হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৯

ঝুনু বসল মাথার কাছেমনে হল কিছু বলবেচুপ করে অপেক্ষা করছিঝুনু ইতস্তত করে বলল, আচ্ছা দাদা, হাসপাতালে নাকি ছেলে বদল হয়ে যায়?‘ 

ছেলে বদল! কী রকম?অবাক হয়ে তাকাই আমি

শঙ্খনীল কারাগার 

ওভারশীয়ার চাচার ছেলের বউ বলছিল, হাসপাতালে নাকি ছেলেমেয়েদের নম্বর দিয়ে সব এক জায়গায় রাখেনম্বরের গণ্ডগােল হলেই এক জনের দেলে সারেক জনের কাছে যায়। 

হেসে ফেললাম আমিবললাম, এই দুশ্চিন্তাতেই মরছিস? পাগল আর কি! না দাদা, সত্যিওর এক বন্ধুর নাকি টুকটুকে ফর্সা এক ছেলে হয়েছিল। 

রিলিজের সময় যেছেলে এনে দিল, সেটি নিগ্রোর চেয়েও কালাে। 

 হাসপাতালে যেতে না চাস, বাসায় ব্যবস্থা করা যাবেতবে এগুলাে খুব বাজে কথা ঝুনু| দু জনেই চুপচাপ থাকিবুঝতে পারছি, ঝুনুর ছেলের কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনিজেই জিজ্ঞেস করি, ছেলে হলে কী নাম রাখবি, ঝুনু

যাওবল শুনি, একটা তাে ভেবেছিস মনে মনেআমি যেটা ভেবেছি, সেটা খুব বাজেপুরনােকী সেটি

বল না, শুনি কেমন নামকিংশুক। 

এই বুঝি তাের পুরনাে নাম?যাও দাদা, শুধু ঠাট্টামেয়ে হলে কী রাখবি?” 

মেয়ে হলে রাখব রাখীচমৎকার

রাখী নামে আমার এক বন্ধু ছিলএত ভালাে মেয়েএখন ডাক্তারআমিও আমার মেয়েকে ডাক্তারি পড়াব দাদা। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৯

আমার অসুখবিসুখ হলে আর চিন্তাই নেইভাগ্নীকে খবর দিলেই হল‘ 

আচ্ছা দাদা, ইরিত্রা নামটা তােমার কেমন লাগে? নতুন ধরনের নামআধুনিক। 

মন্টু বলছে ইরিত্রা রাখতে, দুটি নামই আমার ভালাে লাগে। কী করব বল তাে দাদা। 

দু নম্বর মেয়ের নাম ইরিত্রা রাখ। 

না, দু নম্বর মেয়ের নাম রাখব রুনু। 

হ্যাঁতাহলে রুনুর মতাে লক্ষ্মী মেয়ে হবেএকটুক্ষণ থেমে ঝুনু কাতর গলায় বলল, রুনুর কথা বড়াে মনে হয় দাদাওকে বড়াে দেখতে ইচ্ছে করে। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৯

 রুনুকে আমারাে বড়াে দেখতে ইচ্ছে করেমাঝে মাঝে রুনুর ফটোর দিকে তাকিয়ে থাকিপাতলা ঠোঁট চেপে হাসির ভঙ্গিমায় তােলা ছবিবড়াে বড়াে চোখবাচ্চা ছেলেদের চোখের মতাে দৃষ্টিসব মিলিয়ে কেন যেন ভারি করুণ মনে হয়অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে বুকের ভিতর ব্যথা বােধ হয়। 

মায়ের গানের রেকর্ডটা একটা লােক এসে দিয়ে গেলখুব যত্ন করে কাগঞেt মােড়ারেকর্ডের লেবেলে মায়ের নাম মিস শিরিন সুলতানা খুব অস্পষ্টভাবে পড়যায়হিজ মাস্টার্স ভয়েসের কুকুরের ছবিটার উপর আবার লাল কালিতে কাঁচা হাতে ইংরেজিতে মায়ের নাম লেখাহয়তাে তিনিই লিখেছিলেন। 

 বাসায় একটা সাড়া পড়ে গেলঝুনু তার ছেলে কোলে নিয়ে পুরনাে দিনের মতােই লাফাতে লাগলবাজিয়ে শােনার মতাে গ্রামােফোন নেই দেখে শুধু কাঁদতে বাকি রাখল। 

মন্টু রেকর্ডপ্লেয়ার আনতে বেরিয়ে গেল তখনিরাবেয়া কলেজে। সেখানে কী একটা ফাংশন নাকি। মন্টু তাকেও খবর দিয়ে যাবেবাবাকে দেখে মনে হল, তিনি আমাদের এই হৈচৈ দেখে একটু লজ্জা পাচ্ছেননিনুও এতটা উৎসাহের কারণ ঠিক বুঝে উঠতে পারছে নাবাবাকে বললাম, আজ একটা উৎসবের মতাে করা যাক বাবাখুব ঘরােয়াভাবে সন্ধ্যার পর মায়ের কথা আলােচনা হবেতারপর ঘুমুতে যাবার আগে রেকর্ড বাজান হবেবাবা সংকুচিত ভাবে বললেন, সবের চেয়ে তাে মিলাদটিলাদঝুনু সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে বলল, সে পরে হবে, আজ দাদা যা বলছে তাই হােক। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-২৯

বাবা জুতাে পরে ফুল আনতে চলে গেলেনফুলের মালায় মায়ের ছবি সাজান হবেঝুনু বলল, বাবা, একটু ধূপ এনােনা পেলে আগরবাতি| আমি রেকর্ডটা লুকিয়ে ফেললাম, যাতে আগেভাগে কেউ শুনে ফেলতে না পারেকিটকিকে টেলিফোন করলাম পাশের বাসা থেকে। 

হ্যালাে কিটকিআমি– বুঝতে পারছি আপনি কেকি ব্যাপার ? খালাকে নিয়ে আয় না বাসায় এক বারকী ব্যাপার? এসেই শুনবিআহা বলেন না

একটা ছােটখাট ঘরােয়া উৎসবকিসের সব? আসলেই দেখবিবলেন না ছাই

মায়ের গাওয়া রেকর্ডটা বাজান হবেতাছাড়া তাঁর স্মৃতিতে একটা ঘরােয়া আলােচনাএই আর কি!‘ 

বাহ্, সুন্দর আইডিয়া তাে। আমি আসছি। 

আচ্চা কিটকি, মায়ের সঙ্গে তােলা খালার কোনাে ছবি আছে?‘ 

দেখতে হবেযদি পাস তােহ্যাঁ নিয়ে আসবকখন আসতে বলছেন?রাত আটটায়‘ 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৩০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *