নােটন উঠল এবং চটি ষটাতে ঘষটাতে হলঘর ঘুম–ঘুম চোখ নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। সকালে একটু জগিং করলে কেমন হয়? একটু-ধটু ফ্রি হ্যান্ড! ৰা যােগ।
গরিকে কিছু বলতে হয় না। বাথরুম থেকে বেরোতেই তার চায়ের কাপে চামচে নাড়ার শব্দ *য়ে যায়। তা রােজই এসময়ে বা গলায় একটা হক ছাড়ে টে. গিরি : চ!
গিরিবালা এ বাড়িতে সাত বছর আছে। একটা রেকর্ড । কোনও কাজের মেয়ে এতদিন একটানা কোনও কাজের বাড়িতে আজকাল আর থাকে না। মাঝবয়সী গিরিবালা আছে। কাজের মেয়ে বলে, অবশ্য তাকে চেনা যায় না। পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে বয়স, রং কালো, মুখখান গােল এবং প্রায়সবসময়েই হাস্যময়। গিরিবলির সবচেয়ে বড়গুণ পরিস্কার-পরিচতা, সাদা খােলের কালােপেড়ে শাড়ি ছাড়া সে পরে না, অবশ্য রান্নাবান্না করার সময় ওপরে অ্যাপন থাকে। সেগুলাে সবসময়েই ধপধপে পরিষ্কার। তার হাতে পায়ে কোনও ময়লা নেই, নখ নেই। বাসী কাপড় ছাড়া থেকে ৪ করে আরও অনেক ধরণের শুচিবায়ু তার আছে। এ বাড়ির লােকেদের সে ধমক-চমক করে ও বেশ খানিকটা পরিস্কার–পরিচ্ছন্ন করে তুলেছে হাগা কাপড়ে ঘরে আসা চলবে না, বাসী ছাড়তে হবে, এটো মানতে হবে, আরও কত কী।
গিরিবালা ছাড়া এ বাড়ি অচল।
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
চা নিয়ে এলে নােটন বলল, শোন গিরি, কাল থেকে আমার চায়ে চিনি দুধ বন্ধ। স্রেফ লিকার আর পাতিলেবুর রস।
কেন, তােমার আবার কী হল? পায়েস–টায়েস একদম দিবি না। আজ থেকে দু বেলা রুটি। কী হল তােমা বল তাে মেজদা?
নােটন রােষ কষাচিত চোখে গিরির দিকে চেয়ে বলে, হুঁড়ি হচ্ছে দেখচ্ছিস না! দিন দনি মুটিয়ে যাচ্ছ তােরা কি অন্ধ যে দেখতে পাস না?
ওমা! মুটোলে কী হয়! কত মােটা লােক দাবড়ে বেড়াচ্ছে!
তাের মাথা। খাওয়া কনট্রোল না করলে চর্বি কনট্রোল করা অসম্ভব। দেখছিস কেমন উপচে পড়ছে ভুড়ি? আজকাল চলতে ফিরতে আমার পেট নড়ে। স্টোক হয়ে বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে তােদর চোখের সামনে মব আর তােরা তাই দেখতে চাস?
আহা, সকালে উঠে দুর্গামাম করার আগে ওসব বলে কেউ? তােমার মতাে পিচেশই শুধু বলতে পারে। যাও, চায়ের কাপ নিয়ে বাইরের ঘরে যাও তাে, বিছনাটা টক করে তুলে দিয়ে যাই।
না না, ওসব আজ থেকে তাের দরকার নেই, বাবুগিরি করে করেই আজ আমার এই দশা। আজ থেকে বিছানা আমি তুলব। একটু নড়াচড়া হবে। পিরি ফোস করল, তাহলে মেজদা, আমি ও বলি, বিছানা তুলে যা ব্যায়াম হবে তার চেয়ে ঢের বেশী হবে রােজ যদি বাজার করে, আর হায় হায় রেশন তােলো, আর বাগনে মাটি কোপাও। | নােটন উঠে দাড়িয়ে বলে, ঠিক আছে, আজকের দিনটা তুই-ই বিছানা তােল, কাল থেকে কিন্তু আমি ।
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
চা খেতে খেতে বাইরের হলঘরে এসে নােটন দেয়ালজোড়া বিশল ঘােলা দরজাটা দিয়ে বাইরের লন দেখতে পেল । পওলাে ছয় কাঠা জমির লন এবং একটা আভিজাত্যর্পণ সমাবেশ বাইর থেকে দেকলে এ একেবরে মারহাব্বা বড়লােকের বাড়ি । কিন্তু যতটা মনে হয় ততটা নয় তারা। হলঘরে ওই বিটকেল বিরাট দরজাটা করিয়েছিল নেটনের ভাই তােতন। সে এদেশে থাকে না, কিন্তু যাঝে মাঝে এসে এরকম সব হঠঅং ঠিক করল বাগানের দিকের দেয়ালটা ভেঙে ফেলতে হবে। সেখানে থাকবে একটা ফোল্ডিং দরজ, যা ভাঁজ করে করে পূটোই খুলে দেওয়া যাবে। ঘর আর রাগনের পার্থক্য খােচাতেই তার ওই উদ্যম। তারপর যা হয়, দম্রাটা আর কখনােই পুরােটা খােলা হয় না। ‘ক : হয়েছে ।
চা খেতে খেতে উদোম জায়গাটার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায় নােটন। বৃষ্টি হয়ে গেছে রাতে, বাগানটা কী সবুজ। কোথাও মাটি দেখা যায়না, ঘাসের মেকে আছে সবটুকু । ডনদিকে দেয়াল ঘেষে। একটা ছােটো কদম গাছে কী অসম্ভব কদম ফুটেছে!
শুন্য চায়ের পেয়ালা সেন্টার টেবিলে রেখ নােটন বাইরে বেরিয়ে এল।
বাড়ির পিছন দিকে ঝিঙে মাচর অবনীবাবু মাটি উসকোচ্ছেন বা ঝিঙের গুণমান নিরীক্ষণ করছেন। রিটায়ার করার পর এখন বাগানেই তাঁর সময় কাটে। তবে বাগনের নেশা তার বরাবরই ছিল। আমেরিকায় গিয়ে ছেলের বাড়ির সামনের এবং পিছনের সনে যে ফুল ফুটেয়েছিলেন তা দেখে ছেলের এক মার্কিন বন্ধু বলেছিলাম, এ কালার রায়ট। ওঙর দাঙ্গা ।
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
নােটন ডাকল, বাব, কী করছেন? অবনীরবাবু খুবই আনমনা গলায় বললেন, এই তাে। তারপর, তােমার কী খবর? ইদানিং আপনি আমার চেহারাটা দেখেছেন? ইজ ইট প্রেজেন্টল?
দেখছি। মােটা হচ্ছে তাে! তা আর কী করা যাবে? তুমি মােহনবাগান ক্লাবের মেম্বার, কোন টেনিস ক্লাবের সদস্য, কোন সুইমিং ক্লাবের কর্মকর্তা, তােমার তাে এ দশা হওয়া উচি নয় ।
আপনি কি করে ট্রিম থাকেন?
আমার কথা বাদ দাও। আমাদের বংশটাই চিমসে ধাতের! তুমি পেয়েছে তােমার মামাবাড়ির ধতি । ওরা একটু মােটার দিকে। | ওটা কোনও কথা নয়। আমার ধাত আপনার মতােই হওয়ার কথা। আমি যে গাদা গাদা বাই । যা পাই খাই। খেতে আমার ভীষণ ভাল লাগে।
সে তাে ভাল কথা। খাওয়া কিছু খারাপ ব্যাপারও তাে নয় মস্ত আনন্দেরই ব্যাপার। তবে খাওয়টা যাতে তােমাকে না খায় তার জন্য শরীরের বাড়তি চিনিটা পুড়িয়ে ফেলা দরকার।
ব্যায়ম! সেটাই ভাবছি । কিন্তু পারবাে কি? সময় হয় তাে ইচ্ছে হয় না, ইচ্ছে যায় তাে সময় পাই না। ওইটেই তাে মুশকিল।
ভাল কথা। তবে তুমি তাে বােধহয় পায়েস ভালােবাসাে।
ওঃ, ওটাই তাে আমাকে খেলাে। পায়েস! পায়েসের জন্যই বােধহয় বেঁচে থাকা।