হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৩১

বাবা মন্টুকে নিয়ে মহা উৎসাহে রান্না শুরু করেন।

শঙ্খনীল কারাগারঝুনু চলে যাবার পরপরই আমি একলা পড়ে গেছি। 

সবাই সবার কাজ নিয়ে আছেবাসায় আমার তেমন কোনাে কাজ নেইশুয়ে বসে সময় কাটাতে হয়কাজেই আমি দেরি করে বাসায় ফিরিসেদিন রাত এগারটার দিকে ফিরেছি, দেখি রাবেয়া মুখ কালাে করে বসে আছে আমার ঘরে। 

কী হয়েছে রাবেয়া ? কিছু হয় নিতুই হাতমুখ ধুয়ে আয়, বলছিবল শুনি কী ব্যাপারতুই কলেজে যাবার পরপরই খালা এসেছিলেন। কী জন্যে ? তুই জানিস না কিছু

না তাে‘ 

কিটকির বিয়েআগামী কাল রাতেই সব সেটেল হবেখালা সবাইকে যেতে বলেছেনগাড়ি পাঠাবেন। 

এক রিটায়ার্ড ডিস্ট্রিক্ট জজের ছেলেফরেন সার্ভিসে আছেফ্রান্সে পােস্টেডছুটিতে এসেছে, বিয়ে করে ফিরবেম্যানিলাতেই নাকি কিটকির সঙ্গে আলাপ হয়েছিলছেলে গিয়েছিল সেখানে কী কারণে যেনকিটকির সঙ্গে জানাজানি হয়কিটকিরও ছেলে খুব পছন্দ। 

এসব আমাকে শুনিয়ে কী লাভ রাবেয়া ? কোনাে লাভ নেইরকম হল কেন? চুপ করে আছিস যে

আমি চুপ করেই রইলামআমার কী করার আছে? আমি কী করতে পারতাম? রাবেয়া একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আমার দিকেকেঁদে ফেলবে কিনা কে জানেরাবেয়া ফিসফিস করে বলল, আমার আর এখানে থাকতে ভালাে লাগছে। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৩১

 আমি পাশ করলেই বাইরে কোথাও চলে যাবথাকব একা একাআর খােকা, শােন। 

বলতুই একটা গাধা, ইডিয়েটআমি তাের মুখে থুথু দিই‘ 

আমি গায়ের শার্ট খুলে কলঘরের দিকে যাইরাবেয়া আসে আমার পিছনে পিছনেএক সময় ধরা গলায় বলে, খােকা, তুই রাগ করলি? ছিঃ, রাগ করবি নাআমার কথায় রাগ করতে আছে বােকা

খােকা

গত পরশু সন্ধ্যাবেলা পৌছেছি এখানেস্টেশনে স্কুলের সুপারিনটেনডেট এসেছিলেন নিজেইভারি ভালােমানুষসারাক্ষণই মা মা লে ডাকছেনতার নিজের টাকায় স্কুল, নিজের জমির উপর দোতলা স্কুলঘরনিজের সমস্ত সঞ্চয় ঢেলে দিয়েছেন বলেই প্রতিটি জিনিসেওপর অসাধারণ মমতাআর যেহেতু আমি স্কুলের এক জন, কাজেই তাভালােবাসার পাত্রী। 

ট্রেন থেকে খুব ভয়ে ভয়ে নেমেছিলামনতুন জায়গাকাউকে চিনি না, জানি নাকিন্তু তাঁকে দেখে সব ভয় কেটে গেলকাউকে কাউকে দেখলে মনে হয় যেন অনেক দিন আগে তার সঙ্গে গাঢ় পরিচয় ছিল, ঠিক সেরকমতিনি প্রথমে তাঁর বাসায় নিয়ে গেলেন

বাসায় তিনি আর সুরমাএই দুটিমাত্র প্রাণীসুরমা তাঁর মেয়েরাতের খাওয়া সেরে তিনি আমাকে হােস্টেলে পৌছে দিলেনসতের জন ছাত্রী থাকে সেখানেআমি হয়েছি তাদের হােস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট। ছােট্ট একটা লাল ইটের দালানসামনে গাঁদা ফুলের এক টুকরাে বাগানপেছনেই পুকুরসমস্ত মন জুড়িয়ে গেছে আমার

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৩১

 খােকা, তােদের সঙ্গে যখন থাকতাম তখন এক ধরনের শান্তি পেয়েছি, ন্য ধরনেরএখানে মনে হচ্ছে জীবনের সমস্ত বাসনা কামনা কেন্দ্রীভূত য়ে গেছেআর বেশি কিছু চাইবার নেইকাল রাতে ছাদে বসে ছিলাম একা একাকেন যেন মনে হল, কটু কাঁদি নির্জনেমার কথা ভেবে, রুনুর কথা ভেবে দু এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলিকিন্তু একটুও কান্না আসল না! কেন কাঁদব, বল ? প্রচুর দুঃখ আছে আমার

এত প্রচুর যে কোনাে দিন কেউ জানতেও পারবে নাকিন্তু বুও আমি খােকার মতাে ভাই পেয়েছি, কিটকির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনে যেভাই আমাকেই সান্ত্বনা দিতে আসেরুনু, ঝুনু, মন্টু, নিএরা আমার পারুল বােন, ম্পা ভাইচারদিকে এমন চাঁদের হাটে কি কোনাে দুঃখ থাকে? মন্টু একটি কবিতাবই উৎসর্গ করেছে আমাকেসবগুলি কবিতা তাশা আর বেদনা নিয়ে লেখাআমার ভেরের সবটুকু সে কী করে দেখে নিল ভেবে অবাক আমিসেই যে দুটি লাইন । 

 ‘দিতে পারাে একশাে ফানুস এনে

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার শেষ খণ্ড

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *