হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০

আমি হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিলামমনে হচ্ছে, আজকের দিনটি হবে আমার জন্যে কর্মব্যস্ত একটি দিন

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর

পথে নেমেই শুনি কোকিল ডাকছেতার মানে কী? শীতকালে কোকিল ডাকছে কেন

কোকিল ডাকছে শুনছিস?” 

ব্রেইন ডিফেক্ট কোকিলঅসময়ে ডাকাডাকি করছে‘ 

তা হলে চল আমার সঙ্গে হাঁটাহাঁটি করবি হাটাহাটি করলে মন ভাল। 

কে বলেছে?पाभि वनधिবাদল উঠে দাড়িয়ে বলল, চলােচিড়িয়াখানায় যাবি? চিড়িয়াখানায় যাব কেন?” 

জীবজন্তু দেখলে মন দ্রুত ভাল হয়চল বদরের খাচার সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ ওদের লাফালাফি ঝপাঝাপি দেখে আসিতারপর চল হাতির পিঠে চড়িপারহেড দশ টাকা নিয়ে ওরা হাতির পিঠে চড়ায় তাের কাছে টাকা আছে 

তুই কী ঠিক করেছিস হুর বেশি কিছু বলবি না? কথা বলতে ইচ্ছা করছে নাকোকিল সম্পর্কে একটা তথ্য শুনবি?বলাে

কোকিলের গলা কিন্তু এম্নিতে খুব কর্কশসে মধুর গলায় তার সঙ্গীকে ডাকে মেটিং সিজনেতখনই কোকিল কণ্ঠ শুনে আমরা মুগ্ধ হই

ভাল‘ 

তাের কী একেবারেই কথা বলতে ইচ্ছা করছে না?‘ 

আছে! আমরা মীরপুর পর্যন্ত কী হেটে যাব?‘ 

অবশ্যই! ভাল কথাতাের হতে পারত শ্বশুরবাড়ির টেলিফোন নাম্বার কা তাের কাছে আছে ? টেলিফোন করে দেখতাম আঁখি বাসায় ফিরেছে কী নাএকটা মেয়ে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে সে ফিরেছে কিনা সেটা জানা। 

পথে হাটার নিয়ম জানিসহাটার আবার নিয়ম কী হাটলেই হল

সবকিছুর যেমন নিয়ম আছেহাঁটারও নিয়ম আছেহাটতে হয় একা একাবল তাে কেন

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০

‘জানি না‘ 

দুজন বা তারচেয়ে বেশি মানুষের সঙ্গে হাঁটলে কথা বলতে হয়কথা বলা মানেই হাঁটার প্রথম শর্ত ভঙ্গ করাহাঁটার প্রথম শর্ত হচ্ছে নিঃশব্দে হাঁটা

দুই ওদের টেলিফোন নাম্বার পকেটে নিয়ে ঘুরছিস কেন?। 

পকেটে করে ঘুরছি না তোমার এখানে আসা যখন ঠিক করেছি তখন 

হটার দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে হাঁটার সময় চারদিকে কী হচ্ছে দেখা কিন্তু খুব গভীর ভাবে দেখার চেষ্টা না করাইংরেজিতে Glanceচট করে তাকানো, *LOokনা। 

হাটার ততীয় শত হচ্ছে পথে কোথাও থামা চলবে নাকাজেই করে দাঁড়িয়ে পরবি না। 

আচ্ছা।পেছন দিকে তাকানাে চলবে না‘ 

বাহাত্তর ঘন্টা পর এক চামুচ বা দুচামুচ পানি খাওয়া যেতে পারেবাহার দণ্টাপার করার পর দেখবি বিদেবােধ নেইশরীরে মুকুরে ভাবমাথার ভেতরটাঅসম্ভব ফাঁকামাঝে মাঝে ঝনঝন করে আপনাআপনি বাজনা বেজে ওঠে আলাের দিকে তাকালে নানান রঙ দেখা যায় তিনকোনা কাচের ভেতর দিয়ে তাকালে যেমন রঙ দেখা যায় তেমন রঙ। তুমি দেখেছ?” 

কতদিন না খেয়ে ছিলে বাহাত্তর ঘন্টা থাকার কথা, বাহার ঘণ্টা ছিলামবাহার ঘণ্টা থাকার কথা তােমাকে কে বলল?” 

বাবা বলেছিলেনআমার গুরু হচ্ছেন আমার পিতামহাপুরুষ বানাবার কারিগরতোর কী খিদে বেশি লেগেছে?‘ 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০

কী খেতে ইচ্ছে করছে? | যা খেতে ইচ্ছে করছে তাই খাওয়াবে?” 

আমি কী ম্যাজিসিয়ান নাকী তুই যা খেতে চাইবিমন্ত্র পড়ে তাএনে 

দেব

তাের কী একেবারেই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না?” 

বানল জবাব দিল নাআমি বললাম, বাদল তুই হাটীর চতুর্থ শত করছিস। 

চতুর্থ শর্তটা কী?‘ 

তই মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটছিসহাটার সময় মাটির দিকে তাoি হাটা চলবে না। 

আচ্ছাতাের হাঁটতে কষ্ট হলে রিকশা নিয়ে নিকষ্ট হচ্ছে না‘ 

আচ্ছা তুই একটা প্রশ্নের জবাব দেখুব সহজ প্রশ্ন। রিকশাওয়ালাদের রিকশায়া প্যাডেল চাপতে হয়এই কাজটা করার জন্য তাদের সবচে ভাল পােশাক হচ্ছে ফুলপ্যান্ট কিংবা পায়জামাপুরানাে কাপড়ের দোকানে সস্তায় কুলপ্যান্ট পাওয়া যায়রিকশাওয়ালারা কিন্তু কেউই ফুলপ্যন্ট বা পায়জামা পরে না , তারা সব সময় পরে লুঙ্গি এখন বল কেন? খুব সহজ ধাধা

জানি না কেনধাধা নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করছে নাকী নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করছে? কোনােকিছু নিয়েই ভাবতে ইচ্ছা করছে নাচোখের কতগুলি প্রতিশব্দ বল তােপ্রথমটা আমি বলে দিচ্ছিআঁখিবললামতাে হিমুদা ধাধার খেলা খেলতে ইচ্ছা করছে নাআহা আয়না একটু খেলি বল দেখি চোখ, আঁখি... তারপর? চোখ, আঁখি, নয়ন, নেত্র, অক্ষি, লােচন... শুভ, তাই তাে বলেছিসহিমু দা খিদে লেগে গেছেযিলে ব্যাপারটা কেমন ইন্টারেস্টিং দেখেছিস তাের যত ঝামেলা, যত সমস্যাই থাকুক থিদের সমস্যা সব সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০

 কিলসফি করবে না। মিলসকি ভাল লাগছে নাখিদের বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় জানিস?” 

 তুমি ম্যাজিসিয়ান তাে বটেইঅনেক বড় ম্যাজিসিয়ানঅন্যরা কেউজানে না, আমি জানিআমার বাসি পােলাও খেতে ইচ্ছে করছে‘ 

বাসি পােলাও মানে?‘ 

গতরাতে রান্না করা হয়েছেবেঁচে গেছে, ফ্রীজে রেখে দেয়া হয়েছেসেই বাসি পােলাওলাের সঙ্গে গরম গরম ডিমভাজা‘ 

 খুব উপাদেয় খাবার?” 

উপাদেয় কি না জানি নাএকবার খেয়েছিলাম সেই স্বাদ মুখে লেগে আছেমাঝে মাঝে আমার এই খাবারটা খেতে ইচ্ছা করেবাসি পােলাও তো আর চাইলেই পাওয়া যায় নাতবে তুমি চাইলে পাবে‘ 

আমি চাইলে পাব কেন?” 

কারণ তুমি হচ্ছে মহাপুরুষমহাপুরুষরা বুঝি চাইলেই বাসি পােলাও পায়?” 

বাদল জবাব দিল নাআমি বললাম, আয় লাক ট্রাই করতে করতে যাই রেসিডেনশিয়াল এরিয়ার ভেতর ঢুকে যাইসব বাড়ির সামনে দাড়াব কলিং বেল টিপববাড়ির মালিক বের হলে বলব, আমরা একটা সার্ভে করছিসকালবেলা কোন বাড়িতে কী নাশতা হয় তার সার্ভেইনকাম গ্রুপ এবং নাশতার প্রফাইল। 

কি যে তুমি বল!’ 

খুব সহজ উপায়বাহাত্তর ঘা কিছু না খেয়ে থাকাপানি পর্যন্ত না আরে আয় দেখি‘তুমি কী সত্যি সিরিয়াস?” 

অবশ্যই সিরিয়াসতবে সার্ভের কথা বলে শুধুহাতে উপস্থিত হওয়া কাগজ লাগবে, বা পয়েন্ট লাগবেতুই বল পয়েন্ট আর কাগজ কিনে আন আমার ভয়ভয় লাগছে হিমু দা।’ ভয়ের কিছু নেইআয় তাে!‘ 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০

প্রথম যে বাড়ির সামনে আমরা দাড়ালাম সেই বাড়ির নাম উত্তরায়ণবেশ জমকালাে বাড়িগেটে দারােয়ান আছেগেটের ফাক দিয়ে বাড়ির মালিকের দটো গাড়ি দেখা যাচ্ছেএকটা গাড়ি মনে হয় কিছুদিনের মধ্যে কেনা হয়েছেঝকঝক করছে। 

দারােয়ান বলল, কাকে চান?” 

আমি বললাম, আমরা স্ট্যাটিসটিক্যাল ব্যুরাে থেকে এসেছিবাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলা দরকার।‘ 

আপনার নাম? হিমু। 

বসবেবিল নিতে আসবে, বসবে এই খুপল্লিতে। 

এক ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে ঢুকালেনবয়স্ক লোকসকালবেলায় হঠাৎ রায় তিনি বিরক্ত। বিরক্তি চাপার চেষ্টা করছেন পারছেন না। 

আপনাদের ব্যাপারটা কী

আমি উঠে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললাম, স্যার, আমরা ঢাকা৪৬নিভার্সিটির সোসিওলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা সমীক্ষা চালাচ্ছিসমীক্ষাটা হচ্ছে ঢাকা শহরের মানুষদের ব্রেকফাস্টের প্রােফাইল‘ 

ভদ্রলােক বিস্মিত হয়ে বললেন, কিসের প্রােফাইল

কোন পরিবারে কী ধরনের নাশতা খাওয়া হয় এর উপর একটা জেনারেল স্টাডিআজ আপনাদের বাসায় কী নাশতা হয়েছে আপনি কী খেয়েছেন?‘ 

সকালে তাে আমি নাশতাই খাই নাএকটা টোস্ট খাই আর এক কাপ কফি খাই” 

আমি গম্ভীর মুখে কাগজে লিখলামটোস্ট, কফিকফি কী ব্ল্যাক কফি?না, ব্ল্যাক কফি না, দুধ কহিবাড়িতে নিশ্চয়ই অন্য সবার জন্যে কোন একটা নাশতা তৈরি হয়েছে সেটা আমার সঙ্গে কার্ড নেইআমরা ছােট কর্মচারী, আমাদের সঙ্গে তাে কাডথাকে নাআপনি ভেতরে গিয়ে খবর দিনবলবেন স্ট্যাটিসটিক্যাল ব্যুরাে

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০

 দারোয়ান ভেতরে চলে গেল বাদল বলল, ভয়ভয় লাগছে হিমু দাশেষেহয়ত পুলিশে দিয়ে দেবেমারধাের করবেভয়ের কিছু নেইতােমার খালি পাখালি পা দেখেই সন্দেহ করবে‘ 

মানুষ চট করে পায়ের দিকে তাকায় না। তাকায় মুখের দিকেতাছাড়া আমাদের ভেতরে নিয়ে বসাবেতখন খালি পায়ে বসলে ভাববে স্যান্ডেল বাইরেশুলে এসেছি‘ 

তােমার মারাত্বক বুদ্ধি হিমু দাতাের মন স্যাতসেঁতে ভাবটা কী এখন দূর হয়েছে?‘ 

দাড়ান, আমার ভাগ্নিকে পাঠাইবলতে পারবেএকই জাতীয় স্টাড়ির কথা প্রথম শুনলামযেসব স্টাডি হবার সেসব হচ্ছে না নাশতা নিয়ে গবেষণা‘ 

ভদ্রলােক চলে গেলেন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে যে, মেয়েটি ঢুকল সে মাত্র গভীর রাতে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল কুড়িয়ে পাওয়া মানিব্যাগ এই মেয়েটির হাতেই দিয়েছিতবে এমন জমকাল বাড়িতে নয় মেয়েটি আমাকে চিনতে পারল নাসেও ভদ্রলােকের মতােই বিরক্ত মুখে বলল, আজ বাড়িতে কোনাে নাশতা হয় নি

Read More

হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১১

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *