কম্পিউটার ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস পড়ুন বিস্তারিত

কম্পিউটার ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস পড়ুন বিস্তারিত

BAD BOY:

১৯৯১ সালে এই ভাইরাসটি প্রথম ইউরোপে আত্নপ্রকাশ করে। এটি একটি ফাইল এপেয়ারিং ভাইরাস যা কিছু টেকনিক ব্যবহার করে প্রোগ্রামের Code কে কয়েকটি অংশে বিভক্ত হয়ে ফাইলের শুরুতে এলোমলোভাবে বসে। DOS প্লাটফর্মের কম্পিউটার এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। যখন ভাইরাস আক্রান্ত ফাইলটি কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয় তখন এটি অপারেটিং সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রায় ৬৬০ কিলো বাইটের একটি প্রোগ্রাম ইন্সটল করে। BAD BOY আক্রান্ত ফাইলের টাইপহচ্ছে  .COM।

CINDERELLA:  ১৯৯১ সালের জুলাই এ ফিনল্যান্ডে প্রথম আবিস্কৃত হয়। এটি একটি ফাইল এপেয়ারিং ভাইরাস যার ফাইল টাইপ .COM এবং এটির সাইজ ৩৯০ বাইট পর্যন্ত হতে পারে। এটার আক্রান্ত ফাইলে “clnDe Rel.La” টেক্সট স্ট্রিং দেখা যায়।

Sobig F:  ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে বিশ্বের প্রায় ২ মিলিয়ন বাণিজ্যিক এবং ব্যাক্তিগত কম্পিউটারকে আক্রান্ত করে একটি ঘৃণ্য ইতিহাস তৈরী করে। বৈধ সোর্স থেকে অবৈধ ই-মেইল পাঠিয়ে ইউজারকে বোকা বানিয়ে এটি হোস্ট কম্পিউটারকে আক্রান্ত করে। ইউজার যখন ই-মেইলের attachment টি ওপেন করে তখন এটি একটি নিরাপদ ফাঁদ তৈরী করে ইউজারের ই-মেইল এড্রেস থেকে ম্যাসেজ পাঠানোর জন্য অনধিকার প্রবেশকারীকে অনুমতি দেয় এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে এক মিলিয়ন কপি পাঠাতে সক্ষম হয়।

My Doom: ২৬ জানুয়ারি, ২০০৪ সারা বিশ্বের বিভিন্ন ই-মেইল প্রেরকদের ঠিকানায় এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে । যখন ই-মেইল প্রেরক কোন মেইল পাঠাতে চায় তখনও এটি একটি “Mail Tvansaction Failed” ইরর ম্যামেজ দেখায় এবং ম্যাসেজটিতে ক্লিক করে ওপেন করার সাথে সাথে ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে ইউজারের এড্রেস বুক থেকে এড্রেস নিয়ে ম্যাসেজ পাঠানো শুরু করে। My Doom ভাইরাসটি “Novarg” নামেও পরিচিত।

পিকাচু:

পোকি ভাইরাস বা পিকাচু ভাইরাস নামে পরিচিত এই ভাইরাসটি প্রথম শিশুদের লক্ষ্য করে বানানো কম্পিউটার ভাইরাস। জাপানি কার্টন চরিত্র পিকাচুর ছবির সঙ্গে একটি বিশেষ প্রোগ্রামড ফাইল ইমেইল করা হতো। এটি উইন্ডোজটিতে আক্রমণ করে সি ড্রইভ থেকে কনটেন্ট মুছে ফেলতে সক্ষম ছিল।

কনফ্লিকার: উইন্ডোজ ২০০০ থেকে শুরু করে উইন্ডোজ ৭ বেটা ওএস চালিত ৯০ লাক্ষ থেকে ১.৫ কোটি কম্পিউটার শিকার হয়েছিল এই ভাইরাসটির। এর হামলার শিকার ফরাসি নৌবাহিনী, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণলয়, নরওয়ে পুলিশ বিভাগের ‍সিস্টেমসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বর্পূণ রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠান।

Nimda:

Nimda শব্দটি এসেছে Admin শব্দটি উল্ট করে। এটি আঘাত হানে ৯/১১টুইন টাওয়ার হামলার ১ সপ্তাহ পর, ১৮ সেপ্টেম্বর। এই ভাইরাসের প্রধান কাজ ছিলো ডিনায়াল ইন সার্ভিস এটাকের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকশন স্লো্ করে দেয়। ৪ টি মাধ্যমে এই ভাইরাস বিস্তৃতি লাভ করতো। ই-মেইল, হোস্টিং সারভার, ফাইল ট্রান্সফার এবং ফোল্ডার শেয়ারিং দ্বারা।

Melissa: ১৯৯৯ সালের ২৬ মার্চ এই ভাইরাসটি সারা বিশ্বে হেডলাইন হয়। এটির কাজ মাইক্রোসফট আউটলুককে ব্যবহার করে ইমেইল-এর মাধ্যমে ‍সিস্টেমের ক্ষতি করা।

Storm Worm:

এই ভাইরাসটি ব্যপকহারে আক্রমণ করে ২০০৬ সালে। মেইলে “230 dead as storm batters Europe” এই সাবজেক্টের একটি মেইল আসতো যেখানে একটি ভাইরাস আক্রান্ত লিঙ্ক থাকতো। কেউ যদি সেখানে ক্লিক করত তাহলে তার কম্পিউটারের রিমোটলি কন্ট্রোল চলে যেত হ্যাকারের কাছে।

ক্রিপ্টোলকার: ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে আবিস্কার হওয়া এই ট্রোজান হর্স ভাইরাস কোন কম্পিউটারে ঢোকার পর তার হার্ডড্রাইভের ফাইলগুলো এনক্রিপ্ট করে তার ডিক্রিপশন কি ভাইরাস প্রোগ্রামের কাছে পাঠিয়ে দিত। এরপর এই প্রোগ্রামার এনক্রিপ্ট করা ফাইলের ডিক্রিপশন কী’র বদলে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ‘মুক্তিপণ আদায় করতো।

রেজিন: ২০১৪ সালে আলোচনায় আসে বিভিন্ন ভুয়া ওয়েব পেইজের মাধ্যমে ছড়ানো এই ট্রোজান হর্স ভাইরাস। একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে এটি চুপিসারে নিজের এক্সটেনশন ডাউনলোড করে নিত। এটি আ্যান্টি-ভাইরাসের মাধ্যমে শনাক্ত করাও কঠিন ছেল।

কম্পিউটার ভাইরাসের ক্ষিতকারক দিক:

কম্পিউটার চলতে চলতে হঠাৎ স্থির বা HANG হয়ে কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। এ অবস্থায় কম্পিউটার পুনরায় চালু করতে হয় বিধায় সেভ না করলে অনেক মূল্যবান তথ্য হারিয়ে যায়। গুরুত্বর্পূণ অনেক স্থাপনায় প্রোগ্রাম ওলট-পালট করে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা ছাড়াও প্রভূত ক্ষতি সাধন করে। যেমন: মেডিকেল রেকর্ড, এয়ার ট্রাফিক কন্টেল এবং অন্যান্য নিরাপত্তা কার্যক্রম বিঘ্নিত করে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। ভাইরাস সামান্য কয়েক বিট পরিরর্তন করে হিসাব নিকাশের বিরাট ক্ষতি সাধন করে।

যেমন- ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করতে পারে, ডিস্কে সংরক্ষিত অতি মূলবান তথ্য হারিয়ে ফেলতে পারে, গুরুত্বর্পূণ বহুল ব্যবহৃত অনেক প্রোগ্রামের এক্সিকিউটেবল ফাইলকে আক্রান্ত করে করাপ্ট করে দিতে পারে। ফলে এ প্রোগ্রামটি আর রান করে না, প্রতিদ্বন্দী কোনো কোম্পানির কম্পিউটারাইজড করপোরেটের সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে গোপনীয় অনেক তথ্য পাচার করে ক্ষতি সাধন করতে পারে, কোনো কোনো ভাইরাস হার্ডডিস্ক ফরমেট করে সব প্রোগ্রাম ও তথ্য নষ্ট করে দিতে পারে, ভাইরাস তার বংশবৃদ্ধির কার্যক্রম করতে গিয়ে কম্পিউটারের গতিকে মন্থর করে দেতে পারে, হার্ডডিস্কের ফাইল নষ্ট করে দিতে পারে।

এতে করে ডস এর কোনো ফাইলকেই নির্দিষ্ট ঠিকানায় খুজে পাওয়া যায় না। কিছু ভাইরাস হার্ডডিস্কের বুট সেক্টর আক্রান্ত করে, ‍আক্রান্ত হার্ডডিস্ক ফরমেট করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এর ফলে অনেক মূল্যবান ফাইল হারাতে হয়। কিছু কিছু ভাইরাস সিপিইউ এর রিড/ রাইট ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। হার্ডডিস্ক বা ফ্লিপে ডিস্কে ব্যাড সেক্টর বাড়ায়, কোনো কোম্পানির ওয়েব পেজের তথ্য বিকৃত করে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য বিফল করা ছাড়াও ভাবমূর্তি নষ্ট করে ক্ষতিসাধনসহ বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।

এন্টিভাইরাস (Antivirus)

এন্টিভাইরাস (ইংরেজি: Antivirus) বলতে সাধারণভাবে কম্পিউটারের ভাইরাস রোধ করার জন্য ব্যবহৃত একধরনের সংরক্ষণ এলাকা বা হার্ডডিস্ক বা যে কোনো রিমুভেবল ডিস্ক হতে ভাইরাস শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে পারে। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে এন্টিভাইরাস হলো সেই সফটওয়্যার, যা ম্যালওয়্যারের মাথে সম্পৃক্ত সফটওয়্যারকে কম্পিউটারে অনুপ্রবেশে বাধা প্রদান করে। ম্যালওয়্যারকে আপনার কম্পিউটারে ঢুকতে না দেয়া বা ঠেকানোর অন্যতম ও প্রদান উপায় হলো এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা।

আপনাকে আগে জানিয়ে দেওয়া আপনার কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার ঢুকতে চাইছে। অথবা কোন এক্সটার্নাল স্টোরেজ আপনার পিসিতে প্রবেশের আগে চেক করে নেয়া স্টোরেজে কোনো প্রকার ক্ষতিকারক সফটওয়্যার আপনার মূল্যবান ডাটার দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। ব্রউজারের দুর্বলতা , প্লাগইনস, বিভিন্ন প্রকার লেনদেনে, অপারেটিং ‍সিস্টিম প্রভূতির জন্য এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার থাকা প্রয়োজন। আর আপনি যদি অনলাইনে লেনদেন করেন তাহলে ‍আপনার পিসি’তে এন্টিভাইরাস থাকা অবশ্যই প্রয়োজন, এখন অনেক এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার লেনদেনের সিকিউরিটি দিয়ে থাকে।

 

 

 

কম্পিউটারের ইতিহাস জেনে নিন বিস্তারিত

 

 

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *