সামানা চরি থেকে শুরু করে মানুষের পেটে দশ হলঃ “হরি ঢাকিয়ে মােচড় দেয়ার মতো অপরাধ এব্রা খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে করতে পারে। এরা কখনাে একা চলাফেরা করে না। আবার এদের দল বড়ও হয় না।
নেয় ছোট ছোট লল। দুজনের একজন (সাধারণত দুবলা–পাতলাজন) ওস্তান, তিনি হুকুম দেন। অন্য জন সেই হুকুম পালন করে। কাক মানুষের হাত থেকে খাবার নিয়ে উড়ে যায় । কিন্তু তাদেরকে যলি যত্ন করে থালায় খাবার বেড়ে ডাকা হয় আয় আয় তখন তারা আয় কাছে আসে।
দূর থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে। উড়ে চলেও যায় না, আবার কাছেও আসে না। যুবক দুটির মধ্যে কাকভাব প্রবল বলে মনে হল। তারা সরু চোখে। মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে আছে। হাত বাড়াচ্ছে না। আমাকে ছেড়ে চলে | যাচ্ছে না। আমি আবারও বললাম, কী মানিব্যাগ নিতে চান? নিতে চাইলে নেন। ” পানমুখের যুবক আবারও পিক ফেলল । সে একটু চিস্ততমুখে তার স্তা দেয় । দিকে তাকাচ্ছে।
ওস্তাদের নির্দেশের অপেক্ষা। ওস্তাদ নির্দেশ দিচ্ছেন না। সময় । নিচ্ছেন। পরিস্থিতি তিনি যত সহ ভেবেছিলেন এখন তত সহজ মনে হচ্ছে না । চট করে ডিসিশান নেয়া যাচ্ছে না। জায়গাটা নির্জন নয়। ঢাকা শহরে নিউনি জায়গা নেই। তবে আমি যেখানে। দাড়িয়ে সে–জায়গাটায় এই মুহর্তে লােক–চলাচল নেই। ওস্তাদ এবং, গারেন আমার দু–পাশে দাড়িয়ে আছে। ওস্তাদের বাঁ হাত তার প্যান্টের পকেটে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৬
লােহাটি সম্ভবত বায়া এবং সে তার বা হাতে নেয়া পর্যন্ত শিষ্য–গুরুর সাক্ষতি সম্পূর্ণ হবে না ।
“আফনেরে যে আবার দেখমু ভাবি নাই। আল্লাহপাকের মাস রহমতে আফনেরে পাইছি। আছেন কেমুন হিমু ভাই” ভাল। আফনে একটা বড়ই আচায্য মানুষ্ক । অখন কন কেমনে আফনের খেদমত করি।‘
‘চা খাওয়াও। পয়সা কিন্তু দিতে পারব না।
দিয়া দুই গালে দুইটা বাড়ি দিতেন।
আমি ওস্তাদ ও শাগরেদকে দেখিয়ে বললাম, আমার দুজন গেস্ট আছে। এদেরও চা দাও।
কাওছার মিয়া তার সবকটা দাঁত বের করে বলল, আন্ন কী খাইবেন কুন।। “আর কিছু লাগবে না। ‘ছিরাপেট ছিরগেট আইন্যা দেই?”
তে লাগণ এবং সে তার বাঁ হাতে খুন ধরে আছে। মে–তে। মুহতে ল বের করবে। সেই মুহুর্তের জন্যে অপেক্ষা ।
” আমি হঠাৎ করেই লম্বা লম্বা পা ফেলে হাটা শুরু করলাম। তালা হরিয়ে গেল, তবে তৎক্ষণাৎ আমার পেছনে পেছনে আসতে শুরু করে। এমন শিশষ ভঙ্গিতে কাশলেন, সঙ্গে সঙ্গে শাগনের প্রায় দৌড়ে আমার মা চলে এল। এখন আমরা তিনজন হাটছি। শাগরেদ সবার আগে, মানে , এর পেছনে ওস্তান। ওরা আমার হাত থেকে শনিব্যাগটা নিয়ে দৌড় দিয়ে ভর কেন বুঝতে পারছি না। সবচে সহজ এবং যুক্তিযুক্ত কাজ হল মানিব্যাগ | দৌড় দেয়া। অবশ্যি এদের নানান রকম টেকনিক আছে। এরা কোন টেকনি ফলাে কছে কে জানে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৬
‘ আকরাইলের আশেপাশের রাস্তার একটা নিয়ম হল কথা নেই বার্তা ৯ে হঠাৎ একনল তবলিগ জামাতি কোথেকে যেন উদয় হয়। এখানেও তা–ই হল । দশ–এগারাে জ্বনের একটা দল পাটলা–পুটলি, বদনা, ছাতা নিয়ে উপস্থিত। হাসি–খুশি কালো। তারা চলছে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে। আমি মাথা ঘুরিয়ে আমার পেছনের ওস্তাদের দিকে তাকালাম । বেটাব্লার মুখ হতাশায় মিইয়ে। গেছে। নিচের ঠোট আর ও নেমে গেছে। ভাল একটা শিকার পেয়েছিল। সেই। শিকার হাসিমুখে তবলিগ জামাতীদের দলে ভিড়ে গেছে।
‘ তবলিগের দল াকরাইল মসজিদের দিকে চলে গেল। আমি ইচ্ছা করলে ওদের সঙ্গে ভীড়ে যেতে পারতাম । তা করলাম না। আমি রওনা হলাম চায়ের দোকানের দিকে। ওস্তাদ এবং শাগরেদের মধ্যে নতুন উৎসাহ দেখা দিল। তারা। চোখে–চোখে কিছু কথা বলল । দুজনই একসঙ্গে সিগারেট ধরাল। তারাও। আসছে। আসুক । চা–টা একসঙ্গে খাই। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই মজাদার নাটকের ভেতর ঢুকে গেছি। ভাল লাগছে। নাটকের শেষটা রক্তারক্তি পর্যন্ত না গড়ালেই হয়।
‘চায়ের দোকানের মালিকের নাম কাওছার মিয়া। এক মধ্যরাতে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। কাওছার মিয়ার ধারণা সেই রাতে আমি তাকে ভয়ংকর। বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম। মধ্যরাতের পরিচিতজনরা সাধারণত সন্ধ্যারাতে কেউ কাউকে চেনে না। কাওছার মিয়া চিনল। “আরে হিমু ভাইয়া, আফনে!” এই বলে নে–চিৎকার দিল তাতে নামাজ ভঙ্গ করে কাকরাইল মসজিদের।
মুণিদের জুটে আসার কথা। তারা দুটে এলেন না, তবে ওস্তাদ ও শাগরেদের | আমেল গুম হয়ে গেল। কাওছার মিয়া চায়ের দোকানের মালিক হলেও তাকে এসখাচ্ছে ভীমভৱানার মতাে। সে আদর করে কালাে পিঠে থালা দিলে সেই মানব। সন্তানের মেরুদণ্ডের বেশ কিছু আড় খুলে পড়ে যাবার কথা।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৬
কাওছার মিয়া চিৎকার দিনেই থামল না, দোকান ফেলে ছুটে এসে পায়ে | পড়ে গেল। নেন অনেকদিন পর শিমা তার গুরুর দেখা পেয়েছে । চরণধুলি ||
কাওছার মিয়া দোকানের ছেলেটাকে পান–সিগারেট আনতে পাঠাল । তিনশলা বেনসন। তিনটা মিষ্টি পান, জরদা “আলিদা” ।
ওস্তাদ ও শাগরেদ পুরােপুরি থমকে গেল। তবে চলে গেল না। দাড়িয়ে। রইল। এখন তাদের চোখ আমার হাতে ধরা মানিব্যাগের দিকে। আমি চায়ের কাপ তাদের দিকে বাড়িয়ে বললাম, ভাই, চা খান। অনেকক্ষণ আমার পিছনে। পিছনে ঘুরছেন, নিশ্চয়ই টায়ার্ড।
ওস্তাদ বললেন, চা খাব না। শাগরেদও সঙ্গে সঙ্গে বলল, চা খাব না ।।
কাওছার মিয়া চোখ কপালে তুলে বলল, হিমু ভাইয়া চা সাধাতেই, আর চা। খাইবেন না ! কন কী আফনে? আচায্য ঘটনা । ধরেন চা নেন ।।
ওস্তাদ ও শাগরেদ দুজনেই শুকনাে মুখে চায়ের কাপ তুলল। কাওছার মিয়া | তার বেনসন সিগারেট এগিয়ে দিতে দিতে বলল, আফনাদের পরিচয়।
ওস্তাদ ও শাগরেদ মুখ–চাওয়া–চাওয়ি করছে। আমি তাদের পরিচয়দান। থেকে রক্ষা করলাম। কাওছারকে বললাম, শােনাে কাওছার মিয়া। আমি একটা মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেয়েছি। মানিব্যাগে টাকার পরিমাণ ভালই, ত্রিশ–পয়ত্রিশ। হাজার তাে বটেই। টাকাটা দিয়ে কী করা যায় কালাে তাে!
কাওছারের মুখ হাঁ হয়ে গেল। সে বিড়বিড় করে বলল, খাইছে রে! আমি ওস্তাদ ও শাগরেদের দিকে তাকালাম। তারা মনে হচ্ছে দুদুগুখে কেনে ফেলবে। আমি তাদের দিকে মানিব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললাম, ভাল করে দেখুনতো কোন ঠিকানা–লেখা কাগজ আছে কী না। আর টাকাটাও গুলো দেখুন । ঠিকানা পাওয়া মাওয়া ঠিক না। আমার চোখে কাজল দিয়ে এসেছে। সৰ পবতী মেয়েদের চোখ বিষন্ন হম। এই মেয়ের চোখও বিষন্ন।।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৬
ভদ্রলােক বললেন, মা, তােকে আমি বলেছিলাম না টাকাটা পাওয়া যাবে?
গেলে চলন নিয়ে আসি। এতগুলি টাকা একা একা নিয়ে যাওয়া । নাম হিম আপনাদের পরিচয়টা কী?
ও বিভবিড় করে বললেন, আমার নাম মােফাজ্জল। আর এ জাতি। “ঠিকানা পাওয়া গেছে?” টুকরা কাগজ অনেক আছে কোনটা ঠিকানা কে জানে! ‘ঐ দেখে দেখে বের করে ফেলব। আপনাদের কাজ না থাকলে আমার সঙ্গে কাজ আছেঃ
মীরা তাকাল আমার দিকে। আমি বললাম, ভাল আছেন?
মীরা ভুরু কুঁচকে ফেলল। আমি মােফাজলের দিকে তাকিয়ে বললাম, মানিব্যাগ দিয়ে দিন। মােফাজ্জল কঠিন গলায় বলল, মানিব্যাগ মো উনাদের তা প্রমাণ কী?
আমি উদাস গলায় বললাম, প্রমাণ লাগবে না। মরা, তুমি টাকাটা |
তা তালে আনিব্যাগটা আপনার পকেটে রাখুন। আমার পাঞ্জাবির পতে নেই । আপনাদের পাওয়ায় আমার সুবিধাই হল ।
‘ মােহাল আমার দিকে তাকিয়ে বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসল । আমি তার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে তার চেয়েও বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসলাম। বিচিত্র হাসি বিডি হাসিতে কাটাকাটি।
কাওছার উৎসাহের সঙ্গে বলল, টিকাটা আগে গনেন । কত টেকার।
জহিরুল টাকা গুনছে। বেশ আগ্রহের সঙ্গেই শুনছে। কাওছার বলল । আরেক দফা চা দিমু হিমু ভাই।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৬
মীরার কোচকানাে ভুল আর ও কুঁচকে গেল। আমার মতাে অভাজন তাকে তুমি করে বলবে তা সে মেনে নিতে পারছে না। মানিব্যাগ–সংক্রান্ত জটিলতা না। থাকলে সে নিশ্চয়ই শুকানো গলায় বলত, ‘আমাকে তুমি করে না বললে খুশি।
মােফাজ্জল ভাই, জহিরুল ভাই, আফনেরারে দিমু?
জহিরুল টাকা গােনায় ব্যস্ত। সে কিছু বলল না। মােফাজ্জল উদাস গলায়। বলল, দাও |
আমরা রাত দুটার দিকে ঝিকাতলার এক টিনের বাড়ির দরজায় প্রবল উৎসাহে কড়া নাড়তে লাগলাম। আমরা কড়া নাড়ছি বলা ঠিক হচ্ছে না। আমি কড়া নাড়ছি, বাকি দুজন চিমশা মুখে দাঁড়িয়ে আছে। এরা আমাকে ছেড়ে চলেও যাচ্ছে না, আবার সঙ্গে থাকার কোনাে কারণও বােধহয় খুঁজে পাচ্ছে না বেশ।
কিছুক্ষণ কড়া নাড়ার পর এক ভদ্রলােক বের হয়ে এলেন। পঞ্চাশ–ষাট হবে। বয়স। মাথার চুল ধবধবে শাদা। ভদ্রলােক মনে হয় অসুস্থ। কেমন উদভ্রান্ত। পাট। আমাদের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে আছেন, কিন্তু চোখের পলক ফেলছেন। না। আমি বললাম, আপনার কী কোনাে মানিব্যাগ হারিয়েছে?
ভদ্রলােক কিছু বললেন না, শন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আমি বললাম, মানিব্যাগে অনেকগুলি টাকা ছিল। আমার ধারণা আপনারই মানিব্যাগ।
প্রলোক বাড়ির ভিতরের দিকে তাকিয়ে আত গলায় ডাকলেন, মীরা!
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৬
মােফাজ্জল অপ্রসন্ন মুখে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল। এরকম অপ্রীতিকর কাজ সে মনে হয় তার জীবনে অরি করেনি। মােফাজ্জলের চেনেন ও বেশী মন খারাপ হয়েছে তার টেল জহিরুলের। জহিরুলের মানে হয় মনে। দুঃখে কেঁদেই ফেলবে।
ভদ্রলােক আবারও মীরাকে বললেন, বলেছিলাম না সব টাকা ফেরত পাল, বিশ্বাস হল? তুইতাে কেদে অস্থির হচ্ছিলি। নে, টাকাটা শুনে লেখ । সাইলিশ হাজার নয়শ একুশাে টাকা আছে।
মীরা বলল, গুনতে হবে না। ভদ্রলােক বললেন, আহা–গুনে দেখ, না! আমি বললাম, মীরা, তুমি সাবধানে শুনতে থাকো। আমরা চললাম ।
শুরুতেই তুমি বলায় মেয়েটা রেগে গেছে, তাকে আবারো তুমি বলে আরও লাগিয়ে দিয়ে বের হয়ে এলাম।
মােফাজ্জল ক্রদ্ধ গলায় বলল, এতগুলা টাকা ফেরত পেয়েছে তার বেকা। আলামত নাই। শালার দুনিয়া! লাথি মারি এমন দুনিয়ারে!
জহিরুল বলল, এক হাজার টাকা বখশিশ দিলেওতাে একটা কথা ছিল! কী। বলেন ওস্তাদ। বখশিশ না দেওয়াটা অধর্ম হয়েছে।
আমি বললাম, বখশিশ পেলে কী করতেন?
জহিরুল দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, কী আর করতাম—মাল খাইতাম । পাতি | চাইরদিনে তিন আঙ্গুল পরিমাণ বাংলা খাইছি। তিন আঙ্গুল বাংলায় কী হয় কন। তিন আঙ্গুল মাল ইচ্ছা করলে একটা মশাও খাইতে পারে। মাল খাওয়া তাে । দূরের কথা, আজ সারাদিনে ভাতও খাই নাই। আপনার পিছে পিছে বেফিফকির মারা।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৬
মরা বের হয়ে এল। আমি হিনা না হয়ে অন্য কেউ হলে তৎক্ষণাৎ মেয়েটি। ‘মনে পড়ে যেতাম। কী মিষ্টি যে তার মুখ! মনে হচ্ছে, এইমাত্র সে গােসল কণে
কথার দরকার কী! হিমু ভাইয়া
‘এলিতেছি। আইজ যত হাটা হাঁটছি একটা ফকিরও অত হাঁটা হাটে না।
শালবন বিল মখ বলল, উপ কর । এত অথার দরকার ! বিননাম দেন, আমরা এখন যাই। যাবেন কোথায়?
জানি না কই যাব।‘ ‘ আমার সঙ্গে চলেন, মাল খাওয়াব।‘ ।
‘মােফাজ্জল সরু চোখে তাকিয়ে রইল। সে আমার কথা বিশ্বাস কল পারছে না আবার অবিশ্বাসও করতে পারছে না। বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মাঝি, বাস করা খুবই কষ্টকর। মােফাজজল আছে সেই কষ্ট।
শী, যাবেন। সত্যি মাল খাওয়াবেন?”
কী খাওয়াবেন—বাংল? বাংলা ইংরেজি জানি না, তবে খাওয়াব।” ‘চলো যাই।” ।
মােফাল অনিচ্ছার সঙ্গে হাটছে। তবে জহিরুলের চোখ চকচক করছে। ছি মানষ আছে যাদের জন্মই হয় শিষ্য হবার নে। জহিরুল হল সেই মান্য। এল কখনো বিশ্বাস–অবিশ্বাসের মাঝামাঝি বাস করে না। এরা বাস করে। বিশ্বাসের জগতে। যে যা বলে তাই বিশ্বাস করে।
জহিরুল বলল, হিমু ভাই, আপনেরে আমার পছন্দ হয়েছে ।
Read More