হুমায়ূন আহমেদের লেখা সূর্যের দিন খন্ড-৫

 তোর বই অমরা চাই না। 

তারা চুপ করে গেল। মুনির চলে যাচ্ছে না, দাঁড়িয়েই আছে। বন্টু বললো, “তুই চলে যা। দাঁড়িয়ে আছিস কেন? 

ঃ আমি যাই করি তাতে তাের কি ?

সূর্যের দিন  

তােদের বলি নি এখন চারদিকে ঝামেলা হচ্ছে, এখন ঘরে বসে থাকবি? পাঠ্য বই পড়বি। ট্রানশ্লেসন করবি। 

 জি স্যার বলেছেন। 

 দু’বছর পর এস.এস.সি পরীক্ষা। খেয়াল আছে ? শাহজাহান, বল তো রাইনোসরাস মানে কি? 

গণ্ডার স্যার।রাইনোসরাস বানান কর। 

শাহজাহান টেনে টেনে বললো “অর ওয়াই” বলেই থেমে গেল। হেড স্যার আরো গম্ভীর হয়ে গেলেন। মুনির ফিস ফিস করে বললো, ‘স্যার আমি বলবাে?” 

 না তোমার বলতে হবে না। যাও এখন ঘরে যাও। খবরদার কোনো মিছিলে টিছিলে যাবে না। 

 জি আচ্ছা স্যার।ও আর ঐ বইটা রেখে যাও আমার কাছে। মোট ক পাশ করবার অাগে কোনো আউট বই পড়বে না। যে সব বই পড়ে কিছু শেখা যায় না সে সব বই পড়ার কি মানে? বল কোনো মানে আছে ? 

নেই স্যার। 

 যাও বাড়ি যাও। আর এই, তুমি ঘাস চিবাচ্চ কেন? ঘাস খায় ছাগলে, তুমি কি ছাগল? বল, তুমি ছাগল? 

সূর্যের দিন খন্ড-৫

টুনু মুখ কালাে করে বললো, “জ্বি না স্যার। 

ও ঘাস লতা পাতা এইসব যেন আর খেতে না দেখি। যাও বাড়ি যাও। 

বড় রাস্তার মোড়ে এসে টুনু বললো—সে বাড়ি চলে যাবে। সাজ্জাদ বললাে, “যেতে চাইলে যা, তোকে আমরা বেঁধে রেখেছি ? এটা রাগের কথা। এর পর যাওয়া যায় না। এই সময় একটা বেশ বড়-সড় মিছিল অাসতে দেখা গেল। সমুদ্র গর্জনের মত গর্জন–“জেগেছে জেগেছে বীর জনতা জেগেছে, জাগো জাগো জাগো, বীর জনতা জাগো।” সাজ্জাদ বললো, ‘যাবি নাকি মিছিলে ? কেউ কিছু বললো না। শুধু মুনির বললো, ‘না, স্যার নিষেধ করেছেন।’ 

ওরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। মিছিলটা প্রকাণ্ড। শেষই হতে চায় না। পেছনে চার পাঁচটা পুলিশের ট্রাক। দেখলেই কেমন ভয় লাগে। মুনির ফিস ফিস করে বললো, ‘খুব গণ্ডগোল হবে। চল বাড়ি যাই। 

টিয়ার গ্যাস? কয়েকজন প্রাণপণে চিৎকার করছে, অণ্ডন অগুন। কোনােদিকে নড়ার রাস্তা নেই, তবু এর মধ্যেই সাজ্জাদ প্রাণপণে ছুটছে। বটু তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে। কালো কোট গায়ে দেয়া একটা লোক বললো, “এই খােকার মাটিতে শুয়ে পড়।

দেখছ কি? গুলি হচ্ছে! ওরা কি করছে নিজেরা বুঝতে পারছে না। একজন বুড়ো মানুষ বললেন, কোন খোলা বাড়ি দেখে ঢুকে পড়। কোনো বাড়ির দরজা খোলা নেই। সাজ্জাদের মনে হলো সে আর দৌড়াতে পারছে না। ভান পায়ের নখ উঠে গেছে বা কিছু হয়েছে। এবার পেছন থেকে দ্রীম দ্রীম শব্দ আসছে। 

সূর্যের দিন খন্ড-৫

একতলা একটি বাড়ির গেটে বড়ো মানুষ একজন কে যেন দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হাত বাড়িয়ে ওদের ধরে ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। 

সেদিন ছিল পহেলা মার্চ। ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবী ঘোষণা করেছে সকাল এগারোটায়। বারােটা নাগাদ বাঙালিরা বেরিয়ে পড়েছিল রাস্তায়। সেই জনসমুদ্র দেখে স্তম্ভিত সরকার দুপুর একটায় ঘোষণা করলো বিকেল পাঁচটা থেকে কাফু। কেউ ঘর থেকে বেরুবে না। সেই ঘোষণা বাতিল করে নতুন ঘোষণা দেয়া হলো, কাফু বেলা তিনটা থেকে। যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। রাস্তায় দেখা মাত্র তাদের গুলি করা হবে। 

সাজ্জাদ এবং বটু আটকা পড়ে গেলো একটা অচেনা বাড়িতে। 

খোকনের ছোটচাচী আমিন সাহেব তাকা এয়ারপোর্টে এসে পেঁৗছলেন বিকেল তিনটায়। চারদিক কেমন থমথম করছে। প্রচুর পুলিশ। এয়ারপোর্ট থেকে কেউ বেরুতে পারছে না। 

আমিন সাহেবকে নেবার জন্য কেউ তাগেনি। রাস্তাঘাট ফাঁকা। পুলিশের গাড়ি অার এম্বুলেন্স ছাড়া অার কিছু চোখে পড়ছে না। কাস্টমস-এর একজন অফিসার বললেন—শহরে কাফু জারি হয়েছে। তবে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না। আপনাদের পৌছে দেবার ব্যবস্থা হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। 

আমিন সাহেব দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করলেন। কোনো ব্যবস্থা হলো না। খোকনের ছোটচাচী রাহেলা খুব অস্থির হয়ে পড়লেন। কারণ প্রিসিলার 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা সূর্যের দিন খন্ড-৬

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *