হুমায়ূন আহমেদের লেখা সে আসে ধীরে খন্ড-৯

ছেলে মা’র জন্যে ছবি এঁকে পাঠিয়েছে— এটা জানলে রাগ নাও করতে পারে। 

আমি ছবি টানিয়ে দিলাম। ফরিদা মুগ্ধ চোখে ছবির দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখ ছলছল করতে লাগল। 

হিমু ভাইজান! বলাে। ইমরুল আমাকে দেখতে আসতে চায় না— এটা কি আপনি জানেন ? 

সে-আসে-ধীরে

জানি না। 

ও আসতে চায় না। সে যে-কোনাে জায়গায় যেতে রাজি, হাসপাতালে আমাকে দেখতে আসতে রাজি না। কেন বলুন তাে। 

মনে হয় হাসপাতাল তার পছন্দ না। 

ফরিদা বিছানায় শুয়ে পড়তে পড়তে বলল, আমার ধারণা সে বুঝে ফেলেছে আমি বাঁচব না। এই জন্যে আগে থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছে। আমার ধারণা কি ঠিক হিমু ভাই ? 

আমি বললাম, ঠিক হতে পারে । 

ফরিদা ছােট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি মরে গেলে ওর বাবা ওকে নিয়ে বিরাট বিপদে পড়বে। ঠিক না হিমু ভাই ? 

আমি বললাম, বিপদে তাে পড়বেই। ও কী করবে বলে আপনার ধারণা ? 

প্রথম কিছুদিন খুব কান্নাকাটি করবে। তারপর ইমরুলের দেখাশােনা দরকার— এই অজুহাতে অল্পবয়সী একটি তরুণী বিয়ে করবেতরুণীর মন জয়ের জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা চালাতে থাকবে। প্রমাণ করার চেষ্টা করবে যে তার প্রথম স্ত্রীর চেয়ে এই স্ত্রী মানুষ হিসেবে অনেক ভালাে। প্রায় তুলনাহীন। 

 ফরিদা হাসছে। প্রথমে চাপা হাসি, পরে শব্দ করে হাসি। সে মনে হলাে খুবই মজা পাচ্ছে। হাসি থামাবার জন্যে তাকে মুখে আঁচল চাপা দিতে হলাে। 

সে আসে ধীরে খন্ড-৯

হিমু ভাই। 

বলল। 

আমার মৃত্যুর পর আপনি যা করবেন তা হলাে ছেলে-মেয়ে নেই এমন কোনাে পরিবারে ইমরুলকে দত্তক দিয়ে দেবেনযাতে ওরা তাকে নিজের সন্তানের মতাে মানুষ করে। 

আমি বললাম, আচ্ছা। 

ফরিদা দুঃখিত গলায় বলল, আপনি এত সহজে আচ্ছা বললেন ? আপনার আচ্ছা বলতে একটুও মন খারাপ হলাে না ? আপনি যে হৃদয়হীন একজন মানুষ— এটা কি আপনি জানেন হিমু ভাই ? 

আমি হা-সূচক মাথা নাড়লাম। 

মিসেস আসমা হক পিএইচডি 

পরম শ্রদ্ধাভাজনেষু, আমার সালাম গ্রহণ করুন। আশা করি মঙ্গলময়ের অসীম করুণায় আপনি সুস্থ দেহে সুস্থ মনে শান্তিতে বাস করিতেছেন। আপনার স্বামীকেও আমার আসসালাম। আল্লাহপাকের কাছে আপনাদের সুখ কামনা করি। আল্লাহপাক গুনাহগার বান্দার দোয়া কবুল কর। আমিন। 

এখন কাজের কথায় আসি জনাবা, আমার কোম্পানি হিমু শিশু সাপ্লাই কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড। আপনার জিনিসডেলিভারি দিবার জন্য প্রস্তুত আছে। আমার কোম্পানি আপনার জন্য যে শিশুটি বাছিয়া রাখিয়াছে ইনশাআল্লাহ সে এক্সপাের্ট কোয়ালিটি। আপনি মাজেদা খালার পূর্বপরিচিত। আপনার কাছে বাজে মাল গছাইব নাএতে কোম্পানির সম্মানহানী হয় এবং আত্মীয়স্বজনের কাছেও মুখ ছােট হয়। আমার কোম্পানি একদিনের ব্যবসায়ী নয়সুনামের সাথে আমরা দীর্ঘদিন ব্যবসা করিব ইহাই আমাদের অঙ্গীকার। 

সে আসে ধীরে খন্ড-৯

আমার কোম্পানি যে শিশুটিকে ঠিক করিয়াছে তাহার নাম ইমরুলআপনি যেসব শর্ত আরােপ করিয়াছেন এই শিশুটি ইনশাল্লাহ সব শর্তই পূরণ করে। দুই একটি ক্ষেত্রে একটু উনিশসাড়ে উনিশ হইতে পারে। ইহা নিজগুণে ক্ষমা করিবেন। আপনি শিশুটির ওজন পঁচিশ হইতে ত্রিশ পাউন্ডের ভিতর থাকিতে হইবে— এমন শর্ত দিয়াছেন।

ইমরুলের ওজন তার চেয়ে কম| সে খুব অসুখ-বিসুখে ভুগে বলিয়া শরীরের ওজনের তেমন বৃদ্ধি নাই। কয়েকদিন যাবত সে হামে শয্যাশায়ী। খাওয়া-দাওয়া কমিয়া গিয়াছেসে আরােগ্য লাভ করা মাত্র হাইপ্রােটিন ডায়েটের মাধ্যমে তার ওজন বৃদ্ধি করা হইবে। আপনি শুনিয়া আনন্দিত হইবেন যে 

বাংলাদেশে চিকন স্বাস্থ্য মােটা করিবার ভালাে ব্যবস্থা আছে। বড় বড় রাস্তার দুই পাশে সচিত্র বিজ্ঞাপন আছে— ‘চিকন স্বাস্থ্য মােটা করা 

হয়। আমি এদের সঙ্গে যােগাযােগ করিয়া সঠিক পন্থা অবলম্বন করিব। শিশু ডেলিভারি নিবার পূর্বে আপনার সামনে তাকে ওজন করা হইবে।

সে আসে ধীরে খন্ড-৯

 ইমরুলের একটি 3R সাইজ ছবি পাঠাইলাম। ছবিতে সে একটু বাকা হইয়া দাঁড়াইয়া আছে। ইহা কোনাে শারীরিক ত্রুটি নহে। ছবি তুলিবার সময় কেন জানি সে খানিকটা ডান দিকে হেলিয়া দাঁড়ায়। ফুল ফিগারের এই ছবিতে তার মুখাবয়ব স্পষ্ট নয় বলিয়া মুখের একটি ক্লোজআপ ছবিও পাঠানাে হইল। একটি হাস্যমুখী ছবি পাঠাইতে পারিলে ভালাে হইত। তাহার হাসি সুন্দর । সে এমনিতে খুবই হাসে, শুধু ছবি তুলিবার সময় গম্ভীর হইয়া থাকে। ইহা তাহার পুরানা অভ্যাস। 

ইমরুলের আঁকা কিছু ছবি (সর্বমােট তিন) পাঠাইলাম । তিনটিই ভূত-প্রেতের ছবি। তাহার আঁকা একটি ল্যান্ডস্কেপ পাঠাইতে পারিলে ভালাে হইত। গাছ-নদী-সূর্যাস্ত-পালতােলা নৌকা টাইপ ছবি। কিন্তু ইমরুল ভূতের ছবি ছাড়া অন্য কোনাে ছবি আঁকে না। 

আপনাকে যে তিনটি ভূতের ছবি পাঠানাে হইয়াছে তাহার মধ্যে। একটি পানিভূতের ছবি। বাকি দুইটি রাক্ষসের ছবি। ইমরুলের আঁকা প্রতিটি রাক্ষস এবং ভূতের আলাদা আলাদা নাম আছে। যেমন, পানিভূতটির নাম ‘হাকু’। এই ভূতের বিশেষত্ব হইল তাহার প্রধান খাদ্য মানুষের ‘গু’। {গু’ শব্দটি সরাসরি ব্যবহার করিবার জন্য আমি দুঃখিত। আপনার রুচিবােধকে আহত করিয়া থাকিলে নিজগুণে ক্ষমা করিবেন।  বিশেষ আর কী ? ইমরুল বিষয়ে সমস্ত তথ্যই জানাইলাম, বাকি আপনার বিবেচনা।

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা সে আসে ধীরে খন্ড-১০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *