জন্যে মনে মনে অপেক্ষা করি।
মন্টু এক দৈনিক পত্রিকা–অফিসের সহ–সম্পাদক হয়েছে। বেশ ভালাে বেতন। বি. এ. টাও পাশ করে নি, কিন্তু বেশ গুছিয়ে ফেলেছে। অবাক হওয়ারই কথা। তার দ্বিতীয় বই ‘শুধু ভালােবাসা’ সাহিত্যপুরস্কার পেয়েছে। মন্টু এখন নামী ব্যক্তি। অনেকেই তার কাছে আসে। মন্টু তাে
বাসাতে থাকে কমই, বাবা গিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ করেন। এ ব্যাপারে বাবার উৎসাহ প্রায় সীমাহীন। কোন পত্রিকায় কী লিখল, তা তিনি অসীম ধৈর্য নিয়ে খোঁজ রাখেন। সযত্নে পেপার–কাটিং জমিয়ে রাখেন। মন্টুর কাছেই শুনেছি, এক দিন বাবা নাকি কোন বই–এর দোকানে ঢুকে অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, আপনার এখানে “কিছু কিংশুক” কবিতার বইটি আছে?
দোকানী জবাব দিয়েছে, ‘না নেই। ‘তাহলে “শুধু ভালােবাসা” বইটি আছে? ‘না, সেটাও নেই।‘
বাবা রেগে গিয়ে বলেছেন, ভালাে ভালাে বই–ই নেই, আপনারা কেমন। দোকানদার ?
মন্টুর সঙ্গে কবিতা নিয়ে আলাপ করতেও তার খুব উৎসাহ। মন্টু এ ব্যাপারে অত্যন্ত লাজুক বলেই তিনি সুযােগ পান না।
সত্য–মিথ্যা জানি না, শুনেছি বাবা ওভারশীয়ার কাকুর বড়াে ছেলের বউকে প্রায়ই মন্টুর কবিতা আবৃত্তি করে শােনান। এই মেয়েটিকে বাবা খুব পছন্দ করেন। মেয়েটির চেহারা অনেকটা রুনুর মতাে। পেছন থেকে দেখলে রুনু বলে ভ্রম হয়।
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৭
নিনুও অনেক বড়াে হয়েছে। সেদিন তাকে নিয়ে রাস্তায় বেরােতেই দু’টি ছেলে শিস দিল। নিনুকে বললাম, ‘নিনু কোনাে বদ ছেলে তােমাকে চিঠি–ফিঠি লিখলে না পড়ে আমাকে দিয়ে দেবে, আচ্ছা?’ নিনু লজ্জায় লাল হয়ে ঘাড় নেড়েছে।
সেদিন রবিবার। সবার বাসায় থাকার কথা, কিন্তু বাসায় নেই কেউ। বাবা আর রাবেয়া গেছে ঝুনুকে আনতে, মন্টু তার পত্রিকা–অফিসে। পত্রিকা–অফিসের কাজ নাকি পুলিশের কাজের মতাে। ছুটির কোনাে হাঙ্গামাই নেই। বাসায় আমি আর নি। আমি ভেতরে বসে কাগজ পড়ছি, নিনু বলল, ‘দাদা, এক জন ভদ্রলােক এসেছেন।
‘কী রকম ভদ্রলােক? ‘বুড়াে। চোখে চশমা।
বেরিয়ে এসে দেখি বড়মামা। অনেক দিন পর দেখা, কিন্তু চিনতে অসুবিধা হল । বড়মামা বললেন, আমাকে চিনতে পারছ?
‘জ্বি, আপনি তাে বড়মামা।
অনেক দিন পর দেখা, চেনার কথা নয়। তুমিও বড়াে হয়েছ, আমিও শুড়ে।। কী কর এখন?
এখানকার এক কলেজে প্রফেসরি করি। | ‘বেশ, বেশ। বাসায় আর কেউ নেই? খালি খালি লাগছে।‘
‘জ্বি না। বাবা এবং রাবেয়া গেছেন চিটাগাং। আমার এক বােনের সেখানে বিয়ে হয়েছে।
মামা চুপ করে শুনলেন। তাঁকে দেখে আমি বেশ অবাকই হয়েছি। হঠাৎ করে কেনই–বা এলেন। মা বেঁচে নেই যে আসবার একটা কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। তা ছাড়া মামাকে কেমন যেন লজ্জিত এবং অপ্রস্তুত মনে হচ্ছিল। মামা বললেন, ‘আমার আব্বা––মানে তােমাদের নানা মারা গিয়েছেন দিন সাতেক হল।
কী হয়েছিল?
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৭
তেমন কিছু নয়। বয়স তাে কম হয় নি তাঁর, নব্বইয়ের কাছাকাছি। আজকালকার দিনে এত বাঁচে না কেউ।
মামা বলতে বলতে অল্প হাসলেন কি ভেবে। বললেন, ‘আমাকে আসতে দেখে অবাক হয়েছ, না?‘
‘না–না, অবাক হব কেন? আপনি চা খাবেন? ‘চা ছেড়ে দিয়েছি, ডায়াবেটিসে ভুগছি। আচ্ছা, দাও এক কাপ চিনি ছাড়া।
নিনকে চায়ের কথা বলে এসে বসতেই মামা বললেন, ‘বাবা শেষের দিকে তােমাদের কথা কেন জানি খুব বলতেন। তিনি সিলেটে আমার ছােটভাইয়ের কাছে ছিলেন। অসুখের খবর শুনে আমি গিয়েছিলাম। বাবা প্রায়ই বলতেন, ঢাকা গিয়েই তােমাদের এখানে আসবেন। আগে কখনাে এমন বলেন নি।
মামা চশমার কাঁচ ঘষতে ঘষতে বললেন, ‘বয়স হলে অনেক values বদলে যায়, তাই না?
‘শিরিন খুব আদরের ছিল সবার। তবে বড়াে গোয়ার ছিল। জান তাে মেয়েদের দু’টি জিনিস খুব খারাপ, একটি হচ্ছে সাহস, অন্যটি গোঁয়ার্তুমি।
Read More