হুমায়ূন আহমেদের লেখা সূর্যের দিন খন্ড-২

খোকন খাওয়া শেষ করে যখন হাত মুখ ধুচ্ছে তখন বড়চাচা বেরুলেন তার ঘর থেকে। খোকনের সামনে দাড়িয়ে শান্ত স্বরে বল লেন—সাতটা বাজার দশ মিনিট আগে আমি তোমাকে এ বাড়িতে দেখিনি, কোথায় ছিলে? খোকন বলতে চেষ্টা করলোবাথরুমে ছিলো। বলতে পারলো না। কথা গলা পর্যন্ত এসে অলিজিভে ধাককা খেয়ে থেমে গেলো। বড়চাচা দাড়িতে হাত বোলাতেবোলাতে বললেন চারদিকে হাঙ্গামা হজ্জত হচ্ছে, এর মধ্যে তুমি বাইরে। স্বাধীনতা বেশি পেয়ে যাচ্ছে।

সূর্যের দিন

যাই হোক, তুমি কোথায় ছিলে কি করছিলে তা শুদ্ধ বাংলায়লিখে আজ রাত দশটার মধ্যে আমার কাছে জমা দেবে। 

 ত্বি অস্থা। 

ও কলি সারাদিন ঘর থেকে বেরুবে না। সারাদিন থাকবে দোত লায়। নিচে নামবে না। 

 জি আচ্ছা। ৫ মিছিল টিছিলে গিয়েছিলে নাকি ? ঃ জ্বি না। ঃ অচ্ছিা ঠিক আছে। যাও। 

খোকন দোতলায় তার নিজের ঘরে এসে মুখ কালো করে বসে রইলো। কি জন্যে আজ ফিরতে দেরি হয়েছে তা লেখাটা ঠিক হবে কি বুঝতে পারলো না। বিষয়টা গোপনীয়। কিন্তু বড়চাচার কাছে গােপন করা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে। নির্ঘাৎ ধরে ফেলবেন। 

সূর্যের দিন খন্ড-২

খোকন একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সত্যি কথাই লিখতে শুরু করলাে। লেখা হলো সাধু ভাষায় 

“আজ (২২শে ফেব্রুয়ারী ১৯৭১) আমরা একটি গোপন দল করি মাহি। দলটির নাম “ভয়লি-হুয়”। দলের সদস্য সংখ্যা ছয়। সদস্যরা কিছুদিনের মধ্যেই পায়ে হাঁটিয়া পৃথিবী ঘুরিতে বাহির হইবে। আমাদের প্রথম গন্তব্য আফ্রিকার গহীন অরণ্য। কঙ্গো নদীর পাশ্ববর্তী অঞ্চল। প্রায় দশটা বাজে। 

ভয়ান-ছয় বাহিনীর দু’জন সদস্যকে দেখা গেল খোকনদের বাড়ির সামনে হাঁটাহাঁটি করছে। দুজনই বেশ চিন্তিত। একজনের নাম 

সজ্জিাদ বললো, তিল মারলে কেমন হয়? খোকনের ঘরের জানালায় চল ছিল মারি।’ কোনটা ওর জানালা? 

সাজ্জাদ চুপ করে গেল। খোকনের ঘর কোনটি তা তার জানা নেই। একদিন মাত্র সে এসেছিলো এ বাড়িতে, তাও ভেতরে ঢােকেনি। বন্টু বললো, “চল দারোয়ানকে গিয়ে বলি ভেতরে খবর দিতে। খোকনকে গিয়ে বলবে, দু’জন বন্ধু এসেছে, খুব জরুরী দরকার। যদি না যায় ? 

যাবে না মানে, একশবার যাবে। তাহলে তুই গিয়ে বল।আমি একা বলব কেন? আমার কি দায় পড়লে? 

 দু’জনের কাউকেই যেতে হলো না। দেখা গেলাে দারােয়ান নিজেই আসছে। গেটের ভেতরে তাকে যে রকম ভয়ংকর মনে হচ্ছিল, এখন আর সেরকম মনে হচ্ছে না। 

সূর্যের দিন খন্ড-২

ও আপনাদের ডাকে। কে ডাকে? বড় সাহেব। আসেন আমার সাথে। 

বন্টু এবং সাজ্জাদ মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো। বড় সাহেব মানে খােকনের বড়চাচা। তিনি তাদের ডাকবেন কেন শুধু শুধু এই সময় টুনুকে আসতে দেখা গেল। সে বােধ হয় কিছু একটা আঁচি করেছে। সাজ্জাদ দেখলো—টুনু দাঁড়িয়ে পড়েছে। পর মহর্তেই টুনুকে লম্বা লম্বা পা ফেলে পাশের গলিতে ঢুকে পড়তে দেখা গেলো। এরকম ভীতুর ডিমকে ভয়াল-ছয়ে ঢোকানো খুব ভুল হয়েছে। 

বড়চাচা ইজিচেয়ারে শুয়ে ছিলেন। ওদের দেখে উঠে বসলেন।  খোকনের সঙ্গে মনে হয় তোমাদের খুব জরুরী প্রয়োজন। অনেকক্ষণ ধরেই দেখছি ঘুরঘুর করছ। 

ওরা জবাব দিল না। বড়চাচা বললেন, “তোমরা দুজনেই কি ‘ভয়াল-ছয়’-এ অাছো?’ সাজ্জাদ ও বন্টু মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো। এর মানে কি? ভয়াল-ছয়ের কথাতাে তার জানার কথা নয়। 

কার্পেট থেকেই লালাভ একটি আভা ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। ঘরের দেয়াল ঘেঁষে উচু উচু চেয়ার। চেয়ারের গদিগুলোও লাল রঙের। মাঝখানের মস্ত টেবিলটি কি পাথরে তৈরি? খােকনকে জিজ্ঞেস করতে হবে। 

সন্দেশ খাচ্ছো না কেন? যে ক’টি খেতে পার খাও। 

গব গব করে পাঁচ ছ’টা সন্দেশ শেষ করে দেয়াটা অভদ্রতা হবে ভেবেই বটু ইতস্তত করছিল। বড়চাচা বললেন, “খেতে ইচ্ছে হলে খাবে। না খাওয়ার মধ্যে কোনো ভদ্রতা নেই।’ 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা সূর্যের দিন খন্ড-৩

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *