হুমায়ূন আহমেদের লেখা সে আসে ধীরে খন্ড-১৩

ছবি সুপার হিট করেছে। ডাক্তার নার্স যেই আসে সেই কিছুক্ষণ ছবি দেখে। অদ্ভুত ভূত দেখে খুব মজা পায়। 

মাজেদা খালা দরজা খুলে কিছুক্ষণ অপলকে তাকিয়ে থাকলেন। ভাবটা এরকম যে আমাকে চিনতে পারছেন না। যেন আমি মানুষ না, অন্য গ্রহের কোননা। প্রাণী। ফ্লাইং সসারে করে এসেছি। যান্ত্রিক গণ্ডগােলে ফ্লাইং সসার স্টার্ট নিচ্ছে 

সে-আসে-ধীরে

 আমি ফ্লাইং সসার লুকিয়ে রেখে এই বাড়িতে এসেছি খাদ্যের সন্ধানে। সপ্তাহখানিকের খাবার-দাবার নিয়ে উড়ে চলে যাব। 

আমি বললাম, খালাজি সুপ্রভাত। 

খালা বললেন, সুপ্রভাত মানে ? তুই কী চাস? কী জন্যে এসেছিস? চাঁদমুখ। দেখাতে এসেছিস? তাের চাদমুখ কে দেখতে চায় ? 

আমি বললাম, রেগে আছ কেন খালা? 

রেগে থাকব না তাে কী করব ? তােকে কোলে করে নাচানাচি করব? আয়, কোলে আয়। 

খালা সত্যি সত্যি দু’হাত বাড়ালেন। তার মানে খালার রাগ এখন তুঙ্গস্পর্শী । তুঙ্গস্পর্শী রাগের বড় সুবিধা হচ্ছে— এই রাগ ঝট করে নেমে যায়। রাগ নামানাের জন্যে তেমন কিছু করতে হয় না। আপনা আপনি নামে। সাধারণ পর্যায়ের রাগ নামতে সময় লাগে। রাগ নামানাের জন্যে কাঠ-খড়ও পােড়াতে হয়। আমি খালার রাগ নামার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হচ্ছে না। খালার মুখ দেখে মনে হচ্ছে রাগ নামি নামি করছে।

সে আসে ধীরে খন্ড-১৩

খালা বললেন, তুই নিজেকে কী ভাবিস ? খােলাসা করে বল তাে শুনি? এক সপ্তাহ হয়েছে আসমা এসেছে। রােজ তাের খোঁজ করছে। আমি দু’বেলা তাের কাছে লােক পাঠাচ্ছি আর তুই হাওয়া হয়ে গেলি ? কোথায় ছিলি ? 

আমি মিনমিন করে বললাম, আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন এক মহিলার কাছে গিয়েছিলাম। 

কী সম্পন্ন মহিলা ? 

আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন। সাইকিক। ইনি যে-কোনাে মানুষের ভূতভবিষ্যৎ বর্তমান দেখতে পারেন। সময়ের কঠিন বন্ধন থেকে উনি মুক্ত। উনার নাম তারাবিবি। ইংরেজিতে Star Lady। 

একটা থাপ্পড় যে তুই আমার কাছে খাবি! 

থাপ্পড় দিতে চাইলে দাও। তবে তারাবিবির কাছে একবার তােমাকে নিয়ে যাব। উনি আবার গাছ-গাছড়ার ওষুধও দেন। কয়েকটা গাছের ছাল বাকল হামানদিস্তায় পিষে দেবেন। খাওয়ার পরে দেখবে ওজন কমতে শুরু করেছে। দৈনিক এক কেজি করে যদি কমে তাহলে চারমাসের পর তুমি মােটামুটি একটা শেপে চলে আসবে। রিকশায় উঠতে পারবে। চাকার পাম্প চলে যাবে না। 

আমাকে নিয়ে তাের এত দুশ্চিন্তা এটা তাে জানতাম না ? 

আমি সােফায় বসলাম। খালার তুঙ্গস্পর্শী রাগ এখন সমতল ভূমিতে নেমেছে। তবে তিনি প্রাণপণে রাগ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তেমন লাভ হচ্ছে । তারাবিবির বিষয়ে কৌতূহলে তার চোখ চকচক করছে। মহিলার নাম কী বললি

তারাবিবি। The great star lady। তবে আশেপাশের সবাই তাকে মামা ডাকে।

সে আসে ধীরে খন্ড-১৩

 

মামা ডাকে মানে! একজন মহিলাকে মামা ডাকবে কেন? | সিস্টেম এরকম দাড়িয়ে গেছে। উনি যে লেভেলে চলে গেছেন সেই লেভেলে নারী-পুরুষে কোনাে ভেদাভেদ নেই। উনার নিজের ছেলেমেয়েরাও উনাকে মামা ডাকে। তার স্বামী বেচারাও মামা ডাকে। 

আবার তুই আমার সঙ্গে ফাজলামি করছিস ? বিশ্বাস কর খালা, কোনাে ফাজলামি না। উনার কি সত্যি সত্যি ক্ষমতা আছে ? 

অবশ্যই আছে। ক্ষমতা না থাকলে নিজের স্বামী তাকে কোন দুঃখে মামা ডাকবে ? জগতের কোনাে স্ত্রী কি সহ্য করবে- স্বামী তাকে সিরিয়াসলি মামা বলে ডাকছে ? তুমি সহ্য করতে ? দৃশ্যটা কল্পনা কর, খালু সাহেব তােমাকে ‘ওগাে’ না বলে গম্ভীর গলায় মামা ডাকছেন। 

‘ওগাে সে আমাকে কখনাে ডাকে না। 

কী ডাকে। কিছুই ডাকে না। হু-হা দিয়ে সারে। এখন তাে ডাকাডাকি পুরােপুরি বন্ধ। গলা দিয়ে শব্দই বের হচ্ছে না। 

গলা এখনাে ঠিক হয় নি। 

 চিকিৎসা চলছে না ? চলছে, তবে দেশী চিকিৎসার উপর থেকে আমার মন উঠে গেছে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ? মাদ্রাজ ? 

জেনে কথা বলিস কেন তুই ? মাদ্রাজে হয় চোখের চিকিৎসা। নেত্র হসপিটাল। আমি তাের খালুকে নিয়ে যাচ্ছি বােম্বেতে। 

কথা না বলা রােগের চিকিৎসা কি বম্বেতে ভালাে হয়। তই চুপ করে থাক। তাের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া যন্ত্রণার মতাে। 

আমি বললাম, খালু সাহেব কথা বলতে পারছেন না— এটা তাে তােমার ভনে ভালােই হলাে। উনার কথা শুনলেই তাে তােমার রাগ উঠে যেত। এখন নিশ্চয়ই নিমেষে নিমেষে রাগ উঠছে না? 

খালা বললেন, খামাকা বকর-বকর না করে তুই চুপ করবি? আচ্ছা চুপ করলাম। সকালে নাশতা খেয়েছিস ? 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা সে আসে ধীরে খন্ড-১৪

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *