অতি শীঘ্র দেশে আসিয়া মাল ডেলিভারি নিয়া আমাকে দায়মুক্ত করিবেন। অধীনের ইহাই বিনীত প্রার্থনা। আল্লাহপাক আপনাকে এবং আপনার স্বামীকে মঙ্গলমতাে রাখুক— ইহাই তাহার দরবারে আমার ফরিয়াদ।
আসসালাম।
হিমু
প্রােপাইটার হিমু শিশু সাপ্লাই কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড
রেজিস্টার্ড নাম্বার পেনডিং
৩০
জনাব হিমু সাহেব, অপ্রয়ােজনীয় তথ্যে পরিপূর্ণ আপনার দীর্ঘ পত্র পেয়ে আমি খুবই বিরক্ত হয়েছি। আপনি কুরুচিপূর্ণ আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করেছেন, আপনার হাতের লেখাও অপাঠ্য। ভবিষ্যতে ভাষা ব্যবহারে শালীন হবেন এবং যা বলতে চান সরাসরি বলবেন। দীর্ঘ পত্র পাঠের সময় আমার নেই।
যে শিশুটিকে আপনি আমাদের জন্যে ঠিক করে রেখেছেন তার বিষয়ে আমার এবং আমার স্বামী দু’জনেরই কিছু আপত্তি আছে। যতদূর মনে হয় এই শিশুটিকে আমরা গ্রহণ করতে পারব না। কারণগুলি স্পষ্ট করে বলি ।
শিশুর মানসিকতা সুস্থ নয়। যে শিশু ভূত-প্রেত-রাক্ষস ছাড়া অন্য কিছুর ছবি আঁকতে পারে না তার মানসিকতা অবশ্যই সুস্থ নয়। এই বিষয়ে আমরা মনস্তত্ত্ববিদ প্রফেসর জেনিংস-এর সঙ্গে আলােচনা করেছি। তাকে ছবি তিনটিও দেখিয়েছি। উনি নিজেও বলছেন শিশু অসুস্থ পরিবেশে বড় হচ্ছে। শিশুর মনে নানান ধরনের ক্রোধ এবং ভীতির সঞ্চার হচ্ছে বলেই ছবিগুলি এমন হচ্ছে। ছবিতে গাঢ় লাল রঙের অতিরিক্ত ব্যবহারেই তিনি চিন্তিত বােধ করছেন।
সে আসে ধীরে খন্ড-১০
দুই আপনি লিখছেন শিশুটি সব সময় অসুখে-বিসুখে ভােগে। তার মানে শিশুটি জন্ম-রুগ্ন। তার রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা একেবারেই নেই। আমরা একটি স্বাস্থ্যবান শিশু চেয়েছি। চিররুগ্ন শিশু চাই নি।
তিন।
শিশুটির যে ছবি পাঠিয়েছেন তা দেখেও আমি চিন্তিত বােধ করছি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে তার চোখ ছােট এবং টানা টানা । মঙ্গোলিয় বেবির লক্ষণ।
চার | ছবিতে শিশুটি বাঁকা হয়ে দাড়িয়ে আছে। আপনি লিখেছেন এটা তার কোনাে শারীরিক ত্রুটি নয়। ছবি তােলার সময় সে বাঁকা হয়ে দাঁড়ায়। আমার সে-রকম মনে হচ্ছে না। তার দাড়ানাের ভঙ্গি দেখে মনে হয় সে পােলিও রােগগ্রস্ত। তার একটি পা অপুষ্ট।
আমার কেন জানি ধারণা হচ্ছে আপনার কোম্পানি আমাকে বাজে শিশু গুছিয়ে বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে। আপনাকে দোষ দিচ্ছি না, বাংলাদেশের সব কোম্পানিই এই জিনিস করে। আপনি তার ব্যতিক্রম হবেন কেন ?
যাই হােক, আপনি এই শিশুটি বাদ দিয়ে অন্য কিছু দেখুন। আমি ইমরুল নামের শিশুটির প্রতি আগ্রহী নই। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে আমি দেশে আসব। তখন যদি সম্ভব হয় কয়েকটি শিশু আমাকে দেখাবার ব্যবস্থা করবেন।
ইতি আসমা হক
সে আসে ধীরে খন্ড-১০
পিএইচডি পুনশ্চ : ভবিষ্যতে আমাকে হাতে লিখে কোনাে চিঠি পাঠাবেন না। কম্পিউটারে কম্পােজ করে পাঠাবেন। অবশ্যই চিঠি সংক্ষিপ্ত হতে হবে।
মিসেস আসমা হক পিএইচডি
জনাবা, আপনার পত্র পাইয়া মর্মাহত হইয়াছি। অনেক সাধ্য সাধনা করিয়া ইমরুলকে ডেলিভারির জন্যে প্রস্তুত করিয়াছিলাম। আপনার পত্র পাইয়া মহাসঙ্কটে পড়িয়াছি। এখন ইমরুলকে নিয়া কী করি! মিডলইস্টে উটের জকি হিসাবে প্রেরণ ছাড়া এখন আর আমার কোনাে গতি নাই। কী আর করা, ইহাই ইমরুলের কপাল ।
এই জন্যেই পল্লীর মরমী কবি বলিয়াছেন, কপাল তােমার রঙ্গ বােঝা দায়। আপনার কপালে যে শিশু আছে আপনি তাহাকেই পাইবেন। শত চেষ্টা করিয়াও অন্য কোনাে শিশুকে আপনার কাছে গছাইয়া দেওয়া যাইবে না। আমাদের কোম্পানি আপনার কোলে আপনার পছন্দের শিশু তুলিয়া দিবে, ইহাই আমাদের অঙ্গীকার। আমাদের কোম্পানির মটো
‘বিদেশের ঘরে ঘরে দেশের সেরা শিশু’। ইহা শুধু কথার কথা নহে। ইহাই আমাদের পরিচয়।
আপনাকে আরাে দীর্ঘ পত্র লিখিবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আপনি সংক্ষিপ্ত পত্র দিতে বলিয়াছেন বলিয়া এইখানেই শেষ করি।
ইতি আপনার একান্ত বাধ্যগত
হিমু
প্রােপাইটার হিমু শিশু সাপ্লাই কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড
সে আসে ধীরে খন্ড-১০
হিমু,
এই ছাগলা তুই পেয়েছিস কী ? আসমাকে তুই ছাইপাশ কী চিঠি লিখছিস ? তাের মতলবটা কী ? আমি যদি ঝাড়পেটা করে তাের বিষ ঝাড়ি আমার নাম মাজেদা না।।
তুই আসমাকে যে-সব চিঠি লিখেছিস আসমা ফ্যাক্স করে সেসব | চিঠি আমার কাছে পাঠিয়েছে। চিঠি পড়ে আমার আক্কেলগুড়ুম। হিমু শিশু সাপ্লাই কোম্পানি ? ইয়ারকি পেয়েছিস! সবার সঙ্গে ইয়ারকি করে করে তুই যে মাথায় উঠে গেছিস এই খবর রাখিস? তুই কি ভাবিস সবাই ঘাস খায় ? আসমা বেচারি তাের লক্ষণ জানে না।
সে তাের প্রতিটি কথা বিশ্বাস করে বসে আছে। আমি যখন তাকে বললাম হিমুর প্রতিটি কথা ভুয়া। সত্যি কথা সে অতীতে কোনােদিন বলে নি। ভবিষ্যতেও বলবে না। আসমা আমার কথা শুনে তাের উপর খুবই রাগ করেছে। সে বলছে তােকে পুলিশে হ্যান্ডওভার করে দিতে। তাকে আমি দোষ দিচ্ছি না। তাের সঙ্গে যার সামান্য পরিচয় আছে তারই কখনাে না কখনাে মনে হবে তােকে পুলিশে দিয়ে হেঁচা খাওয়াতে ।
Read More