হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৭

জন্যে মনে মনে অপেক্ষা করি। 

মন্টু এক দৈনিক পত্রিকাঅফিসের সহসম্পাদক হয়েছেবেশ ভালাে বেতনবি. . টাও পাশ করে নি, কিন্তু বেশ গুছিয়ে ফেলেছেঅবাক হওয়ারই কথাতার দ্বিতীয় বই শুধু ভালােবাসাসাহিত্যপুরস্কার পেয়েছেমন্টু এখন নামী ব্যক্তিঅনেকেই তার কাছে আসেমন্টু তাে

শঙ্খনীল কারাগার

বাসাতে থাকে কমই, বাবা গিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ করেনব্যাপারে বাবার উৎসাহ প্রায় সীমাহীনকোন পত্রিকায় কী লিখল, তা তিনি অসীম ধৈর্য নিয়ে খোঁজ রাখেনসযত্নে পেপারকাটিং জমিয়ে রাখেনমন্টুর কাছেই শুনেছি, এক দিন বাবা নাকি কোন বইএর দোকানে ঢুকে অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, আপনার এখানে কিছু কিংশুককবিতার বইটি আছে

দোকানী জবাব দিয়েছে, না নেইতাহলে শুধু ভালােবাসাবইটি আছে? না, সেটাও নেই‘ 

বাবা রেগে গিয়ে বলেছেন, ভালাে ভালাে বইনেই, আপনারা কেমনদোকানদার

মন্টুর সঙ্গে কবিতা নিয়ে আলাপ করতেও তার খুব উৎসাহমন্টু ব্যাপারে অত্যন্ত লাজুক বলেই তিনি সুযােগ পান না। 

সত্যমিথ্যা জানি না, শুনেছি বাবা ওভারশীয়ার কাকুর বড়াে ছেলের বউকে প্রায়ই মন্টুর কবিতা আবৃত্তি করে শােনানএই মেয়েটিকে বাবা খুব পছন্দ করেনমেয়েটির চেহারা অনেকটা রুনুর মতােপেছন থেকে দেখলে রুনু বলে ভ্রম হয়। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৭

নিনুও অনেক বড়াে হয়েছেসেদিন তাকে নিয়ে রাস্তায় বেরােতেই দুটি ছেলে শিস দিলনিনুকে বললাম, নিনু কোনাে বদ ছেলে তােমাকে চিঠিফিঠি লিখলে না পড়ে আমাকে দিয়ে দেবে, আচ্ছা?নিনু লজ্জায় লাল হয়ে ঘাড় নেড়েছে। 

 সেদিন রবিবারসবার বাসায় থাকার কথা, কিন্তু বাসায় নেই কেউবাবা আর রাবেয়া গেছে ঝুনুকে আনতে, মন্টু তার পত্রিকাঅফিসেপত্রিকাঅফিসের কাজ নাকি পুলিশের কাজের মতােছুটির কোনাে হাঙ্গামাই নেইবাসায় আমি আর নিআমি ভেতরে বসে কাগজ পড়ছি, নিনু বলল, দাদা, এক জন ভদ্রলােক এসেছেন। 

কী রকম ভদ্রলােক? বুড়ােচোখে চশমা। 

বেরিয়ে এসে দেখি বড়মামাঅনেক দিন পর দেখা, কিন্তু চিনতে অসুবিধা হল বড়মামা বললেন, আমাকে চিনতে পারছ

জ্বি, আপনি তাে বড়মামা। 

অনেক দিন পর দেখা, চেনার কথা নয়তুমিও বড়াে হয়েছ, আমিও শুড়েকী কর এখন

এখানকার এক কলেজে প্রফেসরি করি| বেশ, বেশবাসায় আর কেউ নেই? খালি খালি লাগছে‘ 

জ্বি নাবাবা এবং রাবেয়া গেছেন চিটাগাংআমার এক বােনের সেখানে বিয়ে হয়েছে। 

মামা চুপ করে শুনলেনতাঁকে দেখে আমি বেশ অবাকই হয়েছিহঠাৎ করে কেনইবা এলেনমা বেঁচে নেই যে আসবার একটা কারণ খুঁজে পাওয়া যায়তা ছাড়া মামাকে কেমন যেন লজ্জিত এবং অপ্রস্তুত মনে হচ্ছিলমামা বললেন, আমার আব্বামানে তােমাদের নানা মারা গিয়েছেন দিন সাতেক হল। 

কী হয়েছিল

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৭

তেমন কিছু নয়বয়স তাে কম হয় নি তাঁর, নব্বইয়ের কাছাকাছিআজকালকার দিনে এত বাঁচে না কেউ। 

মামা বলতে বলতে অল্প হাসলেন কি ভেবেবললেন, আমাকে আসতে দেখে অবাক হয়েছ, না?‘ 

নানা, অবাক হব কেন? আপনি চা খাবেন? চা ছেড়ে দিয়েছি, ডায়াবেটিসে ভুগছিআচ্ছা, দাও এক কাপ চিনি ছাড়া। 

নিনকে চায়ের কথা বলে এসে বসতেই মামা বললেন, বাবা শেষের দিকে তােমাদের কথা কেন জানি খুব বলতেনতিনি সিলেটে আমার ছােটভাইয়ের কাছে ছিলেনঅসুখের খবর শুনে আমি গিয়েছিলামবাবা প্রায়ই বলতেন, ঢাকা গিয়েই তােমাদের এখানে আসবেনআগে কখনাে এমন বলেন নি। 

মামা চশমার কাঁচ ঘষতে ঘষতে বললেন, বয়স হলে অনেক values বদলে যায়, তাই না

শিরিন খুব আদরের ছিল সবারতবে বড়াে গোয়ার ছিলজান তাে মেয়েদের দুটি জিনিস খুব খারাপ, একটি হচ্ছে সাহস, অন্যটি গোঁয়ার্তুমি। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৮

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *