‘যান আপা, আপনি তো ভারি ইয়ে...মা ডাকলেন তাই।
বেশ বেশ, তা এমন গলদা চিংড়ির মতাে লাল হয়ে গেছ যে! গরমে না হৃদয়ের উত্তাপে?
‘যান আপা, ভাল্লাগে না। ‘নিন, নিন, ভিটকি বেগম––চা নিন। ‘কি সব সময় ভিটকি ডাকেন, জঘন্য লাগে।‘ ‘কিটকির কি কোনাে মানে আছে? তাই ভিটকি ডাকি। ‘যেন ভিটকির কত মানে আছে।
‘আছেই ভাে। ভিটকি হচ্ছে ভেটকি মাছের স্ত্রীলিঙ্গ। অর্থাৎ তুই একটি গভীর জলের ভেটকি ফিশ, বুঝলি ?
বেশ, আমি গভীর জলের মাছ। না, চা খাব না।‘
কাঁদো কাঁদো মুখে উঠে দাঁড়াল কিটকি। কাউকে কিছু বলার অবসর না দিয়ে ঝড়ের মতাে বেরিয়ে গেল। রাবেয়া হেসে উঠল হাে হাে করে। বলল, বড়াে ভালাে মেয়ে।
একটু অহংকার আছে, তবে মনটা ভালাে। “তাই নাকি?”
‘হ্যাঁ, আমার ভীষণ ভালাে লাগে। আর আমার মনে হয় কি জানিস?
কী মনে হয়? ‘মনে হয় মেয়েটির শৈশবে তাের দিকে যে টান ছিল, তা যে এখনাে আছে তাই নয়––চাঁদের কলার মতাে বাড়ছে।
‘তাের যত বাজে কথা রাবেয়া বলল, মেয়েটির কথা ছেড়ে দিই, তাের যে যােল আনার উপর দু’ আনা, আঠারাে আনা টান তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। কান–টান লাল করে একেবারে টমেটো হয়ে গেছিস, আচ্ছা গাধা তাে তুই!‘
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৭
রাবেয়া হাসতে হাসতে ভেঙে পড়ল। রুনু এসে ঢুকল খুব ব্যস্তভাবে, হাতে একটা লুডুবাের্ড।
‘কিরে রুন? ‘কিটকি আপার কী হয়েছে? ‘কেন?‘ ‘চুপচাপ বসে আছে। আগে বলেছিল লুডু খেলবে, এখন বলছে খেলবে না।‘
রাবেয়া উচু গলায় হাসল আবার। রুনুকে বললাম, রুনু, মন্টু কোথায়? মন্টুকে দেখছি না তাে।
মন্টু হাসপাতালে গেছে। হাসপাতালে কার সঙ্গে গেল, খালার সঙ্গে? ‘না, একাই গেছে। তার নাকি খুব খারাপ লাগছিল। তাই একা একাই গেছে। ‘কোন হাসপাতালে, চিনবে কী করে?
চিনবে। তার স্কুলের কাছেই। চা–টা খেয়ে গিয়েছে? না, যায় নি।
মানে ? শুয়ে পা দোলাচ্ছিল। হঠাৎ কি মনে করে উঠে বসল, ‘খােকা তুই শা িfাখতে চাস আমার সঙ্গে?‘
‘ কী নিয়ে শুনি ? ‘মা ছেলে হলে কি মেয়ে হবে, এই নিয়ে।‘
‘আহ, খা না শট। শা6ি। তর কি মনে হয় ছেলে হবে? ‘আমার ঠুি মনে হয় না। ‘আহ, বল না একটা কিছু। ‘ছেলে।‘
‘আমার মনে হয় মেয়ে। যদি ছেলে হয়, তবে আমি তােকে একটা সিনেমা দেখার পয়সা দেব। আর মেয়ে হলে তুই কী দিবি আমাকে?
“কি বাজে বকিস। ভাল্লাগে না। ‘আহা, বল না কী দিবি? প্লীজ বল। ক্লাস শেষ হল দেড়টায়।
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৭
আতিক ছাড়ল না, টেনে নিয়ে গেল তার বাসায়। একটি মেয়ে নাকি প্রেমপত্র লিখেছে তার কাছে। সত্যি মেয়েটিই লিখেছে, না কোনাে ছেলে ফাজলামি করেছে, তাই ভেবে পাচ্ছে না। তার আসল সন্দেহটা আমাকে নিয়ে, আমিই কাউকে দিয়ে লেখাই নি তাে। যত বার বলছি, আজ ছেড়ে দাও, আরেক দিন কথা হবে। আমার একটু কাজ আছে।‘ ততই সে চেপে ধরে।
উঠতে গেলেই বলে, ‘কী এমন কাজ বল? কী যে কাজ, তা আর বলতে পারি না লজ্জায়। অস্বস্তিতে ছটফট করি। বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল। আমাকে দেখেই ওভারশীয়ার কাকু দৌড়ে এলেন, ‘খােকা, তােমার মার অবস্থা বেশি ভালাে নয়। সবাই হাসপাতালে গেছে। তুমি কোথায় ছিলে? যাও, তাড়াতাড়ি চলে যাও। রিক্সাভাড়া আছে ?
আমার পা কাঁপতে লাগল। আচ্ছন্নের মতাে রিক্সায় উঠলাম। সমস্ত শরীর টলমল করছে।
কালােমলত একটি মেয়ে কাঁদছে। কী হয়েছে তার কে জানে। রাবেয়া বাবার হাত ধরে রেখেছে। রুনু–ঝুনুকে দেখছিনা। বাচ্চা বােনটা কাঁদছে ট্যাট্যা করে। খালা কোলে করে আছেন তাকে। খালা বললেন, ‘দেখ থােকা, কি সুন্দর ফুলের মতাে বােন হয়েছে।
হ্যাঁ, খুব সুন্দর ফুলের মতাে বােন হযেছে একটি।
Read More