রান্নাঘর থেকে সাড়াশব্দ আসছে। চা নাশতা তৈরী হচ্ছে। গায়ে জ্বর না থাকলে সে অবশ্যিই রান্নাঘরের দরজা ধরে দাঁড়াত এবং লাজুক গলায় বলতো, মা এক কাপ চা খাব। লাজুক গলায়, বলার মত কোন ব্যাপার না কিন্তু বিয়ের দিন বলে আজ লজ্জা লজ্জা লাগবেই।আসমানীর পানির তৃষ্ণা হচ্ছে। সে প্রতিদিন ঘুমুতে যাবার আগে মাথার কাছে পানির জগ গ্লাস রাখে। কাল রাতেও রেখেছে অথচ এখন নেই। কেউ নিয়ে গেছে বোধ হয়। কে নিয়ে গেছে নিশা?
কাল রাতে নিশা তার সঙ্গে ঘুমিয়েছে। নিশা কারো সঙ্গে ঘুমুতে পারে না। অন্য মানুষের গায়ের গন্ধে তার না-কি ঘুম আসে না। হঠাৎ হঠাৎ বাসায় মেহমান উপস্থিত হলে শোবার জায়গায় টানাটানি হয়, তখনো নিশা কারো সঙ্গে ঘুমুবে না। মেঝেতে কম্বল পেতে নিজের জন্যে আলাদা ছোট্ট বিছানা করবে। বিছানাটা ছোট্ট করবে এই জন্যে যেন কেউ মাঝরাতে এসে বড় বিছানার এক পাশে শুয়ে না পড়ে।
কাল রাতে নিশা যখন বালিশ নিয়ে আসমানীর সঙ্গে ঘুমুতে এল তখন আসমানী অবাক হয়ে বলল, তুই আমার সঙ্গে ঘুমুবি? নিশা গম্ভীর গলায় বলল, হুঁ।আসমানী বলল, কেন? মা ঘুমুতে বলেছে। বিয়ের আগের রাতে নাকি মেয়েদের একা ঘুমুতে দেয়ার নিয়ম নেই।তোকে নিয়ম নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না, তুই তোর মত আরাম করে ঘুমো।
নিশা বিছানায় উঠতে উঠতে বলল, অসুবিধা নেই।তুই কষ্ট করে চোখ মুখ শক্ত বানিয়ে শুয়ে থাকবি, দেখেই আমার খারাপ লাগবে। আমার নিজের ঘুম হবে না।তোমার ঘুম এম্নিতেও হবে না, ওম্নিতেও হবে না।নিশা তার শোবার জায়গায় আলাদা করে চাদর পাতল। বড় খাটের একটা অংশ আলাদা করে ফেলল। আসমানী বোনের কাণ্ড কারখানা দেখছে।
কত ধরনের বিচিত্র স্বভাব যে মানুষের মধ্যে দেখা যায়। মেয়েটা শুয়েছেও খুব অদ্ভুতভাবে। কাঠের টুকরার মত সোজা। হাতগুলি পর্যন্ত লম্বা করে রাখা। চোখের দৃষ্টি ছাদের দিকে। নিশা বলল, তুইতো শুয়েছিস অনেকটা দূরে। এখনো আমার গায়ের গন্ধ পাচ্ছিস? নিশা বলল, পাচ্ছি।আমার গায়ের গন্ধটা কেমন? খুব খারাপ?
খুব খারাপ না। মোটামুটি খারাপ। সব মানুষের গায়ের গন্ধই খারাপ।তোর নিজের গায়ের গন্ধ কেমন? আমারটা ভাল। সাবান সাবান গন্ধ। দেখি তোর হাতটা আমার কাছে আন শুঁকে দেখি।শুঁকে দেখতে হবে না।তুই কি সব সময় এ রকম স্ট্রেট লাইন হয়ে ঘুমাস? ঘুমাবার আগে কিছুক্ষণ এ রকম শুয়ে থাকি-তারপর কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
তুই যে খুব অদ্ভুত ধরনের মেয়ে হয়ে যাচ্ছিস এটা কি তুই জানিস। বিচিত্র সব অভ্যাস করছিস। পরে এইসব অভ্যাসের জন্যে কষ্ট পাবি।কষ্ট পাব কেন? এক সময় তুই বিয়ে করবি। তোর স্বামী চাইবে তোকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুতে। তোর যদি তখন সেই মানুষটার গায়ের গন্ধে বমি আসে তখন মানুষটা খুব কষ্ট পাবে না? কষ্ট পাবে না, কারণ আমি বিয়েই করব না।তোর জন্যে বিয়ে না করাটাই ভাল। তোর কি ঘুম পাচ্ছে?
উঁহু। যখন দেখবে আমি কাত হয়ে শুয়েছি তখন বুঝবে আমার ঘুম পাচ্ছে।তুই শবাসনের মত শুয়ে আছিস। কথা বলে আরাম পাচ্ছি না। কাত হয়ে শুয়ে পড়–কিছুক্ষণ গল্প করি।নিশা কাত হতে হতে বলল, তুমি যে লোকটাকে বিয়ে করছ তাকে কিন্তু আপা আমার একেবারেই পছন্দ না।কেন? তার গায়ে খুব খারাপ গন্ধ? তার গা থেকে ফুলের গন্ধ বের হলেও আমার পছন্দ হত না।অপছন্দের কারণগুলি কি? নিশা হাই তুলতে তুলতে বলল, জানি না। তবে লোকটার জন্যে আমার সামান্য মায়া হয়।মায়া হয় কেন?
খুবই গরীবতো এই জন্যে মায়া হয়। তাছাড়া তুমি ছাড়া তাকে কেউ দেখতে পারে না, এই জন্যেও মায়া হয়। বেচারাকে সবাই অপছন্দ করে। সবচে অপছন্দ করে মা।আসমানীর বুকে ধাক্কার মত লাগল। ফরহাদকে তার মা সবচে অপছন্দ করেন এই তথ্যটা জানা ছিল না। তার মা এই বিষয়ে তার সঙ্গে কখনো কোন কথা বলেননি। আসমানী বলল, মা ফরহাদকে অপছন্দ করেন এটা তোকে তিনি বলেছেন?
হ্যাঁ বলেছেন।কেন অপছন্দ করেছেন সেটা বলেছেন? না। উনার প্রসঙ্গ উঠলেই মা বলেন—বাঁটু ছাগল।বাঁটু বলবেন কেন? ওতো বাঁটু না।মার কাছে বেঁটে লেগেছে বলে মা বলেছে। মার কথায় তুমি কি মন খারাপ করলে? একটু করেছি।তাহলে বাবার কথায় আরো মন খারাপ করবে।বাবাও কি তাকে বাঁটু ছাগল বলেন?
বাবা আরো খারাপ কথা বলেন।নিশা খিলখিল করে হাসছে। আসমানী খুবই মন খারাপ করল। এমন কি খারাপ কথা বাবা বলেন যে সেই কথা মনে করে এভাবে খিল খিল করে কাউকে হাসতে হয়।নিশা হাসি থামিয়ে বলল, বাবা যা ইচ্ছা বলুক তুমি মন খারাপ করছ কেন? তোমার কাছেতো মানুষটা ভাল। ভাল না?
হ্যাঁ।তাহলেই হয়েছে। আপা এখন আমার ঘুম পাচ্ছে। ঘুমিয়ে পড়ি? আসমানী ক্লান্ত গলায় বলল, বাবা ওর সম্পর্কে কি বলেন সেটা একটু বলবি? না বলব না। তোমার খুবই মন খারাপ হবে। আপা শোন মা বলেছে সারারাত বাতি জ্বালিয়ে রাখতে। বিয়ের আগের রাতে বাতি নেভানো না-কি অলক্ষণ।আলো চোখের উপর কটকট করছিল তারপরেও আসমানী বাতি নেভাল না।
অলক্ষণ যখন বলা হয়েছে তখন থাকুক বাতি জ্বালানো। আসমানীর ঘুম আসছে না। অথচ নিশা কি আরাম করেই না ঘুমুচ্ছে। সে জেগে থাকলে ভাল হত। নিশার সঙ্গে গল্প করা যেত। কি গল্প করতো? ফরহাদ নামের মানুষটাকে তার হঠাৎ কেন এত পছন্দ হয়েছে সেই গল্প করতো। এতে দোষের কিছু নেই। নিশা শুধু মানুষটা কেন অপছন্দের তা জানবে, কেন পছন্দের তা জানবে না, তাতো হবে না। তাকে পছন্দের কথাটাও জানতে হবে।
ফরহাদ অসাধারণ কেউ না। খুবই সাধারণ একজন মানুষ। আর আসমানী নিজেও খুব সাধারণ একটা মেয়ে। সাধারণ পছন্দ করবে সাধারণ কে। এটাইতো নিয়ম।ফরহাদের আশে পাশে আসমানী যখন থাকে তখন তার নিজের বয়স খুব কম মনে হয়। মনে হয় সে বুঝি স্কুলের এইট নাইনে পড়া কোন মেয়ে। তখন তার নানান ধরনের ফাজলামী করতে ইচ্ছা করে।
যেমন দুজন হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তায় একটা আইসক্রীমওয়ালা দেখা গেল। আসমানী থমকে দাঁড়িয়ে বলবে, আইসক্রীম খাব। ললীপপ। আইসক্রীম কিনে দাও। ফরহাদ আইসক্রীম কিনবে। নিজের জন্যে না, শুধু তার জন্যে। আসমানী বাচ্চা মেয়েদের মত আইসক্রীম খেতে খেতে তার সঙ্গে হাঁটবে, আসমানীর এতটুকুও খারাপ লাগবে না।
কোথাও ম্যাজিক দেখাতে দেখাতে এক লোক স্বপ্নে পাওয়া বাতের ওষুধ বিক্রি করছে। তাকে ঘিরে অনেক লোকজন। আসমানী বলবে, এই শোন, ম্যাজিক দেখব। অথচ এ ধরনের কাজ আসমানী যখন একা থাকবে বা অন্য কারো সঙ্গে থাকবে তখন কখনো করবে না।মানুষটা যখন পাশে থাকে, তখন মনে হয় আসমানীকে কোন কিছু নিয়েই আর কখনো দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না। দুঃশ্চিন্তা করার সব দায় দায়িত্ব সঙ্গের মানুষটার, তার না।
তার একমাত্র কাজ হচ্ছে মানুষটার সঙ্গে থাকা। আসমানীর প্রায়ই মনে হয় সে তার বাকি জীবন শুধু এই মানুষটার পাশে পাশে হেঁটে পার করে দিতে পারবে। তার আর কিছু লাগবে না। আসমানী ঠিক করে রেখেছে একটা কাজ সে অবশ্যই করবে—মানুষটাকে রাতে ঘুম পাড়িয়ে সে তার মাথার কাছে চুপচাপ বসে থাকবে। তাকিয়ে থাকবে মানুষটার মুখের দিকে। এই কাজটা সে রাতের পর রাত করবে কিন্তু মানুষটাকে কখনো জানতে দেবে না।
আসমানীর ধারণা এই মানুষটার সঙ্গে তার দেখা হওয়াই হল তার জীবনের সবচে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটা ঘটে ১৮ই মার্চ সকাল এগারোটায়। আসমানী ঠিক করে রেখেছে ১৮ই মার্চ সে সারাজীবন পালন করবে। ম্যারেজ এ্যানিভার্সারী, জন্মদিন এইসব কিছু না। সে পালন করবে ১৮ই মার্চ, ২৬শে জিলক্বদ, চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস।
ঐ দিন সে ফরহাদকে অফিসে যেতে দেবে না। তার বাচ্চারা কেউ স্কুলে যাবে না। ঈদে যেমন নতুন কাপড় দেয়া হয় সে ঐ দিন সব বাচ্চাকে নতুন কাপড় দেবে। ফরহাদকে পাঞ্জাবী পায়জামা কেনে দেবে। ঘরে যে কাজের মেয়ে থাকবে সেও লাল রঙের শাড়ি পাবে। সে নিজেও সেদিন খুব সাজবে। ফরহাদ বলবে-আচ্ছা আসমানী ঘটনাটা কি?
আসমানী রহস্যময় হাসি হেসে বলবে, কোন ঘটনা নেই। সামান্য একটু সাজগোজও করতে পারব না? শুধু সুন্দরী মেয়েরা সাজবে আর আমার মত অসুন্দরী মেয়েরা সাজবে না এটা কেমন কথা? ফরহাদ ব্ৰিত ভঙ্গিতে বলবে, সবার নতুন জামা কাপড় এই জন্যে বলছি। আজ কি বিশেষ কোন দিন?
আজ বিশেষ দিন না, অবিশেষ দিন সেটা তোমাকে বলব না। দেখি তোমায় বুদ্ধি, তুমি নিজে নিজে বের করতে পার কিনা।আমার বুদ্ধি খুবই কম। তুমি বলে দাও।আমি কোনদিনও বলব না। তুমি বের করবে—এটা তোমার জন্যে একটা ধাঁধা। তবে সহজ ধাঁধার রহস্য বের করাই সবচেয়ে কঠিন। দেখি তুমি পারো কি-না।
একটু হিন্টস দাও।
হিন্টস দিচ্ছি—আজ হচ্ছে চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস।
সেটা আবার কি?
জিলক্বদ মাসের ২৬ তারিখ।
আসমানীর মাথা দপদপ করছে, চোখ জ্বালা করছে। রান্নাঘরে মা মনে হয় ভাজি জাতীয় কিছু চড়িয়েছেন তার তীব্র গন্ধ নাকে এসে লাগছে। তার নিশ্চয়ই জ্বর বাড়ছে—তার জ্বরের থার্মোমিটার হল গন্ধ থার্মোমিটার। আশে পাশের গন্ধগুলি কত তীব্র হচ্ছে তার থেকে বোঝা যায় তার জ্বর কত বেশি। জ্বর নিশ্চয়ই একশ দুই ছাড়িয়ে গেছে। কেউ এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে বোধ হয় ভাল লাগত। সবাই ব্যস্ত। কেউ এখন আসবে না।
আসমানীর কয়েকজন বান্ধবীর আসার কথা। তারা গায়ে হলুদে হৈ চৈ করবে। এদের একজন হল কণা—খুব আমুদে টাইপের মেয়ে। শুধু কণাকেই আসমানী টেলিফোনে তার বিয়ের কথা বলেছে। কণার উপরই দায়িত্ব আসমানীর অন্য বান্ধবীদের খবর দিয়ে আনা। কণা তার দায়িত্ব খুব ভালভাবে পালন করবে। হঠাৎ বিয়ের মজা থেকে কণা নিজেকে কিছুতেই বঞ্চিত করবে না।
কণা এসে যখন দেখবে যে আসমানী জ্বরে প্রায় অচেতন তখন নানান হৈ চৈ শুরু হবে। সেই হৈ চৈও হবে মজার। কণা এমন মেয়ে যে সব কিছুতেই মজা খুঁজে পায়। কেউ মারা গিয়েছে কণা খবর পেয়ে গেল আর মরা বাড়িতেই কোন না কোন মজা না করে ফিরল না তা কখনো হবে না।কাল দুপুরে সে যখন কণাকে টেলিফোন করে বলল, এই কণা তুই আগামীকাল সকালে আমার বাসায় আসতে পারবি?
কণা বলল, পারব।
রাত পর্যন্ত থাকতে হবে কিন্তু।
আচ্ছা থাকব।
কি জন্যে আসতে বলছি বলতো?
তোর বিয়ে এই জন্যে আসতে বলছিস।
কি করে বুঝলি আমার বিয়ে? গলার স্বর থেকে বুঝলাম। কোন মেয়ে যখন বিয়ের দাওয়াত দেয় তখন তার গলা অন্য রকম হয়ে যায়।অন্য রকম মানে কি?পুরুষ পুরুষ গলা। আর যখন কোন ছেলে তার বিয়ের কথা বলে তখন তার গলা হয়ে যায় মেয়েলী। সে চিকন স্বরে কথা বলে।তুই কি সত্যি সত্যি আমার গলা শুনেই বুঝে ফেলেছিস আমার বিয়ে? হুঁ। আল্লাহর কসম গলা শুনেই টের পেয়েছি। বিয়ে কার সঙ্গে হচ্ছে? ফরহাদ নামের ঐ ভদ্রলোকের সঙ্গে? হুঁ।খুব ভাল। হাতের পাঁচ স্বামী। হাতের পাঁচ স্বামী মানে?
হাতের পাঁচ স্বামী মানে এই স্বামী সব সময় হাতে থাকবে। হাত ছাড়া হবে। সব মিলিয়ে এই পৃথিবীতে ছয় রকম স্বামী আছেন মন দিয়ে শোন— হাতের শূন্য স্বামী, যে কখনো হাতে থাকবে না।হাতের এক স্বামী, হঠাৎ হঠাৎ হাতে থাকবে। বেশীর ভাগ সময় থাকবে না।
হাতের দুই স্বামী, হাতের একের চেয়ে একটু বেশী থাকবে।হাতের পাঁচ হচ্ছে সারাক্ষণ হাতে থাকা স্বামী। তুই হাত ঝেড়ে ফেললেও দেখবি সে যাচ্ছে না, তোর কড়ে আংগুল ধরে ঝুলে আছে।তোর মাথায় কি সব সময় এ রকম মজার মজার কথা থাকে? হ্যাঁ থাকে। কারণ আমি হচ্ছি খুবই মজাদার একটা মেয়ে। ফানী লেডি। আচ্ছা শোন তোর বিয়েটা কি খুব শুকনা টাইপ হচ্ছে? শুকনা টাইপ মানে?
শুকনা টাইপ মানে–ভেজা না। আগুন দিলে জ্বলবে না–শুধু ধোয়া বের হবে। যে সব বিয়ে হুট করে ঠিক হয় সে সব হয় শুকনা বিয়ে। এক টুকরা হলুদ মাথায় ঘষে আধ বালতি পানি দিয়ে গোসল। তারপরই কাজি সাহেবের পাঠানো খাতায় দুটা সিগনেচার। বিয়ে শেষ।
রাত আটটায় স্বামীর কোন এক বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে আনা মাইক্রোবাসে করে স্বামীর বাড়ি যাত্রা। রাত এগারোটার দিকে বাসর ঘর। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বিয়ের শাড়ি খুলে নগ্ন হয়ে যাওয়া।কণা চুপ কর প্লীজ।নগ্ন হবার কথা শুনে লজ্জা লাগছে! তাহলে বিয়ে করিস না।তোর পায়ে পড়ি প্লীজ এই লাইনের কথা বন্ধ কর।আমি বিয়ে করছি না কেন জানিস? রাত সাড়ে এগারোটার কথা ভেবে বিয়ে করছি না–কথায় আছে না—
টকের ভয়ে দেশ ছাড়লাম
তেতুল তলায় বাসা।
আমার হবে এই দশা। যে টকের ভয়ে সব ছাড়লাম দেখা যাবে আমার জীবন কাটবে টকের মধ্যে। শেষমেষ হয়ত একটা হাউস খুলে বসব। পুরুষরা আসবে, টাকা দেবে, আর আমি টাকা গুনতে গুনতে শাড়ি খুলব…… প্লীজ কণা প্লীজ।আচ্ছা যা এবারকার মত চুপ করলাম। আমি কাল ঠিক কাঁটায় কাঁটায় দশটার, মধ্যে চলে আসব। তুই কি তোর আর কোন বান্ধবীকে বলেছিস? না।
কাউকে বলার দরকার নেই। আমি দলবল নিয়ে উপস্থিত হব। বিয়েটা-কি তোর বাসাতেই হচ্ছে না-কি কোন কমিউনিটি সেন্টারে? আমাদের বাসাতেই। আমাদের এ্যাপার্টমেন্টে একটা হলরুম আছে সেখানে।মনে হয় অল্প খরচে সব ছেড়ে দিচ্ছিস।আমরা গরীব মানুষ না, বেশী খরচ করব এমন টাকা পয়সা কি আমাদের আছে? যাকে বিয়ে করছিস সেতো আরো গরীব।স্বামী গরীব হওয়া ভাল।কেন?
গরীব স্বামীরা অর্থের অভাব ভালবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিতে চেষ্টা করে।তোর চমৎকার কথাটা শুনে ভাল লাগল।তুই কথাটা যত চমৎকার ভাবছিস—তত চমৎকার কিন্তু না। এই ভালবাসা মনের ভালবাসা না, শরীরের ভালবাসা। এই ভালবাসা রাত সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু হয়ে…… প্লীজ কণা। প্লীজ।আচ্ছা যা তোকে এখনকার মত ক্ষমা করে দিলাম।
আসমানীর জ্বর কি আরো বাড়ছে? এখন কেমন যেন শরীর কাঁপছে। ম্যালেরিয়া নাতো? ম্যালেরিয়াতেই শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে। প্রতিবারই তার জ্বর শরীর কেঁপে আসূছে। ডাক্তারকে এই কথাটা কি বলা হয়েছে? ম্যালেরিয়ার জ্বরের রহস্য কে যেন বের করেন? রোনাল্ড রস। তিনি নোবেল পুরস্কার পান এই কারণে। আচ্ছা আলফ্রেড নোবেলের কি কখনো ম্যালেরিয়া হয়েছিল? রবীন্দ্রনাথ? রবীন্দ্রনাথের হয়েছিল?
মনে হয় হয়নি। তার ম্যালেরিয়া হলে এই বিষয়ে কোন না কোন গান থাকতো। আচ্ছা তিনি কি প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে কোন গান লিখেছিলেন? ঘোর লাগা মাথায় লেখা কোন গান? কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারলে ভাল হত।আসমানী প্রাণপণে চেষ্টা করছে গানের কথা না ভাবতে। জ্বরের মধ্যে কোন একটা গানের সুর মাথায় চলে গেলে ভয়াবহ সমস্যা হবে। সেই সুর মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকবে।
জাগ্রত অবস্থায় সেই গান বাজবে, ঘুমের মধ্যে বাজবে। প্রথমে বাজবে মাথায় তারপর সেই সুর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে।ভক করে আসমানীর নাকে সিগারেটের কড়া গন্ধ ঢুকে পড়ল। আসমানী চোখ মেলে দেখল বড় মামা তার পাশে বসে আছেন। তিনি কখন ঘরে ঢুকেছেন। কখন বসেছেন সে কিছুই বুঝতে পারেনি। আসমানী ক্লান্ত গলায় বলল, কটা বাজে মামা?
সাড়ে সাতটা।মাত্র সাড়ে সাতটা, আমি ভাবলাম দুপুর হয়ে গেছে।তোর জ্বরটা ভয়াবহ। মাথায় পানি ঢালতে হবে। বিয়ের দিনে কি অসুখ বাধালি বলতো।সেরে যাবে।খুব বেশী খারাপ লাগছে? না।তোর বাবাকে ডাক্তার আনতে পাঠিয়েছি। ডাক্তার এসে দেখুক।আচ্ছা।জ্বর কি রাতেই এসেছে?
জানি না মামা।তোদের এ্যাপার্টমেন্ট হাউসে বাথটাব থাকলে ভাল হত। বাথটাব ভর্তি করে পানি দিয়ে তোকে তার মধ্যে ছেড়ে দিতাম।বাথটাবের বাংলা কি মামা? বাথটাবের বাংলা মানে? বাথটাবের বাংলা দিয়ে তুই কি করবি? জানতে ইচ্ছা করছে।এত জিনিস থাকতে বাথটাবের বাংলা জানতে ইচ্ছে করছে কেন? তাওতো জানি না।আমার মনে হয় জ্বরটা তোর মাথায় উঠে যাচ্ছে। জ্বর একবার মাথায় উঠলে আবোল তাবোল চিন্তা আসে।
মামা! কি? তুমি কি সিগারেটটা ফেলে দেবে। সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি সিগারেটের গন্ধে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি।সিগারেটতো খাচ্ছি না।ও আচ্ছা। মামা কটা বাজে?
সাড়ে সাতটা।অনেকক্ষণ আগে একবার বললে সাড়ে সাতটা এখনো সাড়ে সাতটা? সাতটা সাইত্রিশ।এরমধ্যে মাত্র সাত মিনিট পরে হয়েছে? তুই চুপ করে থাকতো। দেখি আমি মাথায় পানি ঢালার ব্যবস্থা করছি। কোন কথা না। একেবারে চুপ। জ্বি আচ্ছা।চোখ বন্ধ করে রাখ তাকিয়ে থাকিস না। তোর লাল চোখ দেখে ভয় লাগছে।
Read more