হুমায়ূন আহমেদের লেখা সে আসে ধীরে খন্ড-২

বলেছিলাম না

জি বলেছিলেন। তাহলে এসেছ কেন? খালা খবর পাঠিয়ে এনেছেন। তাঁর কী একটা সমস্যা নাকি হয়েছে। তুমি সমস্যার সমাধান কীভাবে করবে ? আমি আমার জীবনে তােমাকে কোনাে সমস্যার সমাধান করতে দেখি নি। তুমি যে-কোনাে তুচ্ছ সমস্যাকে ঘোট পাকিয়ে দশটা ভয়াবহ সমস্যায় নিয়ে যাও। সমস্যা তখন মাথায় উঠে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলে। তুমি এক্ষুণি বিদেয় হও।

সে-আসে-ধীরে চলে যাব ? 

অবশ্যই চলে যাবে। 

বাসি পােলাও, রেজালা এবং গরম গরম পরােটা ভেজে এনে খালা যখন দেখবেন আমি নেই, তখন খুব রাগ করবেন। 

সেটা আমি দেখব। খাবারগুলি তখন আপনাকে খেতে হতে পারে। 

আমার সঙ্গে রসিকতা করবে না। তােমার সস্তা রসিকতা অন্যদের জননা রেখে দাও। গােপাল ভাড় আমার পছন্দের চরিত্র না । 

সে আসে ধীরে খন্ড-২

আমি উঠে দাঁড়ালাম। চলে যাবার উদ্দেশ্যে যে উঠে দাঁড়ালাম তা না। যাচ্ছি যাব যাচ্ছি যাব করতে থাকব, এর মধ্যে খালা এসে পড়বেন। পরিস্থিতি তিনিই সামলাবেন। 

খালু সাহেব থমথমে গলায় বললেন, এই যে তুমি যাচ্ছ আর কখনাে এ বাড়িতে পা দেবে না। নেভার এভার। তােমাকে এ বাড়ির সােফায় বসে থাকতে দেখা অনেক পরের ব্যাপার, এ বাড়িতে তােমার নাম উচ্চারিত হােক তাও আমি চাই না। এ বাড়ির জন্যে তুমি নিষিদ্ধ চরিত্র। 

জি আচ্ছা। এখনাে দাঁড়িয়ে আছ কেন? হাঁটা শুরু কর। ব্যাক গিয়ার। মাজেদা খালা যে পর্বতের সাইজ নিয়ে নিচ্ছেন— এই নিয়ে কিছু ভেবেছেন? 

ভাবলেও আমার ভাবনা তােমার সঙ্গে শেয়ার করার কোনাে প্রয়ােজন দেখছি না। 

জি আচ্ছা। তােমার তঁাদড়ামি অনেক সহ্য করেছি, আর না। 

আমি অতি বিনয়ের সঙ্গে বললাম, যাবার আগে আমি শুধু একটা কথা জানতে চাচ্ছি। কথাটা জেনেই চলে যাব। ভুলেও এদিকে পা বাড়াব না। 

কী কথা? 

এই যে আপনি বলেছেন- তােমার তঁাদড়ামি আর সহ্য করব না। ‘ত্যাদড়ামি’ শব্দটা কোথেকে এসেছে? বাঁদরথেকে এসেছে বাদরামি’। সেই লজিকে তঁাদড়’ থেকে আসবে তাদড়ামি’। ত্যাদড় কোন প্রাণী? 

খালু সাহেবের মুখ দেখে মনে হলাে, একটা থাপ্পড় দিয়ে আমার মাঢ়ির দু’একটা দাঁত ফেলে দিতে পারলে তিনি খুশি হতেন। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে তিনি দরজার দিকে আঙুল উঁচিয়ে আমাকে ইশারা করলেন। আমি সুবােধ বালকের মতাে দরজা দিয়ে বের হয়ে পড়লাম। ঘটাং শব্দ করে খালু সাহেব দরজা বন্ধ করে দিলেন।

সে আসে ধীরে খন্ড-২

তবে আমি চলে গেলাম না। বন্ধ দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। কান পেতে রাখলাম ড্রয়িংরুমের দিকে। যেই মুহূর্তে ড্রয়িংরুমে খালা এন্ট্রি নেবেন সেই মুহূর্তে আমি কলিংবেল টিপব। আমার নিজের স্বার্থেই খালার সঙ্গে দেখা হওয়াটা আমার জন্যে প্রয়ােজন। কারণ বালা আমাকে লিখেছেন— 

হিমুরে, 

তুই আমাকে একটা কাজ করে দে। কাজটা ঠিকমতাে করলেই তােকে এক হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেয়া হবে। তাের পারিশ্রমিক। 

ইতি— মাজেদা খালা। পুনশ্চ :১. তুই কেমন আছিস ? 

পুনশ্চ : ২. আমি আর বাঁচব না রে। এক হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার ঠিক কত টাকা তা আমি জানি না। আমার এই মুহূর্তে দরকার বাংলাদেশী টাকায় এক লাখ বিশ হাজার টাকা। খালার সঙ্গে নেগােসিয়েশনে যেতে হবে। অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বদলে আমাকে বাংলাদেশী টাকায় সেটেলমেন্ট করতে হবে। 

ড্রয়িংরুমে খালার গলা শােনা যাচ্ছে। আমি কলিংবেল চেপে ধরে থাকলাম। যতক্ষণ দরজা খােলা না হবে ততক্ষণ বেল বাজতেই থাকবে। 

খালা দরজা খুলে দিলেন। আমি আবার এন্ট্রি নিলাম। বসার ঘর শত্রুমুক্ত। খালু সাহেবকে দেখা যাচ্ছে না। 

মাজেদা খালা বিস্মিত গলায় বললেন, তুই কোথায় গিয়েছিলি ? তাের খালুকে জিজ্ঞেস করলাম, সে বলল তাকে দেখেই না-কি তুই ছুটে ঘর থেকে বের হয়ে গেছিস। ঘটনা কী? 

আমি বললাম, খালা, উনাকে কেন জানি খুব ভয় লাগে। 

তাকে ভয় লাগার কী আছে? দিন দিন তাের কী হচ্ছে ? নিজের আত্মীয়স্বজনকে ভয় পেতে শুরু করেছিস। কোনদিন শুনব তুই আমার ভয়েও অস্থির। খাবার ডাইনিং রুমে দিয়েছি, খেতে আয়। 

ডাইনিং রুমে খালু সাহেব বসে নেই তাে? 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা সে আসে ধীরে খন্ড-৩

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *