হয়েছে?
‘দাদাকে যদি মেরে ফেলে, সেও তাে প্রফেসর।‘
শুনে আমি হেসে বাঁচি না। ওর যত টান দাদার জন্যে।
হতাশা আর বিষন্নতায় যখন সম্পূর্ণ ডুবেছি, তখনি কিটকির চিঠি পেলাম। ‘দেশে ফিরছি কবে বলতে পারছি না। প্লেনের টিকিট পেলেই।
বদলে গেছিস কিটকি। ‘লম্বা হয়েছি, না? ‘হু, আর রােগাও হয়েছিস। ‘আপনিও বদলেছেন, কি বিশ্রী গোঁফ রেখেছেন। ‘বিশ্রী ? ‘হা, বিশ্রী আর জঘন্য, দেখলেই সুড়সুড়ি লাগে। ‘ম্যানিলার কথা বলা। ‘সে তত চিঠিতেই বলেছি। ‘মুখে শুনি।
রাবেয়া ট্রেতে চা সাজিয়ে আনল। কিটকি হাসতে হাসতে বলল, ‘রাবেয়া আপা আগের মতােই আছেন।
না রে, স্বাস্থ্য ভালাে হয়েছে, এই দেখ হাতে কত জোর।‘ ‘উহু, উহু, আমার ঘাড় ভেঙে ফেলেছেন। বােন ফ্রাকচার হয়েছে নির্ঘাৎ।
বােন ফ্রাকচার হয় নি, হার্ট জখম হয়েছে কিনা বল। রাবেয়া হাসতে হাসতে চলে গেল। কিটকি বলল, ‘রুনুর কথা বলেন। ‘না, রুনুর কথা থাক। ‘মন্টুর নাকি একটা কবিতার বই বেরিয়েছে? ‘হ্যা, কিছু কিংশুক’ নাম। তােমাকে নিশ্চয়ই দেবে এক কপি। ‘কেমন হয়েছে? ‘আমি কবিতার কী বুঝি, তবে সবাই ভালাে বলেছে।
আপনার প্রফেসরির কী খবর?
খবর নেই কোনাে। বেতন বেড়েছে। ব্যাঙ্কে কিছু জমেছে। খরচ–পত্তর তাে বিশেষ তেমন কিছু নেই।‘
রাবেয়া আপা শেষ পর্যন্ত বিয়ে করলেন না? না।‘
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৬
রাবেয়া করতে চাইল না, বাবা খুব চেষ্টা করেছিলেন। কিটকি অনেকক্ষণ থাকল বাসায়। দুপুরে আমাদের সঙ্গে ভাত খেল। বিকেলে
চা খেয়ে চলে গেল। কিটকিকে অন্যরকম লাগছিল। ছেলেমানুষী যা ছিল ধুয়ে মুছে গেছে। ভারি সুন্দর হয়েছে দেখতে। চোখ ফেরান যায় না, এমন।
সারা সন্ধ্যা কিটকির কথা ভাবলাম। ছােটবেলা কিটকি আমার জন্যে এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব করত। এখনাে করে কিনা কে জানে! তাকে সরাসরি কিছু বলার মতাে সাহস আমার নেই, কিন্তু বড়ড়া জানতে ইচ্ছে করে। রাত দশটার দিকে রাবেয়া আমার ঘরে এল।
‘কি রে, জেগে আছিস?
রাবেয়া চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে খাটে বসল। চিরুনি কামড়ে ধরে বেণী পাকাতে লাগল।
‘খুব লম্বা চুল তাে তাের। ‘ই একটা বেণী কেটে নিয়ে যে কেউ ফাঁস নিতে পারবে।‘ ‘প্রেমের ফাঁস, বল। ‘কিটকিকে দেখে খুব রস হয়েছে, না? মন পেয়েছিস কিটকির? ‘রমণীর মন সহস্র বৎসরেরও সখা সাধনার ধন।
তাের সাধনাই–বা কম কি? পাঁচ বছর অনেক লম্বা সময়।
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৬
রাবেয়া চুপচাপ বসে থাকল কিছুক্ষণ। তার পর বলল, ‘খােকা তোের কাছে একটা কাজে এসেছি।‘
কি কাজ? ‘আমাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দে, কিছু পড়াশােনা করি।‘
এত দিন পর হঠাৎ? ‘এমনি ইচ্ছে হল। আর একটা মাষ্টার রেখে দিস, কিছু তাে ছাই মনেও নেই ‘আচ্ছা দেব। আবার ছেড়ে দিবি না তাে? ‘না, ছাড়ব না।‘
ঝুনুর ছেলে হবে। যাতে কেউ গিয়ে তাকে নিয়ে আসে, সে জন্যে সে সবার কাছে চিঠি লিখেছে। তারা আসতে দেবে কিনা কে জানে! মােটেই ভালাে ব্যবহার করছে
তারা। রুনু মারা যাবার পরও আসতে দেয় নি। তবু বাবা যাচ্ছেন আনতে। সঙ্গে রাবেয়াও যাবে। যদি ঝুনু আসে, তবে বেশ হয়। অনেক দিন দেখি না ওকে। খুব দেখতে ইচ্ছে করে।।
রাবেয়া কলেজে ভর্তি হয়েছে। উৎসাহ নিয়ে রাত জেগে পড়ে। ছুটির দিনগুলি ছাড়া তাকে পাওয়াই যায় না। রােববারে ফুর্তি হয় এই কারণেই। সবাই রােববারের
Read More