খালু সাহেব এবার লাল কালি দিয়ে বড় বড় করে লিখলেন—
SHUT UP আমি ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। আর থাকা ঠিক হবে না। খালু সাহেব যে-কোনাে মুহূর্তে ডাস্টার ছুড়ে মারতে পারেন। ডাস্টারটা তিনি একবার ডান
হাত থেকে বাম হাতে নিচ্ছেন, আবার বাঁ হাত থেকে ডান হাতে নিচ্ছেন। লক্ষণ সুবিধার না।
নাশতার টেবিলে বালা নাশতা দিয়েছেন। গােশত, পরােটা, ভাজি, সিজনাল ফুটস হিসেবে সাগর কলা। যা যা চেয়েছিলাম সবই আছে। বাড়তি আছে সুজির হালুয়া। খালাকে খুশি করার জন্যে আমি প্রায় হামলে পড়লাম। অনেক দিনের ক্ষুধার্ত বাঘ যে ভঙ্গিতে হরিণশিশুর উপর ঝাপ দিয়ে পড়ে সেই ভঙ্গিতে ঝাঁপিয়ে পড়া।
খালা স্নেহমাখা গলায় বললেন, আস্তে আস্তে খা। এমন তাড়াহুড়া করছিস কেন ? খাওয়া তাে পালিয়ে যাচ্ছে না। খেতে ভালাে হয়েছে ?
আমি বললাম, এই পরােটাকে ভালাে বললে ভালাের অপমান হয়। বাংলা ভাষায় এই পরােটার গুণ বর্ণনার মতাে বিশেষণ নেই। ইংরেজি ভাষায় আছে।
সে আসে ধীরে খন্ড-১৫
ইংরেজি ভাষায় কী আছে? The grand..
তুই এমন পাম দেয়া কথা কীভাবে বলিস? জানি সবই মিথ্যা, তার পরেও শুনতে ভালাে লাগে।
খালা বসেছেন আমার সামনের টেবিলে। তাঁর চোখেমুখে আনন্দ ঝরে পড়ছে। কাউকে খাওয়াতে পারলে তার মতাে সুখী হতে আমি কাউকে দেখি নি। ভিক্ষুক শ্রেণীর কাউকে যদি তিনি খেতে দেন তখনাে সামনে দাড়িয়ে থাকেন। তার চোখ দিয়ে স্নেহ গলে গলে পড়ে।
বালা, তুমি খালু সাহেবের চিকিৎসার কী করেছ?
এখনাে কিছু করা হয় নি। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালের এক ডাক্তারের সঙ্গে তাের খালু ই-মেইলে যােগাযােগ করেছেন। সামনের মাসে যাব। মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালের ঢাকা অফিস আছে। ওদের সঙ্গে যােগাযােগ করছি।
সিঙ্গাপুরে যেতে চাও যাও। তার আগে মামাকে দিয়ে একটা চিকিৎসা করালে হয় না?
কোন মামা ।
তারা-মামা। আধ্যাত্মিক চিকিৎসা। খরচ নামমাত্র। এক ছটাক গাঁজা লাগবে। এক নম্বরি গাজার পুরিয়া । দুই নম্বরি হলে চলবে না। তিনি লাখি দিয়ে ফেলে দেবেন, তখন হিতে বিপরীত হবে। এখন তাে কথা বলতে পারছেন না, তখন দেখা যাবে কানেও শুনছেন না।
ঐ মহিলা গাঁজা খায় না-কি?
আমি কখনাে খেতে দেখি নি। তবে গাঁজা ছাড়া তিনি চিকিৎসা করেন না। গাজার পুরিয়া পায়ের কাছে রেখে তারপর কদমবুসি করতে হয়। গাঁজা ছাড়া কদমবুসি করতে গেলে গােদা পায়ের লাথি খেতে হবে।
কদমবুসি করতে হবে ? অবশ্যই। তাের খালু কোনােদিনও ঐ মহিলার কাছে যাবে না।
সে আসে ধীরে খন্ড-১৫
ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাজি করতে পার কিনা দেখ। এক লাখ ডলার খরচ করে। বিদেশে যাবার দরকার কী ? যেখানে এক ছটাক গাজায় কাজ হচ্ছে।
অসম্ভব! ওই প্রসঙ্গ বাদ দে।
আচ্ছা যাও বাদ দিলাম। তােমাদের ডলার আছে। ডলার খরচ করে চিকিৎসা করে আস।
তুই আসমার সঙ্গে কবে দেখা করবি ? যখন বলবে তখন। ঠিকানা দাও, নাশতা খেয়ে চলে যাই।
মাজেদা খালা অবাক হবার ভঙ্গি করে বললেন- তুই আসমাকে কী ভেবেছিস ? সে চুনাপুঁটি না । অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া সে দেখা করবে না।
বলাে কী!
সােনারগাঁও হােটেলে উঠেছে। টেলিফোন নাম্বার নিয়ে যা- অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে তারপর যাবি। এক কাজ করি- আমি টেলিফোনে ধরে দেই- তুই কথা বল।
বাংলায় কথা বলা যাবে? আমার তাে আবার ইংরেজি আসে না। রসিকতা করিস না হিমু। সব সময় রসিকতা ভালাে লাগে না।
খালা টেলিফোন করতে গেলেন। এই ফাঁকে খালু সাহেব একবার খাবার ঘরে উঁকি দিলেন। আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে (বর্শা যেভাবে নিক্ষেপ করা হয় সেইভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ) আবার নিজের ঘরে ঢুকে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
মিসেস আসমা হক পিএইচডি’কে টেলিফোনে পাওয়া গেল। তিনি বরফ শীতল গলায় বললেন, হিমু সাহেব বলছেন?
আমি অতি বিনীত ভঙ্গিতে বললাম, ইয়েস ম্যাডাম। আপনি আজ বিকেল পাঁচটায় হােটেলে আসুন।
ইয়েস ম্যাডাম। ঠিক পাচটায় আসবেন, তার আগেও না, পরেও না। ইয়েস ম্যাডাম।
সে আসে ধীরে খন্ড-১৫
আপনার খালার কাছ থেকে আপনার সম্পর্কে যেসব তথ্য পেয়েছি তারপর আর আপনার উপর ভরসা করা যায় না। তারপরও আসুন।
ইয়েস ম্যাডাম। কখন আসবেন বলুন তাে? বিকেলে।
বিকাল সময়টা দীর্ঘ। তিনটা থেকে বিকাল রু হয়, সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত থাকে। আপনাকে আসতে হবে পাঁচটায়।
ইয়েস ম্যাডাম।।
ইমরুল ছেলেটার বিষয়ে আমরা ফাইনাল ডিসিশান নিয়ে নিয়েছি। ওকে আমরা নেব না। কাজেই আপনাকে অন্য কিছু ভাবতে হবে। আমি এখন টেলিফোন রেখে দিচ্ছি। দীর্ঘ সময় ধরে টেলিফোনে বকবক করতে আমার ভালাে লাগে না।
ম্যাডাম, একটা ছােট্ট কথা ছিল। আবার কী কথা? আপনার কুশল জিজ্ঞেস করা হয় নি। শরীরটা কেমন আছে ? তার মানে ?
অনেক দিন পরে যারা দেশে ফিরে তারা খুব বেকায়দা অবস্থায় থাকে। দেশের নােংরা আবহাওয়া, জীবাণুমাখা খাবার খেয়ে অসুখে পড়ে। আপনাদের
সে-রকম কিছু হলাে কি-না।
Read More