হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৪

আচ্ছা আচ্ছা, প্যান্টের পকেটে হাত দে, মানি ব্যাগ পেয়েছিস? খােলনে একটা নােট, নিয়ে যাআরে আরে, দশ টাকারটাই নিলি ? ডাকাত একেবারেরুনু খিলখিল হেসে পালিয়ে যায় দ্রুত

শঙ্খনীল কারাগার 

সেই রুনু এমন বদলে গেলআমরা কেউ বুঝতেই পারলাম নাপরীক্ষার রেজাল্ট শুনে তার কোনােই ভাবান্তর নেইসেদিন শুনি জানালা দিয়ে মুখ বের করে ওভারশীয়ার চাচাকে বলছে, চাচাজি, শুনছেন

কি মা? আমার পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছেকি রেজাল্ট? আমি ফেল করেছি চাচাজি। 

একমাত্র বাবাই রুনুকে ধরতে পেরেছিলেনপ্রায়ই বলতেন, রুনুটার কি কোনাে অসুখ করেছে? এমন দেখায় কেন? এক দিন রুনকে আসমানী রঙের 

একটি চমৎকার শাড়ি এনে দিলেনসিনেমা দেখাতে নিয়ে গেলেনশেষ পর্যন্ত মন ভালাে থাকবে বলে পাঠালেন ঝুনুর কাছে। 

ঝুনুর বাসা থেকে ফিরে এসেই রুনু অসুখে পড়লপ্রথমে একটু জ্বরজ্বর ভাব, সর্দি, গা ম্যাজম্যাজশেষটায় একেবারে শয্যাশায়ী। 

এক দিন দুদিন করে দিন পনের হয়ে গেল, অসুখ আর সারে নাডাক্তার কখনাে বলে দুর্বলতা, কখনাে বলে রক্তহীনতা, কখনােবা লিভার ট্রাবলসঠিক রােগটা আর ধরা পড়ে না। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৪

রাতে সে বড়াে ঝামেলা করেনিজে একটুও ঘুমােয় না, কাউকে ঘুমুতেও দেয় নারাবেয়া প্রায় সারা রাত জেগে থাকেমাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, গল্প পড়েশােনায়, পিঠ চুলকে দেয়অনেক রাতে যখন রাবেয়া বলে, আমি একটু শুই

নানা, শুলেই তুমি ঘুমিয়ে পড়বেতাের বালিশে একটু মাথাটা রাখি, ভীষণ মাথা ধরেছে। 

উঁহু, তুমি বরং এক কাপ চা খেয়ে আসঘুমুতে পারবে নাখােকাকে ডাকি, ও বসবে তাের পাশেনা, তুমি বসে থাকবেকলেজ থেকে ফিরে আমি এসে বসি রুনুর পাশেকি রে, জ্বর কমেছেহ্যাঁ, কমেছে

কপালে হাত দিয়েই প্রবল জ্বরের অচি পাইরুনু ঘােলাটে চোখে তাকায়আমি বলি, বেশ জ্বর তােকি রে, খারাপ লাগে

না, লাগে নামাথায় হাত বুলিয়ে দেব? দাওচিটাগাং ভালাে লেগেছিল রুনু

সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলি

আচ্ছা, এক বার তােদের সবাইকে নিয়ে সমুদ্র দেখতে যাবকক্সবাজারে হােটেল ভাড়া করে থাকবখুব ফুর্তি করব, কি বলিস

হু করব‘ 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৪

জ্বরের ঘােরে রুনু ছটফট করতে লাগলহঠাৎ অপ্রাসঙ্গিক ভাবে বলে উঠল, দাদা, ঝুনু এখন আর আমাকে একুটুও দেখতে পারে না‘ 

কেন দেখতে পারে না

কী জানি কেনআমার সঙ্গে কথা বলে নিকিন্তু আমার কী দোষ

রুনুর জ্বর বাড়তেই থাকেমন্টু চলে যায় ডাক্তার আনতেরুনু আচ্ছ; ? পড়ে থাকেভাত খেতে খেতে রাবেয়া বলে, খােকা শশান, তােকে একটা কথা বলি‘ 

কী কথা? রুটা বাঁচবে না রেকী বলছিস আবােলতাবােল

আমার কেন জানি শুধু মনে হচ্ছেকাল রাতে রুনুর জন্যে গরম পানি করে নিয়ে গেছি, দেখি ওর মাথার পাশে কে এক জন মেয়ে বসে আছে

কী বলছিস সব!

হ্যা সত্যিকে যে বসে ছিল, ঠিক বলতে পারব নাতবে আমার মনে হয়, তিনি মাঅল্প কিছুক্ষণের জন্যে দেখেছি‘ 

যত সব রাবিশ।’ না রে, ঠিকইআমি ভয় পেয়ে বাবাকে ডেকে আনিবাবাকে বলেছিস কিছু? না, বলি নি। 

দেখতে দেখতে রুনুর জ্বর খুব বাড়লছটফট করতে লাগল সেডাক্তার এসে দুটি ইনজেকশন করলেনমাথায় পানি ঢালতে বললেনজ্বরের ঘােরে রুনু ভুল বকতে লাগল, বেশ করেছেন আপনি! হ্যাঁ, বেশ তােঠিক আছে ঠিক আছে। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৪

কী বলছিস রুনু

রুনু স্বাভাবিক মানুষের মতাে বলল, কই দাদা, কিছু বলছি না তােরাবেয়াকে বলল, আপা এক গ্লাস পানি আনকানায় কানায় ভরা থাকে যেনআমি সবটা চুমুক দিয়ে খাব‘ 

রুনু এক চুমুক পানি খেলখুব স্বাভাবিক গলায় ডাকল, বাবা‘ 

এই তাে আমিকী মা? একটু কোলে নেন না। 

বাবা রুনুকে কোলে নিলেন। বাবার পা কাঁপছিল। আমি বাবার একটা হাত ধরলাম। রুনুটা এই ক’দিনে ভীষণ রােগা হয়েছে। বাবার পিঠের ওপর তার দু’টি শীর্ণ হাত আড়াআড়ি ঝুলছে। রুনু বলল, ‘বাবা বাইরে চলেন। বাইরে যাব।’  

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৫

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *