তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম্য

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবনী

-বাংলার চিরায়ত কথাসাহিত্যের অবিস্মরণীয় এক কালজয়ী রূপকার ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় । পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামের বিশিষ্ট জমিদার পিতা হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা প্রভাবতী দেবীর বড় কাঙ্খিত সন্তান হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেন তারাশঙ্কর । মায়ের কাছ থেকে পাওয়া অগাধ ধর্মীয় বিশ্বাস ও বাবার নিকট থেকে প্রজাপালন সব বিষয়গুলো অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তাঁর সাহিত্যকর্মে তুলে ধরেছেন ।

  • বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন – ১৮৯৮ সালের ১৪ জুলাই বীরভূমের লাভপুর গ্রামে ।
  • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষাজীবন – যাদবলাল হাই স্কুল থেকে ১৯১৬ সালে প্রথম শ্রেণীতে এন্ট্রান্স পাশ ।
  • ছাত্র অবস্থায় তিনি যে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন – মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে ।
  • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস – চৈতালী ঘূর্ণি (১৯৩২ সালে প্রকাশিত) ।
  • তিনি যে যে সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন সংগ্রাম তাঁর লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন – সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল, কাহার প্রভূতি ।
  • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম ছোট গল্পের নাম – রসকলি ‘কল্লোল’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।
  • তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন – ১৯৭০ সালে ।
  • ‘আমার সাহিত্য জীবন’ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে শ্রেণির রচনা – আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ।
  • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যে উপন্যাসের মাধ্যমে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ইতিহাসকে শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন – ‘ধাত্রীদেবতা’ উপন্যাসের মাধ্যমে ।
  • ‘ধাত্রীদেবতা’ উপন্যাসটি বঙ্গশ্রী পত্রিকায় প্রকাশের সময় যে নামে ছাপা হয়েছিল – ‘জমিদারের মেয়ে’ নামে (১৯৩৪ সালে) ।
  • ‘শিবনাথ’ তাঁর যে উপন্যাসের প্রধান বিপ্লবী চরিত্র – ‘ধাত্রীদেবতা’ উপন্যাসের ।
  • রায়হাট গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত কালিন্দী নদীতে জেগে ওঠা নতুন চরের মালিকানা নিয়ে দুই জমিদার পরিবারের অন্তদ্বন্দ্ব তাঁর যে উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য ‘কালিন্দী’ উপন্যাসের ।
  • ‘কালিন্দী’ উপন্যাসে উল্লেখিত নতুন জেগে ওঠা চরটির নাম – স্বর্ণপ্রসবিনী ।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম্য

  • ‘সাঁওতাল’ সম্প্রদায়ের সংগ্রামী জীবন কাহিনীর পরিচয় পাওয়া যায় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের – ‘কালিন্দী’ উপন্যাসে (১৯৪০ সালে প্রকাশিত ) ।
  • তারাশঙ্কর তাঁর যে উপন্যাসে ভারতের গ্রামীণ সমাজে ক্ষয়িষ্ণু সামন্তবাদের সঙ্গে নব্যধনবাদের দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছেন – ‘গণদেবতা’ উপন্যাসে ।
  • অমিত প্রতাপ, হিরুপাল, হরিশ মন্ডল, দেবু ঘোষ চরিত্রগুলো তারাশঙ্কর এর যে উপন্যাসের –‘গণদেবতা’ উপন্যাসের ।
  • ‘ছিরুপাল, শ্রীহরি ঘোষ নাম গ্রহণ করে সমাজপতি হয়ে ওঠে, আগত নতুন সমাজে ধনশালী ব্যক্তিদের নিকট ধর্ম ব্যবসায়ীদের নতি স্বীকার প্রভূতি যে উপন্যাসের বিষয় – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পঞ্চগ্রাম’ উপন্যাসের ।
  • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ত্রয়ী উপন্যাস বলা হয় – ধাত্রীদেবতা (১৯৩৯), গণদেবতা (১৯৪২) এবং পঞ্চগ্রাম (১৯৪৩) উপন্যাস তিনটিকে ।
  • বাঁশবাঁদি গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত কোপাই নদীর তীরবর্তী ‘কাহার সম্প্রদায়ের’ সংগ্রামী জীবনচিত্র তারাশঙ্করের যে উপন্যাসে আলোচিত হয়েছে – হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসে (প্রকাশ-১৯৪৭) ।
  • খুব নিচু বংশের সন্তান নিতাই, অনেক চেষ্টা সাধনার ফলে একজন নামকরা কবিয়াল হয়ে ওঠে এবং নিজ বংশমর্যাদা বৃদ্ধি করে – প্রভূতি বিষয়গুলো যে উপন্যাসের ফুটে উঠেছে – তারাশঙ্করের ‘কবি’ উপন্যাসে ।
  • ‘রাজন ও নিতাইচরণ’ যে উপন্যাসের প্রধান চরিত্র – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাসের (১৯৪৪ সালে প্রকাশিত) ।
  • প্রাচীনবিদ্যার কবিরাজ ও নব্যশিক্ষিত আদর্শিক ডাক্তারের অন্র্তদ্বন্দ্ব তাঁর যে উপন্যাসে উল্লেখ আছে – ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসে ।
  • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসটির পূর্বনাম ছিল – ‘সঞ্জীবন ফার্মাসী’ ।
  • ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসটি যে পত্রিকায় প্রকাশিত হয় – ‘আনন্দবাজার পত্রিকায় (১৯৫২ সালে) ।
  • ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসের জন্য তিনি যে পুরস্কার লাভ করেন – রবীন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার ও সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার ।
  • ইতিহাসকে অতিক্রম করে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, ধর্মবোধ, পার্থিব প্রত্যাশাসমূহ ‍উপজীব্য করা হয়েছে যে উপন্যাসে – তারাশঙ্করের ‘রাধা’ উপন্যাসে (১৯৫৮ সালে প্রকাশিত) ।
  • ১৯৬৫ সালের পর থেকে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত সমগ্র পশ্চিম বাংলায় বিস্তৃত গোপন রাজনৈতিক তৎপরতাকে উপজীব্য করে তারাশঙ্কর যে উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন – ‘সুতপার পস্যা’ উপন্যাসটি ।
  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিষয়বস্তুকে অবলম্বন করে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যে উপন্যাসটি রচনা করেছেন – ‘একটি কালো মেয়ের কথা’ (১৯৭১ সালে প্রকাশিত) ।
  • তৎকালীন হিন্দু সমাজের আচার-অনুষ্ঠান, সমাজ-সংস্কৃতি, শিক্ষা-রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়গুলো তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে উপন্যাসে ফুটে উঠেছে – ‘কবি’ ‍উপন্যাসে ।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম্য

  • রৌশন এক অবাঙালি নারী চরিত্র যার মাধ্যমে নগর কেন্দ্রিক জীবন যাপনের নানা বিষয় ফুটে উঠেছে – ‘যতিভঙ্গ’ উপন্যাসে (১৯৬২ সালে প্রকাশিত) ।
  • ট্যাকসি ড্রাইভারদের জীবনকাহিনী নিয়ে রচিত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অভিযান’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – ১৯৬৪ সালে ।
  • ‘জলসাঘর’ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন শ্রেণীর সাহিত্যকর্ম – গল্প সংকলন (১১টি গল্পের সংকলন -১৯৩৭ সালে প্রকাশিত) ।
  • ‘অগ্রদানী’ গল্পের লেখক – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৩৪৩ বঙ্গাব্দে প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়) ।
  • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে যে রচনা অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে – অগ্রদানী, আগুন, আরোগ্য নিকেতন, কবি, কান্না, কালিন্দী, গণদেবতা, চাঁপাডাঙ্গার বউ, ধাত্রীদেবতা, সপ্তপদী, হার না মানা হার, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা প্রভূতি ।

Tarasankar Bandopadhyay -তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম্য

  • তাঁর অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে – নিশিপদ্ম (১৯৬২), ব্যর্থ নায়িকা, বিচারক (১৯৫৭), কালবৈশাখী (১৯৬৩), রাধারানী, কালরাত্রি, ভুবনপুরের হাট, কালান্তর, দুই পুরুষ, হীরাপান্না, ছায়াপথ, প্রভূতি ।
  • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে – বেদেনী, পাষাণপুরী, নীলকন্ঠ, ছলনাময়ী প্রভূতি ।
  • তাঁর বিশেষ কয়েকটি উক্তি – “এই খেদ মোর মনে, ভালবেসে মিটল না আশা কুলাল না এ জীননে । হায়! জীবন এত ছোট ক্যানে?  এ ভুবনে?” (কবি উপন্যাসের – নিতাইয়ের উক্তি)। “কালো কেশে রাঙা কুসুম হেরেছ কি নয়নে? (কবি উপন্যাসে) ।   “সংসারে যে সহ্য করে সেই মহাশয় । ক্ষমার সমান ধর্ম কোন ধর্ম নয়।” (কবি উপন্যাস) ।   “সাপকে এড়িয়ে পথ চলা যায়, কিন্তু পাপকে এড়িয়ে পধ চলা যায় না।” (রাইকমল উপন্যাসের রাইকমলের উক্তি) ।    “বাউল বল, দেবতা বল, সবার ভিতর দিয়ে তোমাকেই চেয়ে এসেছি্ এতোদিন”। (রাইকমল উপন্যাস) ।
  • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যে যে সাহিত্য উপাধি লাভ করেন – পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ ।
  • তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা – উপন্যাস ৬৫টি, গল্পের বই ৫৩টি, প্রবন্ধ ৪টি, আত্মজীবনী ৪টি, নাটক ১২টি, ভ্রমণকাহিনী ২টি প্রভূতি ।
  • বাংলা সাহি্ত্যের কালজয়ী বীলভূমের এই খ্যাতিসম্পন্ন ঔপন্যাসিক মৃত্যুবরণ করেন – ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ।

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম্য

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *