বড়চাচা রাত দশটা পর্যন্ত নানান জায়গায় ঘােরাঘুরি করলেন। কোনােই খবর পাওয়া গেল না। তিনি রাগী গলায় বললেন––একটা লােক আপনা আপনি নিখোঁজ হয়ে যাবে ? এটা একটা কথা হলো? বড়চাচার কপালে ভাঁজ পড়লো। সাজ্জাদ ক্রমাগত চোখ মুছছে। তিনি এক সময় বললেন-“পুরুষ মানুষদের কাঁদতে নেই।
কান্না বন্ধ কর। আমি তোমার দুলাভাইকে খুজে বের করব। এখানকার ডিসিএমএলএ আমার পরিচিত। কাল দেখা করব তার সঙ্গে। নাকি এখন যেতে চাও?‘ সাজ্জাদ জবাব দিল না। তিনি বললেন–চল এখনি যাওয়া যাক। ডিসিএমএলএকে পাওয়া গেল না।
সাত তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেবেন রেসকোর্সের মাঠে। ভাের রাত থেকে লোকজন আসতে শুরু করেছে। দোকান পাট বন্ধ। অফিস আদালত কিছু নেই। সবার দারুণ উৎকণ্ঠা। কি বলবেন এই মানুষটি? সবাই তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব মন দিয়ে অজি শুনতে হবে তিনি কি বলেন। আজ তাঁকে পথ দেখাতে হবে। শােনাতে হয়ে অভয়ের বাণী।
বার জন্যে হেড স্যার প্রথমেই একটা প্রচণ্ড ধমক দেবেন। কিন্তু সে রকম কিছু হলো না। স্যার অস্বাভাবিক নরম গলায় বললেন—সাজ্জাদ একটা খবর শুনলাম তােমার দুলাভাইয়ের সম্পর্কে, এটা কি সত্যি?
ওনাকে নাকি পাওয়া যাচ্ছে না ?
সূর্যের দিন খন্ড-৮
সত্যি স্যার। বলকি। আত্মীয়স্বজনকে খবর দিয়েছে তো? ঃ জি স্যার। ঃ আত্মিীয়স্বজন কে কে আছেন?
সাজ্জাদ চুপ করে রইলো। তার তেমন কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। এক মামা আছেন কুড়িগ্রামে পােস্ট মাস্টার। নিকট অত্মিীয় বলতে তিনিই। তাঁর সঙ্গে বহু দিন যাবত যােগাযোগ নেই। হেড স্যার বল লেন, “তোমাদের চলছে কি ভাবে? সঞ্চয় তো মনে হয় তেমন কিছু তোমার দুলাভাইয়ের ছিল না। নাকি ছিল?‘ সাজ্জাদ জবাব দিল না। হেড স্যার চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন-কাল তুমি অবশ্যই আমার সঙ্গে দেখা করবে। বাসা চেন তো?
ও চিনি স্যার। সকালবেলা চলে আসবে। জি আচ্ছা।
এখানে দাঁড়িয়ে তো কিছু শুনতে পাবে না। আরেকটু সামনে যাওয়া দরকার। চল সামনে যাই।
আপনি যান স্যার। আমি বাসায় চলে যাব। সে কি, ভাষণ শুনবে না ? জি না স্যার। আচ্ছা ঠিক আছে যাও। কাল সকালবেলা মনে করে আসবে। মনে থাকবে তাে? ও থাকবে স্যার।
সাজ্জাদ বাসায় গেল না। নীলুদের বাসার দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিল। তার একটু লজ্জা করতে লাগলো। এক সপ্তাহ পর আসছে এখানে। দাদুমণি খুব করে বলে দিয়েছিলেন একটা খবর দেয়ার জন্যে।
দরজা খুললো নীলু। সে থমথমে গলায় বললাে—খুব বকা খাবে দাদুমণির কাছে। দাদুমণি খুব রেগেছেন তোমার ওপর। অমিকে বলেছেন আসলেও যেন ঢুকতে না দিই।
মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে রাহেলী গম্ভীর হয়ে পড়লেন। বেশ জ্বর গায়ে। জরের আঁচে গাল লাল হয়ে আছে। অথচ সকালে বেশ ভাল হিল। অঞ্জ ও বিলর সঙ্গে হৈ চৈ করে খেলেছে। কেমন লাগছে মা?
সূর্যের দিন খন্ড-৮
ও ভাল লাগছে। ও মাথা ব্যথা করে? নাহ। ও শরীর খারাপ লাগছে না?
না তাে। রাহেলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “তুমি একটু সুস্থ হয়ে উঠলেই, আমরা নর্থ ডাকোটায় চলে যাবাে।
আমি যেতে চাই না মা। যেতে চাও না কেন? আমেরিকা তোমার ভাল লাগে না? লাগে।
তাহলে যেতে চাও না কেন? কি আছে এখানে বল? হৈ চৈ গণ্ডগোল। ছিঃ ছিঃ। আমেরিকাতে আমরা ভাল ছিলাম না? ছিলাম।
এবার গিয়েই আমরা একটা বাড়ি কিনে ফেলব। বড় একটা দোতলা বাড়ি। সেখানে বেসমেন্টে থাকবে তোমার খেলার ঘর। শীতের সময় যখন বরফ পড়বে, তখন আমরা দুজনে মিলে নোম্যান বানাবো কেমন? গাজর দিয়ে বানাবাে নাকি। কালো বোতাম দিয়ে চোখ, কেমন ?
প্রিসিলা জবাব দিল না। ঘরের দরজায় অঞ্জু আর বিলু উকি দিচ্ছিল। তাদের হাতে পুড় বাের্ড। রাহেলা বললেন, ‘প্রিসিলার জ্বর। প্রিসিলা খেলবে না। তোমরা এখন ওকে বিরক্ত করবে না।
প্রিসিলা বললো, মা আমি ওদের সঙ্গে খেলতে চাই।” | না। তুমি চুপচাপ শুয়ে থাকবে। | শুয়ে থাকতে আমার ইচ্ছে হচ্ছে না। . : ইচ্ছে না হলেও থাকবে। আমি ডাক্তারকে টেলিফোন করছি।
Read More