হুমায়ূন আহমেদের লেখা সে আসে ধীরে খন্ড-১৭

আমি কোনাে জবাব দেবার আগেই ইমরুল খিলখিল করে হেসে উঠলআসমা বিস্মিত হয়ে বলল, এই ছেলেটা হাসছে কেন ? 

আমি বললাম, আপনি ইমরুলকেই জিজ্ঞেস করুন কেন হাসছে। সে কেন হাসছে এটা তাে তারই জানার কথা। 

আসমা ইমরুলের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই ছেলে, তুমি হঠাৎ হেসে উঠলে কেন ? 

সে-আসে-ধীরে

ইমরুল স্পষ্ট করে বলল, তুমি শুধু হাসির কথা বলাে এই জন্যে আমি হাসি আসমাকে দেখে মনে হলাে সে খুবই অবাক হয়েছে। এত সুন্দর করে গুছিয়ে বাচ্চা একটা ছেলে কথা বলবে এটা হয়তাে আসমা ভাবে নি। আমি হাসির কথা বলি ? হু। আমার কোন কথাটা হাসির ? সব কথা। 

সে আসে ধীরে খন্ড-১৭

আমার সব কথা হাসির! এই বিচ্ছ বলে কী ? আমি হাসির কথা বলি— আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এ ধরনের কথা বলে নি। বরং বলেছে আমি নাকি সিরিয়াস টাইপ। আমার মধ্যে কোনাে ফানি বােন নেই। আমার সেন্স অব হিউমার নেই। 

আমি কিছু বললাম না। লক্ষ করলাম মহিলার ভুরু সরল হয়ে এসেছে। তিনি হঠাৎ আনন্দ পেতে শুরু করেছেন। প্রাণী হিসেবে মানুষ অতি বিচিত্র। সে যখন আনন্দ পেতে শুরু করে তখন সব কিছুতেই আনন্দ পায়। তার সঙ্গে কেউ খারাপ ব্যবহার করলেও আনন্দ পায় । 

হিমু সাহেব। জি। বােম নিয়ে আসুন তাে! 

কী নিয়ে আসব ? 

বােতাম। আমি এই ছেলের শার্টে বােতাম লাগিয়ে দেব। হােটেলে সুই সূতা থাকে। শুধু বােতাম আনলেই হবে। পারবেন না ? 

পারব। 

আর ভিমরুলের জুতাটা খুলে নিয়ে যান। এই মাপে তার জন্যে এক জোড়া জুতা নিয়ে আসবেন। আমি টাকা দিয়ে দেব । পারবেন না ? 

পারব। ভিমরুল কি এতক্ষণ আমার সঙ্গে থাকতে পারবে একা একা ? বলেই দ্রমহিলা ইমরুলের দিকে তাকাল।

ইমরুল গম্ভীর গলায় বলল, আমার নাম ভিমরুল না । আমার নাম ইমরুল। তুমি আমাকে ভিমরুল ডাকবে না। | সরি সরি! আর ভুল হবে না। ইমরুল তুমি কি একা একা কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে থাকতে পারবে? 

তােমার কি ক্ষিধে পেয়েছে ? কিছু খাবে ? 

ই। 

দাড়াও, তােমার বাবার ব্যবস্থা করছি। তােমার সঙ্গে আমিও খাব। আমারও ক্ষিধে পেয়েছে। 

সে আসে ধীরে খন্ড-১৭

আসমা জুতা কেনার টাকা দেবার সময় গলা নামিয়ে বললেন, এই ছেলেকেই আমার পছন্দ হয়েছে। আমি একেই নেব।

আমি হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, দেরি হয়ে গেছে। দেরি হয়ে গেছে মানে? 

আপনি ইমরুলকে বাতিল করে দিয়েছিলেন, এই জন্যে আমি আবার অন্য পার্টির সঙ্গে কথা ফাইনাল করেছি। উট পার্টি। 

উট পার্টি মানে? 

উটের জকি হিসেবে যারা বাচ্চা নিয়ে যায়। পার্টি হিসেবে এরা ভালাে। গুড পেমেন্ট । পেমেন্টে কোনাে গণ্ডগােল করে না। 

আপনাকে পুলিশের কাছে হ্যান্ডওভার করে দেয়া যায়, এটা জানেন ? আপনি বিরাট ক্রিমিন্যাল। 

তা ঠিক। 

আমার কাছে ক্ষমতা থাকলে প্রকাশ্য রাজপথে আপনাকে গুলি করে মারতাম। হাসছেন কেন? আমি হাসির কোনাে কথা বলছি না। আই মিন ইট। যান, জুতা নিয়ে আসুন। 

জুতা দেবেন কিনা ভেবে দেখুন। ইমরুলকে তাে আর আপনারা রাখতে পারছেন না। খামাখা কিছু টাকা খরচ করবেন। দেখা যাবে আপনার দেয়া জুতা পরে সে উটের পিঠে বসল। 

জুতা আনতে বলছি আনুন। বােতাম আনতে আবার যেন ভুলে যাবেন না। 

নতুন এক জোড়া জুতা (রঙ টকটকে লাল), শার্টের বােতাম (রঙ লাল), দুটা বিশাল বেলুন (রঙ লাল) কিনে হােটেলে ফিরে দেখি বাথটাব ভর্তি পানিতে ইমরুল ঝাপাঝাপি করছে। ইমরুলের পাশে রাগত মুখে (কপট রাগ) কোমরে হাত দিয়ে আসমা ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি একাই কথা বলে যাচ্ছেন 

সে আসে ধীরে খন্ড-১৭

ইমরুল, দুষ্ট ছেলে, এইসব কী করছ ? বাথটাবের পানি খাচ্ছ। ইমরুল, তুমি খুবই দুষ্ট ছেলে। দুষ্ট ছেলে আমি পছন্দ করি না। এরকম করলে আর কিন্তু তােমাকে বাথটাবে নামাব না। আমি খুবই রাগ করছি। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলে লাভ হবে না। আমি হাসিতে ভােলার মানুষ না।

আমার আসল রাগ তাে তুমি দেখ নি। আমাদের স্কুলের অঙ্ক টিচার মিস রিনা দাসকে পর্যন্ত একদিন ধমক দিয়েছিলাম। এমন সমস্যা হয়েছিল স্কুল থেকে আমাকে প্রায় টিসি দিয়ে দেয়। টিসি দেয়া কী জানাে ? টিসি দেয়া মানে বের করে দেয়া। বাথটাব থেকে তােমাকে নামিয়ে দেয়ার মতাে। বুঝেছ ? যেভাবে মাথা নাড়ছ তাতে মনে হচ্ছে সবই বুঝে ফেলছ।

এত জোরে মাথা নাড়বে না। শেষে মাথা ঘাড় থেকে খুলে পড়ে যাবে। তুমি হয়ে যাবে কন্ধকাটা ভূত। তুমি যে এত ভূতের ছবি আঁক কন্ধকাটা ভূতের ছবি একেছ কখনাে ? বাথটাব থেকে বের হয়ে আমাকে একটা কন্ধকাটা ভূতের ছবি একে দেখাবে।

সে আসে ধীরে খন্ড-১৭

শােন ইমরুল, শুধু ভূত প্রেতের ছবি আঁকলে হবে না। এখন থেকে ল্যান্ডস্কেপ আঁকবে। ল্যান্ডস্কেপ হচ্ছে নদী, গাছপালা, সূর্যাস্ত- এইসব। বুঝতে পেরেছ? বুঝতে পেরেছ বললেই এইভাবে মাথা নাড় কেন? বললাম না এইভাবে মাথা নাড়লে ঘাড় থেকে মাথা খুলে পড়ে যাবে। পিপি পেয়েছে নাকি? খবরদার বাথটাবে পিপি করবে না। দাড়াও কমােডে বসাচ্ছি। 

এক সময় গােসলপর্ব সমাধা হলাে । ম্যাডাম কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে রাগারাগি করলেন কারণ আমি দামি জুতা কিনি নি। আমার উচিত ছিল এডিডাস বা নাইকির জুতা কেনা। ম্যাডাম তারপর শার্টে বােতাম লাগালেন। এই ফাঁকে হােটেলের প্যাডে ইমরুল দুটা কন্ধকাটা ভূত এঁকে ফেলল। একটা ছেলে কন্ধকাটা, একটা মেয়ে কন্ধকাটা। | ইমরুলকে নতুন জুতা পরিয়ে নিয়ে আসব তখন একটা ছােট্ট সমস্যা হলাে। ইমরুল মুখ শক্ত করে বলল, আমি যাব না। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা সে আসে ধীরে খন্ড-১৮

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *