আপনি থ মেরে গেছেন। সেখান থেকে অনুমান করছি। দুয়ে দুয়ে চার মিলাচ্ছি।
হাবিবুর রহমান বললেন, কুত্তাটার সাহস দেখে অবাক হয়েছি। বাসায় চলে এসেছে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্যে। স্যুট টাই মচমচা জুতা। সেন্ট মেখেছে। গা দিয়ে ভুরভুর করে গন্ধ বের হচ্ছিল। পাছায় লাথি দিয়ে বের করে দিতে চেয়েছিলাম।
দিলেন না কেন? এখন তাই চিন্তা করছি। কেন দিলাম না! মানুষ কুকুরের গায়ে গরম মাড় ঢেলে দেয়। আমার উচিত ছিল কুকুরটার গায়ে গরম মাড় ঢেলে দেয়া। আফসােস হচ্ছে কেন মাড় ঢেলে দিলাম না!
ঘরে বােধহয় মাড় ছিল না।
হাবিবুর রহমান অবাক হয়ে বললেন, ঠাট্টা করছেন। আমার এই অবস্থায় আপনি ঠাট্টা করতে পারছেন। আপনি এতটা হার্টলেস ?
আমি বললাম, আপনার কাছে এসেছিল কী জন্যে ? সে কী চায়?
হাবিবুর রহমান থমথমে গলায় বললেন, মহৎ সাজতে চায়। ফরিদার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ দিতে চায়। শুয়ােরটার সাহস কত! বলে কী প্রয়ােজনে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক নিয়ে যাব। আরে কুত্তা, তাের সিঙ্গাপুর-ব্যাংকককে আমি পেসাব করে দেই। বলেছেন এই কথা?
সে আসে ধীরে খন্ড-১৯
বলা উচিত ছিল। যা যা করা উচিত ছিল বা বলা উচিত ছিল তার কিছুই আমি করি নি। এখন রাগে আমার ইচ্ছা করছে নিজের হাত নিজে কামড়াই। গতকাল রাতে আমি এক ফোঁটা ঘুমােতে পারি নাই। দু’টা ফ্রিজিয়াম খেয়েছি, তারপরেও ঘুম আসে না। হিমু ভাই, আপনি শুনলে বিশ্বাস করবেন না। আমি উল্টা ঐ কুত্তাটার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলেছি। চা বানিয়েও তাে খাইয়েছেন। আপনাকে কে বলল? আমি অনুমান করছি।
হ্যা, কুত্তাটাকে চা বানিয়ে খাইয়েছি। কুত্তাটা আমার সামনে বসে চুকচুক করে চা খেয়েছে।
শুধু চা ? নাকি চানাচুর-টানাচুর কিছু ছিল ? শুধু চা। চিকিৎসার ব্যাপারে কী বলেছেন? বলেছি আমি আমার যা সাধ্য করব। কারাের কোনাে দান নেব না। এইটুকুই বলেছেন ? আর কিছু বলেন নি ?
, এইটুকুই বলেছি। তবে শক্তভাবে বলেছি। আমার বলার মধ্যে কোনাে ধানাই-পানাই ছিল না। ভালাে বলেছি না?
অবশ্যই ভালাে বলেছেন। তবে এই সঙ্গে আরাে দু’একটা কথা যুক্ত করে দিলে ভালাে হতাে।
কী কথা?
আপনার বলা উচিত ছিল— এই কুত্তা, তুই খবরদার আমার স্ত্রীকে দেখতে যাবি না। আমার স্ত্রী তাের লাইলী না। আর তুইও মজনু না। তােকে যদি হাসপাতালের ত্রিসীমানায় দেখি তাের ঠ্যাং ভেঙে দেব। টান দিয়ে তাের বাঁকা ল্যাজ সােজা করে দেব। বাকি জীবন সােজা লেজ নিয়ে হাঁটবি। কুকুর সমাজে আর মুখ দেখাতে পারবি না।
হাবিবুর রহমান আহত গলায় বললেন, হিমু ভাই, আপনি তাে হৃদয়হীন একজন মানুষ। আমার এমন অবস্থায় আপনি আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছেন।
সে আসে ধীরে খন্ড-১৯
ঠাট্টা করছি কেন বলছেন?
অবশ্যই ঠাট্টা করছেন। আপনি বলছেন টেনে লেজ সােজা করে দেবেন। সােজা লেজ নিয়ে সে কুকুর সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। এগুলাে ঠাট্টার। কথা না ? আপনি আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছেন না। বুঝতে পারলে। রসিকতা করতেন না।
মনের অবস্থা কি খুবই খারাপ?
আমি চার পাতা ফ্রিজিয়াম কিনেছি। এক এক পাতায় আটটা করে মােট বত্রিশটা ফ্রিজিয়াম। কাল রাতে ভেবেছিলাম সবগুলাে খাব।
খেলেন না কেন ?
ইমরুল আমার সঙ্গে থাকে। সে ভােরবেলা জেগে উঠে দেখবে একটা মরা মানুষকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। প্রচণ্ড ভয় পাবে এই জন্যে খাই নি।
আমি সহজ ভঙ্গিতে বললাম, আজ রাতে যদি এ ধরনের পরিকল্পনা থাকে তাহলে আমি বরং ইমরুলকে নিয়ে যাই। | হাবিবুর রহমান জবাব দিলেন না। মানসিক রােগীদের মতাে অস্থির চোখে তাকিয়ে রইলেন। আমি বললাম, ইমরুলকে নিয়ে যাব কি-না বলুন। বত্রিশটা ট্যাবলেটের ভেতরে দু’টা মাত্র খেয়েছেন। আরাে ত্রিশটা আছে। এই ত্রিশটায় কাজ হয়ে যাবার কথা ।
আপনি আমাকে ঘুমের ওষুধ খেতে বলছেন? হু।।
কেন বলছেন ? যাতে আমার মৃত্যুর পর ঐ কুত্তাটা ফরিদাকে বিয়ে করে। সুখে ঘর-সংসার করতে পারে।
সেই সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই তা-না। আপনার তাে আপনার স্ত্রীর জন্যে কোনাে প্রেম নেই। ঐ দ্রলােকের আছে। সবাই চায় প্রেমের জয় হােক।
আমার স্ত্রীর প্রতি আমার কোনাে প্রেম নেই ?
কী করে বুঝলেন ? আমার কপালে লেখা আছে ?
কপালে লেখা থাকে না। প্রেম আছে কি নেই তা লেখা থাকে চোখে। আপনার দু’টা চোখেই লেখা— ‘প্রেম নেই।’
আপনি কি চোখের ডাক্তার ? চোখের ডাক্তার চোখের লেখা পড়তে পারে না।
হাবিবুর রহমান ক্ষিপ্ত গলায় বললেন, আপনি মহা তালেবর। আপনি চোখের লেখা পড়তে শিখে গেছেন ?
তা শিখেছি। অবশ্যি চোখের লেখা যে পড়তে পারে না তার পক্ষেও বলা সম্ভব যে আপনার মধ্যে আপনার স্ত্রীর প্রতি কোনাে প্রেম নেই।
সে আসে ধীরে খন্ড-১৯
তাই ? জি। প্রেম থাকলে আপনার একমাত্র চিন্তা থাকত আপনার স্ত্রীর জীবন রক্ষা করা। তার চিকিৎসার টাকা কে দিল সেটা হতাে তুচ্ছ ব্যাপার। রশীদ সাহেবের টাকা নিতে আপনার অহঙ্কারে বাঁধছে। প্রেমিকের কোনাে অহঙ্কার থাকে না।
যথেষ্ট বকবক করেছেন। দয়া করে মুখ বন্ধ করুন। জি আচ্ছা । মুখ বন্ধ করলাম । আমার সামনে বসে থাকবেন না। এই মুহূর্তে বের হয়ে যান। যাচ্ছি। Go to hell.
মৃত্যুর পর চেষ্টা করে দেখব— Hell এ যেতে পারি কি-না। আপাতত গুলিস্তানের দিকে যাই। ভালাে কথা ইমরুলকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই । আজ রাতে যদি ঘুমের ওষুধ ইস্তেমাল করতে চান তাহলে আপনার সুবিধা হবে। পথ খােলা থাকল।
আর কোনাে কথা না। অনেক কথা বলে ফেলেছেন। আমি বললাম, শেষ কথা বলে যাই, উত্তেজিত অবস্থায় ঘুমের ওষুধ খাবেন । বমি হয়ে যাবে। খালি পেটেও খাবেন না।
Read More