এগারােটা বাজে, এখনাে নাশতা খাস নি ? আলসার-ফালসার বাধিয়ে একটা কাণ্ড না হওয়া পর্যন্ত ভালাে লাগে না? কী খাবি ?
গােশত পরােটা। ডাবল ডিমের ওমলেট, সবজি। সবশেষে সিজনাল ফ্রটস।
মাজেদা খালা ভয়ঙ্কর মুখ করে বললেন— তুই ভেবেছিস কী ? আমার বাড়িটা ফাইভ স্টার হােটেল ? গড়গড় করে মেন্যু দিয়ে দিলি— টেবিলে নাশতা। চলে এলাে।
আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললাম, তাহলে এক কাজ কর— গত রাতের ফ্রিজে রেখে দেয়া ঠাণ্ডা কড়কড়া ভাত দাও। বাসি তরকারির ঝােল-টোল থাকলে দাও। বাসি তরকারি মাখা কড়কড়া ভাত। খেতে খারাপ হবে না।
খালা কঠিন গলায় বললেন, চুপ করে বসে থাক। আমি নাশতা নিয়ে আসছি। একটু সময় লাগবে। খবরের কাগজ পড়। কিংবা তাের খালুর সামনে। বসে থাক। সে কথা বলতে পারে না। কিন্তু অন্যরা কথা বললে খুশি হয়। মাঝে মাঝে টুকটাক জবাব দেয়।
কীভাবে জবাব দেন? ইশারায় ?
ঘরে একটা বাের্ড লাগিয়েছি। চক আছে। বাের্ডে চক দিয়ে লেখে। আমার কথা শুনলে খুশি হবেন বলে তাে মনে হয় না। আমার ছায়া দেখলেই উনি রেগে যান
সে আসে ধীরে খন্ড-১৪
ভদ্রভাবে কথা বলবি । চেটাং চেটাং করবি না। তাহলে রাগবে না। উনার কথা বলা বন্ধ হলাে কীভাবে?
নাশতার টেবিলে বসেছে। আমি একটা ডিম পােচ করে সামনে রেখেছি। ডিম পােচটার দিকে তাকিয়ে বলল- আচ্ছা ডিম… বাকিটা বলতে পারল না। কথা গলায় আটকে গেল।আমি খালু সাহেবকে দেখতে গেলাম।
খালু সাহেবের বয়স মনে হচ্ছে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। খাটের উপর জবুথবু বৃদ্ধ টাইপ একজন বসে আছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, উনার চেহারা আগে যেমন ছিল এখনাে তেমনি আছে। আধাপাকা চুল। চিমশে ধরনের মুখ । কপালের চামড়ায় নতুন কোনাে ভাজ পড়ে নি। তাহলে লােকটাকে হঠাৎ এতটা বুড়াে লাগছে কেন? আমি হাসি হাসি মুখ করে বললাম, খালু সাহেব, ভালাে আছেন? তিনি বৃদ্ধদের শুকনা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন।
কিছু কিছু মানুষকে রাগিয়ে দিতে ভালাে লাগে। খালু সাহেব সেই কিছু কিছুদের একজন। তাঁকে রাগিয়ে দেবার জন্যেই আমি তার দিকে দু’পা এগিয়ে গেলাম। আমার লক্ষ্য তার পাশে খাটে গিয়ে বসা । তিনি সে সুযােগ দিলেন না। মাছি তাড়াবার মতাে ভঙ্গি করে আমাকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করলেন। আমি যেহেতু মাছি না, সরে গেলাম না।
বরং খুঁটি গেড়ে বসার মতাে করে তার পাশে বসলাম। তিনি ভেতরে ভেতরে কিড়মিড় করে উঠলেন। আমি মধুর গলায় বললাম, খালু সাহেব, আমি শুনেছি আপনার সাউন্ড বক্স অফ হয়ে গেছে। খুবই দুঃসংবাদ। আপনি সর্বশেষ যে কথা খালার সঙ্গে বলেছিলেন সেটা নিয়ে গবেষণার মতাে করছি। আপনি বলেছিলেন, আচ্ছা ডিম…। সেনটেন্স শেষ করেন নি। বাকিটা কী?
সে আসে ধীরে খন্ড-১৪
খালু সাহেব ঘোঁৎ করে উঠলেন। সেই ঘেৎ ভয়াবহ। সাউন্ড বক্স অফ হয়ে গেলেও ঘোৎ-ঘাৎ শব্দ ঠিকই হচ্ছে। আমি বললাম, শেষ বাক্যটা কী— আচ্ছা ডিম পােচ কেন দিলে ? অমলেট চেয়েছিলাম। না-কি অন্য কিছু ?
বালু সাহেব এখন আমার দিকে অপলকে তাকিয়ে আছেন। তার চোখে আগুন খেলা করছে। আমি বললাম, আপনি মােটেই দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি
আপনাকে আমার পরিচিত একজন আধ্যাত্মিক মহিলার কাছে নিয়ে যাব। তিনি সব ঠিক করে দেবেন। ইনশাল্লাহ আপনি আবার ফুল ভলিউমে কথা বলতে পারবেন।
তিনি আবার হাত ইশারা করে আমাকে উঠে যেতে বললেন। আমি ইশারা বােঝার ভান করে কথা চালিয়ে যেতে লাগলাম।
মহিলার নাম তারাবিবি, তবে সবাই তাকে মামা ডাকে। আপনাকে যা করতে হবে তা হলাে মামা মামা বলে পায়ে পড়ে যেতে হবে। মুখ দিয়ে শব্দ বের হবে না। তারপরও তারাবিবি বুঝে নেবেন। অত্যন্ত ক্ষমতাধর মহিলা। বালু সাহেব ঘো ঘো জাতীয় শব্দ করলেন। আমি এই বিকট শব্দে সামান্য বিচলিত হলাম। সাউন্ড বক্স যে এতটা খারাপ হয়েছে তা বােঝা যায় নি। আমি বললাম, একটা দিন-তারিখ ঠিক করে আমাকে জানান, আমি আগে থেকে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে রাখব। আপনার সমস্যা কী তা আগে থেকে জানিয়ে রাখলে সময় কম লাগবে।
খালু সাহেব তড়াক করে খাট থেকে নেমে অতি দ্রুত জানালার দিকে এগিয়ে গেলেন। যেভাবে এগুলেন তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তিনি জানালা দিয়ে লাফিয়ে দোতলা থেকে নেমে পড়তে চাইছেন। বাস্তবে দেখা গেল, জানালার পাশে লেখার বাের্ড ঝুলানাে। বাের্ডের উপর ডাস্টার আছে। লাল-নীল মার্কার আছে। তিনি বড় বড় করে লিখলেন—
GET OUT আমি বললাম, খালু সাহেব আপনি রাগ করছেন কেন? আপনি অসুস্থ মানুষ হঠাৎ রেগে গেলে আরাে খারাপ হতে পারে।
খালু সাহেব আবার লিখলেন—
I am saying for the last time
Get Out আমি বললাম, ঠিক আছে এখন চলে যাচ্ছি কিন্তু যে-কোনাে একদিন এসে আপনাকে তারা মামার কাছে নিয়ে যাব। উনি খুবই পাওয়ারফুল স্পিরিচুয়েল লেডি সাউন্ড বক্স ঠিক করা উনার কাছে কোনাে ব্যাপারই না।