তোমাদের এই নগরে পর্ব:০২ হুমায়ূন আহমেদ

তোমাদের এই নগরে পর্ব:০২

মৃত্যুও হয়েছে বৈশাখী পূর্ণিমায়। শালবনে। তবে লুম্বিনীর শালবনে না।– কুশিনারার শালবনে। মহাপুরুষদের জন্ম মৃত্যু একই দিনে হয়। ভাই সাহেব উঠি অনেক বিরক্ত করলাম। কিছু মনে করবেন না। জানি আপনি কিছু মনে করেন। নাই। মনে করলে আমার এত কথা শুনতেন না। অনেক আগেই আমাকে গেট আউট করে দিতেন। আপনি সেটা করেন নাই।

সিগারেটের প্যাকেট আগায়ে দিয়েছেন। জাপানি একটা প্ৰবাদ আছে– একটা আন্তরিক কথা দিয়ে তিনটা শীতকাল উষ্ণ করা যায়। আপনার সঙ্গে কথা বলে জাপানি প্রবাদটার কথা মনে পড়ল। ছাত্রজীবনে আমার প্রবাদ সংগ্রহের বাতিক ছিল। প্রবাদ, প্ৰবচন লিখে তিনশ পৃষ্ঠার একটা খাতা ভরতি করেছিলাম। বাসার লোকজন ভুলক্রমে পুরোনো খবরের কাগজের সঙ্গে খাতাটা বিক্রি করে ফেলে। জীবনে এত দুঃখ পাই নাই। ভাইসাব যাই?

আমি বললাম, আচ্ছা যান।ভদ্রলোক দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে বললেন, আপনার ঘুম ভাঙায়েছি। যদি অনুমতি দেন তা হলে ঘুম পাড়ায়ে দিয়ে যাই।কীভাবে ঘুম পাড়াবেন? মাথা বানিয়ে দিব। চুল টেনে দিব। নাপিতের কাছ থেকে শিখেছি। নাপিতের নাম নেক মর্দ। নাম শুনে মনে হয় হিন্দু। আসলে মুসলমান; অতি ভালো মানুষ। আমাকে যত্ন করে শিখিয়েছেন।কী শিখিয়েছেন? মাথা বানানোর কৌশল?

উনার কাছে চুল কাটাও শিখেছি। ভবিষ্যতে চুল কাটার প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন। আমার কাছে কাচি চিরুনি সবই আছে।জি বলব।এখন যদি অনুমতি দেন, মাথা বানায়ে দেই। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘুম পাড়ায়ে দিব ইনশাল্লাহ; মাথার নিচে দুটা বালিশ দিয়ে শুয়ে পড়েন।আমি আপত্তি করলাম না। মাথার নিচে দুই বালিশ দিয়ে শুয়ে পড়লাম। শুরু হয়ে গেল মাথা মালিশ। জয়নাল সাহেব আগ্রহ নিয়ে বললেন, ভাই সাহেব কেমন লািগছে?

আমি বললাম, ভালো।শরীর ছেড়ে দেন; যত ছাড়বেন তত আরাম পাবেন।আমি শরীর ছেড়ে দিলাম। জয়নাল সাহেব ফিসফিস করে বললেন, আমি কী কথা বলছি, না বলছি মন দিয়ে শোনার কোনো দরকার নাই। এক কান দিয়ে ঢুকাবেন আরেক কান দিয়ে বের করে দেবেন।আমি বললাম, আচ্ছা।সবচে আরামের মালিশ হল চোখ মালিশ। এটা দিব সবার শেষে। তখন ঘুম চলে আসবে। আরাম লাগছে না ভাই সাহেব?

লাগছে।শরীরের আরামকে অনেকে খুব খারাপ চোখে দেখে। এটা ঠিক না। শরীর হল আত্মার ঘর। ঘর আরাম পেলে আত্মা আরাম পাবে ঠিক না ভাই?

হ্যাঁ ঠিক।

মেসের সবার কি ধারণা জানেন?

না জানি না।

মেসের সবার ধারণা আপনার পাওয়ার আছে।

কী আছে?

পাওয়ার আছে।

পাওয়ার আছে মানে কী?

কিছু কিছু মানুষকে আল্লাপাকে পাওয়ার দিয়ে পাঠান। তারা যা ইচ্ছা করে তাই হয়।

আপনার ধারণা আমার পাওয়ার আছে?

আমার কোনো ধারণা না–লোকজন বলে।

আপনি বিশ্বাস করেন না?

আমি বিশ্বাসও করি না, আবার অবিশ্বাসও করি না। আল্লাহ। কখন কাকে কী দেন। বলা মুশকিল। কে জানে হয়তো আপনাকে দিয়েছে। এমন তো না যে আপনাকে কিছু দিলে আল্লাহর টান পড়ে যাবে। উনার হল অফুরন্ত ভাণ্ডার।আল্লাহ আমাকে কিছুই দেন নাই। তবে এখন আপনার মাধ্যমে আরাম দিচ্ছেন। খুবই আরাম পাচ্ছি। মাথা মালিশটাকে তো আপনি একেবারে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। চোখের কাজটা কখন শুরু করবেন?

দেরি আছে। কপাল ম্যাসাজ হবে, তারপরে ভুরু— তারপরে চোেখ। ঘুম পাচ্ছে না? হ্যাঁ পাচ্ছে। খুবই ঘুম পাচ্ছে! কষ্ট করে জেগে আছি।কষ্ট করে জেগে আছেন কেন? ঘুমিয়ে পড়লে তো আর আরামটা পাব না। যতক্ষণ জেগে থাকব ততক্ষণই আরাম। যে নাপিতের কাছ থেকে এই কাজ শিখেছেন তার নামটা যেন কী?

নেকমর্দ।

বেঁচে আছেন এখনো?

জি না। উনার ইস্তেকাল হয়েছে।

কবর হয়েছে কোথায়?

চাঁদপুরে।

মাজার জিয়ারত করতে যান না?

জি না।

যাওয়া দরকার। এবং কবর বাঁধানোর ব্যবস্থা করাও দরকার। শ্বেত পাথরে লেখা থাকবে–

মহান মাথা মালিশ শিল্পী

নেকমর্দ

বুঝতে পারছি আমার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। ঘুম চলে আসছে। ওস্তাদ নেকমর্দের যোগ্য উত্তরসূরি তাঁর চোখের কাজ শুরু করেছেন। মনে হচ্ছে চোখের পাতার উপর দিয়ে ভেজা পায়ে পিঁপড়া হেঁটে যাচ্ছে। পিঁপড়াদের মধ্যে দু-একটা আবার দুষ্ট প্রকৃতির। এরা পথ চলতে চলতে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে কুটুস করে কামড় দিচ্ছে। সেই কামড়েরও আরাম। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়– সুখের মতো ব্যথা। মূল কবিতাটা মনে করার চেষ্টা করছি। ঘুমে মাথা এলোমেলো হয়ে আসছে – ভালো মনে আসছে না–

কমল ফুল বিমল সেজখানি

নিলীন তাহে কোমল তনুলতা

মুখের পানে চাহিনু অনিমেষে

বাজিল বুকে সুখের মত ব্যথা।

হিমু। এই হিমু।

মাথা থেকে কবিতা উধাও হয়ে গেল— হঠাৎ মনে হল জয়নাল সাহেব আমার চোখের পাতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন না, হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আমার বাবা। তাঁর গায়ের গন্ধ পর্যন্ত পাচ্ছি। অর্থাৎ আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। গভীর ঘুম। অবচেতন মনের যে অংশে বাবা ঘাপটি মেরে বসে ছিলেন। সেই অংশ থেকে তিনি উঠে এসেছেন। কিছু কঠিন কঠিন কথা তিনি এখন শুনাবেন।

হিমু!

জি।

বেহায়ার মতো মাথা পেতে শুয়ে আছিস তোর লজা লাগছে না। ছোটলোকদের মতো মাথা মালিশ করাচ্ছিস? লজ্জা লাগার কী আছে? শরীর আরাম পাচ্ছে। শরীরে বাস করছে আত্মা। কাজেই আত্মাও আরাম পাচ্ছে।ফাজলামি করছিস? তোকে এত দিন কী শিখিয়েছি? যা শিখিয়েছি। সব ভুল মেরে বসে আছিস?

বাবা ঘুমুতে দাও। আরাম করে ঘুমুচ্ছি।

গৌতম বুদ্ধ কোথায় জন্মেছিলেন?

লুম্বিনীর শালবনে।

হয়েছে। গৌতম বুদ্ধের অনেক বাণী তোকে শিখিয়েছিলাম। মনে আছে?

না।

সব ভুল মেরে বসে আছিস?

বসে নেই বাবা শুয়ে আছি।

আমার সঙ্গে আবৃত্তি কর–

আত্তাহি অওনো নাথো

কোহি নাথো পারসিয়া।

আমি বিড়বিড় করে আবৃত্তি করলাম। বাবা বললেন– এর অর্থটা বলে দেই— নিজের প্রদীপ নিজেকেই জ্বালাতে হবে।আমি বললাম, হুঁ।বাবা বললেন, কিছু না বুঝেই বলে ফেললি হুঁ।না বোঝার তো কিছু নেই। নিজের প্রদীপ নিজেকেই জ্বালাতে হবে এটা তো সহজ কথা।মোটেই সহজ কথা মা— অতি জটিল কথা। প্ৰদীপ থাকলেই হয় না। প্রদীপে তেল থাকতে হয়। প্ৰদীপ জ্বালানোর জন্যে ম্যাচের কাঠি থাকতে হয়। বুঝতে পারছিস?

হুঁ। বাবা দয়া করে তুমি যাও। আমাকে কিছুক্ষণ আরাম করে ঘুমুতে দাও। খুব ভোরে আমাকে উঠতে হবে।কেন? ফরিদা খালার বাসায় যেতে হবে? উনি জরুরি খবর পাঠিয়েছেন।বাবা দুঃখিত গলায় বললেন, ব্যাটা তুই তো সংসারে জড়িয়ে পড়ছিস। তোকে জরুরি কাজে ডেকে পাঠাচ্ছে। তোর আবার কিসের জরুরি কাজ? খবৰ্দার তুই যাবি না।

আচ্ছা যাও যাব না।তোর ফরিদা খালা ঘোর সংসারী মানুষ। তার কাছ থেকে এক শ হাত দূরে থাকবি।আচ্ছা।এক শ হাত না, তারচেয়েও বেশি। পাঁচ শ হাত দূরে থাকবি।আচ্ছা এখন তুমি যাও।বাবার আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।আমি তলিয়ে যাচ্ছি গাঢ় গভীর ঘুমে।ফরিদা খালা কখনোই আমাকে ধমক না দিয়ে কথা শুরু করতে পারেন না। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। বাড়ির পুরোনো ড্রাইভার দুদিনের কথা বলে পনেরো দিন পর ফিরে এলে তার দিকে যে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা হয় সেই দৃষ্টি। তারপর শুরু হয় ধমক।

প্ৰথমেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তারপর বলেন— আমার মতো অপদাৰ্থ, অকর্মণ্য মানুষ তিনি তাঁর জীবনে দেখেন নি। আমি এখনো কেন বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু থেকে লাফ দিয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়ছি না তা জানতে চান। তারপর এক সময় তার রাগী রাগী মুখ হাসি হাসি হয়ে যায়। তিনি বলেন— রামছাগলের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়ছিস কী জন্যে?

বোস। কী খাবি চা না। সরবত। বরফ দিয়ে লেবুর এক গ্লাস সরবত খা। কিছু ভিটামিন সি শরীরে যাক। চা খেয়ে খেয়ে শরীরের কি অবস্থা করেছিস খেয়াল আছে? আয়নায় নিজেকে কখনো দেখিস? দেখলে তো ওয়াক থু করে বমি করে আয়না নষ্ট করে ফেলতি। ঝামা দিয়ে ঘসে তোকে একদিন গোসল করাতে পারলে আমার মনটা শান্ত হত। তারপর বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বলেন–ওই মরজিনা, মরজিনা হিমুকে লেবুর সরবত বানিয়ে দে।

মরজিনা এ বাড়ির কাজের মেয়ে অনেকদিন থেকে আছে! খালা কথায় কথায় বলেন এই বাড়িতে মরজিনার নাম যতবার নেওয়া হয় আল্লাহ্‌র নামও ততবার নেওয়া হয় না।খালা যখন মরজিনাকে ডাকাডাকি শুরু করেন তখন বুঝতে হবে তার রাগ পড়ে গেছে। এই পর্যায়ে আসতে মাঝে মাঝে অল্প সময় লাগে আবার মাঝে মাঝে দীর্ঘ সময় লাগে। আজ যেমন লাগছে। খালার রাগ বাড়ছেই। তার গালাগালির মধ্যে আজ নতুন নতুন জিনিস যুক্ত হচ্ছে।

তুই বদ্ধ উন্মাদ এটা কি তুই জানিসা? উন্মাদদের গা থেকে রো বের হয়। এই রো-এর আশপাশে যারা থাকে তারাও উন্মাদ হয়। তোর গা থেকে যে রের বের হয় এটা তুই জানিস? যে কোনো সুস্থ মানুষ তোর সঙ্গে এক সপ্তাহ থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। কেউ যদি গলা টিপে তোকে মেরে ফেলে তা হলে তার বেহেশতে নাসিব হবে এটা কি তুই জানিস?

খালা চিৎকার করেই যাচ্ছেন— আমি যথারীতি দাঁড়িয়ে আছি। লেবুর সরবত প্ৰসঙ্গ কখন আসে তার জন্যে অপেক্ষা করছি। আর লক্ষ করছি আঠারো উনিশ বছরের একটা অপরিচিত মেয়ে খুবই কৌতূহলী হয়ে পাশের ঘর থেকে মুখ বের করে আমাকে দেখছে এবং খালাকে দেখছে। চোখে চোখ পড়া মাত্র  চট করে মাথা সরিয়ে নিচ্ছে। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খালার ব্যাপারে লজ্জায় মরে যাচ্ছে। একবার সে খালায় দিকে তাকিয়ে করুণ গলায় বলল— প্লিজ প্লিজ।

খালা তার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললেন— আমাদের কথার মধ্যে নাকগলাবে না। প্লিজ প্লিজ বলবে না। তুমি তোমার মতো থাক।তারপর আবারো হেভি মেশিনগান চালু করলেন– কত লোক ট্রাকের নিচে থৈ পড়ে মারা যায়— তুই কেন মারা যাচ্ছিন্স না? তুই তো রাস্তাতেই থাকিস। কোনো ট্রাক তোকে ধাক্কা দিয়েছে এই খবরটা শুনলেই আমি দশটা ফকির খাওয়াতাম। ফকির আমার খবর দেওয়াই আছে। আসবে। আর খিচুড়ি খেয়ে চলে যাবে।

বলতে বলতে খালা বাথরুমে ঢুকলেন। তার মাথায় নিশ্চয় রূক্ত উঠে গেছে। মাথায় পানি ঢালা হবে।অপরিচিত মেয়েটা এই সুযোগে ঘরে থেকে দ্রুত বের হয়ে এসে ফিস ফিস করে বলল— আন্টিয় অতি নিম্নমানের আচরণবিধিয় জন্যে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এবং দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার ধারণা তিনি কিঞ্চিৎ অসুস্থ। হাইপার টেনশনঘটিত ব্যাধির রোগীরা এরকম আচরণবিধি করে।

মেয়েটার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে— এই দেশের মেয়ে হলেও দেশের শ্ৰী সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। বড় হয়েছে বিদেশে। আচরণবিধি পত্রিকার ভাষা। বাংলাদেশের কোনো মেয়ে কথোপকথনে আচরণবিধি বলবে না। আমরা ঔ বিদেশীদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলার সময় যেমন একটু ভয়ে ভয়ে থাকি ই ইংরেজিটা ঠিক হল কি না, মনে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে তিনিই এই মেয়েও তাই করেছে।

সে প্রথমে কথাগুলি ইংরেজিতে গুছিয়ে নিয়ে পরে বাংলায় অনুবাদ করছে। বাক্যগুলি দ্রুত বলছে না। থেমে থেমে ভেঙে ভেঙে বলছে।বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটির চেহারা এবং পোশাকআশাক দেখে মনে হচ্ছে মফস্বলের মেয়ে বাবার সঙ্গে চাঁদপুর থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসেছে। চিড়িয়াখানা দেখবে, আহসান মঞ্জিল দেখবে। বাড়ি ফেরার আগে আগে শাড়ি কিনবে, ডালা থেকে স্যান্ডেল। কিনবে।

মেয়ের বাবা স্টুডিওতে মেয়ের কিছু ছবিও তুলবেন। বিয়ের সময় এইসব ছবি কাজে লাগবে। বরপক্ষকে এইসব ছবি পাঠানো হবে। এমন শান্ত এবং কোমল চেহারার মেয়ে আমি অনেকদিন দেখি নি। এ ধরনের মেয়েদের একটা নাম আছে— অশ্রুকন্যা। এদের চোখে সব সময় জল ছলছল করে। তবে এরা প্ৰায় কখনোই কঁদে না কিন্তু এদের দেখেই মনে হয়। এরা কাদার জন্যে প্রস্তুত হয়ে আছে।

 

Read more

তোমাদের এই নগরে পর্ব:০৩ হুমায়ূন আহমেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *