দেবী উপন্যাস -পর্ব-(২৩)-হুমায়ুন আহমেদ

জিতু ফিরে এসে জানাল, এখনও আসে নিরানু একটি নিঃশ্বাস ফেলে ঘড়ি দেখল, আটটা বাজতে চার মিনিট বাকিকখন আসবে আনিস

সারাটা পথ নীলু চুপ করে রইলএক বার সে বলল, কী ব্যাপার, এত চুপচাপ যে?নীলু তারও জবাব দিল নাতার কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে নাসে আছে একটা ঘােরের মধ্যে দেবী

গান শুনবে? গান দেব?নীলু মাথা নাড়লসেটা হাঁ কি না, তাও স্পষ্ট হলাে না। 

কী গান শুনবে? কান্ট্রি মিউজিক? কান্ট্রি মিউজিকে কার গান তােমার পছন্দ? নীলু জবাব দিল না । 

আমার ফেবারিট হচ্ছে জন ডেনভার জন ডেনভারের রকি মাউন্টেন হাই গানটা শুনেছ?” 

খুব সুন্দর! অপূর্ব মেলােডি

সে ক্যাসেট টিপে দিতেই জন ডেনবারের অপূর্ব কণ্ঠ শােনা গেল, ক্যালিফোর্নিয়া রকি মাউন্টেন হাই। 

কেমন লাগছে নীলু?” 

ভালােশুধু ভালাে নাবেশ ভালাে। 

সেও জন ডেনভারের সঙ্গে গুনগুন করতে লাগল নীলুর মনে হলাে ওর গানের গলাও তাে চমৎকার! একবার ইচ্ছে হলাে জিজ্ঞেস করে গান জানেন কি 

, কিন্তু সে কিছু জিজ্ঞেস করল নাতার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে নাগাড়ি কোন দিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছে তাও সে লক্ষ্য করছে নাএক বার শুধু ট্রাফিক সিগনালে গাড়ি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল এক জন ভিখিরি এসে ভিক্ষা চাইলসে ধমকে উঠল কড়া গলায়তারপর আবার গাড়ি চললনীলু ফিসফিস করে  বলল, কটা বাজে?” 

সাতটা পঁয়ত্রিশতােমাকে আটটার আগেই পৌছে দেবআপনার বাড়ি মনে হয় অনেক দূর?” 

শহর থেকে একটু দূরে বাড়ি করেছিকোলাহল ভালাে লাগে না ফার ফ্রম দি ম্যাডিং ক্রাউড কার লেখা জান?” 

নাহ। 

টমাস হার্ডিরপড়ে দেখবে, চমক্কার! অথচ ট্রাজেডি হচ্ছে, টমাস হার্ডিকেই নােবেল পুরস্কার দেয়া হয় নিতুমি তার কোনাে বই পড়েছ?” 

পড়ে দেখবেখুব রােমান্টিক ধরনের রাইটিং‘ 

গাড়ি ছুটে চলেছে মীরপুর রােড ধরেহঠাৎ নীলু বলল, আমার ভালাে লাগছে না‘ 

কী বললে?আমার ভালাে লাগছে না, আমি বাসায় যাব‘ 

সে তাকাল নীলুর দিকেএকটি হাত বাড়িয়ে ক্যাসেটের ভলুম বাড়িয়ে দিল গাড়ির গতি কমল না । 

আমি বাসায় যাবআটটার সময় আমি তােমাকে বাসায় পৌছে দেব‘ 

না, আজ আমি কোথাও যাব নাপ্লীজ গাড়িটা থামান, আমি নেমে পড়বকেন?আমার ভালাে লাগছে নাপ্লীজ। 

সে তাকাল নীলুর দিকেনীলু শিউরে উঠলকেমন চাউনি! যেন মানুষ নয়, অন্য কিছু। 

প্লীজ, গাড়িটা একটু থামান। 

কোনাে রকম ঝামেলা নাকরে চুপচাপ বসে থাককোনাে রকম শব্দ করবে না‘ 

আপনি এ রকম করে কথা বলছেন কেন?‘ 

গাড়ির গতি ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছেঝড়ের গতিতে পাশ দিয়ে দুটো ট্রাক গেললােকটি তার একটি হাত রাখল নীলুর উরুতেনীলু শিউরে উঠে দরজার দিকে সরে গেললােকটি হাসলকেমন হাসি

গাড়ি থামানআমি চিৎকার করবকেউ এখন তােমার চিঙ্কার শুনবে না‘ 

আপনি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন? আমি ভয় দেখাচ্ছি নাআমি আপনাকে বিশ্বাস করে গাড়িতে উঠেছিআরাে কিছুক্ষণ থাকবেশিক্ষণ নয়, এসে পড়েছি বলে। 

কী করবেন আপনি? তেমন কিছু না। 

নীলু এক হাতে দরজা খুলতে চেষ্টা করললােকটি তাকিয়ে দেখল, কিন্তু বাধা দিল নাদরজা খােলা গেল নানীলু প্রাণপণে বলতে চেষ্টা করল, আমাকে বাঁচাও, কিন্তু বলতে পারল নাপ্রচুর ঘামতে লাগল প্রচণ্ড তৃষ্ণা বােধ হলাে। 

আনিস এল রাত সাড়ে আটটায়ঘর অন্ধকারকারাে কোনাে সাড়াশব্দ নেইরানু বাতিটাতি নিভিয়ে অন্ধকারে বসে আছেজিতু মিয়া মশারি খাটিয়ে শুয়ে পড়েছে। 

রানু, কী হয়েছে?রানু ফোঁপাতেফোঁপাতে বলল, তুমি এত দেরি করলেকেন, কী হয়েছে? নীলুর বড় বিপদ। 

আনিস কিছু বুঝতে পারল নাঅবাক হয়ে তাকাল রানু থেমেথেমে বলল, নীলুর খুব বিপদ। 

কিসের বিপদ? কী বলছ তুমি?রানুর কথা জড়িয়ে যাচ্ছেসে গুছিয়ে কিছু বলতে পারছে নারানু, তুমি শান্ত হয়ে বসতারপর ধীরেসুস্থে বলকী হয়েছে নীলুর?একজন খারাপ লােকের পাল্লায় পড়েছেলােকটা ওকে মেরে ফেলবে। 

রানু ফেঁাপাতে লাগলআনিস কিছুই বুঝতে পারল না

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *