আপনি খুবই আপত্তিকর কথা বলছেন তা কি জানেন ? জি-না। জানি না। আপনি আমাকে নিয়ে রসিকতা করার চেষ্টা করছেন। দয়া করে এই কাজটা করবেন না। মনে থাকবে?
ভদ্রমহিলা খট করে টেলিফোন রেখে দিলেন। আমাকে শেষবারের মতাে ইয়েস ম্যাডাম’ বলার সুযােগ দিলেন না।
ইমরুলের সাজসজ্জা আজ চমৎকার।
টকটকে লাল শার্ট। শার্টের চারটা বােতামের মধ্যে একটা বােম শুধু আছে। বাকি তিনটা মিসিং’। মা হাসপাতালে, শার্টের বােতাম লাগানাের কেউ নেই। বােম আছে এমন শার্ট তার আছে কিন্তু ইমরুল এই শার্ট ছাড়া অনা কোনাে শার্ট পরবে না। এমনিতে সে জেদি ছেলে না। সবার কথা শােনে। কিন্তু এই শার্টটির জন্যে তার দুর্বলতা আছে। ঘরে কোনাে সেফটিপিন পাওয়া গেল
বােতামহীন ফুটোগুলি আটকানাে গেল না। | শার্টের চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার হলাে তার একটা পায়ে শুধু জুতা। বাম পায়ে। ডান পায়ের জুতা নাকি একটা কুকুর কামড় দিয়ে নিয়ে গেছে। এক পায়ে জুতা পরেই সে বের হবে। খালি পায়ে যাবে না।
সে আসে ধীরে খন্ড-১৬
উদ্ভট পােশাকের ইমরুলকে নিয়ে আমি যথাসময়ে সােনারগাঁও হােটেলে উপস্থিত হলাম। মিসেস আসমা হকের ঘরে। আদবের সঙ্গে কলিংবেল টিপলাম। আদবের সঙ্গে কলিংবেল টেপা হলাে ফুস করে একটা টিপ দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা। মিসেস আসমা হক দরজা খুললেন। চোখ সরু করে কিছুক্ষণ ইমরুলকে দেখলেন। রােবটদের মতাে গলায় বললেন— Please
come in.
আমি বললাম, কেমন আছেন আপা ?
উনি জবাব দিলেন না । ভুরু কুঁচকে ফেললেন। আমার মুখে আপা ডাকটা মনে হলাে তার পছন্দ হলাে না। তিনি এখন তাকিয়ে আছেন ইমরুলের দিকে। ইমরুলকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছি। সে গটগট করে হেঁটে বিছানার কাছে রাখা চেয়ারে উঠে বসল। হাতলে দু’হাত রেখে গম্ভীর ভঙ্গিতে পা দোলাতে শুরু করল। সােনারগাঁও হােটেলের সুইটে ঢুকলে যে-কোনাে সাধারণ মানুষের আক্কেলগুড়ুম হয়ে যায়। শিশুরা সাধারণ মানুষ না। অসাধারণ মানুষ। সহজে তাদের আক্কেলগুড়ুম হয় না।
মিসেস আসমা হক বললেন, আমি কি জানতে পারি এই ছেলে কে ?
আমি বললাম, এর নাম ইমরুল। আমি এরকমই ভেবেছিলাম । ওকে নিয়ে এসেছেন কেন? আমি বলেছিলাম। এই ছেলের ব্যাপারে আমরা ইন্টারেস্টেড না! ওকে কেন দেখাতে এসেছেন? ওকে দেখাতে আনি নি। আমার সঙ্গে বেড়াতে বের হয়েছে। তারপর আপা। বলুন, এতদিন পর দেশে এসে আপনার কেমন লাগছে?
আমাকে আপা ডাকবেন না। জি আচ্ছা।
সে আসে ধীরে খন্ড-১৬
আমি কী করব বুঝতে পারছি না। দাঁড়িয়ে থাকব না-কি ইমরুলের মতাে কোনাে একটা চেয়ারে বসে পড়ব ? ঘরে দ্বিতীয় যে চেয়ারটা আছে সেখানে মিসেস আসমা হক বসেছেন। বসতে হলে আমাকে বসতে হবে বিছানায়। সেটা মিসেস আসমা হক পছন্দ করবেন না।
ছেলেটার নাম যেন কী ? ইমরুল। ও হ্যা ইমরুল। আমার সমস্যা হচ্ছে মানুষের নাম মনে থাকে না।
ভিমরুলের কথা মনে রাখবেন। হুল ফোটায় যে ভিমরুল সেই ভিমরুল। ভিমরুল মনে থাকলে ইমরুল মনে পড়বে। এসােসিয়েশন অব ওয়ার্ডস।
এর পায়ে একটা জুতা কেন ?
ডান পায়ের জুতাটা কুকুর নিয়ে গেছে। মানুষের ব্যবহারী জিনিসের মধ্যে জুতা নিয়ে যায় কুকুর এবং সাবান নিয়ে যায় কাক। | আসমা হক বিরক্ত গলায় বললেন, ছেলেটাকে একটা জুতা পরে বের না করে দোকান থেকে এক জোড়া জুতা কিনে দিতেন।
আমার টাকা-পয়সার কিছু সমস্যা আছে ম্যাডাম। মিসেস আসমা হক আরাে ভুরু কুঁচকে ফেললেন। এই মহিলা মনে হয় ভুরু কুঁচকে তাকাতে পছন্দ করেন। তার কপালে ভুরু কুঁচকানাের স্থায়ী দাগ পড়ে গেছে।
এর শার্টেরও দেখি বােম নেই। বােম আছে এমন শার্ট ছিল না? নাকি বাকি শার্টগুলিও কুকুর নিয়ে গেছে ।
এইটি ইমরুলের প্রিয় শার্ট। এই শার্ট ছাড়া সে বাইরে বের হয় না।
আমার ধারণা— আপনি মিথ্যা কথা বলছেন। অদ্ভুত একটা পােশাক পরিয়ে ছেলেটাকে নিয়ে এসেছেন। এক ধরনের শাে-ডাউন। শাে-ডাউন আমার পছন্দ আমি বিনীত গলায় বললাম, ম্যাডাম, আমার সমস্যা হচ্ছে আমি যখন সত্যি। কথা বলি তখন সবাই ভাবে মিথ্যা কথা বলছি। আবার যখন মিথ্যা বলি তখন সবাই ভাবে সত্যি বলছি। ইমরুলের পােশাকের ব্যাপারে আমি একশ’ ভাগ সত্যি কথা বলছি। আমার কথা বিশ্বাস করলে সুখী হব ম্যাডাম।
সে আসে ধীরে খন্ড-১৬
আমাকে ম্যাডাম ডাকবেন না । তাহলে ডাকব কী ? নাম ধরে ডাকবেন। আমার নাম আসমা। আসমা ডাকবেন। সর্বনাশ! সর্বনাশ কেন ? একজন পিএইচডি’কে নাম ধরে ডাকব ? পিএইচডিওয়ালাদের কি নাম থাকে না?
কাউকে নাম ধরে ডাকলে তুমি করে বলতে হয়। আপনার সঙ্গে পথেঘাটে দেখা হলে আমাকে বলতে হবে— আসমা তুমি কেমন আছ ? সেটা কি ঠিক হবে ?
আপনি দেখি অকারণে খুবই বকবক করতে পারেন। বকবকানি আমি একদম সহ্য করতে পারি না। ইমরুল ছেলেটা তাে খুব চুপচাপ। আপনার বকবকানি স্বভাব পায় নি।
ইমরুল খোচার অপেক্ষা করছে। খোঁচা খেলেই বিড়বিড় করে কথা শুরু করবে, তখন আপনার মাথা ধরে যাবে। খোচার অপেক্ষা করছে মানে কী? কী খোচা ?
কথার খোচা । কিছুই বুঝতে পারছি না প্লিজ আপনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলুন। কথার খোঁচাটা কী ?
Read More