গরমে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকরভাবে জীবনযাপন কি সম্ভব?

গরমে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকরভাবে জীবনযাপন কি সম্ভব?  ষড়ঋতুর সমাহার আমাদের এই বাংলাদেশে। তারপরও গরমের আধিক্যই বেশি।পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারনে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হওয়া স্বতেও একটা ভেপসা গরমে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে।যারা বাহিরে বের হন তারাই এই তীব্রতার সম্মুখীন হয় বেশি।গরমে সুস্থ

আর বাচ্চারা জ্বর, ঠান্ডা, কাশি সহ নানা রকম অসুস্থতায় ভোগে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গত কয়েক মাস ধরে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে।গরমের অজুহাতে কিন্তু ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষের। প্রচন্ড গরমে সর্বত্রই অস্বস্তিকর অবস্থা। মাঝে মাঝে বৃষ্টির দেখা পেলেও গরম কমে না।কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে বাহিরে ছোটাছুটি করতেই হয়।

গরমে সতেজ থাকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হসপিটালের চিফ ডায়েটিশিয়ান “সেলিনা বদরুদ্দিনবলেন-

“আমাদের খাবারের মেনুতে সামান্য পরিবর্তন আনলেই সম্ভব অনেকটা সতেজ এবং সজীব থাকা।”

ভ্যাপসা গরমে পানি, শরবত ও জুসজাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেলে শরীর সতেজ থাকে। এছাড়াও এমন কিছু খাবার আছে যা থেকে আপনি পেতে পারেন বিশেষ পুষ্টি যেটা এই সময় বেশি প্রয়োজন।”

শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী রাখার উপায়ঃ

সুস্থ ও সুন্দর দেহ সকলেরই কাম্য।শরীর সুস্থ সবল থাকলে মানুষ মন দিয়ে তার করণীয় কাজগুলো মন দিয়ে করতে পারে।প্রবাদ আছে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।শরীর ভালো থাকলে মনও প্রফুল্য থাকে। তাই গরমের তীব্রতা যতই হোক মানুষের নিজেদের কাজ যেমন বন্ধ থাকবে না তখন সবাইকে নিজেদের শরীরের প্রতি যত্নবান হতে হবে।তাই যা যা করতে হবে সেগুলো হলো ——

সুষম খাদ্যাভাস গড়ে তুলা :

রোজকার খাবারের দিকে নজর রাখতে হবে। এমন খাবারই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখতে হবে যা আমাদের শরীরে জল ও তাপমাত্রার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ কিছু ফল ও সবজি রয়েছে যা আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখে ও শরীরে পানির চাহিদাও অনেকাংশে পূর্ণ করে। এই সময় যে খাবাওগুলো খাওয়া পয়োজন সেগুলো হল—-

ডাবের জল :

ডাবের জলকে ন্যাচারাল এনার্জি ড্রিংস বলা হয়।কারন এতে আছে ন্যাচারাল ইলেকট্রোনাইস, যা আমাদের শরীরকে ডিহাইড্রেট করে, শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং এনার্জি লেবেলও বাড়ায়।

শশা :

শশার মধ্যে পানির পরিমান বেশি থাকে, প্রায় ৯৫% কাছাকাছ। তাই শশা শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা করে এবং ক্লান্তিকে দূর করে।তাই গরমে শশাকে খাবারের তালিকায় রাখতে পারলে ভালো।

তরমুজ :

তরমুজে ৯২% পানি থাকার কারনে এটি খেলে পানির ঘটতি মেটানো সহজ হয়। তার সাথে তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

পাতি লেবু :

গরমে ঘরে বাহিরে নানা রকম কাজ করে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন এক গ্লাস পাতি লেবুর শরবত আমাদের সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই সারাদিনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে লেবুর শরবত খাওয়া উচিত।     

বেদানা :

বেদার শরবত প্রতিদিন খেলে শরীরে পানির ঘটতি পূরণ হয়।

পুদিনাপাতা :

গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে পুদিনাপাতা খুবই উপকারী।তাই সালাদ হিসাবে বা শরবতের সাথে পুদিনাপাতা  খাওয়া উচিত।

মৌরি জল :

মৌরি বা মিষ্টি জিরা রাতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকাল বেলা গেলে সারাদিন শরীরে ঠান্ডা থাকে।

টক দধি :

প্রচন্ড গরমে রোজকার খাবারে টক দই অবশ্যই রাখতে হবে।এটি শরীরের হজম শক্তি বাড়ায়, পেটকে ঠান্ডা রাখে। 

পেঁয়াজ :

পেঁয়াজে রয়েছে বিশেষ কিছু উপাদান, যা আমাদের শরীর যখন গরম হয়ে যায় তা নিয়ন্ত্রণ করপ আর তীব্র গরম অনুভূত হয় না।তাই প্রতিদুনের খাবারে কাঁচা পেয়াজ রাখা আবশ্যক।

লাউ :

লাউয়ে জলের পরিমান প্রায় ৯৬%। তা এটি আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি খুব ভালো ভাবেই মেটাতো পারে।তাই গরমের সময় খাদ্য তালিকায় লাউ রাখটা আবশ্যক।      

 এগুলো ছাড়াও আরও অনেক কিছুই আছে যা গরমে আমাদের  শরীরে পানির ঘটতি কমায় ও শরীর সুস্থ  রাখে।      

  

রোদে যাওয়া থেকে বিরত থাকা :

যারা অফিসে ও অন্যান্য যারা  যে যার কর্মক্ষত্রে জান তাদের তো বাহিরে বের হতেই হয়, তারপর বাচ্চাদের স্কুল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে বাহিরে তো বের হতেই হয়, তারপরও প্রয়োজনীয় কাজটুকু শেষ করে ঠান্ডা জায়গায় বা ছায়ার দাড়িয়ে বিশ্রাম নিতে হবে।রোদে বের হবার আগে সানস্ক্রিম অবশ্যই ব্যবহার করতে হবেও ছাতা সাথে রাখতে হবে।  তা না হলে সূর্যের তাপদহে চেহারায় বা হাতে পায়ে সান বার্ন দেখা দিব। আর পারলে বারবার পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিতে পারলেও ভালো হয়। এসি ছারলপ বাহিরের তাপমাত্রার সাথে ব্যালেন্স করে এসি ছাড়া উচিত।     

 

বেশি করে পানীয় গ্রহন করা:

গরমের সময় পানি ও শরবত বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত। শরীরের আদ্রতা,ধরে রাখতে তৃষ্ণণা না পেলেও বেশি বেশি করে পানি ও শরবত পান করতে হবে। পানীয়,বলতে আবার কোক, পেপসি, ফান্টা অর্থাৎ কোল্ড ড্রিংস জাতীয় জিনিস পান করলে হবে না। বিশুদ্ধ পানি  আর শরবত যেমন – লেবুর, বেলের, আখের, লবন ও চিনির শরবত, লাচ্ছি ইত্যাদি নানা রকম ফলের শরবত খেতে হবে।বাহিরে যাবার সময় অবশ্যই ব্যাগে একটা ছেট একটা তেলের বোতল সাথে রাখা উচিত।

প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া: 

প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত তবে অতিরিক্ত গরমে উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। 

আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা :

অতিরিক্ত গরমে হালকা রঙ্গের ঢিলেঢালা জামা কাপড়ই পরা উচিত।যেমন – এই সময় সবচেয়ে আরামদায়ক কাপড় হলো সুতির জামা কাপ। কারন সিন্থেটিক জাতীয়গুলো শরীরের সাথে লেগে থাকে আর গরমও বেশি অনুভূত হয়।     

পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও একাধিকবার গোসল করা:

গরমে হাম বেশি হয় ফলে শরীরে দূর্গন্ধও বেশি হয়, তাই সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাজা উচিত।অবশ্যই নিয়ম করে দুই বেলা গোসল করা উছিত।রাতে ঘুমানোর গায়ে গোসল করলে শরীর ঠান্ডা থাকে। গোসল করলে শরীরের ক্লান্তিও দূর হয়।আর রাতে ঘুমও ভালো হয়।

শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া :

অতিরিক্ত গরমে পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা ও ঝিমঝিম করা , শ্বাস কষ্ট, বুখ ব্যথা, হজমে সমস্যা,দূর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা,দেখা দেয়। প্রচন্ড গরমে হিটস্ট্রোকও হয়ে থাকে। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী কোন ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে এবং শরীরে লবন ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় সাথে সাথে ঘামও হয় না তখনই হিটস্ট্রোক হতে পারে।৪০° সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রা হিটস্ট্রোকের ঝুকি বাড়ায়।তাই এই সমস্যা গুলো হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ও পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।আর যথাসম্ভব রোদ এড়িয়প চলাই ভালো।        

বাহিরের খাবার ও পানীয় পরিহার করা :  

গরমের সময় এমনিতেও হালকা খাবার খাওয়া উচিত। বাহিরের খাবার একেবারেই ত্যাগ করা ভালো। কারন গরমে এই খোলা খাবার ও পানীয় দূষিত হয় বেশি। এই সময় মশা মাছি ও বিভিন্ন রকম পোকামাকড়ের প্রার্দুভাব দেখা যায়, এগুলো রোগ জীবানু ছড়ায়। তাই বাহিরে খাবার ও পানীয় না খেয়ে ঘর ঘেকে বের হবার সময় হালকা খাবার ও পানির একটি বোতল সাথে রাখা উচিত।

গরমে যে কাজগুলো এড়িয়ে চলা উচিত :

প্রচন্ড গরমে শরীরীকভাবে সুস্থ থাকার জন্য ও গরমে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়ে যায় তা দূর করার জন্য যা করনীয় তা হলো  —

 ★ কফি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। 

★ গরমে সময় কোন কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের ফলে নানা রকমের শারীরিক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এই সময় চাপ এড়িয়ে চলাই ভালো।

★ঘাম আমাদের শরীরের জন্য মোএেও ভালো লক্ষণ নয়। অতিরিক্ত ঘাম কমাড্তে টমেটো খুবই কার্যকর। টমেটোতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আছে, যা অতিরিক্ত ঘাম কমাতে সাহায্য করে।

★ খুব বেশি রোদে না যাওয়াই ভালো।         

★ বাহির থেকে এসে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়।

পরিশেষে ,গরমে সুস্থ ও সবল থাকতে হলে উপরে উল্লেখ্য বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে ।  সকালে ঘুম থেকে উঠে টুকটাক ব্যায়াম করলে ও গভীর ভাবে ধীরে ধীরে শ্বাস প্রশ্বাস নিলে এটা আমাদের দেহ ও মনকে সুস্থ ও শীতল রাখতে সহায়তা করে।

 

BY

ত্রোপা চক্রবর্তী

 

  

  

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *