“তাহলেতাে বলা যেতে পারে – সুজানের একটা বড় অংশই মন আড়ালে রেখে দেয়া হয়েছে।‘
“আপনি কি আমার সঙ্গে তর্ক করতে চাচ্ছেন?”
“না সন্দরী মেয়েদের সঙ্গে আমি তর্ক করি না। তারা যা বলে তাই হাসিমা মেনে নেই।‘
‘ সস্তা ধরনের কনভারসেশন আমার সঙ্গে দয়া করে করবেন না। সন্দী ‘মেসেলের সঙ্গে ‘আমি তর্ক করি না” এটা বহু পুরাতন ডায়ালগ । বহুবার ব্যবহান শুলা হয়েছে। শুনলেই গা জ্বালা করে। আপনি খুব অল্প কথায় আমাকে বলুন কি দেখে ভয় পেয়েছিলেন, তারপর রিলিজ অর্ডার নিয়ে বাসায় চলে যান।
আমি আপনাকে বল না। ‘ কলিজানার দৃষ্টি তীক্ষ হল। তার ঠোটের সিগারেট নিভে গিয়েছিল সে। আলেটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, কেন বলবেন না?
‘ আমি শান্তগলায় বললাম, আপনাকে আমি বলে ব্যাপারটা বুঝাতে পারব। না। আপনাকে দৃশ্যটা দেখাতে হবে। ঘটনাটা কি পরিমাণে অস্বাভাবিক তা জানার জন্যে আপনাকে নিজের চোখে দেখতে হবে। আমি বরং আপনাকে দেখাবার ব্যবস্থা করি।
“আপনি আমাকে ভত্র দেখাবেন?‘
ভুত কিনা তাতাে জানি না যে জিনিসটা দেখে ভয় পেয়েছিলাম সেটা দেখাল ।
আমি গলিটার মুখে দাড়িয়ে আছি।
ঢাকা শহরের অন্যসব গলির মতই একটা গলি। একপাশে নােংলা নর্দমা । নর্দমায় গলা পিচের মত ঘন–কাল ময়লা পানি। গলিতে ডাষ্টবিন বসানাে হয় না বলে দুপাশের বাড়ির মালা গলিতেই ফেলা হয়। সেই মালার বেশিরভাগ লােকের পায়ে পায়ে চলে যায়। আর বাকিটা জমে থেকে শেকে এক সময়। গলিরই অংশ হয়ে যায়।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৫
চারটা কুকুর থাকার কথা এদের দেখলাম না। সেই জায়গায় ছােট ছােট কিছু বাচ্চাকে দেখলাম টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলছে। খেলা আপাতত বন্ধ। কারণ বল নর্দমায় ডুবে গেছে। কাঠি দিয়ে বল খােজা হচেছ। নি মালা পানির নর্দমায় টেনিস বলের ডুবে যাবার কথা না– আর্কিমিডিসের সূত্র অনুযায়ী ভােলে থাকার কথা। ডুবে গেল কেন কে জানে। | আমি গলির শেষ মাথা পর্যন্ত যাব কি যাব না ঠিক করতে পারছি না। এমন এই দিনের আলােয় শেষ মাথা পর্যন্ত যাওয়া না যাওয়া অর্থহীন – মধ্যরাতে।
পরেই কোন এক সময় আসতে হবে। আজ বরং কিছুক্ষণ বাজালের ক্রিকেট খেলা দেখে ফিরে আসা যাক। সাতদিন হাসপাতালে শুয়ে থেকে শরীর অন্যতম। হয়ে গেছে। শরীর ঠিক করতে হবে। হিমু টাইপ জীবন চর্চা শুরু করা দরকার ।। | বাচ্চারা বল খুঁজে পেয়েছে। নর্দমা থেকে বল তুলতে গিয়ে ভুটা বাচ্চা নােংরায় মাখামাখি হয়েছে। তাতে তাদের কোন বিকার নেই। বল খুঁজে পাওয়ার | আনন্দেই তারা অভিভূত। তারা তাদের খেলা শুরু করল।
আমি শুরু করলাম আমার খেলা – ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাটা। গত সাতদিন এদের কাউকে দেখিনি। রাস্তাগুলির জন্যে আমার মন কেমন করছে।। রাস্তাদেরও হয়ত আমার জন্যে মন কেমন করছে। কথা বলার ক্ষমতা থালালে ওরা নিশ্চয়ই আমাকে দেখে আনন্দিত গলায় জীবনানন্দের মত বলত – হিম সাহেব এত দিন কোথায় ছিলেন?
সন্ধ্যার দিকে আমি কাকরাইলের কাছাকাছি চলে এলাম । আমার পদমালা। কিছুক্ষণের জন্যে স্থগিত হল– কারণ আমার পায়ের কাছে একটা মানিব্যাগ ।। পেট ফুলে মােটা হয়ে আছে। আমার কাছে মনে হল মানিব্যাগটা চিৎকার করে। বলছে– এই গাধা চুপ করে দাড়িয়ে আছিস কেন? আমাকে ভুলে পকেটে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৫
“ণে তা বলতে পারছি না। কোন একদিন এসে আপনাকে নিয়ে যাব।
ফারজানা সিলেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, আচ্ছা বেশ নিয়ে যাবেন। আমি গ্রি লক্ষী নকুলে পাকব। মট করে চোখে পড়ে না। খে পড়ে নি? তার পালে ও । আর তা কারও চোখে পড়বে না লুকিয়ে যে । কেউ দেখছে না । লাল বলার নাস্তায় এলাে রাতের মণিব্যাগ, চুট করে চোখ সছে। অকালে লােন মাটির দিকে তাকিয়ে হাট ‘ ছাড়া অন্ধকার হয়ে এসেছে। আকাশের লােক এন মাটির চি
লালমতি তাকিয়ে হাট। এইজনেই কা কারও চোখে পড়ে নি | পেটমােটা একটা মানিব্যাগ রাস্তায় পড়ে থাকবে আর তা কারও চোখে – এটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য না। আমি সাতদিন রাস্তায় হিলাম না । এই সা. সালে দেশের বাপই গুলিতে কা অবিশ্বাস্য কাণ্ড–কারানা হাটতে শুরু কাল ‘ আমি হাত বাড়িয়ে মানিব্যাগ তুললাম। অতিরিক্ত পেটমােটা মাটির সাধারণত মালপানি থাকে না, কাগ পান তাসা থাকে। এখানে ও হমতো ১ তালে এক গান। আমার আগে অনেকেই এই ব্যাগ তুলে ঠক খেয়ে অবান্ত হয় দিয়েছে। এমনও হতে পারে সে ঘাপটি মেরে দূরে দাড়িয়ে আচ্ছে মজা দেখা
এই দলটার যিনি ওস্তাদ তিনি আবার কথা বললেন, শ্ম ব্রাদার, তলা। বলছেন না কেন? হাতে কা মানিল্যাগ?
আমিঃ হাই তােলার মতাে ভঙ্গি করে বললাম, তাই তাে মনে হয় । “কুড়িয়ে পেয়েছেন?
‘ড়িয়ে পাব কীভাবে? মানিব্যাগ তো আর ফুল না যে পড়ে থাকবে আর কুড়িয়ে নেব।‘
পেয়েছেন কোথায়? ছিনতাই করেছি।‘
দ্বিতীয় ছুঁচালাে যুৱক এবার হালকা চালে এগিয়ে আসছে। এ বেশ বলশালী। তাল ও হটছে গুড়িয়ে খুড়িয়ে। তার মুখভরতি পান। সে ঠিক অনাল পাশে এলে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৫
‘ ব্যাগ খুললাম। গুপ্তধন পাওয়ার মতাে আনন্দ হল। ব্যাগভরতি টাকা। বাবাবের রিবন দিয়ে বাঁধা পাচশো টাকার নােটের সুপ। ত্রিশ–পয়ত্রিশ আল তাে হবেই, বেশিও হতে পারে। ব্যাগটা ঝট করে পাঞ্জাবির পকেটে লুকিয়ে যালতে যাব তখন মনে হল আমার পাঞ্জাবির পকেট নেই। আমি হচ্ছি । হিন্যদের পাঞ্জাবির পকেট থাকে না। হিমুরা অন্যের মানিব্যাগ এমন ট শুনে। লকিয়ে ফেলতে চায় না। এখন কী করব? ব্যাগটা যেখানে ছিল সেখানে মেলে।
অব? অসম্ভব! রাস্তায় পড়ে থাকা দশটিাকার একটা নােট ফেলে রেখে চলে। যাওয়া যায়, কিন্ত পাঁচশো টাকার নােট ফোলে রেখে চলে যাওয়া যায় না । নােটটা সম্বক হয়ে মানবসন্তানদের আকর্ষণ করতে থাকে। অতি বড় যে সাধু তার ভেতরে ও লুকিয়ে থাকে একটা ছিচকে চোর । ‘ ভ্রলার, আপনার হাতে এটা কী মানিব্যাগ।
আমি পাশ সিরুললাম । দুচালাে চেহারার এক যুবক দাড়িয়ে আছে । ঘুম থেকে অন্য হাতমুখ না ধুলে চেহারায় যেমন অসুস্থ ভাব লেগে থাকে তার মুখে সেই অসুস্থ ভাব । চোখ হলুল । ঠোট কালচে মেরে আছে। নিচের ঠোট খানিকটা স্কুলে
হইছে? প্রশ্নটা সে আমাকেই করল । তার পরে এ আমি বিস্মিত হবার মতো করে বললাম, আমাকে বলছেন? “হে আপনারে, প্রবলেমটা কী?
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৫
কোনাে প্রবলেম নেই। আমার হাতে একটা মানিব্যাগ আছে এটাই প্রবলেম। মানিব্যাগ ভরতি পাঁচশাে টাকার নােট। ত্রিশ–পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা। হবার কথা। দেখবেন? এই যে নিন দেখুন।
তার মুখ–চাওয়া চাওয়ি করল । দেখতে চাইল না। তার “শাৰেও আমি ব্যাগ। খুলে ভেতরটা দেখিয়ে দিলাম । তারা আবারও মুখ–চাওয়া–চাওমি করল। আমার ব্যবহারে তার মনে হল খানিকটা বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছে। আমি মিষ্টি ত্রে। হাসলাম। তাদের বিভ্রান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়ে মধুর গলায় বললাম, মানিব্যাগ।
ও জুতাগড়া মন্ত্রলা। অনেক দিন কালি করা হয় নি, রক্ত চটে গেছে। একটু কালের আলাে একজন। তার চেহারাও ছুঁচালো। তার মুখে ও অসুস্থ ভাব এবং চোখ কোনাে ডাজার লেথলে দুজনকেই বিলিরুবিন টেস্ট করতে পাঠাত। আমি এই জাতীয় যুবদের চিনি।
Read More