উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ

মুহিব বলল, আছে। 

কমনসেন্স বলে একটা জিনিস যে বাজারে প্রচলিত আছে তার ব্যাপারে সেটা মনে হলাে নাI am so annoyed. উড়ালপঙ্খিকী করেছে ? ভাের ‘টার সময় টেলিফোন করে তােকে চাচ্ছেআমি বললাম, জরুরি কিছু ? সে বললনা, জরুরি কিছু না। 

আমি বললাম, জরুরি কিছু না হলে পরে টেলিফোন করােছুটির দিনে ভাের টায় জরুরি কোনাে কারণ ছাড়া টেলিফোন করা অপরাধের মধ্যে পড়েসে টেলিফোন রেখে দিয়ে ঠিক বিশ মিনিটের মাথায় আবার টেলিফোন করেছে আমি ‘স্টুপিডবলে গালি দিতে চাচ্ছিলামশেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলিয়েছিতুই তাের বন্ধুকে বলে দিসসে যেন কখনাে ছুটির দিনে দশটার আগে টেলিফোন না করে। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ

জি আচ্ছা, বলে দেব | তুই আবার আমার কথায় রাগ করছিস না তাে? বেকার যুবকরা অতিরিক্ত সেন্টিমেন্টাল হয়তারা ধরেই নেয় পৃথিবীর সবাই তাদেরকে অপমান করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে আছেতুই বরং এক কাজ কর, নাস্তা খেয়ে তাের বন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলঘটনা কী জাননিশ্চয়ই কোনাে সমস্যা আছে, নয়তাে ভাের ছটায় কেউ টেলিফোন করে না। 

মুহিব টিপট থেকে কাপে চা ঢালল চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিজের ঘরে চলে যাওয়া, বিছানায় পা ছড়িয়ে ছুটির দিনের মতাে চা খাওয়াচা খেতে খেতে এক ফাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা পড়া যেতে পারেবৃষ্টির পানিতে কাগজটা প্রায় গলন্ত অবস্থায় চলে গিয়েছিলসেটা শুকানাে হয়েছেশক্ত কাগজে পেস্ট করা হয়েছেএকবার লেমনেট করার চিন্তাও এসেছিলজীবনের প্রথম চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা যত্ন করে রেখে দেয়া হলাে। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ

তােফাজ্জল বলল, কিরে তুই উঠে যাচ্ছিস কেনঘরে বসে চা খাব ঘরে বসে চা খাবার দরকার পড়ল কেন ? সিগারেট ধরেছিস

মিথ্যা বলার দরকার নেইধরলে ধরেছিসসামান্য সিগারেট নিয়ে মিথ্যা বলা ঠিক নাছােট মিথ্যা থেকে শুরু হয় বড় মিথ্যাইংরেজিতে একটা প্রবচন GTICS You start by cutting grass, you end up by killing man. আচ্ছা যা, ঘরে গিয়ে সিগারেট খেতে খেতে আরাম করে চায়ে চুমুক দেসিগারেট দিয়ে সকালের চার কোনাে তুলনা নেইপাঁচ বছর আগে সিগারেট ছেড়েছি, এখনাে স্মৃতি আছেকিছুই বলা যায় না কোনাে একদিন সিগারেট ধরে ফেলতে পারি

May be today is the day. | মুহিব ভেবেই পাচ্ছে না বড় ভাইজান আজ এত কথা বলছেন কেন ? টাকা হারানাের শােকে ? টেনশনে একেকজন মানুষ একেক রকম আচরণ করেমুহিবের মেজো ভাই মােফাজ্জল ঝিম মেরে বিছানায় পড়ে যায় তার তখন ড্রপ বিট হয়এবং সে বিড়বিড় করে বলেOh God, save me please. তার ধারণা, তার বেহেশত হবে টেনশন ফ্রি একটা জায়গায়

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ

বেহেশতে তার হুরপরী, সরাবন তহুরা কিছুই লাগবে নাশুধু শুয়ে থাকার জন্যে নরম বিছানা লাগবে শব্দ হয় না এরকম এসি লাগবেআর লাগবে টেনশন ফ্রি মন। 

মােফাজ্জল বারান্দায় তার যমজ দুই মেয়েকে শাস্তি দিতে নিয়ে এসেছেদুজনকে মুখােমুখি বসানাে হয়েছেদুজনের গালে কষে থাপ্পড় লাগানাে হয়েছেএরা কেউ কাঁদছে নাদুজন দুজনের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেএদের এই এক অদ্ভুত ব্যাপার! যে শাস্তি দেয় এরা তার উপর রাগ করে 

এক বোেন অন্য বােনের উপর রাগ করেফোস ফোস করতে থাকেমুহিবএসে বারান্দায় দাড়ালমােফাজ্জল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলল, মুহিব, এক কাজ করতাে, এই দুই শয়তানীর গালে কষে দুই থাপ্পড় দে। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ

মুহিব বলল, কেন ? প্রশ্ন করবি না থাপ্পড় দিতে বলছি থাপ্পড় দে। 

বলে নিজেই এসে থাপ্পড় দিলউল্টে পড়ে গেলআবার নিজে নিজেই উঠে বসে এর দিকে তাকিয়ে ফোস ফোস করতে লাগল মুহিব নিজের ঘরে ঢুকে গেলসব বাবামারই সন্তান পালনের নিজস্ব টেকনিক আছেএই টেকনিকে বাধা দেয়ার দরকার নেইসংসার তার নিজস্ব গতিতে চলুককেউ বাচ্চাদের থাপ্পড় দিয়ে বড় করবেআবার কেউ আদর দিয়ে বড় করবেফাইনাল প্রােডাক্ট কী হবে তা কেউই জানে না। 

মুহিব বিছানায় পা এলিয়ে বসেছেসারাদিনে সে কী করবে না করবে একটু ভেবে নেয়ার ব্যাপার আছেসফিক ভাইয়ের সঙ্গে যােগাযােগ করতে হবে সিরিয়াস কিছু নিশ্চয়ই হয়েছেসিরিয়াস কিছু না হলে তিনি ভােরবেলায় টেলিফোন করার মানুষই নাদলের কেউ কি মারা গেছে ? সফিক ভাইয়ের মামার বাড়িতে কি কোনাে সমস্যা হয়েছে ? পুলিশ এসেছেপুলিশ তাদের খুঁজছে ? পুলিশ বড় ধরনের কোনাে সমস্যা করতে পারবে নামহসিনের মেজো চাচা পুলিশের ডিআইজি

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ

পুরােপুরি দুই নম্বরি মানুষপুলিশের লাইনে দুনম্বরি মানুষের ক্ষমতা থাকে বেশিমহসিন যদি সত্যি সত্যি কাউকে খুন করে তার ডিআইজি চাচাকে বলে, চাচা, খুন করে ফেলেছিউনি বলবেনকিছু দিনের 

জন্যে গা ঢাকা দে, ইন্ডিয়া চলে যাদেখি কী করা যায়। 

মহসিনের এই ডিআইজি চাচা অতি ধার্মিক মানুষএকবার হজ করেছেন, দুবার উমরা হজ করেছেননামাজের কারণে কপালে দাগ পড়ে গেছেতিনি যখন ডিউটিতে যান আর্দালির সঙ্গে জায়নামাজ থাকেতার খাকি শার্টের পকেটে থাকে আকিক পাথরের তসবিডিউটিতে ফাঁক পেলে তসবি টানেনমুহিব একবার মহসিনের সঙ্গে তার মেজো চাচার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল তিনি খুব আদরযত্ন করেছেন

তসবি টানতে টানতে পুলিশি ক্ষমতার অনেক গল্প করেছেনবুঝলে বাবারা, সব কিছু পুলিশের হাতেমনে কর B খুন করেছে Cকেপুলিশ ইচ্ছা করলে Aকে খুনের মামলায় ফাসিয়ে ফাসিতে ঝুলিয়ে দিতে পারেপুলিশ এমন পঁাচ খেলবে যে শেষের দিকে A মনে করবে খুন সেকরেছেহা হা হাতাহলে একটা ঘটনা বলি শােন, আমি তখন টাঙ্গাইলের এস.পি..

মাগরেবের ওয়াক্ত পর্যন্ত তিনি তাদের একের পর এক গল্প বলে গেলেনতাদের দুজনকে উনার ইমামতিতে মাগরেবের নামাজ পড়তে হলাে

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *