আল ফারাবী এর জীবনী

আল ফারাবী

আল ফারাবী [৮৭০-৯৬৬ খ্রিঃ]

পৃথিবীতে মুসলমানদের উন্নতির জন্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আশীর্বাদ হিসেবে যুগে যুগে যে সকল মুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে ছিলেন আল ফারাবী তাঁদের অন্যতম । তাঁর জন্ম তারিখ কত তা সঠিক ভাবে জানা যায় না । তাঁর জন্ম তারিখের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে । এর অন্যতম কারণ হল তৎকালীন যুগে কারো জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ করে রাখার ব্যাপারে তেমন কোন গুরুত্ব ছিল না ।

যতদূর জানা যায় এ মনীষী ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিস্তানের অন্তর্গত ‘ফারাব’ নামক শহরের নিকটবর্তী ‘আল ওয়াসিজ’ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ‘ফারাব’ নামক শহরের নামানুসারে আবু নাসের মোহাম্মদ পরবর্তীতে ‘আল ফারাবী’ নামে পরিচিত হন । বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়, অনেকেই তাঁদের জন্মস্থান, নিকটবর্তী শহর কিংবা দেশের নামে পরিচিত ছিলেন । আল ফারাবীর ক্ষেত্রেও তাঁর বিপরীত ঘটেনি । ইউরোপীয় পণ্ডিতগণ তাঁর নামকে বিকৃত করে ‘ফারাবিয়াস’ লিপিব্ধ করেছেন । আল ফারাবীর পিতা ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত এবং সেনাবাহিনীর একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা । তাঁর পূর্ব পুরুষগণ ছিলেন পারস্যের অধিবাসী । ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও রাজনৈতিক কারণে তাঁর পূর্ব পুরুষগণ পারস্য ত্যাগ করে তুর্কিস্তানে এসে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন । 


আল ফারাবী বাল্যকাল থেকেই ছিলেন জ্ঞান পিপাসু । অজানাকে জানার এবং অজেয়কে জয় করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর হৃদয়ে । তাই জ্ঞান বিজ্ঞানের সাধনায় তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন তাঁর সারাটা জীবন । জ্ঞানের সন্ধানে তিনি ছুটে চলেছেন দেশ থেকে দেশান্তরে । তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় ফারাবায় । সেখানে কয়েক বছর শিক্ষা লাভের পর শিক্ষার উদ্দেশ্যে চলে যান বোখারায় । এরপর উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্যে তিনি গমন করেন বাগদাদে । সেখানে সুদীর্ঘ্য প্রায় ৪০ বছর অধ্যয়ন ও গবেষণা করেন । কয়েকটি ভাষার উপর ছিল তাঁর পূর্ণ দখল । জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ছিলেন তিনি পারদর্শী 

আল ফারাবী এর জীবনী

দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে । জ্ঞন বিজ্ঞানের এমন কোন শাখা বাকি ছিল না, যেখানে ফারাবীর প্রতিভা বিস্তৃত হয়নি । কিন্তু তারপরও জ্ঞানের পিপাসা তাঁর মিটেনি । জ্ঞানের অন্বেষণে তিনি ছুটে গিয়েছেন দামেস্কে, মিসরে এবং দেশ বিদেশের আরো বহু স্থানে । গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা ও প্রশাখা নিয়ে । পদার্থ বিজ্ঞান, দর্শন যুক্তিশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রভৃতিতে তাঁর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য । তাবে বিজ্ঞান ও দর্শনে অবদান ছিল সর্বাধিক । পদার্থ বিজ্ঞানে তিনিই ‘শূন্যতার’ অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন । দার্শনিক হিসেবে ছিলেন ‘নিয়প্লেটনিস্ট’দের পর্যায় বিবেচিত । বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক হিসেবে তিনি আরোহণ করেছিলেন জ্ঞানের শীর্ষে । 


একবার রাজা সাইফ আদ দৌলার শাহী দরবারে মনীষী আল ফারাবী উপস্থিত হন । ইতিপূর্বে রাজা বিজ্ঞানী আল ফারাবীর নাম শুনেছিলেন কিন্তু ফারাবীর সাক্ষাৎ পাননি। ফারাবিকে নিকটে আলোচনায় ফারাবীর জ্ঞান ও গুণাবলীতে রাজা মুদ্ধ হন এবং তাঁকে খুব সম্মান দেখান । বিজ্ঞানী আল ফারাবী রাজার সংঙ্গী  হিসেবে এখানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন ।

আল ফারাবী এর জীবনী

বিজ্ঞানী আল ফারাবী সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে বহু রচনা করেছেন । কিন্তু তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাদিক বলে অনেকে উল্লেখ করেছেন । এ সকল অমূল্য গ্রন্থের অধিকাংশেরই সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না । তাঁর রচিত ‘আলা আহলে আল মদীনা আল ফাদিলা (দর্শন ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান সম্পর্কিত) গ্রন্থটি সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য । সমাজ বিজ্ঞান সম্পর্কে ও তাঁর রচিত কয়েকটি গ্রন্থ তাঁকে বিখ্যাত করেছে । তিনি আজ পৃথিবীতে বেঁচে নেই । কিন্তু মুসলিম জাতির কল্যাণে তিনি জ্ঞান বিজ্ঞানের যে মৌলিক আবিষ্কার রেখে গেছেন তা চর্চা করলে মুসলমানরা আজও জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি লাভ করতে পারবে । তিনি কত সালে ইন্তিকাল করেন তা নিয়ে মতভেদ আছে । যতদূর জানা যান তিনি ৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেছিলেন ।

 



Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *