হুমায়ূন আহমেদের লেখা সূর্যের দিন খন্ড-৪

 অমরা ছয় জন বন্ধু মিলে একটা দল করেছি। দলের নাম ভয়াল-হয়।

সূর্যের দিনবল কি ? খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। দলের কাজ কি? ও অমিরা ভূ-পর্যটন করব।ভূ-পর্যটন করবে? 

 হ্যা। প্রথমে যাব আফ্রিকা।বাহ বেশ মজার তো! 

বাবা এবার আর অবাক হলেন না। হাসতে লাগলেন। হাসতে হাসতে বলেন, ছোটবেলায় আমিও একটা দল করেছিলাম। আমাদের দলের কাজ ছিল গুপ্তধন খুজে বের করা। কোন গুপ্তধন অমিরা শিশুরা শিখবে, যুবকরা কাজ করবে, বৃদ্ধরা ভাববে। ঠিক না ? 

 হ্যা। 

রকিব সাহেব হঠাৎ করে খানিকটা গম্ভীর হয়ে বললেন, “তোমার কি ধারণা শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন?” 

আমি জানি না। এ নিয়ে কখনাে ভেবেছ ?  না। আমি অবশ্যি অনেক ভেবেছি। আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। শেখ মুজিবকে প্রধানমন্ত্রী করা ছাড়া ওদের উপায় নেই। ইলেক শনে জিতেছেন। কিন্তু ওরা করতে চাচ্ছে না। ওদের অজুহাত বের করতে হবে। কি অজুহাত দেবে সেটাও একটা সমস্যা। সমস্যা নয়? 

 ঃ হ্যা। 

এদিকে ভুট্টো সাহেব বলেছেন, পশ্চিম পাকিস্তানে অামার দল সবচে বেশি ভােট পেয়েছে। তার মানে কি বলতে পার? 

সূর্যের দিন খন্ড-৪

  না। . ভুট্টো সাহেবই পাকিস্তানকে দুটি অংশ হিসেবে ভাবছেন। অথচ তারা দোষ দিচ্ছে আমাদের। ভাবখানা এ রকম যেন আমরাই পাকি শুনিকে দুভাগে ভাগ করতে চাচ্ছি। 

আমরা চাচ্ছি না ? 

ওরা যা শুরু করেছে তাতে চাওয়াই উচিত। আমি অন্তত চাই। তবে যারা একসময় পাকিস্তানের জন্যে অন্দোলন করেছেন, দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছেন, তারা নিশ্চয়ই চান না। যেমন তােমার বড়চাচা। 

বড়চাচা চান না ? 

ও মনে হয় না। তবে আমার ভুলও হতে পারে। | শেষ পর্যন্ত কি হবে? পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাবে? 

ঃ নির্ভর করছে ওদের ওপর। ওরা যদি আমাদের ন্যায্য অধিকার স্বীকার করে তাহলে হয়তোবা ওদের সঙ্গে থাকা যাবে। কিন্তু ওরা অমিাদের বিশ্বাস করতে পারছে না। পরিস্থিতি ভাল না। 

বাবা কথা শেষ না করেই চটি ফট ফট করে তার ঘরে ঢুকে গেলেন। খোকন চলে গেল ছাদে। এ বাড়ির ছাদটা প্রকাণ্ড। রেজি বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেলে অনজু অর বিলু। চুন দিয়ে ঘর আঁকা অাছে। 

 খােকন বেশ খানিকক্ষণ একা একা ঘুরে বেড়ালো। ঘুর বেড়াতে ভাল লাগছিলো না, আবার নিচে যেতেও ইচ্ছে করছিলো না। এক সময় 

সূর্যের দিন খন্ড-৪

আসার কোনাে সম্ভাবনা নেই। যতক্ষণ ইচ্ছে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা যাবে। বটু হঠাৎ ফিস ফিস করে বললো-“মুনির অসিছে। তিনি জনেই তাকালো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। মুনির হন হন করে আসছে। তার হাতে কি একটা বই। গল্পের বই নিশ্চয়ই। ওদের দেখতে পেয়েই সে বইখাটের নিচে লুকিয়ে ফেললো। মনিরের সঙ্গে ওদের তেমন ভাব নেই। যে ছেলে প্রতি পরীক্ষায় ফাস্ট হয় তার সঙ্গে কারোর ভাব থাকে না।

ক্লাশটিচার সােলায়মান স্যারের ধারণা, মুনিরের মত ভাল ছাত্র এই স্কুলে এর আগে অরি ভতি হয়নি। পরেও হবে না। গত বৎসর স্কুল ম্যাগ্যজিনে তার একটা ইংরেজি গল্প ছাপা হয়েছে। গল্পের নাম ‘দি বেগার বয়। হেড স্যার সেই গল্প আবরি স্কুল এ্যাসেম্বলীতে পড়ে শুনিয়েছেন এবং বলেছেন, “ক্লাশ সেভেনের ছেলের ইংরেজি দেখলে? বি. এ. এম. এ. পাশরা এমন লিখতে পারবে না। এর গল্পের মরালটা লক্ষ্য করবে। যে ছেলে ভিক্ষা করে তার মধ্যেও মনুষ্যত্ব আছে। 

মুনির স্কুল গেটের কাছে এসে থমকে দাঁড়াল। সন্দেহ ভরা গলায় বললো, এই তোরা কি করছিস ? 

 কিছু করছি না। ও ওয়ালের ওপর বসে আছিস কেন? হেড স্যার নিষেধ করেছেন ? 

সূর্যের দিন খন্ড-৪

আমরা কারাের নিষেধ মানি না। ও ৩, তােরাতাে আবার ভয়াল-ছয়। 

ভয়াল-ছয়টা মুনির এমন ভাবে বললো যেন খুব একটা হাস্যকর ব্যাপার। সাজ্জাজ চুপ করে রইলাে। দলের কথাটা এ রকম জানাজানি হলো কি করে কে জানে। মুনির বললো, “নিষেধ না মানার মধ্যে কোনো বাহাদুরী নেই। 

 না থাকলে নেই, আমরা নিষেধ মানি না। কোনাে নিষেধ মানিস না? : না। তোর শার্টের নিচে এটা কি বই? 

রাতের আতঙ্ক । এটা আমি কাউকে দিতে পারব না। এখনো পড়া হয় নি। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা সূর্যের দিন খন্ড-৫

 

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *