আমি হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিলাম। মনে হচ্ছে, আজকের দিনটি হবে আমার জন্যে কর্মব্যস্ত একটি দিন ।
পথে নেমেই শুনি কোকিল ডাকছে। তার মানে কী? শীতকালে কোকিল ডাকছে কেন?
কোকিল ডাকছে শুনছিস?”
“ব্রেইন ডিফেক্ট কোকিল—অসময়ে ডাকাডাকি করছে।‘
“তা হলে চল আমার সঙ্গে হাঁটাহাঁটি করবি । হাটাহাটি করলে মন ভাল।
কে বলেছে?” ‘पाभि वनधि। বাদল উঠে দাড়িয়ে বলল, চলাে। চিড়িয়াখানায় যাবি? চিড়িয়াখানায় যাব কেন?”
“জীবজন্তু দেখলে মন দ্রুত ভাল হয়। চল বদরের খাচার সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ ওদের লাফালাফি ঝপাঝাপি দেখে আসি। তারপর চল হাতির পিঠে চড়ি। পারহেড দশ টাকা নিয়ে ওরা হাতির পিঠে চড়ায় । তাের কাছে টাকা আছে
তুই কী ঠিক করেছিস হুর বেশি কিছু বলবি না? কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। কোকিল সম্পর্কে একটা তথ্য শুনবি?” বলাে।
‘কোকিলের গলা কিন্তু এম্নিতে খুব কর্কশ। সে মধুর গলায় তার সঙ্গীকে ডাকে মেটিং সিজনে। তখনই কোকিল কণ্ঠ শুনে আমরা মুগ্ধ হই।”
‘ভাল।‘
তাের কী একেবারেই কথা বলতে ইচ্ছা করছে না?‘
আছে! আমরা মীরপুর পর্যন্ত কী হেটে যাব?‘
অবশ্যই! ভাল কথা—তাের হতে পারত শ্বশুরবাড়ির টেলিফোন নাম্বার কা তাের কাছে আছে ? টেলিফোন করে দেখতাম আঁখি বাসায় ফিরেছে কী না। একটা মেয়ে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে সে ফিরেছে কি–না সেটা জানা।
পথে হাটার নিয়ম জানিস। হাটার আবার নিয়ম কী হাটলেই হল।‘ |
“সবকিছুর যেমন নিয়ম আছে—হাঁটারও নিয়ম আছে। হাটতে হয় একা একা। বল তাে কেন?
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০
‘জানি না।‘
‘দুজন বা তারচেয়ে বেশি মানুষের সঙ্গে হাঁটলে কথা বলতে হয়। কথা বলা মানেই হাঁটার প্রথম শর্ত ভঙ্গ করা। হাঁটার প্রথম শর্ত হচ্ছে নিঃশব্দে হাঁটা।” |
‘দুই ওদের টেলিফোন নাম্বার পকেটে নিয়ে ঘুরছিস কেন?‘ ।
পকেটে করে ঘুরছি না তোমার এখানে আসা যখন ঠিক করেছি তখন
‘হটার দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে হাঁটার সময় চারদিকে কী হচ্ছে দেখা কিন্তু খুব গভীর ভাবে দেখার চেষ্টা না করা। ইংরেজিতে “Glance“—চট করে তাকানো, *LOok” না।
‘হাটার ততীয় শত হচ্ছে পথে কোথাও থামা চলবে না। কাজেই করে দাঁড়িয়ে পরবি না।
আচ্ছা।‘ ‘পেছন দিকে তাকানাে চলবে না।‘
বাহাত্তর ঘন্টা পর এক চামুচ বা দুচামুচ পানি খাওয়া যেতে পারে। বাহার দণ্টা। পার করার পর দেখবি বিদেবােধ নেই—শরীরে মুকুরে ভাব। মাথার ভেতরটা। অসম্ভব ফাঁকা। মাঝে মাঝে ঝনঝন করে আপনা–আপনি বাজনা বেজে ওঠে । আলাের দিকে তাকালে নানান রঙ দেখা যায় তিনকোনা কাচের ভেতর দিয়ে তাকালে যেমন রঙ দেখা যায় তেমন রঙ। “তুমি দেখেছ?”
“কতদিন না খেয়ে ছিলে বাহাত্তর ঘন্টা থাকার কথা, বাহার ঘণ্টা ছিলাম।” ‘বাহার ঘণ্টা থাকার কথা তােমাকে কে বলল?”
‘বাবা বলেছিলেন। আমার গুরু হচ্ছেন আমার পিতা। মহাপুরুষ বানাবার কারিগর। তোর কী খিদে বেশি লেগেছে?‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০
‘কী খেতে ইচ্ছে করছে? | যা খেতে ইচ্ছে করছে তাই খাওয়াবে?”
‘আমি কী ম্যাজিসিয়ান নাকী তুই যা খেতে চাইবি—মন্ত্র পড়ে তা–ই এনে
দেব?
‘তাের কী একেবারেই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না?”
বানল জবাব দিল না। আমি বললাম, বাদল তুই হাটীর চতুর্থ শত করছিস।।
“চতুর্থ শর্তটা কী?‘
“তই মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটছিস। হাটার সময় মাটির দিকে তাoি হাটা চলবে না।।
এ আচ্ছা।‘ “তাের হাঁটতে কষ্ট হলে রিকশা নিয়ে নি। কষ্ট হচ্ছে না।‘
“আচ্ছা তুই একটা প্রশ্নের জবাব দে। খুব সহজ প্রশ্ন। রিকশাওয়ালাদের রিকশায়া প্যাডেল চাপতে হয়। এই কাজটা করার জন্য তাদের সবচে ভাল পােশাক হচ্ছে ফুলপ্যান্ট কিংবা পায়জামা। পুরানাে কাপড়ের দোকানে সস্তায় কুলপ্যান্ট পাওয়া যায়। রিকশাওয়ালারা কিন্তু কেউই ফুলপ্যন্ট বা পায়জামা পরে না , তারা সব সময় পরে লুঙ্গি এখন বল কেন? খুব সহজ ধাধা।
জানি না কেন। ধাধা নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করছে না।‘ কী নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করছে? কোনােকিছু নিয়েই ভাবতে ইচ্ছা করছে না। “চোখের কতগুলি প্রতিশব্দ বল তাে। প্রথমটা আমি বলে দিচ্ছি—আঁখি। “বললামতাে হিমুদা ধাধার খেলা খেলতে ইচ্ছা করছে না।‘ “আহা আয়–না একটু খেলি – বল দেখি চোখ, আঁখি... তারপর? “চোখ, আঁখি, নয়ন, নেত্র, অক্ষি, লােচন... “শুভ, তাই তাে বলেছিস। হিমু দা খিদে লেগে গেছে। ‘যিলে ব্যাপারটা কেমন ইন্টারেস্টিং দেখেছিস তাের যত ঝামেলা, যত সমস্যাই থাকুক থিদের সমস্যা সব সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০
‘কিলসফি করবে না। মিলসকি ভাল লাগছে না। “খিদের বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় জানিস?”
‘তুমি ম্যাজিসিয়ান তাে বটেই। অনেক বড় ম্যাজিসিয়ান। অন্যরা কেউ। জানে না, আমি জানি। আমার বাসি পােলাও খেতে ইচ্ছে করছে।‘
বাসি পােলাও মানে?‘
“গতরাতে রান্না করা হয়েছে। বেঁচে গেছে, ফ্রীজে রেখে দেয়া হয়েছে। সেই বাসি পােলাওলাের সঙ্গে গরম গরম ডিমভাজা।‘
‘খুব উপাদেয় খাবার?”
উপাদেয় কি না জানি না। একবার খেয়েছিলাম সেই স্বাদ মুখে লেগে আছে। মাঝে মাঝে আমার এই খাবারটা খেতে ইচ্ছা করে। বাসি পােলাও তো আর চাইলেই পাওয়া যায় না। তবে তুমি চাইলে পাবে।‘
‘আমি চাইলে পাব কেন?”
কারণ তুমি হচ্ছে মহাপুরুষ। “মহাপুরুষরা বুঝি চাইলেই বাসি পােলাও পায়?”
বাদল জবাব দিল না। আমি বললাম, আয় লাক ট্রাই করতে করতে যাই । রেসিডেনশিয়াল এরিয়ার ভেতর ঢুকে যাই। সব বাড়ির সামনে দাড়াব । কলিং বেল টিপব–বাড়ির মালিক বের হলে বলব, আমরা একটা সার্ভে করছি।। সকালবেলা কোন বাড়িতে কী নাশতা হয় তার সার্ভে। ইনকাম গ্রুপ এবং নাশতার প্রফাইল।।
“কি যে তুমি বল!’
খুব সহজ উপায়। বাহাত্তর ঘা কিছু না খেয়ে থাকা। পানি পর্যন্ত না ।আরে আয় দেখি।‘ ‘তুমি কী সত্যি সিরিয়াস?”
অবশ্যই সিরিয়াস। তবে সার্ভের কথা বলে শুধুহাতে উপস্থিত হওয়া । কাগজ লাগবে, বা পয়েন্ট লাগবে। তুই বল পয়েন্ট আর কাগজ কিনে আন ‘ আমার ভয়–ভয় লাগছে হিমু দা।’ ‘ভয়ের কিছু নেই। আয় তাে!‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০
প্রথম যে বাড়ির সামনে আমরা দাড়ালাম সেই বাড়ির নাম উত্তরায়ণ। বেশ জমকালাে বাড়ি। গেটে দারােয়ান আছে। গেটের ফাক দিয়ে বাড়ির মালিকের দটো গাড়ি দেখা যাচ্ছে। একটা গাড়ি মনে হয় কিছুদিনের মধ্যে কেনা হয়েছে। ঝকঝক করছে।
দারােয়ান বলল, কাকে চান?”
আমি বললাম, “আমরা স্ট্যাটিসটিক্যাল ব্যুরাে থেকে এসেছি। বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলা দরকার।‘
আপনার নাম? “হিমু।।
বসবে। বিল নিতে আসবে, বসবে এই খুপল্লিতে।
এক ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে ঢুকালেন। বয়স্ক লোক। সকালবেলায় হঠাৎ রায় তিনি বিরক্ত। বিরক্তি চাপার চেষ্টা করছেন পারছেন না।
‘আপনাদের ব্যাপারটা কী?
আমি উঠে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললাম, স্যার, আমরা ঢাকা। ৪৬নিভার্সিটির সোসিওলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা সমীক্ষা চালাচ্ছি। সমীক্ষাটা হচ্ছে ঢাকা শহরের মানুষদের ব্রেকফাস্টের প্রােফাইল।‘
ভদ্রলােক বিস্মিত হয়ে বললেন, কিসের প্রােফাইল?
কোন পরিবারে কী ধরনের নাশতা খাওয়া হয় এর উপর একটা জেনারেল স্টাডি। আজ আপনাদের বাসায় কী নাশতা হয়েছে আপনি কী খেয়েছেন?‘
সকালে তাে আমি নাশতাই খাই না। একটা টোস্ট খাই আর এক কাপ কফি খাই।”
আমি গম্ভীর মুখে কাগজে লিখলাম–টোস্ট, কফি। কফি কী ব্ল্যাক কফি?” না, ব্ল্যাক কফি না, দুধ কহি।‘ বাড়িতে নিশ্চয়ই অন্য সবার জন্যে কোন একটা নাশতা তৈরি হয়েছে সেটা “আমার সঙ্গে কার্ড নেই। আমরা ছােট কর্মচারী, আমাদের সঙ্গে তাে কাড। থাকে না। আপনি ভেতরে গিয়ে খবর দিন। বলবেন স্ট্যাটিসটিক্যাল ব্যুরাে ।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১০
দারোয়ান ভেতরে চলে গেল । বাদল বলল, ভয়–ভয় লাগছে হিমু দা। শেষে। হয়ত পুলিশে দিয়ে দেবে। মারধাের করবে।ভয়ের কিছু নেই। “তােমার খালি পা। খালি পা দেখেই সন্দেহ করবে।‘
“মানুষ চট করে পায়ের দিকে তাকায় না। তাকায় মুখের দিকে। তাছাড়া আমাদের ভেতরে নিয়ে বসাবে। তখন খালি পায়ে বসলে ভাববে স্যান্ডেল বাইরে। শুলে এসেছি।‘
তােমার মারাত্বক বুদ্ধি হিমু দা।‘ “তাের মন স্যাতসেঁতে ভাবটা কী এখন দূর হয়েছে?‘
‘দাড়ান, আমার ভাগ্নিকে পাঠাই। ও বলতে পারবে। একই জাতীয় স্টাড়ির কথা প্রথম শুনলাম। যেসব স্টাডি হবার সেসব হচ্ছে না নাশতা নিয়ে গবেষণা।‘
ভদ্রলােক চলে গেলেন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে যে, মেয়েটি ঢুকল সে মাত্র । গভীর রাতে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল । কুড়িয়ে পাওয়া মানিব্যাগ এই মেয়েটির হাতেই দিয়েছি। তবে এমন জমকাল বাড়িতে নয় । মেয়েটি আমাকে চিনতে পারল না। সেও ভদ্রলােকের মতােই বিরক্ত মুখে বলল, আজ এ–বাড়িতে কোনাে নাশতা হয় নি।
Read More