লাগত আপনারসত্যি বলছি। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৩

আই. পরীক্ষায় রুনু ফেল করল। 

বেশ অবাক হলাম আমরাপড়াশােনায় আমার সব ভাইবােনই ভালােরুনু নিজে সাত উপর নম্বর পেয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেছিলঅঙ্কে আর ভূগােলে | লেটার মার্ক ছিলপরীক্ষায় একেবারে ফেল করে বসবে, এটা কখনাে ভাবা যায় 

কাগজে তার রােল নাম্বার যখন কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না এবং রােল নম্বরটি পাওয়া যাবে না এটিও ধারণা করতে পারছি না, তখন রুনু বলল, খুঁজে লাভ হবে 

দাদা, আমি ফেল করেছিফেল করবি কেন

খাতায় যে কিছুই লিখি নিইতিহাসের খাতায় সম্রাট বাবরের ছবি এঁকে দিয়ে এসেছি‘ 

কার ছবি? সম্রাট বাবরের। 

আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলামরুনু অবশ্যি বদলে যাচ্ছিলকিন্তু পরিবর্তনটা এত ধীর গতিতে হচ্ছিল যে আমি ঠিক ধরতে পারি নিহয়তাে বই নিয়ে পড়তে বসেছে, আমি যাচ্ছি পাশ দিয়েহঠাৎ ডাকল, দাদা, শােন একটু। 

কি? মানুষের গােস্ত যদি বাজারে বিক্রি হলে তােমার গােস্ত সবচে 

সস্তা, তুমি যা রােগা। 

এই জাতীয় কথাবার্তা রুনু আগে বলত নাকিংবা আরেকটি উদাহরণ সরা যাক। 

এক দিন রাবেয়াকে গিয়ে সে বলছে, আপা, একটা কথা শুনবে? বল। 

তােমার মাথাটা কামিয়ে ফেলবে? রাবেয়া বিস্মিত হয়ে বলল, কেন রে?এমনি বলছি! ঠাট্টা করছি‘ 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৩

রুনুর জাতীয় কথাবার্তা কোনাে বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়রুনু বদলে যাচ্ছিলকথাবার্তা কমিয়ে দিচ্ছিলঅথচ তার মতাে হৈচৈ করা মেয়ে আমি খুব কম দেখেছিবাসায় যতক্ষণ আছে, গুনগুন করে গান গাইছেরেডিও কানের কাছে নিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়

সিনেমার তাে কথাই নেই, প্রতি সপ্তায় দেখা চাইতার হাতে টাকা পড়তে না পড়তে ধোঁয়ার মতাে উড়ে যাচ্ছেযখনই দেখতাম রাতের খাওয়ার পর রুনু আমার ঘরে ঘুরঘুর করছে কিংবা আমার পরিষ্কার করে সাজান বিছানা আবার নতুন করে ঝাড়ছে, তখনি বুঝতাম তার কিছু টাকার প্রয়ােজন। 

কি রে রুনু, টাকা দরকার

নাসেদিন যে দশ টাকা দিলাম, খরচ করে ফেলেছিস

আরাে চাই

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৪

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *