অমানুষ পর্ব – ৮ হুমায়ূন আহমেদ

অমানুষ পর্ব – ৮

জামশেদ হাতমুখ ধুতে গেল। বাথরুম থেকে বেরুতেই চোখে পড়ল ভিকি লনে একা একা হাঁটছে। এত ভোরে ভিকি কখনো ওঠে না। জামশেদের মনে হল, ভিকি যেন একটু বেশিরকম বিচলিত। জামশেদের সঙ্গে ভিকির একবার চোখাচোখি হল। ভিকি বাঁ হাত উঠিয়ে কী যেন বলল ঠিক বোঝা গেল না।

সাত কোর্সের একটি স্প্যানিশ ব্রেকফাস্ট তার টেবিলে অত্যন্ত চমৎকারভাবে সাজানো। অ্যানি কফিপট থেকে কফি ঢালছে। জামশেদ ছোট একটা নিশ্বাস ফেলল। অ্যানি বলল, তুমি কিন্তু একবার বলনি, থ্যাঙ্ক ইউ।

থ্যাঙ্ক ইউ।এর মধ্যে একটা জিনিস আমার তৈরি। কোনটি বলতে পারবে? তুমি রান্না করতে পার? না। মারিয়া বলে দিয়েছে আমি রান্না করেছি।জামশেদ কফির পেয়ালায় চুমুক দিল।

অ্যানি আবার বলল, আজ কিন্তু তুমি রাগ করতে পারবে না। আজ আমার সঙ্গে গল্প করতে হবে।জামশেদ জবাব দিল না।অ্যানি একটু গম্ভীর হয়ে বলল, আমি জানি তুমি আমাকে একটুও পছন্দ কর না। আমি এলেই বিরক্ত হও। তবু আজ আমি অনেকটা সময় তোমার ঘরে বসে থাকব।ঠিক আছে।

এবং তোমাকে নিয়ে বিকেলে মলে শপিং করতে যাব। আমি বাবাকে বলে রেখেছি।অ্যানির কথা শেষ হবার আগেই দরজায় ছায়া পড়ল। ভিকি এসে দাঁড়িয়েছে। মিঃ জামশেদ, শুভ জন্মদিন।জামশেদ শুকনো স্বরে বলল, ধন্যবাদ।অ্যানি তোমার জন্মদিন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই হৈচৈ করছিল।জামশেদ ঠাণ্ডাস্বরে বলল, তুমি কি ভেতরে এসে আমাদের সঙ্গে এক কাপ কফি খাবে?

অমানুষ পর্ব – ৮

না ধন্যবাদ। আমি তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।নিশ্চয়ই।জামশেদ ঘর থেকে বেরিয়ে এল। ভিকি বারান্দার এক প্রান্তে সরে গেল। সিগারেট ধরাল একটি জামশেদের মনে হল, লোকটা বিশেষ চিন্তিত। সিগারেট ধরাবার সময় তার হাত কাপছিল। এর কারণ কী?

বলো কী বলবে।না, তেমন কিছু নয়। ভিকি অস্পষ্টভাবে হাসল।জামশেদ বলল, তোমাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে।না, চিন্তিত না। চিন্তিত হবার কী আছে? ভিকি রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছল। ফ্যাকাশেভাবে হেসে বলল, এবার বেশ গরম পড়বে, কী বল?

জামশেদ জবাব দিল না।ভিকি ইতস্তত করে বলল, তোমাকে একটি কথা বলতে চাই। ইয়ে, মানে, তেমন জরুরি কিছু নয়।বলো।ধরো যদি এমন পরিস্থিতি হয় যে তুমি দেখছ কেউ অ্যানিকে কিডন্যাপ করার চেষ্টা করছে, তখন আমার মনে হয় সবচেয়ে ভালো হবে তুমি যদি চুপচাপ থাক।কেন? না, মানে–তুমি যদি গুলি করতে শুরু কর তা হলে বুলেট অ্যানির গায়ে লাগার সম্ভাবনা, ঠিক না?

আশঙ্কা যে একেবারে নেই তা নয়। তবে ভিকি, আমাকে রাখা হয়েছে অ্যানির নিরাপত্তার জন্যে, ঠিক না? হ্যাঁ, তা ঠিক।তুমি নিশ্চয়ই আশা কর না এরকম পরিস্থিতিতে আমি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকব।না, তা কেন? তা তো হতেই পারে না। ভিকি আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলল।জামশেদ বলল, তুমি কি কোনোকিছু নিয়ে চিন্তিত?

না না, চিন্তিত হব কেন? ভিকি দূর্বলভাবে হাসল।জামশেদ ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারল না। ভিকি কিছু-একটা নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত।রুনের চোখেও ব্যাপারটা ধরা পড়ল। সাধারণত এসব ছোটখাটো জিনিস তার চোখে পড়ে না। কিন্তু পরিবর্তনটি হঠাৎ এবং স্পষ্ট। চোখে না পড়ে উপায় নেই। তার ওপর কদিন আগে ভিকি দুটি প্রকাণ্ড অ্যালসেশিয়ান কুকুর কিনে এসেছে।

অমানুষ পর্ব – ৮

এর কারণ বোধগম্য নয়। ভিকি কুকুর পছন্দ করে না। হঠাৎ করে কুকুরের প্রতি তার এরকম প্রেমের কারণ কী? রুন কোনো ব্যাপার নিয়ে বেশিক্ষণ ভাবতে পারে না। তবু সে এ ব্যাপারটি নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করল। ভিকিকে যে ঠিক ভালো না বাসলেও পছন্দ করে। স্বামী হিসেবে সে চমৎকার। এবং যতদূর মনে হয় মাঝে মাঝে জুয়ার টেবিলে বসা ছাড়া তার অন্য কোনো বদঅভ্যেস নেই।

রুন বিকেলে একটু বিশেষ সাজসজ্জা করল। এ-জাতীয় পোশাকে কুমারী মেয়েদেরকেই ভালো লাগে। কিন্তু রুনকে এখনও কুমারী মেয়ে বলেই ভ্রম হয়। রুন বড় একটি খাম হাতে নিয়ে ভিকির ঘরে উঁকি দিল।হ্যালো, ভিকি! হ্যালো।কী ব্যাপার, তুমি দেখি একেবারে মাছের মতো হয়ে গেছ।ভিকি জবাব দিল না।

রুন সামনের চেয়ারটিতে বসতে বসতে বলল, খুব সম্ভব গতরাতে তোমার ঘুম হয়নি। চোখ লাল। ব্যাপারটা কী আমি জানতে চাই।তেমন কিছু না।বিজনেস নিয়ে চিন্তিত? হ্যাঁ।কোনো সুরাহা হয়নি? না। বুদ্ধিমান এতরা কোনো বুদ্ধি দিতে পারল না? ভিকি ঈষৎ চমকাল। কিছু বলল না।রুন গম্ভীর গলায় বলল, আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই।ভিকি চোখ তুলে তাকাল।আমি তোমাকে পঞ্চাশ হাজার ডলার দেব। কিন্তু একটি শর্ত আছে।কী শর্ত?

তুমি তোমার মুখে যে ভয়াবহ চিন্তার মুখোশ পরে আছ এটি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কথাটা বলে রুন খিলখিল করে হেসে উঠল। আর ঠিক তখন টেলিফোন এল। বালজাক অ্যাভিনিউর মোড়ে অ্যানিকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। ছোটখাটো একটা খণ্ড প্রলয় হয়ে গেছে সেখানে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে তিনজন মারা গেছে। সংখ্যা এর চেয়ে বেশিও হতে পারে।

এক মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ চেয়ে প্রথম টেলিফোনটি এল রাত এগারোটায়।এগারোটা পঁচিশে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে টেলিফোন এল। জামশেদ নামের যে দেহরক্ষীকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। নিকট আত্মীয়স্বজনদের খবর দেয়া প্রয়োজন।

অমানুষ পর্ব – ৮

অ্যানির অপহরণ সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে লা বেলে পত্রিকায়। রিপোর্টটিতে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য আছে। মধ্যবয়স্ক এই স্কুল শিক্ষকটি ঘটনার সময় কফিশপে কফি খাচ্ছিলেন। তার চোখের সামনেই সমস্ত ব্যাপার ঘটল।

তার প্রতিবেদনটি ছিল এরকম :

আমি যেখানে কফি খাচ্ছিলাম, আইসক্রিম পার্লারটি ছিল তার সামনে। জুলাই মাসের গরমের জন্যেই খোলা উঠানে কফির টেবিল বসানো হয়েছিল। আমি আমার এক বান্ধবীর জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। ঘনঘন তাকাচ্ছিলাম রাস্তার দিকে।

চারটা ত্রিশ মিনিটে নীলরঙা একটি ছোট পুনটিয়াক এসে আইসক্রিম পার্লারে থামল। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল অত্যন্ত রূপসী একটি বালিকা। বালিকাটি কাউন্টারে আইসক্রিমের অর্ডার দিয়ে যখন অপেক্ষা করছিল তখন আমি লক্ষ করলাম একটি প্রকাণ্ড সবুজ রঙের ওপেল গাড়ি আইসক্রিম পার্লারের পশ্চিমদিকে থামল।

তিনটি লোক নেমে এল গাড়ি থেকে। দুজন ছুটে গেল মেয়েটির দিকে, তৃতীয়জন ফাঁকা আওয়াজ করতে লাগল। তার হাতে হালকা একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ছিল। গুলি ছুড়বার আগ পর্যন্ত আমি তা লক্ষ করিনি।গুলির শব্দ আসামাত্র চারদিকে ছুটাছুটি শুরু হল। আমি নিজেও উঠে দাঁড়ালাম। কফিশপের মালিক চেঁচিয়ে বলল–সবাই মাটিতে শুয়ে পড়ুন। বিপদের সময় কারোর কিছু মনে থাকে না। আমারও থাকল না। আমি দৌড়ে খোলা রাস্তায় এসে পড়লাম।

তখন বাচ্চা মেয়েটিকে দুজন ওপেল গাড়িটির দিকে টেনে নিচ্ছে এবং মেয়েটি চাঁচাচ্ছে প্রাণপণে। যে-দুজন মেয়েটিকে টানছে তাদের একজন মেয়েটির গালে চড় কষাল। এই সময় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র-হাতে তৃতীয় ব্যক্তিটিকে দেখালাম মাটিতে গড়িয়ে পড়েছে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম কালো রঙের একটি মানুষ ওদের দিকে ছুটে যাচ্ছে। মানুষটির বা হাতে একটি পিস্তল।

অমানুষ পর্ব – ৮

এই সময়ে সবুজ ওপেল গাড়িটি থেকে আরো দুজন লোক বন্দুক-হাতে লাফিয়ে নামল। কালো লোকটি ছুটন্ত অবস্থাতেই গুলি ছুড়ল। এরকম অব্যর্থ হাতের নিশানা কারো থাকতে পারে তা আমার জানা ছিল না। লোক দুটিকে নিমিষের মধ্যে লুটিয়ে পড়তে দেখলাম।কালো লোকটি বুনো মোষের মতো ছুটছিল। হঠাৎ সে থমকে দাঁড়াল। সবুজ গাড়িটির দরজা খুলে লম্বা-চুলের একটা লোক কয়েক পশলা গুলি করল কালো লোকটিকে। আমি দেখলাম কালো লোকটি উবু হয়ে পড়ে গিয়েছে।

লা বেলে পত্রিকাটিতে দুটি ছবি ছাপা হয়েছে। একটি অ্যানির, অন্যটি জামশেদের। জামশেদ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে অসম্ভব সাহসী এই লোকটি মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সেন্ট্রাল হাসপাতালে তাকে রাখা হয়েছে কড়া পুলিশ নিরাপত্তায়। ডাক্তাররা ইতিমধ্যে দুবার তার ফুসফুসে অস্ত্রোপচার করেছে। তৃতীয় দফা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সচিব জন নান বলেছেন। জামশেদের সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তবে সম্ভাব্য সকল চেষ্টা চলছে।অ্যানির ছবির নিচে তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে অ্যানি ভিকি হচ্ছে বিখ্যাত সিল্ক ব্যবসায়ী অ্যারন ভিকির নাতনি। তার বয়স বারো বছর এবং তার মুক্তির জন্যে এক মিলিয়ন ইউ এস ডলার মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে।

অ্যানির যে-ছবিটি ছাপা হয়েছে সেটি তার গত জন্মদিনের ছবি। মাথায় হ্যাপি বার্থডে টুপি। মুখভরতি হাসি। ছবিটিতে অ্যানিকে দেবশিশুর মতো লাগছে।বেন ওয়াটসন খবরটি দুবার পড়ল। তার ভ্র কুঞ্চিত হল। ছবিটিতে যে কালোমতো লোকটিকে দেখা যাচ্ছে, সে যে জামস এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের ছাড়াছাড়ি হয় লিসবনে, প্রায় পনেরো বছর আগে। পনেরো বছর দীর্ঘ সময়। এই সময়ের মধ্যে পুরানো অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, শুধু জামস-এর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

অমানুষ পর্ব – ৮

বেন ওয়াটসন লাসানিয়া ও পিজা হাউজ থেকে বেরুল রাত এগারোটায়। তার মুখ চিন্তাক্লিষ্ট ও বিষণ্ন। জামস বড় ধরনের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে। তার পাশে দাঁড়ানো উচিত।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেন ওয়াটসনকে জানাল, রুগির অবস্থা ভালো নয় এবং যেহেতু রুগি ইনটেনসিভ কেয়ারে আছে সেহেতু দেখা হবে না। বেন ওয়াটসন সারারাত হাসপাতালের লাউঞ্জে বসে কাটাল। জামস বোধহয় এ-যাত্রা টিকবে না।ভোরবেলায় জানা গেল ফুসফুসে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তৃতীয় অপারেশন হল ভোর সাতটায়।

এক মিলিয়ন ইউ এস ডলার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ইনস্যুরেন্স কোম্পানি সুটকেস ভরতি করে দশ ডলারের নোটের বান্ডিল যথাসময়ে দেয়ায় কোনোরকম ঝামেলা হয়নি। সুটকেসভরতি ডলার এতরাতে দেয়া হয়েছে। এবং টাকা দেবার এক ঘণ্টার ভেতর ভিকি টেলিফোন পেয়েছে যে অ্যানিকে রাত নটার আগেই ফোরটিনথ অ্যাভিনিউর মোড়ে একটি কমলা রঙের সিডান গাড়ির (যার নম্বর এফ ২৩৪) পেছনের সিটে পাওয়া যাবে।

ওরা টেলিফোনে অ্যানির গলাও শুনিয়েছে। অ্যানি বলেছে, সে ভালো আছে এবং কেউ তার সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি। অ্যানি জামশেদের কথাও জানতে চেয়েছে। জামশেদ এখনও বেঁচে আছে শুনে খুশি হয়েছে।ভিকি সন্ধ্যা থেকেই ফোরটি আভিনিউর মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল। রাত এগারোটা বেজে গেল কারোর দেখা পাওয়া গেল না।

সে বেশ কয়েকবার এতরাকে টেলিফোন করল। কেউ ফোন ধরল না। ভিকির বুক কাঁপতে লাগল। রাত যতই বাড়তে লাগল একধরনের শীতল ভীতি তাকে কুঁকড়ে দিতে লাগল। অ্যানি বেঁচে আছে তো? আদরের অ্যানি, ছোট্ট অ্যানি সোনা।

অমানুষ পর্ব – ৮

ঠিক কঘন্টা পার হয়েছে অ্যানির মনে নেই। সে মনে রাখার চেষ্টাও করেনি। চিন্তা করতে পারছে না। অনেক কিছুর মতো চিন্তা করবার শক্তিও নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো স্মৃতি নেই মাথায়। শুধু মনে আছে বুড়ো ভালুক ডান হাতে পিস্তল নিয়ে দৈত্যের মতে ছুটে আসছিল। কী ভয়াবহ কিন্তু কী চমৎকার ছবি! একসময় ছবিটি নষ্ট হয়ে গেল। জামশেদ গড়িয়ে পড়ল মাটিতে।এ্যাই মেয়ে, কিছু খাবে?

বলেছি তো আমি কিছু খাব না।ঠিক আছে।অ্যানি লক্ষ করল লোক তিনটি তার সঙ্গে মোটামুটি ভদ্র ব্যবহার করছে। প্রথম তাকে নিয়ে গেছে শহরের বাইরে, একটা ছোট্ট একতলা বাড়িতে। সে-বাড়িতে বুড়োমতো একজন লোক বসে ছিল, অ্যানিকে দেখেই সে ফুঁসে উঠে বলল, এর জন্যে আমার সেরা তিনটি মানুষ মারা গেছে।

অ্যানির সঙ্গের লোকটি তার উত্তরে বিদেশী ভাষায় বুড়োকে কী কী যেন সব বলল। অ্যানি কিছুই বুঝল না। অ্যানিরা সেখানে ঘণ্টাখানেক থেকে আবার রওনা হল। অ্যানিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল একটি বদ্ধ ওয়াগনে করে। কোথায় যাচ্ছে, অ্যানি কিছুই বুঝতে পারল না। অ্যানির সঙ্গে যে বেঁটেমতো লোকটি ছিল সে একসময় বলল, তুমি ছাড়া পাবে শিগগিরিই। ভয়ের কিছু নেই।

অ্যানির ঠোঁট টেপ দিয়ে আটকানো, সে এর জবাবে কিছু বলতে পারল না। লোকটি থেমে থেমে বলল, মেয়ে হিসেবে তুমি অত্যন্তু লোভনীয় কিন্তু কড়া নির্দেশ আছে, আমাদের কিছুই করবার নেই।যাত্রাবিরতি হল একটি হোটেলজাতীয় স্থানে। অ্যানিকে বলা হল হাতমুখ ধুয়ে নিতে।

অমানুষ পর্ব – ৮

অ্যানি মাথা নাড়ল। সে কিছুই করতে চায় না। হঠাৎ বেঁটে লোকটি এসে প্রকাণ্ড একটি চড় কষাল। অ্যানি হতভম্ব হয়ে গেল। সে নিঃশব্দে হাতমুখ ধুয়ে এল। বাথরুমে আয়নায় দেখল তার বাঁ গাল লাল হয়ে ফুলে উঠেছে।টয়লেট থেকে বেরুতেই বেঁটে লোকটা বলল, এখন থেকে যা বলব শুনবে। নয়তো সেফটিপিন দিয়ে তোর চোখ গেলে দেব।

অ্যানি বহু কষ্টে কান্না সামলাল। এখান থেকেই ওরা অ্যানির বাবাকে টেলিফোন করল। এবং একসময় অ্যানিকে বলল বাবার সঙ্গে কথা বলতে।মামণি, তুমি ভালো আছ? হ্যাঁ।ওরা তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে না তো?

 

Read more

অমানুষ পর্ব – ৯ হুমায়ূন আহমেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *