কোয়ান্টাম রসায়ন
অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম হিমুর সঙ্গে মিসির আলির দেখা করিয়ে দেব। দুজন মুখোমুখি হলে অবস্থাটা কি হয় দেখার আমার। খুব কৌতুহল । ম্যাটার এবং এন্টিমেটার একসঙ্গে হলে যা হয় তার নাম শুন্য‘। মিসির আলি এবং হিমুওতাে এক অর্থে ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার । দুটি চরিত্রের ভেতর কোনটিকে আমি বেশী জরুত্ব দিচ্ছি সেটা জানার জন্যেও এদের মুখােমুখি হওয়া দরকার। হিমুর দ্বিতীয় প্রহারে এলের মুখােমুখি করিয়ে দিলাম ।
হুমায়ূন আহমেদ
২৫–২–১৭
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই সকল কাটা বন্য স্বরে গৃহত্যাগী জোছনা
ভীতু মানুষ বলতে যা বােঝায় আমি তা না। হঠাৎ ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলে আমার বুকে ধক করে ধাক্কা লাগে না। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যদি শুনি বাথরুমে ফিসফাস শােনা যাচ্ছে, কে যেন হাটছে গুনগুন করে গান গাইছে, কল ছাড়ছে–বন্ধ করছে। তাতেও আতশ্রস্ত হই না। একবার ভুত দেখার জন্যে বাদলকে নিয়ে শশান ঘরে রাত কাটিয়েছিলাম । শেষরাতে ধুপধাপ শব্দ শুনেছি। চারদিকে কেউ নেই অথচ ধুপধাপ শব্দ। ভয়ের বললে আমার হাসি পেয়ে গেল।
আমার বাবা তার পুত্রের মন থেকে ভয়” নামক বিষয়টি পুরােপুরি দূর করার জন্যে নানান পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। পদ্ধতিগুলি খুব যে বৈজ্ঞানিক ছিল তা বলা যাবে না, তবে পদ্ধতিগুলি বিফলে যায়নি। কাজ কিছুটা করেছে। চট করে ভয় পাই না। | রাত–বিরেতে একা একা হাটি । কখনাে রাস্তায় আলাে থাকে, কখনাে থাকে না। বিচিত্র সব মানুষ এবং বিচিত্রসব ঘটনার মুখােমুখি হয়েছি— কখনো আতঙ্কে অস্থির হই নি। তিন চার বছর আগে এক বর্ষার রাতে ভয়ংকর একটা দৃশ্য দেখেছিলাম। রাত দুটা কিংবা তারচে কিছু বেশি বাজে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১
আমি কাটাবনের দিক থেকে আজিজ মার্কেটের দিকে যাচ্ছি। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। চারপাশ জন শুন্য। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এগুচ্ছি। খুবই মজা লাগছে। মনে হচ্ছে সােডিয়াম ল্যাম্পগুলি থেকে সােনালী বৃষ্টির ফোটা পড়ছে। হঠাৎ অবাক হয়ে দেখি – প্যান্ট এবং শাদা গেঞ্জি পরা একজন মানুষ আমার দিকে ছুটে আসছে। রক্তে তার শালা গেঞ্জি, হাত–মুখ মাখামাখি চুরিতেও রক্ত লেগে আছে। বৃষ্টিতে সেই রক্ত ধুয়ে ধুলো যাচ্ছে। মানুষটা কি কাউকে খুন করে এদিকে আসছে? খুনি কখনাে হাতের অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে পালায় না। ব্যাপার কী? লােকটা থমকে আমার সামনে দাড়িয়ে। গেল। ইট লাইটের আলােয় আমি সেই মুখ দেখলাম । সুন্দর শান্ত মুগ্ন, চোখ। দু‘টিও মায়াকাড়া ও বিষন্ন। লােকটির চিবুক বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। লােকটা চাপা গলায় বলল, কে? কে?
আমি বললাম, আমার নাম হিমু।
লােকটা কয়েক মুহূর্ত অপলকে তাকিয়ে রইল। এই কয়েক মুহূর্তে অনেক। কিছু ‘ঘটে যেতে পারত । সে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তে পারত। সেটাই। ধাভাবিক ছিল। অস্ত্র হাতে খুনি ভয়ংকর জিনিস। যে অস্ত্র মানুষের রত্র পান। হিঃ বিঃ ২
ক্লারে সেই আন্দ্রে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। সে বারবাল মুন পান করতে চায়। তার ভুল
লােকটি আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমি একই জায়গায় আরও। কিমঘনা ভিয়ে থাকলাম।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১
আমি খবরের কাগজ পড়ি না – পরদিন সব ক‘টা কাগজ কিনে খাটিয়ে। কাপড়লাম। কােনাে হত্যাকাণ্ডের খবর কি কাগজে উঠেছে? ঢাকা নগরীতে নিউ এলিফেন্ট রােড এবং কাটাবন এলাকার আশেপাশে কাউকে কি জবাই কল। হয়েছে? না, তেমন কিছু পাওয়া গেল না। গতরাতে আমি যে–জায়গায় দাড়িয়ে ছিলাম সেই জায়গায় আবার গেলাম। ছােপ ছােপ রক্ত পড়ে আছে কি না সেটা নেয়ার কৌতুহল । বস্তু দেখতে না পাওয়ারই কথা। কাল রাতে অঝােরে বৃষ্টি হমেছে। যেসর রাস্তায় পানি প্রত্যার কথা না সেসব রাস্তাতেও হট পানি ।
অনুসন্ধান আনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। বাঙালির দৃষ্টি বড় কোনাে ঘটনায় আকৃষ্ট হয় না ছোট ছােট ঘটনায় আকৃষ্ট হয়। একজন এসে অমায়িক ভঙ্গিতে বলল, ভাইসাহেব, কী খুঁজে কিছু খুঁজি না।। | ভদ্রলােক দাঁড়িয়ে গেলেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার অনুসন্ধান দেখতে লাগলো। তার দেখাদেখি আরাে কয়েকজন দাড়িয়ে গেল। এরপর আর রক্তের। দাগ যেজা অর্থহীন। আমি চলে এলাম। ঐ রাতের ঘটনা ভয় পাবার মতাে। ঘটনা তাে বটেই— আমি ভয় পাই নি। বাবার ট্রেনিং কাজে লেগেছিল। কিন্ত ভয় আমি একবার পেয়েছিলাম। সেই ভয়ে রীতিমতাে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম । আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। ভয়াবহ ধরণের ভয় যা মানুষের। বিশ্বাসের ভিত্তিমূল পর্যন্ত কাপিয়ে দেয়। যে ভয়ের জন্য এই পৃথিবীতে না, অন্য । কোন ভূবনে। ভয় পাবার সেই গল্পটি আমি বলব ।।
আমার বাবা আমার জন্যে কিছু উপদেশ লিখে রেখে গেছেন। সেই উপদেশগুলির একটি ভয়–সম্পর্কিত।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১
“একজন মানুষ তার এক জীবনে অসংখ্যবার তীব্র ভয়ের মুখােমুখি হয় । তুমিও হইবে। ইহাই স্বাভাবিক। ভালো পাশ কাটাইয়া ইলার প্রবণতাও স্বাভাবিক। প্রবণতা । তুমি অবশ্যই তা কৱিলে না। ভয় পাশ কাটাইবার বিষয় নহে। ভয় অনুসন্ধানের বিষয়। ঠিকমতাে এই অনুসন্ধান করিতে পারিলে জগতের অনেক। অলানা রহস্য সম্পর্কে অবগত হইলে । তোমার জন্য ইহার প্রয়োজনীয়তা আছে। তালে তোমারে লমিল্যা রাখি এই জাতের রহস্য পেয়াজের খোসার মতাে। এটি। খােসা ছাড়াইয়া দেখিলে আরেকটি গোসা। এমন ভাৱে চলিতে থাকিবে । সলণেয়ে দেমিলে কিছুই নাই। আমরা শুনা হইতে আসিয়াছি, আবার শূন্যে ।
এটা বেশি। এই মুহূর্তে তোমাকে বলিতে ইচ্ছা করি
Read More
হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-2