হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৪

তবে কলেজে যাবে না কেন? এমনিনা, এমনি নাবল তােমার কী হয়েছে

রাবেয়া হঠাৎ ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলল, মা, ছেলেরা আমাকে মা কালী বলে ডাকে

শঙ্খনীল কারাগার 

আমাদের ভেতর রাবেয়াই শুধু মার রং পায় নিযতটুকু কালাে হলে মায়েরা মেয়েদের শ্যামলা বলেন, রাবেয়া তার চেয়েও কালােকিন্তু ছেলেরা শুধু গায়ের রংটাই দেখল

ছেলে| তাকিয়ে দেখি সুহাসিনী মাসিধবধব করছে গায়ের রং, ফোলা ফোলা চোখে 

এক বেমানান চশমাআমি উঠে দাঁড়ালাম। 

খামাখা তােমার বাবা আমার ঘুম ভাঙিয়ে এনেছে, এখনাে অনেক দেরিনটার আগে নয়” 

আমি চুপ করে রইলামসুহাসিনী মাসি বললেন, মেয়েটি কই? লম্বামত মেয়েটি

আসবে এক্ষণি, কেন? এক কাপ চা করে দিতে বলতামএই যে, খুকি, মাসিকে চা করে দাও এক কাপ। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৪

রাবেয়া হাসিমুখে বলল, দিই, আপনি বসবেন এখানে? না, আমি একটু শােব ভেতরের ইজিচেয়ারেরাবেয়া তাকাল আমার চোখে চোখে, তাের লাগবে নাকি এক কাপ

তাহলে পাঁচ কাপ দিবাবাকে এক কাপ, আমার নিজের দু কাপ। 

রাবেয়া চায়ের সরঞ্জাম সাজাতে লাগলঅভ্যস্ত নিপুণ হাত, দেখতে ভালাে লাগেআমি বললাম, মাসির বয়স কত রে

অনেকআমি ছাড়া সবাই তাে তাঁর হাতেদেখলে মনে হয় না, তাই না? মার ব্যথাটা একটু কম মনে হয়। 

বার মা এমন কষ্ট পেলেন! তােরা তাে সুখে আছিস, কষ্ট যা তা তাে মেয়েদেরইপেটে ছেলেমেয়ে আসা মানেই এক পা কবরে রাখা। 

আমি বললাম, কষ্টটা যদি পুরুষরাও পেত, তাহলে তুই খুশি হতি

জানি না‘ 

বলেই রাবেয়া হঠাৎ কী মনে করে হাসতে লাগলহাসির উচ্ছ্বাসে পেয়ালার দুধ গেল উন্টে, আঁচল খসে পড়ল মেঝেয়। 

অবাক হয়ে বললাম, হাসির কী হয়েছে? এত হাসছিস কেন? একটা গল্প মনে পড়ছে, তাই হাসছি‘ 

কী গল্প? বাজে গল্প, তবে খুব মজারশুনলে তুই নিজেও হাসবিশুনবি? বল। 

একদল মেয়ে আল্লাহর কাছে নালিশ করলতাদের বক্তব্য ছেলেমেয়ে হওয়ার ব্যথাটা শুধু মেয়েদেরই হবে কেন? এবার থেকে ছেলেদেরও হতে হবে, ব্যথার ভাগও সমান সমানআল্লাহ্ বললেন, ঠিক আছে, তাই হবেতারপর হল কি শােন

মেয়েদের এই দলটির যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাঁর ব্যথা শুরু হলকিন্তু কি আশ্চর্য স্বামী বেচারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কোনাে ব্যথাফ্যতা নেইএদিকে তাদের গাড়ির ড্রাইভার ছুটির দরখাস্ত করেছে, তার নাকি হঠাৎ ভীষণ ব্যথা শুরু হয়েছে পেটে। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৪

তারপর?‘ 

তারপর আবার কি? মেয়েরা বলল, আল্লাহ্ তােমার পায়ে পড়িব্যথার ভাগাভাগি আর চাই নাআমাদের কষ্ট আমাদেরই থাকতুই হাসলি না একটুও, আগে শুনেছিস নাকি?” 

তবে? নােংরা গল্প, তাই হাসলাম নাওঃ। 

রাবেয়া চায়ের পেয়ালা হাতে বেরিয়ে গেলসে খুব অপ্রস্তুত হয়েছেচোখ লজ্জায় ভিজে উঠেছেআমার খারাপ লাগতে লাগলঅন্য সময় হলে গল্পেই প্রচুর হাসতামআজ পারি নিহয়তাে মায়ের কথা ভাবছিলাম বলেচায়ের পেয়ালা হাতে বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই দেখি মন্টু গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে এসেছে। 

কিরে মন্টু? ঘুম আসছে না দাদা। 

কেন? রুনু ঝুনু ঘুমিয়ে পড়েছে, আমার একা একা ভয় লাগছেকিসের ভয়?

রাবেয়া রান্নাঘরে ফিরে যাচ্ছিল, মন্টু ডাকল, আপা, আমি চা খাব‘ 

এক ফোঁটা ছেলের রাত তিনটের সময় চা চাইসিগারেটও লাগবে নাকি বাবুর? দিই বাবার কাছ থেকে এনে?‘ 

আপা, ভালাে হবে না বলছি। 

ঘর থেকে কাপ নিয়ে আয় একটাদেখিস, ফেলে দিয়ে একাকার করিস। 

ভাের হয়ে আসছে, কাক ডাকছেমুরগির ঘরে মুরগিগুলি সাড়াশব্দ দিচ্ছে, চাঁদের আলােও ফিকে হয়ে এসেছেদাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাের হওয়া দেখছিভেতরের ঘর থেকে বাবা বেরিয়ে এলেন, ভীত গলায় ডাকলেন, খােকা। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৫

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *