ভিটামিন ই। এন্টি এজিং ভিটামিন। খুব কাজের। ভিটামিন ই ক্রীম পাওয়া যায়। ঐ ক্রীম মুখে মাখি। গুলশানে একটা হেলথ ক্লাবে ভর্তি হয়েছি। ফ্রী হ্যান্ড
একসারসাইজ করি। একসারসাইজের পর সােয়ানা নেই। সােয়ানার পর আধঘণ্টা সুইমিং করি। সােয়নাটা শরীরে ফ্যাট কমানাের জন্যে খুব উপকারী।
‘সােয়ানাটা কি?
‘ীম বাথ। দশ-পনেরাে মিনিট স্টীম বাথ নিলে শরীর পুরােপুরি রিলাক্সড হয়ে যায়। টেনশান কমে। সুস্থ থাকার প্রধান রহস্য টেনশান ফ্রী থাকা।
‘সােয়ানা-ফুয়ানা নিয়ে তুমি যে টেনশান ফ্রী হয়েছ এটা তােমাকে দেখে বােনা যাচ্ছে এবং খুবই ভাল লাগছে। তােমাকে মায়াবতী লাগছে। তবে তােমার ম্যানেজার বলছিল তুমি নাকি মায়াবতীর সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসােবতী হয়েছ। গ্যাস ছেড়ে আসার জন্যে সিঙ্গাপুর যাচ্ছ।’
| খালা গম্ভীর গলায় বললেন, ‘গ্যাসােবতী হয়েছি মানে কি ধরনের কথা বলছিস। গুরুজনদের সঙ্গে কথা বলার সময় সম্মান রেখে কথা বলবি না? আমি হাের খালা না? আমি কি তাের ইয়ার-বান্ধবী?”
‘অবশ্যই তুমি আমার খালা। ধনবতী খালা। আমাকে ডেকেছ কেন বল?
হিমুর রূপালী রাত্রি খন্ড-৩
‘তাড়াহুড়া করছিস কেন? বলব। তােকে খুব জরুরী কাজে ডেকেছি। গুছিয়ে না বললে তুই বুঝবি না। সময় নিয়ে বলতে হবে। তুই তাে একেবারে কাকের মত হয়ে গেছিস, খুব রােদে রােদে ঘুরিস?”
‘আজকের জন্যে ঘােরাঘুরি বাদ দে। বাড়িটা নতুন করে ঠিকঠাক করেছি। ঘুরে ফিরে দেখ, মজা পাবি। সপ্তাহখানিক পরে এলে সােয়ানা পাবি। আর্কিটেক্টকে ডেকে সােয়ানা বানাতে বলে দিয়েছি। রােজ রােজ গুলশানে গিয়ে পােষায় না। ভাল করেই।
‘সােয়নাটা বানানাে হলে তাের যখন ইচ্ছা করে সােয়ানা নিয়ে যাবি। সারােয়ানকে বলে দেব- আমি না থাকলেও ঢুকতে দেবে।
ঋক য়ু। ‘একটা সুইমিং পুল দেবার ইচ্ছা ছিল। আর্কিটেক্ট বলল, সম্ভব না। জায়গা নেই। ছাদের উপর যে করব সে উপায়ও নেই। সুইমিং পুলের পােড় নেয়ার মত স্বাকচারাল স্টেথ বাড়ির নেই।’
নতুন বাড়ি করছ না কেন?”
নতুন বাড়ি করার কথা মাঝে মাঝে মনে হয় । বাড়ি করা কোন ব্যাপার না । গুলশানে তাের খালু জায়গা কিনে রেখেছিল। ভাবলাম কি দরকার পুরানে
বাড়িতে তাে ভালই আছি। তাছাড়া তাের খালুর স্মৃতি এই বাড়িতে আছে । মানুষটা তাে হারিয়েই গেল, তার স্মৃতিটা থাক। কি বলিস?”
ঠিকই কলছ। ‘আমার ম্যানেজার কেমন দেখলি?” ‘স্যুট পরা ম্যানেজার?”
হিমুর রূপালী রাত্রি খন্ড-৩
‘আমিই বলেছি স্যুট পরতে। স্মার্ট লাগে। পায়জামা-পাঞ্জাবী পরা একটা লােকের কথায় মানুষ যতটা গুরুত্ব দেয় স্যুট পরা মানুষের কথায় তারচে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। | ‘মানুষটা কে তার উপরেও কিছুটা নির্ভর করে। নেংটি পরা মানুষের কথাও লােকজন খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনে, যদি মানুষটা হয় মহাত্মা গান্ধী।
‘ফালতু কথা বলিস না তাে হিম, মহাত্মা গান্ধীকে আমি ম্যানেজার হিসেবে পাব কিভাবে? আমি যা পেয়েছি তাই তাল। খুব চালাক চতুর ছেলে। মাছির মত চারদিকে চোখ। সব দেখছে। সমস্যা হলে নিজেই ডিসিশান নিচ্ছে, তেমন প্রয়ােজন হলে আমাকে জানাচ্ছে। কোটি কোটি টাকার ব্যাপার বুঝতেই তাে পারছিস।
‘টাকা এখনাে খরচ করে শেষ করতে পারনি?”
‘কি বলছিস তুই? তাের কি ধারণা, হাতে টাকা পেয়ে দুই হাতে উড়াচ্ছি? খুব ভুল ধারণা। খরচ তাে অবশ্যই করছি। টাকা তো খরচের জন্যেই। ব্যাংকে জমা রেখে টাকার ডিম পাড়ানাের জন্যে না। তবে খরচ-টরচ করেও তাের বালু যা রেখে গেছে সেটাকেও বাড়িয়েছি। গুলশানের এত বড় জায়গা শুধু শুধু ফেলে রেখেছিল — রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছি। আমাকে চারটা ফ্ল্যাট দিচ্ছে, প্লাস এক কোটি টাকা ক্যাশ – বুলবুলই সব ব্যবস্থা করেছে।
হিমুর রূপালী রাত্রি খন্ড-৩
‘বুলবুল তােমার ম্যানেজার? ‘ই, ভাল নাম রকিবুল ইসলাম। ডাকনাম বুলবুল। আমি বুলবুলই ডাকি। ‘বুলবুল সাহেব তাহলে তােমার ডান হাত? | ‘তা বলতে পারিস– খুব ওস্তাদ ছেলে। হঠাৎ করে তাের আর এক আত্মীয় সেদিন বের হল, সৎ বােন। সম্পত্তির ভাগ নিয়ে হৈচৈ শুরু করল। ছােট আদালতে মামলাও করে দিল। বুলবুল তাকে এমন প্যাচে ফেলেছে যে তার চৌদ্দটা বেজে গেছে।
এখন কেদে কূল পাচ্ছে না। আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। আমি তামান্নাকে বললাম, বলে দাও আমার সনে দেখা হবে না। তারপরেও যাবে না। শুরু করেছে কান্নাকাটি। আমি তামান্নাকে বললাম, যেভাবে পার ঐ মহিলাকে বিদায় কর। একবার বলেছি দেখা করব না দেখা করব না।
তামান্না আবার কে?
ও আচ্ছা, তামান্নার কথা তাে তােকে বলা হয়নি আমার পি,এ। বুলবুল যেমন শক্ত, তামান্না তেমনি নরম। উচু গলায় কাউকে কোন কথা বলা তার পক্ষে সম্ভব না। তুই তার সঙ্গে একটু কঠিন হয়ে কিছু বলবি ওমি দেখবি মেয়ের চোখ ছলছল করছে।’
তামান্নাকে দেখছি না তাে?
দেখবি। আজ রােববার তাে, ওর আসতে দেরি হবে। রােববার সে তার সংসারের জন্যে বাজার করে। সংসার মানে ভাই-বােন, মা-বাবার সংসার। তামান্না বিয়ে করেনি। বিয়ে করবেই বা কিভাবে? ঘাড়ে এত বড় সংসার। যাই হােক, ওকে নিয়ে আর তােকে নিয়ে আমার একটা প্ল্যান আছে।
আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, ‘এই জন্যে তুমি আমাকে আনিয়েছ?
খালা হাসিমুখে বললেন, ‘তােকে আনিয়েছি অন্য কারণে। সেটা এখন না, পরে বলব। তার সঙ্গে তামান্নার সম্পর্ক নেই। যাই হোক, তুই তামান্নাকে সেখ । তার সঙ্গে কথাবার্তা বল। সারাজীবন পথে পথে ঘুরবি নাকি? হিমুগিরি তো অনেকদিন করলি, আর কত। ঘর-সংসার করবি না? মুসলমান ধর্ম, হিন্দু ধর্ম
— সংসার ধর্মই আসল ধর্ম।
হিমুর রূপালী রাত্রি খন্ড-৩
মেয়েটা দেখতে কেমন? | ‘সাধারণ বাঙালি মেয়ের মত। সাধারণের চেয়ে একটু ডাউনও হতে পারে। তবু খুব বেশি ডাউন না । চলে। আর তুই নিজেও তাে বাগদাদের রাজপুত্র না । চেহারা করেছিস কাকের মত, চাকরি নেই, কিছু নেই। কাকের মতই এটোকাঁটা কুড়িয়ে খাচ্ছিস। যে মেয়ে তােকে বিয়ে করতে রাজি হবে বুঝতে হবে তার ব্রেইনে সমস্যা।
‘তামান্না তাে তাহলে রাজি হবে না।’
‘সেটা আমি দেখব। তুই একটা কাজ কর, হাত-মুখ ধুয়ে মােটামুটি ভদ্র ভাব ধরার চেষ্টা কর । এখনও খালি পায়ে থাকিস?
‘দাঁড়া, স্যান্ডেল কিনিয়ে দিচ্ছি। আচ্ছা শােন, এক কাজ কর, আমি বুলবুলকে বলে দিচ্ছি ও তােকে স্যান্ডেল কিনে দেবে। নাপিতের দোকান থেকে চুল কাটিয়ে আনবে। ভাল একটা পাঞ্জাবী কিনে দেবে। অসুবিধা আছে?
‘কোন অসুবিধা নেই। খালা ম্যানেজারকে কি সব বললেন । নিচু গলায় বললেন, আমি কিছুই নােম না।
ম্যানেজার সাহেব কমী মানুষ। তিনি প্রথমে আমার চুল কাটালেন। চুল কাটার সময় সামনে উপস্থিত থাকলেন এবং ক্রমাগত নাপিতকে ডিরেকশন। দিতে লাগলেন— পেছনেরটা আরেকটু ছােট। সামনে বড়, জুলফি আরেকটু রাখ। চুল কাটাকে মনে হচ্ছিল শিল্পকর্ম এবং তিনি একজন মহান শিল্পনির্দেশক। মাথার চুলে পথের পাঁচালী বানানাে হচ্ছে এবং তিনি সত্যজিৎ রায়।।
চুল কাটার পর শ্যাম্পু করা হল, হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানাে হল। তারপর আমরা গেলাম স্যান্ডেল কিনতে। নিউ এলিফ্যান্ট রােড থেকে মেড ইন ইটালী স্যান্ডেল কিনলাম। মাখনের মত মােলায়েম স্যান্ডেল। স্যান্ডেল জোড়া যেন গুণগুণ করে গাইছে, চরণ ধরিতে দিও গাে আমারে •••••• পায়জামা পাঞ্জাবী কেনা হল। পাঞ্জাবীর উপর ফেলে রাখার জন্যে চাদর। সুতির চাদর তবে সুন্দর কাজ আছে।
হিমুর রূপালী রাত্রি খন্ড-৩
ম্যানেজার সাহেব বললেন, ‘চলুন, চশমা কিনে দেই। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, ‘চশমা কেন? আমার তাে চোখ খারাপ না।
ম্যানেজার বিরক্ত মুখে বললেন, ‘চোথ খারাপের চশমা না, গেটাপ চেঞ্জের চশমা। অনেক মানুষ আছে চশমা পরলে তাদের গেটাপে বিরাট পরিবর্তন হয় । যাদের চেহারায় মাংকি ভাব আছে চশমা তাদের জন্যে মাষ্ট। মুখের অনেক পানি ঢেকে ফেলে।”
আমার চেহারায় মাংকি ভাব আছে তা জানতাম না। আমি শুধু বললাম, ও, আচ্ছ।’
‘আপনি যেভাবে ও আচ্ছা বললেন তাতে মনে হল আপনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন না। কথা সত্যি। গলায় টাই পরলে মানুষকে এক রকম লাগে, আবার টাইয়ের বদলে কাঁধে চাদর ফেললে অন্য রকম লাগে। তেমনি চশমা পরলে লাগবে এক রকম, চশমা না পরলে লাগবে আরেক রকম। সুন্দর ফ্রেম দেখে জিরাে পাওয়ারের একটা চশমা কিনে দি চলুন।
আমি ভােল পাল্টে ফেললাম। চশমা পরলাম। পাঞ্জাবী বদলে নতুন পাঞ্জাবী পরলাম। ড্রেসিং রুম ছিল না বলে পায়জামা বদলানাে গেল না। কাঁধে ফেললাম চাদর। ম্যানেজার সাহেব ক্রিটিকের মত শুকনাে গলায় বললেন, ‘আপনাকে দেখতে ভাল লাগছে। বেশ ভাল লাগছে । প্রেজেন্টেবল। শুধু চুল কাটাটা তেমন ভাল হয়নি। অজিকালকার নাপিত চুল কাটতে জানে না।
‘চলুন আরেকবার কেটে আসি। মনে আফসােস রাখা ঠিক না। ম্যানেজার সাহেব বললেন, ‘না থাক, দেরি হয়ে যাচ্ছে। চলুন যাই।
বাড়ি ফিরলাম। আমাকে দেখে ফাতেমা খালা মুপ্ত গলায় বললেন, ‘আরে তােকে তাে চেনা যাচ্ছে না। তাের চেহারা থেকে চামচিকা ৩াবটা মােটামুটি চলে গেছে।
হিমুর রূপালী রাত্রি খন্ড-৩
আমি কদমবুচি করে ফেললাম। খালা বললেন, ‘ওকি, সালাম করছিস কেন?
নতুন জামা-কাপড় পরেছি এই জন্যে। তামান্না কি এসেছে খালা?” “না আজ আসবে না। ওর বাসায় সমস্যা হয়েছে। ওর ছােট ভাইটা রিকশা থেকে পরে সিরিয়াস ব্যথা পেয়েছে। তামান্না ওকে নিয়ে গেছে হাসপাতালে। পুরো পরিবারটা মেয়েটার ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে আছে। একা সে ক’ দিক সামলাবে? দুর্গার মত তার তাে আর চারটা হাত না, দুটা মােটে হাত।
| ‘খালা আমার মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে – এত ঝামেলা করে গেটাপ চেঞ্জ করা হল, কোন কাজে লাগল না। তামান্নার সঙ্গে দেখা হল না। এক কাজ করলে হয় না? ঠিকানা দাও বাসায় চলে যাই।”
বাসায় গিয়ে কি করবি?”
তামান্নাকে বলব, আমাকে ফাতেমা খালা পাঠিয়েছেন। আপনার ছােট ভাই রিকশা থেকে পরে ব্যথা পেয়েছে— ঐ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে বলেছেন। তামান্নার ছােট ভাইটার নাম কি খালা?
আমিন। ‘জামানের বয়স কত? ‘পঁচ বছর। ‘জামানের জন্যে বেলুন-টেলুন জাতীয় কোন গিফট নিয়ে গেলে কেমন হয়। ‘তুই কি সত্যি যাবি?”
অবশ্যই। “যাক, তাের মধ্যে কিছু চেঞ্জ তাহলে এসেছে। আমি ভেবেছিলাম তুই আর বদলাবি না।
‘বাসার ঠিকানা পাও, রিকশা ভাড়া দাও ঘুরে আসি!”
‘তামান্নার বাসায় উপস্থিত হওয়াটা বাড়াবাড়ি হবে। আমি ব্যবস্থা করব, তুই চিন্তা করিস না। যে জন্য তােকে ডেকে আনালাম সেটি তাে বলা হল না।
কখন বলবে? ‘আয়, শােবার ঘরে আয় বলি।
হিমুর রূপালী রাত্রি খন্ড-৩
ফাতেমা খালর শােয়ার ঘরে আমি বসে আছি। খালা খাটে, আমি খাটের সঙ্গে লাগােয়া চেয়ারে। খালা কথা বলছেন ফিসফিস্ করে। দরজাও তেজিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘর আধো অন্ধকার। কোন ষড়যন্ত্র ষড়যন্ত্র ভাব। মিলিটারী কু যখন হয় তখন সম্ভবত জেনারেলরা এইভাবেই কথা বলেন।
‘একজন লােককে তুই খুঁজে বের করবি। লােকটার নাম ইয়াকুব। বাবার নাম সােলায়মান মিয়া। বয়স পঞ্চাশের উপর । তার স্থায়ী ঠিকানা আমার কাছে নেই। ঢাকায় যেখানে থাকতো সেই ঠিকানা আছে— অতীশ দীপংকর রােড । সেখানে এখন নেই। ম্যানেজারকে পাঠিয়েছিলাম। কোথায় গেছে তাও কেউ জানে না তাের কাজ হচ্ছে ইয়াকুবকে খুঁজে বের করা। ঢােল পিটিয়ে খোঁজা যাবে না । চুপি চুপি খুঁজতে হবে। | ‘তােমার ম্যানেজার যেখানে ফেল করেছে সেখানে আমি পাশ করব কিভাবে।
Read More