ই। বাবা স্যার রেখে দিয়েছেন। স্কুল তাে এখন বন্ধ, কাজেই ঘরে বসে যতটুকু পারা যায়। তোদের ভয়াল ছয়ের কি অবস্থা?
ভালই।
ও ভাল আর কোথায়, সব তো চলেই গেছে। তুই আর সাজ্জাদ এই দু’জন ছাড়া তাে এখন আর কেউ নেই।
ওরা আবার আসবে, তখন হবে। এসব জিনিস একবার ভেঙে গেলে আর হয় না। তোকে বলেছে।
খোকনের বসে থাকতে ভাল লাগছিলাে না। সে এক সময় বললো, ‘ঘুরতে যাবি?’
কোথায়? ঐ রাস্তায়, আর কোথায় ?
না ভাই। বাবা রাগ করবেন। তাছাড়া বিকেলে অামার কাছে আরেকজন স্যরি আসবেন। অঙ্ক স্যার।
কয়টা স্যার তোর? বেশী না এই দু’জনেই। বৃত্তি পরীক্ষা অসিছে তো, তাই।
খোকন একা একা অনেকক্ষণ ঘুরে বেড়ালো। ফার্মগেট থেকে হেঁটে হেঁটে চলে গেলো শাহবাগ এভিন্যু পর্যন্ত। শাহবাগের মোড়ে কিসের যেন জটলা। লোকজন বলাবলি করছে ‘জঙ্গী মিছিল’ আসছে পুরান ঢাকা থেকে, একটা কাণ্ড হবে। একজন স্যুট টাই পরা ভদ্রলােক বললেন, ‘খোকা তুমি বাড়ি যাও। থােকন বাড়ি গেল না, পাক মটরস পর্যন্ত গিয়ে চলে গেলো কলাবাগানের দিকে।
সূর্যের দিন খন্ড-৯
সেখানেও প্রচুর গণ্ডগােল, একটা পুলিশের ট্রাক পড়ছে। সবাই গােল হয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। খোকনের দেখার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও ভীড় গলে ভেতরে ঢুকতে পারলাে না। একটা দমকলের গাড়ি এসে থেমে আছে। কেউ সেটাকে যেতে দিচ্ছে না। আশ্চর্যের ব্যাপার হলাে আশেপাশে কোথাও পুলিশ বা মিলিটারির কোনো চিহ্ন নেই। খোকন কলাবাগানে কাটালে বিকেল পর্যন্ত। বাড়ি ফিরতে তাই সন্ধ্যা মিলিয়ে গেল। বড়চাচা
আজ নির্ঘাৎ ধরবেন। আজ বাড়িতে ভূমিকম্প হবে।
বড়চাচা অবশ্যি তাকে ধরলেন না। ধরলেন কবীর ভাইকে। রাতের খাবার শেষ হয়ে যাবার পরপরই বিচার সভা বসলো। আসামী মাত্র একজন। কবীর ভাই। বিচার সভা বসলাে বড়চাচার লাইব্রেরি ঘরে। সবাই সেখানে উপস্থিত। কবীর ভাই মাথা নিচু করে সোফার
বড়চাচী দাঁড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে অসম্ভব গভীর হয়ে পড়লেন।
রাত দশটায় ভয়েস অব আমেরিকা থেকে বলা হলো—শেখ মুজিব ও ভুট্টোর মধ্যে কথাবার্তা এগুচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা একটা আপােসে পৌছবার চেষ্টা করছেন। শহরের পরিস্থিতি আগের মতই। চারদিকে থমথমে ভাব, যা আসন্ন ঝড়ের ইঙ্গিত দেয়।
রাতে ঘুমতে যাবার অাগে খোকনের মা খােকনকে ডেকে পাঠালেন। কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, “তুই অজিও গিয়েছিলি ? খোকন চুপ করে রইলো। তিনি খুব কাঁদতে লাগলেন। খোকন বললো, কাদছ কেন?
কাদবো না। তুই যেখানে সেখানে যাবি। আমি খোঁজও নিতে পারি না তুই কোথায় যাস, কি করিস। আর কোথাও যাবি না।
আচ্ছা।
সূর্যের দিন খন্ড-৯
অমার গা ছুয়ে বল কোথাও যাবি না।খোকন মাথা নিচু করে বসে রইলো।অয় না বাবা আয়।
খােকন এগিয়ে যেতেই মা তার হাত ধরে ফেললেন। খোকনের কেন জানি খুব লজ্জা করতে লাগলো। সাজ্জাদের বাড়ি ফিরতে ভাল লাগে না।
তার বোনটি সারাক্ষণ কাঁদে। কাঁদে নিঃশব্দে। সজ্জিাদকিছুই করতে পারে না। শুধু বসে থাকে চুপচাপ। বড়ই একা একা লাগে তার।
মামীকে টেলিগ্রাম করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোনো খবর এখনো এসে পৌঁছায়নি। এখন তারা কি করবে তা বুঝতে পারছে দেশের বাড়িতে চলে যাবে? কিন্তু কেউ নেই সেখানে। ছোট্ট একটা বাড়ি ছিলো। নদীর ভাঙনে কোথায় চলে গেছে। কে এখন অার জায়গা দেবে? তাছাড়া সাজ্জাদের বেনি কোথাও যেতে চায় না। যদি কখনো মানুষটি ফিরে আসে? রাতের বেলা খুব কম করে হলেও সে দশবার জেগে উঠবে। সাজ্জাদকে ডেকে বলবে–-মনে হলো কেউ যেন এসেছে, অয়ি দরজাটা খুলি।
মুখে বলতো–আরে খোকাবাবু যে এসো এসো। দেশের কি খবর বলতো? ওরে একটা মিষ্টি দিতে বল তো। অনেক রকম গল্প-গুজব হতাে তার সঙ্গে। মজার মজার সব গল্প।
বুঝলে খোকাবাবু, গয়নার দোকানের মালিকরা মানুষের দুঃখের গল্পগুলো খুব ভাল জানে। আমরা চোখের সামনে কতজনকে নিঃস্ব হতে দেখি। বড় খারাপ লাগে খোকাবাবু। , সাজ্জাদ বুঝতে পারে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। প্রায়ই তার বোন ভয় পাওয়া গলায় বলে—এখন কি হবে? সাজ্জাদ জবাব দিতে পারে না। আর কয়েকদিন পর তাে ঘরে রান্না হবে না। তখন কি করবি? আমি কাজ করব।
ঃ তোকে কে কাজ দেবে? একবার তাের দুলাভাইয়ের অফিসে বরং যা। দেখ ওরা কি বলে ?
ও ওরা কি বলবে ? ও জানি না কি বলবে। গিয়ে দেখ না।
Read More