এই হারামজাদা এখন বলবে আমি ফরিদার চিকিৎসার খরচ দিব । মহৎ সাজার চেষ্টা। হিমু ভাই, এ ধরনের লােককে আমি চিনি। এই মতলববাজরা মতলব নিয়ে ঘােরে। অন্য আরেক লােকের স্ত্রী নিয়ে তাের মাথাব্যথা কেন? তুই মহৎ সাজতে চাস মহৎ সাজ। স্কুল দে, হাসপাতাল দে, তােকে তাে কেউ মানা করছে না।
হিমু ভাই শুনুন, এই ব্যাটার টাকায় আমি আমার স্ত্রীর চিকিত্সা করাব না। কক্ষনাে না। ফরিদা যদি চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা যায় তাহলেও না। এই লােক যদি ফরিদার চিকিৎসার খরচ সম্পর্কে কোনাে কথা বলে তাহলে জুতিয়ে হারামজাদার আমি দাত ভেঙে দেব।হিমু ভাই, উল্টাপাল্টা কীসব লিখছি আমি নিজেও জানি না। রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। একটা কিছু ঘটনা আমি অবশ্যই ঘটাব। এখন আপনি এসে পুরাে ঘটনার হাল ধরুন। আপনার কাছে এই আমার অনুরােধ।
সে আসে ধীরে খন্ড-১২
মন অসম্ভব খারাপ। রাতে ঘুম হয় না। গত রাতে সেভেন পয়েন্ট ফাইড মিলিগ্রামের দুটো ডরমিকাম খেয়েও সারারাত জেগে বসেছিলাম। শেষ রাতের দিকে বুকে ব্যথা শুরু হলাে। সেই সঙ্গে ঘাম। হার্ট এটাক-ফেটাক হয়েছে বলে শুরুতে ভেবেছিলাম। ঐ শুয়ােরের বাচ্চা সত্যি সত্যি ফরিদাকে দেখতে এসেছে- এটা জানায়। আগে আমার মৃত্যু হলে ভালাে হতাে। তা হবে না, কারণ আমি হচ্ছি এই পৃথিবীর নাম্বার ওয়ান অভাগা।
হিমু ভাই, আপনি আমার ব্যাপারটা একটু দেখেন। ফরিদাকে জিজ্ঞেস করে কায়দা করে জেনে নেন- সত্যি সত্যি সে এসেছে কি-না।
হাবিবুর রহমান পুনশ্চ-১ : হিমু ভাই, শুয়ােরটার নাম রশিদুল করিম। নিউ জার্সিতে থাকে। বলে বেড়ায় কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচডি করেছে।
আমার ধারণা— সব ভুয়া। খােজ নিলে জানা যাবে পেট্রোল পাম্পে। গাড়িতে তেল ঢালে । পুনশ্চ-২ : হিমু ভাই, আমি যে আমার সংসারের গােপন কথা। আপনাকে জানিয়েছি এটা যেন ফরিদা জানতে না পারে। আপনাকে দোহাই লাগে ।
প্রিয় বৃষ্টি ভাইজান,
হিমু ভাই, আপনি কি লক্ষ করেছেন প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হয় শেষ রাতে। বৃষ্টি শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি আয়ােজন করে বৃষ্টির শব্দ শুনি। বৃষ্টির শব্দ যে আয়ােজন করে শােনা যায় এটা আমি শিখেছি আপনার কাছে। প্রথম যেদিন আপনি টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শােনার জন্যে আমাদের বাসায় এসেছিলেন সেদিন আপনাকে ধান্ধাবাজ মানুষ মনে হয়েছিল। যখন দেখলাম আপনি সত্যি সত্যি খুব আগ্রহ নিয়ে বৃষ্টির শব্দ শুনছেন তখন আপনার প্রতি আমার শুরুতে যে মিথ্যা ধারণা হয়েছিল তার জন্যে খুব লজ্জা পেয়েছি।
সে আসে ধীরে খন্ড-১২
|হিমু ভাই, আমার এখন চিঠি লেখা রােগ হয়েছে। আয়াকে দিয়ে চিঠি লেখার কাগজ-খাম আনিয়েছি। স্ট্যাম্প আনিয়েছি। পরিচিত অপরিচিত সবার কাছে চিঠি লিখছি। আপনি শুনে খুবই অবাক হবেন যে আমি আমার স্কুল-জীবনের এক বান্ধবী লুনাকেও চিঠি লিখেছি। সে ক্লাস নাইনে পড়ার সময় জন্ডিস হয়ে মারা গিয়েছিল। লুনাকে লেখা চিঠিটা আমি বালিশের নিচে রেখে দিয়েছি। আপনার কি ধারণা আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? আমার ধারণা আমার মাথা ঠিকই আছে।
আমার শরীর অসুস্থ কিন্তু মাথা সুস্থ। আমি যে পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে চিঠি লিখছি তার পেছনে কোনাে কারণ নেই কিন্তু আপনাকে চিঠি লেখার পেছনে কারণ আছে। আপনি দয়া করে ইমরুলের বাবাকে একটু শান্ত করবেন। সে আমার চিকিৎসার টাকা জোগাড়ের চিন্তায় আধাপাগলের মতাে হয়ে আছে। আধাপাগল হলে তাে লাভ হবে না। টাকা এমন জিনিস যে পাগল হলেও জোগাড় হয় না। ওর কিছু বড়লােক আত্মীয়স্বজন আছে। এক মামা আছেন কোটিপতি। আমার ধারণা সে প্রতিদিন একবার বড়লােক আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ভিক্ষুকের মতাে উপস্থিত হচ্ছে। আমার ভাবতেই খারাপ লাগছে।
ওর কোটিপতি মামার বাড়িতে বিয়ের পর আমি একবার গিয়েছিলাম। সে-ই আমাকে খুব আগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছিল । এক ঘণ্টা সেই বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে থাকার পর দ্রলােক খবর পাঠালেন আজ তার শরীর খারাপ। নিচে নামবেন না। আরেকদিন যেন যাই। সেই দিন আমি যে কষ্ট পেয়েছিলাম এত কষ্ট কোনােদিন পাই নি ।
আমার ধারণা টাকার সন্ধানে গিয়ে ইমরুলের বাবা রােজ এই কষ্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। টাকা এত বড় জিনিস আমার ধারণা ছিল না। সারাজীবন শুনে এসেছি অর্থ অনর্থের মূল। অর্থ তুচ্ছ । আজ টের পাচ্ছি অর্থ অনেক বড় জিনিস।
হিমু ভাই, আপনি ওকে শান্ত করুন। ওর অস্থিরতা দূর করুন।
বিনীতা
ফরিদা পুনশ্চ-১: কামরুলের আঁকা ভূতের ছবি যেটা আপনি আমার বেডের পাশের দেয়ালে টানিয়েছেন সেই
Read More