হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৩

বাসায় ফিরে দেখি বাবা এসে গেছেনওভারশীয়ার কাকুর বউ এসেছেন, ধাই সুহাসিনীও এসেছেরান্নাঘরে বাতি জ্বলছেরাবেয়া ব্যস্ত হয়ে এঘরওঘর করছেবাবা ভেতরের বারান্দায় ইজিচেয়ারে শুয়ে ঘন ঘন সিগারেট খাচ্ছেনআমাকে দেখে যেন একটু জোর পেলেনতাের ছােটখালাকে খবর দিয়েছিস খােকা?

শঙ্খনীল কারাগার 

জ্বি দিয়েছিআপনি কখন এসেছেন

আমার একটু দেরি হয়ে গেলতাের আজিজ খাকে মনে আছে? ঘড়ির দোকান ছিল যে, আমার খুব বন্ধুমানুষসে হঠাৎ মারা গেছেগিয়েছিলাম তার বাসায়। 

বাবা যেন আমার কাছে কৈফিয়ৎ দিচ্ছেন, এমন ভাবভঙ্গি করতে লাগলেন, আজিজ খাঁর বউ ঘন ঘন ফিট হচ্ছেএক বার মনে করলাম থেকেই যাইভাগ্য ভালাে থাকি নি, নিজের ঘরে এত বড়াে বিপদ। 

বিপদ কিসের বাবা? | নাবিপদ অবশ্যি নয়কিন্তু রাতে এমন একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছিযত বারই মনে হয়, হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে আসেকিছুক্ষণ আগে রাবেয়াকে বলেছি সেকথা। 

কী স্বপু

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৩

নানা, রাতের বেলা কেউ স্বপ্ন বলে নাকি রে? যা তুই, রাবেয়ার কাছে গিয়ে বস একটু। 

ঘরে যদিও অনেকগুলি প্রাণী জেগে আছি তবু চারদিক খুব বেশিরকম নীরবরান্নাঘরে দুএকটি বাসনকোশন নাড়ার শব্দ ছাড়া আর কিছুই শােনা যাচ্ছে নাবাবা অবশ্যি মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে কী যেন বলছেনতাঁর একা একা কথা বলার অভ্যাস আছেমাঝে মাঝে যখন মেজাজ খুব ভালাে থাকে, তখন গুনগুন 

করে গানও গানকথা বোেঝা যায় না, মন মন রে এই লাইনটি অস্পষ্ট শোনযায়রাবেয়া বলে, বাবার নৈশ সংগীতরাবেয়াটা এমন ফাজিল। 

 রান্নাঘরে গিয়ে দেখি একটা মস্ত এলুমােনিয়ামের সসপ্যানে পানি ফুটছেরাবেয়ার ঘুম ঘুম ফোলা মুখে আগুনের লাল আঁচ এসে পড়েছেসে আমার দিকে তাকিয়ে কি ভেবে অল্প হাসলআমি বললাম, হাসছিস যে

এমনিসুহাসিনী মাসির আমি কী নাম দিয়েছি জানিস? কী নাম ? কুহাসিনী মাসিওর হাসি শুনলেই আমার গা জ্বলেএকটু আগে কী বলেছে জানিস

কী বলেছে

থাক, শুনে কাজ নেইবল না

বলে, আজ তােমার মার জন্যে এসেছি, এক দিন তােমার জন্যেও আসব খুকিবলতে বলতে রাবেয়া মুখ নিচু করে হাসলসে মনে হল কথাটা বলে ফেলে বেশ লজ্জা পেয়েছেহঠাৎ করে ব্যস্ত হয়ে কী খুঁজতে লাগল মিটসেফেআমি বললাম, তাের ভাবভঙ্গি দেখে তাে মনে হচ্ছে বেশ খুশিই হয়েছিস শুনে। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৩

তুই একটা গাধা। 

লজ্জায় রাবেয়া লাল হয়ে উঠলআমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, লজ্জা পাওয়ার কী হয়েছে

 যা! লজ্জা পেলাম কোথায়, তাের যে কথা! যাই, দেখে আসি রুনুঝুনুরা মশারি ফেলে ঘুমিয়েছে কি না, যা মশা। 

রাবেয়া আমার পাঁচ বৎসরের বড়এই বয়সে মেয়েরা খুব বিয়ের কথা ভাবেতাদের অন্তরঙ্গ সখীদের সাথে বিয়ে নিয়ে হাসাহাসি করেরাবেয়ার একটি বন্ধুও নেইআমিই তার একমাত্র বন্ধুসুহাসিনী মাসির সেই কথাটি হয়তাে এই জন্যেই বলেছিল আমাকে

আর আমি এমন গাধা, তাকে উল্টো লজ্জা দিয়ে ফেললামমেয়েরা লজ্জা পেলে এত বেশি অপ্রস্তুত হয় যে, যে লজ্জা দিয়েছে তার অস্বস্তির সীমা থাকে না

ঘরে খুব হৈহৈ করে বেড়ালেও রাবেয়া ভীষণরকম লাজুককলেজে যাওয়া বন্ধ করার ব্যাপারটিই ধরা যাকতিন বছর আগে হঠাৎ এক দিন এসে বলল, বাবা, আমি আর কলেজ করব না। 

বাবা অবাক হয়ে বললেন, কেন মা? এমনিমা বললেন, রাবেয়া, তােমাকে কি কেউ কিছু বলেছে

না মা, কেউ কিছু বলে নিকোনাে চিঠিফিটি দিয়েছে নাকি কোনাে ছেলে? না মাআমাকে চিঠি দেবে কেন

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৪

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *