চার্লস ডারউইন এর জীবনী

চার্লস ডারউইন

চার্লস ডারউইন [১৮০৯–১৮৮২]

ডারউইনের জন্ম হয় ১৮০৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে । পিতা ছিলেন নামকরা চিকিৎসক । মাত্র আট বছর বয়সে মাকে হারালেন ডারউইন । সেই সময় থেকে পিতা আর বড় বোনদের স্নেহছায়ায় বড় হয়ে উঠতে লাগলেন । নয় বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হলেন । চিরাচরিত পাঠ্যসূচীর মধ্যে কোন আনন্দই পেতেন না । তিনি লিখেছেন, বাড়িতে তাঁর ভাই একটি ছোট ল্যাবরোটরি গড়ে তুলেছিলেন । সেখানে তিনি রসায়নের নানা মজার খেলা খেলতেন ।

 Charles Darwin Biography in Bengali

ষোল বছর বয়সে চার্লসকে ডাক্তারি পড়ার জন্য এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হল । যার মন প্রকৃতির রূপ গন্ধে পূর্ণ হয়ে আছে, মরা দেহের হাড় অস্থি মজ্জা তাঁকে কেমন করে আকর্ষণ করবে ঔষধের নাম মনে রাখতে পারতেন না । শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিবরণ পড়তে বিরক্তি বোধ করতেন । আর অপারেশনের কথা শুনলেই আঁতকে উঠতেন । চার্লসের পিতা বুঝতে পারলেন ছেলের পক্ষে ডাক্তার হওয়া সম্ভব নয় । তাকে কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি করা হল । উদ্দেশ্যে ধর্মযাজক করা ।

সেই সময় কেমব্রিজের উদ্ভিদ বিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন হেনসেলো (Henslow) । হেনসেলোর সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই তাঁর অনুরাগী হয়ে পড়লেন চার্লস । অল্পদিনের মধ্যেই গুরু-শিষ্যের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে উঠল । কেমব্রিজ থেকে পাশ করে তিনি কিছুদিন ভূমিদ্যা নিয়ে পড়াশুনা করতে থাকেন । অপ্রত্যাশিতভাবে চার্লস ডারউইনের জীবনে অযাচিত সৌভাগ্যের উদয় হল । অধ্যাপক হেনসলোর কাছ থেকে একখানি পত্র পেলেন ডারউইন । ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বিগল (H. M. X. Begagle) নামে একটি জাহাজ দক্ষিণ আমেরিকা অভিযানে বের হবে । এই অভিযানের প্রধান হলেন ক্যাপ্টেন ফিজরয় । এই অভিযানের উদ্দেশ্য হল প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীবজন্তু, গাছপালা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা এবং বৈশিষ্ট্যকে পর্যবেক্ষণ করা । এই ধরনের কাজে বিশেষজ্ঞ এবং অনুরাগী ব্যক্তিরাই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে । এই অভাবনীয় সৌভাগ্যের সুযোগকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইলেন না ডারউইন ।

 Charles Darwin Biography in Bengali

১৮৩১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ”বিগল” দক্ষিণ আমেরিকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করল । ক্যাপ্টেন ফিজরয়ের নেতৃত্বে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে জাহাজ ভেসে চলল পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে । দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল ছাড়াও গালাপগোস দ্বীপপুঞ্জ, তাহিত্যি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মালদ্বীপ, সেন্ট হেলেনা দ্বীপে জাহাজ ঘুরে বেড়াল । এই সময়ের মধ্যে ডারউইন ৫৩৫ দিন কাটিয়েছিলেন সাগরে আর ১২০০ দিন ছিলেন মাটিতে । ডারউইন যা কিছু প্রত্যক্ষ করতেন তার নমুনার সাথে সুনির্দিষ্ট বিবরণ, স্থান, সংগ্রহের তারিখ লিখে রাখতেন । কোন তত্ত্বের দিকে তাঁর নজর ছিল না । বাস্তব তথ্যের প্রতিটি ছিল তাঁর আকর্ষণ । ২৪ শে জুলাই ১৮৩৪ সাল । ডারউইর লিখেছেন “ইতিমধ্যে ৪৮০০ পাতার বিবরণ লিখেছি, এর মধ্যে অর্ধেক ভূবিদ্যা, বাকি বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুর বিবরণ ।

”বিগল” জাহাজে চড়ে দেশভ্রমণের সময় মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন । দীর্ঘ পাঁচ বছর পর যখন ১৮৩৬ সালে ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন করলেন ডারউইন তখন তাঁর শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে গিয়েছে । কিন্তু অদম্য মনোবল, বাড়ির সকলের সেবায় অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে উঠলেন । 

এইবার ডারউইন বই লেখার কাজে হাত দিলেন । প্রকৃতপক্ষে তিনি গবেষণার কাজ যতখানি ভালবাসতেন, লেখালেখি করতে ততখানিই বিরক্তি বোধ করতেন ।

 Charles Darwin Biography in Bengali

অবশেষে ২৪শে নভেম্বর ১৮৫৯ সালে ডারউইনের বই প্রকাশিত হল । বই- এর নাম The origin of species by means of Natural Selection or the preservation of Favoured Races in the struggle for life । ( পরবর্তীকালে এই বই শুধু Orgin of species  নামে পরিচিত হয় । প্রকাশের সাথে সাথে ১২৫০ কপি বই বিক্রি হয়ে গেল । বিবর্তনবাদের নতুন তত্ত্ব বাইবেলের আদম ইভের কাহিনী, পৃথিবীর সৃষ্টির কাহিনীকে বৈজ্ঞানিক তথ্যের বিশ্লেষণে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত করলেন । 

এই বইতে তিনি লিখেছেন, আমাদের এই পৃথিবীতে প্রতিমুহূর্তে নতুন প্রাণের জন্ম হচ্ছে । জীবের সংখ্যা ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে । কিন্তু খাদ্যের পরিমাণ সীমাবদ্ধ । সেই কারণে নিয়ত জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে চলেছে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিরামহীন প্রতিযোগিতা । যারা পরিবেশের সাথে নিজেদের সামঞ্জস্য বিধান করতে পেরেছে তারাই নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে । কিন্তু যারা পারেনি তাঁরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে । এই ধারাকেই বলা হয়েছে যোগ্যতমের জয় “Survival of the Fittest” । ডারউইনের বিবর্তনবাদের প্রসঙ্গে অনেকের ধারণা মানুষের উৎপত্তি বাঁদর থেকে । কিন্তু ডারউইন কখনো এই ধরণের কথা বলেননি । তাঁর অভিমত ছিল মানুষ এবং বাঁদর উভয়েই কোন এক প্রাগঐতিহাসিক জীবন থেকে বিবর্তিত হয়েছে । বাঁদররা কোনভাবেই আমাদের পূর্বপুরুষ নয়, তার চেয়ে দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলা যেতে পারে ।

 Charles Darwin Biography in Bengali

ডারউইনের মতে মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব কারণ সমস্ত জীব জগতের মধ্যে যে সকলের চেয়ে বেশি যোগ্যতম । প্রকৃতপক্ষে মানুষ কোন স্বর্গচ্যুত দেবদূত নয়, সে বর্বরতার স্তর থেকে উন্নত জীবন । এগিয়ে চলাই তার লক্ষ্য । তিনি যখন শেষ বারের মত লন্ডনে এসেছিলেন তখন তাঁর বয়স ৭৩ বছর । এক বন্ধুর বাড়ির দরজার সামনে এসেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন । বন্ধু বাড়িতে ছিলেন না । বন্ধুর বাড়ির চাকর ছুটে আসতেই ডারউইন বললেন, তুমি ব্যস্ত হয়ো না, আমি একটা গাড়ি ডেকে বাড়ি চলে যেতে পারব ।

কাজের লোককে কোনভাবে বিব্রত না করে ধীরে ধীরে নিজের বাড়িতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন । আর বিছানা থেকে উঠতে পারেননি তিনি । ক্রমশই তাঁর অসুস্থতা বেড়ে চলল । ডারউইন বুঝতে পারছিলেন তাঁর দিন শেষ হয়ে আসছে ।

তিন মাস অসুস্থ থাকার  পর ১৯শে এপ্রিল ১৮৮২ সাল, পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন চার্লস ডারউইন । তাঁর মৃত্যুতে দেশ জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এল । শক্ররা উল্লাসিত হয়ে উঠল, “তাঁর মত ঈশ্বর বিদ্বেষী পাপীর স্থান হবে নরকে ।” 

 

 

পাবলো নেরুদা এর জীবনী

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *