হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৭

যান আপা, আপনি তো ভারি ইয়ে...মা ডাকলেন তাই। 

বেশ বেশ, তা এমন গলদা চিংড়ির মতাে লাল হয়ে গেছ যে! গরমে না হৃদয়ের উত্তাপে?

শঙ্খনীল কারাগার 

যান আপা, ভাল্লাগে নানিন, নিন, ভিটকি বেগমচা নিনকি সব সময় ভিটকি ডাকেন, জঘন্য লাগেকিটকির কি কোনাে মানে আছে? তাই ভিটকি ডাকিযেন ভিটকির কত মানে আছে। 

আছেই ভােভিটকি হচ্ছে ভেটকি মাছের স্ত্রীলিঙ্গঅর্থাৎ তুই একটি গভীর জলের ভেটকি ফিশ, বুঝলি

বেশ, আমি গভীর জলের মাছনা, চা খাব না‘ 

কাঁদো কাঁদো মুখে উঠে দাঁড়াল কিটকিকাউকে কিছু বলার অবসর না দিয়ে ঝড়ের মতাে বেরিয়ে গেলরাবেয়া হেসে উঠল হাে হাে করেবলল, বড়াে ভালাে মেয়ে। 

একটু অহংকার আছে, তবে মনটা ভালােতাই নাকি?” 

হ্যাঁ, আমার ভীষণ ভালাে লাগেআর আমার মনে হয় কি জানিস

কী মনে হয়? মনে হয় মেয়েটির শৈশবে তাের দিকে যে টান ছিল, তা যে এখনাে আছে তাই নয়চাঁদের কলার মতাে বাড়ছে। 

তাের যত বাজে কথা রাবেয়া বলল, মেয়েটির কথা ছেড়ে দিই, তাের যে যােল আনার উপর দুআনা, আঠারাে আনা টান তাতে কোনাে সন্দেহ নেইকানটান লাল করে একেবারে টমেটো হয়ে গেছিস, আচ্ছা গাধা তাে তুই!‘ 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৭

রাবেয়া হাসতে হাসতে ভেঙে পড়লরুনু এসে ঢুকল খুব ব্যস্তভাবে, হাতে একটা লুডুবাের্ড। 

কিরে রুন? কিটকি আপার কী হয়েছে? কেন?চুপচাপ বসে আছেআগে বলেছিল লুডু খেলবে, এখন বলছে খেলবে না‘ 

রাবেয়া উচু গলায় হাসল আবাররুনুকে বললাম, রুনু, মন্টু কোথায়? মন্টুকে দেখছি না তাে। 

মন্টু হাসপাতালে গেছেহাসপাতালে কার সঙ্গে গেল, খালার সঙ্গে? না, একাই গেছেতার নাকি খুব খারাপ লাগছিলতাই একা একাই গেছেকোন হাসপাতালে, চিনবে কী করে

চিনবেতার স্কুলের কাছেইচাটা খেয়ে গিয়েছে? না, যায় নি। 

মানে ? শুয়ে পা দোলাচ্ছিলহঠাৎ কি মনে করে উঠে বসল, খােকা তুই শা িfাখতে চাস আমার সঙ্গে?‘ 

কী নিয়ে শুনি ? মা ছেলে হলে কি মেয়ে হবে, এই নিয়ে‘ 

আহ, খা না শটশা6িতর কি মনে হয় ছেলে  হবে? আমার ঠুি মনে হয় নাআহ, বল না একটা কিছুছেলে‘ 

আমার মনে হয় মেয়েযদি ছেলে হয়, তবে আমি তােকে একটা সিনেমা দেখার পয়সা দেবআর মেয়ে হলে তুই কী দিবি আমাকে

কি বাজে বকিসভাল্লাগে নাআহা, বল না কী দিবি? প্লীজ বল। ক্লাস শেষ হল দেড়টায়। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৭

আতিক ছাড়ল না, টেনে নিয়ে গেল তার বাসায়একটি মেয়ে নাকি প্রেমপত্র লিখেছে তার কাছেসত্যি মেয়েটিই লিখেছে, না কোনাে ছেলে ফাজলামি করেছে, তাই ভেবে পাচ্ছে নাতার আসল সন্দেহটা আমাকে নিয়ে, আমিই কাউকে দিয়ে লেখাই নি তােযত বার বলছি, আজ ছেড়ে দাও, আরেক দিন কথা হবেআমার একটু কাজ আছেততই সে চেপে ধরে

উঠতে গেলেই বলে, কী এমন কাজ বল? কী যে কাজ, তা আর বলতে পারি না লজ্জায়অস্বস্তিতে ছটফট করিবাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেলআমাকে দেখেই ওভারশীয়ার কাকু দৌড়ে এলেন, খােকা, তােমার মার অবস্থা বেশি ভালাে নয়সবাই হাসপাতালে গেছেতুমি কোথায় ছিলে? যাও, তাড়াতাড়ি চলে যাওরিক্সাভাড়া আছে

আমার পা কাঁপতে লাগলআচ্ছন্নের মতাে রিক্সায় উঠলামসমস্ত শরীর টলমল করছে। 

কালােমলত একটি মেয়ে কাঁদছেকী হয়েছে তার কে জানেরাবেয়া বাবার হাত ধরে রেখেছেরুনুঝুনুকে দেখছিনাবাচ্চা বােনটা কাঁদছে ট্যাট্যা করেখালা কোলে করে আছেন তাকেখালা বললেন, দেখ থােকা, কি সুন্দর ফুলের মতাে বােন হয়েছে। 

হ্যাঁ, খুব সুন্দর ফুলের মতাে বােন হযেছে একটি

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-৮

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *