হুমায়ূন আহমেদের লেখা সে আসে ধীরে খন্ড-১১

আসমা সামনের সপ্তাহে দেশে আসছে। ইমরুল না ভিমরুল কাকে যে তুই জোগাড় করে রেখেছিস তাকে দেখিয়ে দিস। পছন্দ হলে হবে, না হলে নাই। নতুন ঝামেলায় যাওয়ার কোনাে দরকার নেই।

সে-আসে-ধীরে 

এখন অন্য একটা জরুরি খবর তােকে দিই । তাের বালু অসুস্থ। প্রথম ভেবেছিলাম তেমন কিছু না। এখন মনে হচ্ছে সিরিয়াস। গত আটদিন ধরে তাের খালু কোনাে কথা বলতে পারছে না। গলা দিয়ে কোনাে শব্দই বের হচ্ছে না। তােকাল কর্ডে কী যেন সমস্যা হয়েছে। ইএনটির প্রফেসর নজরুল চিকিৎসা করছেন।

চিকিৎসায় কোনাে উন্নতি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। শেষপর্যন্ত হয়তাে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। তাের কি পাসপাের্ট আছে ? পাসপোের্ট থাকলে তােকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতাম। তুই কোনােই কাজের না- তার পরেও তাের হলুদ পাঞ্জাবি দেখলে কেমন যেন ভরসা পাওয়া যায়। 

হিমু, তুই একবার এসে তাের খালুকে দেখে যা। বেচারা খুবই মুসড়ে পড়েছে। তাকে দেখলেই এখন আমার মায়া হয়। 

তাের মাজেদা খালা 

সে আসে ধীরে খন্ড-১১

হিমু ভাই, আমার সালাম নিন। ইমরুল গত তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছে। জ্বর একশ’ থেকে একশ’ তিনের ভেতর উঠা-নামা করছে। জ্বর যখনই বাড়ছে তখনি সে আপনাকে খুঁজছে। তার মাকে খুঁজছে না। যে ইমরুল সারাক্ষণ মা মা করে সেই ইমরুল কেন জ্বরে অস্থির হয়ে তার মাকে ডাকবে না? ঘটনাটা আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে বলেই আপনাকে জানালাম। জগতের সকল ঘটনার পেছনেই কোনাে 

কোনাে কার্যকারণ থাকে। এই ঘটনার পেছনের কারণ কী হতে পারে তা নিয়ে ভেবেছি। আমি এর পেছনে একটি কারণ বের করেছি। কারণটি সত্যি কি-না তা দয়া করে আপনি জানাবেন। কারণ এই রহস্য উদ্ধার না করতে পারলে আমি শান্তি পাব না। আমি সামান্য কারণে অস্থির হই। এখন অস্থিরতা বােধ করছি। 

আমার ধারণা কোনাে এক সময় ইমরুল বড় ধরনের কোনাে শারীরিক কষ্টে ছিল, তখন আপনি তার কষ্ট দূর করেছেন। যে কারণে সে কোনাে শারীরিক কষ্টে পড়লেই আপনার কথা মনে করে। আমি এই বিষয়ে ইমরুলের সঙ্গে কথা বলেছি। সে কিছু বলতে পারে না। 

আপনার কি কিছু মনে আছে? যদি মনে থাকে আমাকে জানাবেন। আমার সংশয় দূর করবেন। 

ইমরুলের মাকে দেখলে এখন আপনি চমকে যাবেন। তাকে দেখলে মনে হয় তার রােগ সেরে গেছে। সে খুবই হাসিখুশি দিন কাটাচ্ছেসাজগােজও করছে। গত পরশু আমাকে দিয়ে হালকা সবুজ রঙের শাড়ি কিনে আনাল। শাড়ির সঙ্গে সবুজ টিপ। তার না-কি সবুজ কন্যা সাজার ইচ্ছা করছে। তার ছেলে অসুস্থ এটা শােনার পরও।

সে আসে ধীরে খন্ড-১১

কোনাে ভাবান্তর হলাে না। একবার বলল না, ইমরুলকে নিয়ে এসাে। আমি দেখবএইসব লক্ষণ ভালাে নানেভার আগে প্রদীপ দপ করে জ্বলে উঠে। হিমু ভাই, আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছেইমরুলের মাযদি কিছু হয় আমার আত্মহত্যা ছাড়া পথ থাকবে না। আমি ইমরুলকে আপনার হাতে দিয়ে লাফ দিয়ে কোনাে চলন্ত ট্রাকের সামনে পড়ে যাব। এটা কোনাে কথার কথা না। ট্রাকের সামনে ঝাপ দিয়ে পড়ার সাহস আমার আছে।। 

ইমরুলের মায়ের বিষয়ে একটি তথ্য আপনাকে জানাতে চাচ্ছি। তথ্যটি খুবই সেনসেটিভ। আমার মর্মযাতনার কারণ। ঘটনা হয়তাে কিছুই না, তারপরও আমার কাছে অনেক কিছু। আপনাকে তাে আমি আগেই বলেছি, অনেক বড় বড় ঘটনা আমি সহজভাবে নিতে পারি কিন্তু অনেক তুচ্ছ ঘটনা সহজভাবে নিতে পারি না। হয়তাে এটা আমার কোনাে মানসিক ব্যাধি। এমন এক ব্যাধি যে ব্যাধির কোনাে চিকিৎসা নাই। 

ঘটনাটা বলি— ইমরুলের মা ফরিদা যখন ক্লাস টেনে পড়ে তখন তারা থাকত ময়মনসিংহের শাওড়াপাড়া বলে একটা জায়গায়। চারতলা একটা ফ্ল্যাট বাড়ির তিন তলায়। একতলায় থাকত বাড়িওয়ালাবাড়িওয়ালার বড় ছেলের নাম হাসানসে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। ছুটিছাটায় বাড়ি আসত। এই ছেলের হঠাৎ মাথা খারাপের মতাে হয়ে গেল সে ফরিদাকে বিয়ে করবে।

ছেলের বাবা-মা খুবই রাগ করলেন। পড়াশােনা শেষ হয় নি, এখনই কিসের বিয়ে ? কিন্তু ছেলে বিয়ে করবেই সে পড়াশােনা ছেড়ে দিল, খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিল। তার মধ্যে মাথা খারাপের লক্ষণ দেখা দিল। তখন সবাই ঠিক করল বিয়ে দেয়া হবেবিয়ের দিন-তারিখও ঠিক হলােকী কারণে জানি শেষপর্যন্ত বিয়ে হয় নি। ফরিদার বাবা বদলি হয়ে ঢাকায় চলে এলেন। ছেলে চলে গেল দেশের বাইরে। 

হিমু ভাই, আমার ধারণা- ঐ হারামজাদা ছেলে এখন দেশে। এবং সে রােগী দেখার নাম করে প্রায়ই ফরিদার সঙ্গে দেখা করছে। ফরিদা যে হঠাৎ সাজগােজ শুরু করেছে, সবুজ শাড়ি পরে সবুজ কন্যা সাজতে চাচ্ছে, তার মূল কারণ হয়তাে এই। 

সে আসে ধীরে খন্ড-১১

হিম ভাই, আমি অনুমান বা সন্দেহ থেকে কিছু বলছি না । আমার দৃঢ় বিশ্বাস ঐ বদমায়েশ ফরিদার সঙ্গে দেখা করছে। ফরিদাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে আমি লজ্জা পাচ্ছি বলে জিজ্ঞেস করতে পারছি 

, তবে ক্লিনিকের নার্সকে জিজ্ঞেস করে জেনেছি— এক ভদ্রলােক মাঝে মাঝে ফরিদার সঙ্গে দেখা করতে আসে। 

গত পরশু যখন ফরিদাকে দেখতে গেলাম, তখন দেখি তার মাথার কাছে এক প্যাকেট বিদেশী চকলেট। সে প্যাকেট থেকে চকলেট বের করে বলল, নাও। চকলেট খাও। আমি বললাম, চকলেট কে দিয়েছে ? ফরিদা কিছু বলল না, অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে হাসল। 

হিমু ভাই, আমার মনের ভেতর কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে আপনি জানেন না। আমার আর এক মুহুর্ত বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করছে না। শুধু ইমরুলের জন্যে বেঁচে আছি। এবং প্রতিমুহূর্তে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যেন আমার সন্দেহ ভুল প্রমাণিত হয়। আপনার উপর দায়িত্ব, আপনি জেনে দিন ঘটনা কী? 

যে লােক চকলেট নিয়ে এসেছে সে যদি ফরিদার পুরনাে প্রেমিক হয় তাহলে ঘটনা কোন দিকে যাবে তা আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি।

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা সে আসে ধীরে খন্ড-১২

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *