হুমায়ূন আহমেদের লেখা সূর্যের দিন খন্ড-৭

এদের বাড়িটি বেশ বড়। অনেকগুলো কামরা নীলুর দখলে। একটিতে নীলর লাইব্রেরি। সেই লাইব্রেরি দেখে সাজ্জাদ ও বটুর আকেল গুড়ুম। একটা পুচকে মেয়ের এত বই! নীলু বললো, “সব আমার দাদুমণি কিনে দিয়েছেন।’ 

সূর্যের দিন

তুমি পড়েছ সবগুলো?পড়ব না কেন? বটু বললাে-নীল আতংক পড়েছ, দারুণ বই। না পড়ি নি। আমি নিয়ে আসব তোমার জন্যে। 

ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নীলু তার সমস্ত সম্পত্তি দেখিয়ে ফেললো। তাদের সবচে মজা লাগলো দাদুমণের ‘মিথ্যা খাতা দেখে। মিথ্যা খাতায় দাদুমণি সব মিথ্যা, খবরগুলো তুলে রাখেন। খবরের শেষে মজার সব মন্তব্য লেখা থাকে। দু’একটা নমুনা দেয়া যাক।অদ্ভত গাছ। 

সূর্যের দিন খন্ড-৭

(নিজস্ব সংবাদদাতা) নােয়াখালির ছাগল নাইয়াতে জনৈক আহমেদ আলির একটি অদ্ভুত খেজুর গাছ দেখিবার জন্য মানুষের ঢল নামিয়েছে। উক্ত খেজুর গাছটি নামাজের সময় সেজদার ভঙ্গিতে নুইয়া পড়ে। খেজুর গাছের এই অদ্ভুত কাণ্ডের কোনাে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া যাইতেছে না। মন্তব্য  নােয়াখালির ছাগল নাইয়াতে আমি নিজে গিয়েছিলাম। এই জাতীয় গাছের কোনো সন্ধান আমাকে কেহ দিতে পারে নাই। এই মিথ্যা সংবাদ প্রচারের আসল উদ্দেশ্য কি? বুঝিতে পারিতেছি না। 

আবার বমি বমি লাগছে ? নাহ,। 

ও বাড়িতে গেলেই দেখবে শরীর পুরোপুরি সেরে গেছে। বাড়িতে পৌছেই ডাক্তার আনব। ঠিক আছে ? 

 প্রিসিলা বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়লো। বাড়ি পেঁছিতে অবশ্যি দেরি হলো অনেক। নীলক্ষেতের সামনে সমস্ত গাড়ি আটকে রাখা হয়েছে। যেতে দেয়া হচ্ছে না। কেন দেয়া হচ্ছে না তাও কেউ বলছে 

 রাহেলা অসহিষ্ণু গলায় বললেন-কি হচ্ছে?

ও বুঝতে পারছি না তো! আমি অসুস্থ মেয়ে নিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকব নাকি? 

 কিছু তো করার নেই। অপেক্ষা করা যাক। বোধ হয় মিছিল টিছিল আসছে। 

আমি থাকবো না এদেশে, অমি আগামী সপ্তাহেই চলে যাব। রাহেলা কেঁদে ফেললেন। 

কাফুর মধ্যে কোথায় গেল? ? আমি বললাম যাওয়ার দরকার নেই। তবু গেল। ও বল কি ? 

সূর্যের দিন খন্ড-৭

সাজ্জাদের বোন সরু গলায় বললো–এখন কোথায় কোথায় ঘুরছে কে জানে। বোকাসোকা মানুষ।

কাফুর মধ্যে আটকা পড়েছে অরিকি। আসবে, আসবে এখুনি। 

তারা দুই ভাইবোন দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করলো, কেউ এলো না। সাজ্জাদের বৈনি কান্নাকাটি কিছুই করলো না। সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঘরের কাজ করতে লাগলো। দুপুরের পর সাজ্জাদ খুজতে বেরুল। 

তখন শহরে মিছিলের পর মিছিল বেরুচ্ছে। উত্তেজিত মানুষের মুখে একটি মাত্র কথা—শেখ সাহেবের ভাষণ হবে ৭ তারিখে। সেই ভাষণে দারুণ একটা কিছু বলবেন তিনি। 

সজ্জিাদ নানান জায়গায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ালাে। ফার্মগেট, নীলক্ষেত, আজিমপুর। সন্ধার আগে বাড়ি ফিরে শুনলো তার বোন ক্ষীণ স্বরে কাঁদছে। দুলাভাইএখনো ফেরেন নি। 

খোকনের বাড়িতে সন্ধ্যাবেলা চায়ের একটা জমকালো আয়োজন করা হয়েছে। খোকনের মা এবং প্রিসিলা ছাড়া আর সবাই এসে বসেছে খাবার টেবিলে। প্রিসিলার জ্বর কমে গিয়েছে, তবে দুর্বল হয়ে গেছে। বিকেল থেকেই সে ঘুমুচ্ছে। খোকনের একজন মামা পিজির বড় ডাক্তার। তিনি এসে দেখে গিয়েছেন এবং বলেছেন, তেমন কিছু নয় ট্রাভেল সিকনেস। দু’কদিন পুরোপুরি রেষ্টে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে।

সূর্যের দিন খন্ড-৭

 চায়ের টেবিলে ছোটরা কোনো কথা বলতে পারে না। কিন্তু অজি সবাই কথা বলছে। বড়চাচার মুখ হাসি হাসি। তাঁর হাসি দেখেই মনে হচ্ছে আজ আর তিনি রাগ করবেন না। ছোটচাচা একটির পর একটি মজার মজার গল্প বলে যাচ্ছেনে-একবার বেড়াতে গিয়েছিলেন আলাস্কা, সেখানে ঠাণ্ডায় নাকি হঠাৎ তার চোখের মনি জমে গেলো। কিছুই দেখতে পান না। শেষকালে হাতের তালু দিয়ে চোখ ঘষে ঘষে 

গরম করার পর আবার দেখতে পেলেন। 

তারপর একবার স্কুভা ডাইভিং করতে গিয়েছেন প্রশান্ত মহাসাগরে। পানির নিচে বেশিদূর যাননি, অল্প কিছুদুর গিয়েছেন—হঠাৎ তার মনে 

জি না।

খাও কিছু। থােকন তােমার বন্ধুকে কিছু খাবার দিতে বল।

আমার খিদে নেই, আমি কিছু খাব না। 

ও সাজ্জাদ তুমি খাও। আমি খোজ করছি। কি নাম তােমার দুলাভাইয়ের? 

 শমসের আলি। 

বড়চাচা প্রথমেই ফোন করলেন রমনা থানায় আমি মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী। আমার একটা খবর দরকার। গতরাতে কাফু চলাকালীন সময় শমসের নামের…...

“বড়চাচা সব ক’টি থানায় ফোন করলেন। কেউ কোনাে খবর দিতে পারলো নাশমসের আলি নামের কেউ গত রাতে গ্রেফতার হয়নি। বড়চাচা ক্রমেই গম্ভীর হতে শুরু করলেন। এক সময় বললেন-“নিজে না গেলে হবে না। খোকন ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বল। সাজ্জাদ তুমিও চল অামার সঙ্গে। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা সূর্যের দিন খন্ড-৮

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *