গতরাতে বাড়িতে একটা উৎসব ছিল। বড় মামার পঞ্চাশতম জন্মদিন। সেই উপলক্ষে পােলাও রান্না হয়েছে। অনেক পােলাও বেচে | গেছে। ডীপ ফ্রীজে রাখা ছিল। সকালে সে–পােলাও গরম করে দেয়া হয়েছে। | আমি সহজ গলায় বললাম, আমরা দুজন কী সেই বাসি পােলাও গেয়ে | দেখতে পারি? পােলাওয়ের সঙ্গে ডিম ভাজা।
বাদল চোখমুখ শুকনাে করে ফেলল। মীরা তাকাল তীক্ষ দৃষ্টিতে ।। আমি বললাম, তারপর মীরা, তুমি ভাল আছ? মীরা এখনাে তাকিয়ে আছে।
আমাকে চিনতে পারছ তাে? ঐ যে তােমাকে টাকা দিয়ে এলাম সাঁইত্রিশ হাজার নয়শ একুশ টাকা?”
মীরা পুরােপুরি হকচকিয়ে গেছে। মেয়েরা হতচকিত অবস্থা থেকে চট করে ।
“একটা উত্তেজনার মধ্যে তােকে ফেলে দিয়েছি যাতে আঁখি মেয়েটির চিন্তা থেকে আপাতত মুক্তি পাস।‘
দারোয়ান এসে বলল, যান ভিতরে যাইতে বলছে।
আমরা রওনা হলাম। বাদল ভাল ভয় পেয়েছে। তার চোখেমুখে ঘাম। তবে লে আঁখির হাত থেকে এখন মুক্ত।
আমাদের বসাল দুয়িংরুমের পাশে জােট একটা ঘরে । এটা বােধ হয়। গুরুত্বহীন মানুষদের বলার জন্যে ঘর। দেশ থেকে লােক আসবে – এন্মান সহ–সরল জীবনে বাস নীল সঙ্গে তেমন যােগ নেই। তার জীবনে হকচকিয়ে যায়।
২৮ আগস খানে। মীরা পারছে না। মেয়েট মনে হয় সহস করে। তাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তেমন যােগ নেই। ঘটনা তেমন ঘটে নি। ‘ মীরা, আমাকে চিনতে পারছ তাে?‘অাজাই লাসি পােলাও নাশতা।‘ একে বলে কাকতালীয় যােগাযোগ।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১১
লাকতলীয় না – এর নাম হিমুতালীয় । তোমার বো আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে। আর আমি গােড়া থেকেই জানি = তবে ক্ষমতাটা যে এত প্রবল তা জানতাম না।‘
‘আমিও জানতাম না।‘ “হিমু না!”
চলে যাই। স্ট্যাটিসটিক্যাল। নাজি। আমরা আসলে নাশতা
‘‘ননি শুভ। আমাদের নাশতা দিয়ে দাও খেয়ে চলে যাই। . ডাটা সংগ্রহের জন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি এসব ধাপ্পাবাজি। আমরা আসলে মেতে এসেছি।‘
‘তুমি কাউকে দেখে তার ভবিষ্যৎ বলতে পার?” ‘আমার নিজের ভবিষ্যৎ বলতে পারি—অন্যেরটা পারি না। তােমার ভবিষ্যৎ কী?‘ বলা যাবে না।
‘ “আসল কথা বলতে ভুলে গেছি, নাশতা একজনের জন্যে আনার লালর জন্যে। আমি একবেলা খাই। বাদলের সঙ্গে তােমার পরিচয় দেয়া হয়নি। এ হচ্ছে আমার ফুপাতো ভাই। পিএইচডি করার জন্যে যেনা গিয়েছে। জায়গাটা কোথায় রে বাদল?”
‘ বাদল মাথা নিচু করে ছিল। সে মাথা নিচু করে ক্ষীণ স্বরে বলল, কানাডা। ‘ অপরিচিত মানুষের সামনে বাদল একেবারেই সহজ হতে পারে না।
জিহবা জড়িয়ে যায়। তােতলামি শুরু হয়। রাতে মীরা মেয়েটাকে যত সুন্দর। দেখাচ্ছিল দিনে তারচেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে । ‘ ভেতর থেকে ভারী গলায় কে যেন ডাকল –মীরা! মীরা ।
‘ মনে হয় শুরুতে যে–ভদ্রলােক এসেছিলেন তিনিই ডাকছেন। সকালে স্ত্রী। নাশতা হয় তার তালিকা দিতে মীরার এত দেরি হবার কথা না। মীরা বলল, আপনারা বসুন। আমি আসছি।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১১
‘ লাল মাথা তুলল। তার কানটান লাল হয়ে আছে। বিয়ে না হয়ে ভালই। হােেছ, বিয়ে হলে বাদল তো মনে হয় সারাক্ষণ কান লাল করে বসে থাকত। পার্মানেন্ট তােতলা হয়ে যেত। কেমন আছিসরে বাদল? জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিত—ভা ভা ভাল।
হিমু দা।
তুমি কী জানতে এ বাড়িতে আজ নাশতা হচ্ছে বাসি পােলাও?‘ জানতাম না।’
মীরা ঢুকেছে। তার হাতে ট্রে । ট্রেভরতি খাবার। মারার পেছনে একটা কাজের মেয়ে তার হাতেও ট্রে। শুধু যে বাসি পালাও এসেছে তা না, পরােটা এসেছে, গােশত এসেছে। ছােট ছােট গ্লাসে কমলার রস । মীরা বলল, আপনারা। চা খাবেন, না কফি খাবেন?
আমি বাদলকে বললাম, “কী খাবি বল?‘ বাদল বলল, ক ক কফি। বাদলকে তােতলামীতে ধরে ফেলেছে।
মীরা আমার সামনে বসল । তার বসার ভঙ্গি বলে দিচ্ছে সে নিজেকে তৈরি। করে এনেছে। কি কি বলবে সব ঠিক করা। নাশতা নিয়ে ঢােকার আগে সে। নিশ্চয়ই মনে মনে রিহার্সেল দিয়েও এসেছে । মীরা বলল, আপনার নাম হিমু?
উনি হিমু দা বলে ডাকছিলেন।”
আমার নাম হিমু।‘
ঐ রাতে আপনাকে ধন্যবাদ দেয়া হয় নি। আসলে আমি আর বাবা আমরা। দুজনেই ভেবেছিলাম টাকাটা কখনাে পাওয়া যাবে না। বাবা অবিশ্যি বার বারই বলছিলেন টাকাটা ফেরত পাওয়া যাবে। তবে এটা ছিল নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে কথার কথা। আপনি যখন সত্যি সত্যি মানিব্যাগ নিয়ে উপস্থিত হলেন তখন আমরা এতই হতভম্ব হয়ে গেলাম যে আপনাকে ধন্যবাদ দিতে পর্যন্ত ভুলে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১১
‘এই মেয়েটাকে তুমি চেন?‘
আশ্চর্য তাে?” আসলে কী আছে! সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় থাকতে পারে না? “সেই জন্যে আশ্চর্য বলছি না। অন্য কারণে আশ্চর্য বলছি।’
সি পােলাও যেতে চেয়েছি–তমি এই বাড়িতে নিয়ে এলে। এই বাড়িতে গেলেন। তখন বাবা খুব হৈচৈ শুরু বলেন, মানুষটা গেল কোথায় মানুষটা গেল। কোথায়? বাবা খুব অল্পতে অস্থির হয়ে পড়েন। তখন তার ব্লাড প্রেসারও বেড়ে বের করার জন্যে প্রতি তার সঙ্গে কথা না বললে বুঝতে ত্রিবেশও লাগে। আমি যদি রাত দুটায় হঠাৎ করে মীরাদের বাসায় উপস্থিত। ১ এবং এই কথাগুলি বলি – কিছুক্ষণের জন্যে হলেও সে বিভ্রান্ত হবে।
এখন সলমলে দিনের আলাে। আমাদের নাশতা দেয়া হয়েছে। কফি পটি। ভরতি। কফির পট থেকে গরম ধােয়া উড়ছে। এই সময় বিভ্রান্তি থাকে না।
বাদল মাথা নিচু করে বাসি পােলাও খাচ্ছে। মনে হচ্ছে, বাসি পােলাও–এর। মতাে বেহেশতি খানা সে এই জীবনে প্রথম খাচ্ছে ।
আগে তিনি এই অস্থির হয়ে পড়লো। আপনাদের খুঁজে বের করার আড়াইটার সময় ঘর থেকে বের হলেন।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১১
বল কী!‘ “আমার বাবা খুব অস্থির প্রকৃতির মানুষ। তার সঙ্গে কথা না বলল শালবন না। উনি রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আপনাদের খুজে বেড়ালেন। একা একা ভয়ে অস্থির।
“একা কেন?” ‘একা, কারণ আমাদের সংসারে দুজনই মানুষ । আমি আর আমার মা যাই হােক বাবা বাসায় ফিরেই বললেন, মারা শােন, আমি নিশ্চিত টাল্লা যারা এসেছিল তারা মানুষ না, অন্য কিছু।‘
আমি বললাম, অন্য কিছু মানে? বাবা বললেন, অন্য কিছুটা কী আমি নিজেও জানি না। আমাদের দৃশ্যমান। জগতে মানুষ যেমন বাস করে, মানুষ ছাড়া অন্য জীবিরাও বাস করে। তাদের কেউ এসেছিলেন। বাবা এমনভাবে বললেন, যে আমি নিজেও প্রায় বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। সেই কারণেই আপনাকে দেখে এমন চমকে উঠেছিলাম।
“ও আচ্ছ।”
এখন আপনাকে একটা অনুরােধ করছি, আপনি দয়া করে বাবার সঙ্গে দেখা করুন। বাবার মন থেকে ভ্রান্ত ধারণা দূর করুন ।
Read More