হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১১

গতরাতে বাড়িতে একটা উৎসব ছিলবড় মামার পঞ্চাশতম জন্মদিনসেই উপলক্ষে পােলাও রান্না হয়েছেঅনেক পােলাও বেচে | গেছেডীপ ফ্রীজে রাখা ছিলসকালে সেপােলাও গরম করে দেয়া হয়েছে| আমি সহজ গলায় বললাম, আমরা দুজন কী সেই বাসি পােলাও গেয়ে | দেখতে পারি? পােলাওয়ের সঙ্গে ডিম ভাজাহিমুর দ্বিতীয় প্রহর

বাদল চোখমুখ শুকনাে করে ফেললমীরা তাকাল তীক্ষ দৃষ্টিতে আমি বললাম, তারপর মীরা, তুমি ভাল আছ? মীরা এখনাে তাকিয়ে আছে। 

আমাকে চিনতে পারছ তাে? যে তােমাকে টাকা দিয়ে এলাম সাঁইত্রিশ হাজার নয়শ একুশ টাকা?” 

মীরা পুরােপুরি হকচকিয়ে গেছেমেয়েরা হতচকিত অবস্থা থেকে চট করে । 

একটা উত্তেজনার মধ্যে তােকে ফেলে দিয়েছি যাতে আঁখি মেয়েটির চিন্তা থেকে আপাতত মুক্তি পাস‘ 

দারোয়ান এসে বলল, যান ভিতরে যাইতে বলছে। 

আমরা রওনা হলামবাদল ভাল ভয় পেয়েছেতার চোখেমুখে ঘামতবে লে আঁখির হাত থেকে এখন মুক্ত। 

আমাদের বসাল দুয়িংরুমের পাশে জােট একটা ঘরে এটা বােধ হয়গুরুত্বহীন মানুষদের বলার জন্যে ঘরদেশ থেকে লােক আসবে এন্মান সহসরল জীবনে বাস নীল সঙ্গে তেমন যােগ নেইতার জীবনে হকচকিয়ে যায়। 

২৮ আগস খানেমীরা পারছে নামেয়েট মনে হয় সহস করেতাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তেমন যােগ নেইঘটনা তেমন ঘটে নিমীরা, আমাকে চিনতে পারছ তাে?অাজাই লাসি পােলাও নাশতা‘ একে বলে কাকতালীয় যােগাযোগ। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১১

লাকতলীয় না এর নাম হিমুতালীয় তোমার বো আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছেআর আমি গােড়া থেকেই জানি = তবে ক্ষমতাটা যে এত প্রবল তা জানতাম না‘ 

আমিও জানতাম নাহিমু না!” 

চলে যাইস্ট্যাটিসটিক্যালনাজিআমরা আসলে নাশতা 

ননি শুভআমাদের নাশতা দিয়ে দাও খেয়ে চলে যাই. ডাটা সংগ্রহের জন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি এসব ধাপ্পাবাজিআমরা আসলে মেতে এসেছি‘ 

‘তুমি কাউকে দেখে তার ভবিষ্যৎ বলতে পার?আমার নিজের ভবিষ্যৎ বলতে পারিঅন্যেরটা পারি নাতােমার ভবিষ্যৎ কী?বলা যাবে না। 

আসল কথা বলতে ভুলে গেছি, নাশতা একজনের জন্যে আনার লালর জন্যেআমি একবেলা খাইবাদলের সঙ্গে তােমার পরিচয় দেয়া হয়নিহচ্ছে আমার ফুপাতো ভাইপিএইচডি করার জন্যে যেনা গিয়েছেজায়গাটা কোথায় রে বাদল?” 

বাদল মাথা নিচু করে ছিলসে মাথা নিচু করে ক্ষীণ স্বরে বলল, কানাডাঅপরিচিত মানুষের সামনে বাদল একেবারেই সহজ হতে পারে না। 

জিহবা জড়িয়ে যায়তােতলামি শুরু হয়রাতে মীরা মেয়েটাকে যত সুন্দরদেখাচ্ছিল দিনে তারচেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে  ভেতর থেকে ভারী গলায় কে যেন ডাকল মীরা! মীরা  

মনে হয় শুরুতে যেভদ্রলােক এসেছিলেন তিনিই ডাকছেনসকালে স্ত্রীনাশতা হয় তার তালিকা দিতে মীরার এত দেরি হবার কথা নামীরা বলল, আপনারা বসুনআমি আসছি। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১১

লাল মাথা তুললতার কানটান লাল হয়ে আছেবিয়ে না হয়ে ভালইহােেছ, বিয়ে হলে বাদল তো মনে হয় সারাক্ষণ কান লাল করে বসে থাকতপার্মানেন্ট তােতলা হয়ে যেতকেমন আছিসরে বাদল? জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতভা ভা ভাল। 

হিমু দা। 

তুমি কী জানতে বাড়িতে আজ নাশতা হচ্ছে বাসি পােলাও?জানতাম না।’ 

মীরা ঢুকেছেতার হাতে ট্রে ট্রেভরতি খাবারমারার পেছনে একটা কাজের মেয়ে তার হাতেও ট্রেশুধু যে বাসি পালাও এসেছে তা না, পরােটা এসেছে, গােশত এসেছেছােট ছােট গ্লাসে কমলার রস মীরা বলল, আপনারাচা খাবেন, না কফি খাবেন

আমি বাদলকে বললাম, কী খাবি বল?বাদল বলল, কফিবাদলকে তােতলামীতে ধরে ফেলেছে। 

মীরা আমার সামনে বসল তার বসার ভঙ্গি বলে দিচ্ছে সে নিজেকে তৈরিকরে এনেছেকি কি বলবে সব ঠিক করানাশতা নিয়ে ঢােকার আগে সেনিশ্চয়ই মনে মনে রিহার্সেল দিয়েও এসেছে মীরা বলল, আপনার নাম হিমু

উনি হিমু দা বলে ডাকছিলেন” 

আমার নাম হিমু‘ 

রাতে আপনাকে ধন্যবাদ দেয়া হয় নিআসলে আমি আর বাবা আমরাদুজনেই ভেবেছিলাম টাকাটা কখনাে পাওয়া যাবে নাবাবা অবিশ্যি বার বারই বলছিলেন টাকাটা ফেরত পাওয়া যাবেতবে এটা ছিল নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে কথার কথাআপনি যখন সত্যি সত্যি মানিব্যাগ নিয়ে উপস্থিত হলেন তখন আমরা এতই হতভম্ব হয়ে গেলাম যে আপনাকে ধন্যবাদ দিতে পর্যন্ত ভুলে। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১১

এই মেয়েটাকে তুমি চেন?‘ 

আশ্চর্য তাে?” আসলে কী আছে! সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় থাকতে পারে না? সেই জন্যে আশ্চর্য বলছি নাঅন্য কারণে আশ্চর্য বলছি।’ 

সি পােলাও যেতে চেয়েছিতমি এই বাড়িতে নিয়ে এলেএই বাড়িতে গেলেনতখন বাবা খুব হৈচৈ শুরু বলেন, মানুষটা গেল কোথায় মানুষটা গেলকোথায়? বাবা খুব অল্পতে অস্থির হয়ে পড়েনতখন তার ব্লাড প্রেসারও বেড়ে বের করার জন্যে প্রতি তার সঙ্গে কথা না বললে বুঝতে ত্রিবেশও লাগেআমি যদি রাত দুটায় হঠাৎ করে মীরাদের বাসায় উপস্থিতএবং এই কথাগুলি বলি কিছুক্ষণের জন্যে হলেও সে বিভ্রান্ত হবে। 

এখন সলমলে দিনের আলােআমাদের নাশতা দেয়া হয়েছেকফি পটিভরতিকফির পট থেকে গরম ধােয়া উড়ছেএই সময় বিভ্রান্তি থাকে না। 

বাদল মাথা নিচু করে বাসি পােলাও খাচ্ছেমনে হচ্ছে, বাসি পােলাওএরমতাে বেহেশতি খানা সে এই জীবনে প্রথম খাচ্ছে । 

আগে তিনি এই অস্থির হয়ে পড়লোআপনাদের খুঁজে বের করার আড়াইটার সময় ঘর থেকে বের হলেন। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১১

বল কী!আমার বাবা খুব অস্থির প্রকৃতির মানুষতার সঙ্গে কথা না বলল শালবন নাউনি রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আপনাদের খুজে বেড়ালেনএকা একা ভয়ে অস্থির। 

একা কেন?একা, কারণ আমাদের সংসারে দুজনই মানুষ আমি আর আমার মা যাই হােক বাবা বাসায় ফিরেই বললেন, মারা শােন, আমি নিশ্চিত টাল্লা যারা এসেছিল তারা মানুষ না, অন্য কিছু‘ 

আমি বললাম, অন্য কিছু মানে? বাবা বললেন, অন্য কিছুটা কী আমি নিজেও জানি নাআমাদের দৃশ্যমানজগতে মানুষ যেমন বাস করে, মানুষ ছাড়া অন্য জীবিরাও বাস করেতাদের কেউ এসেছিলেনবাবা এমনভাবে বললেন, যে আমি নিজেও প্রায় বিশ্বাস করে ফেলেছিলামসেই কারণেই আপনাকে দেখে এমন চমকে উঠেছিলাম। 

আচ্ছ” 

এখন আপনাকে একটা অনুরােধ করছি, আপনি দয়া করে বাবার সঙ্গে দেখা করুনবাবার মন থেকে ভ্রান্ত ধারণা দূর করুন 

 

Read More

হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড–১২

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *