পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৭)-হুমায়ুন আহমেদ

 টেলিফোন আছে, টিভি, ভিসিআর সবই আছেরূপার বাবা মেয়ের যা লাগে সব দিয়ে রেখেছেন। 

এটা তাহলে রূপাদের বাড়ি না ?আরে নাএটা রূপার এক চাচার বাড়িপাখি আমার একলা পাখিতাদের নিজেদের বাড়ি নেই?” 

আছেসেই বাড়ি সারা বছর তালাবন্ধ থাকেরূপার বাবা এক বছরে এগার মাস থাকে বাইরেএকটা মেয়ে তাে আর একা একা থাকতে পারে না। 

এগার মাস বাইরে কি করে ? ব্যবসট্যাবসা করে বােধহয়বাবার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কও ভাল নাঅবশ্যি আমার আন্দাজআমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি। 

অন্য একটা ছেলে এসে একতলার একটা রুম খুলে দিলসফিকের কথাই সত্যিগা ছমছমানাে ড্রয়িং রুমসেখানের সাজসজ্জা এমন যে কিছুতেই পাঁচ দশ মিনিটের বেশি বসা সম্ভব নাপুরাে দেয়ালজুড়ে অনেক পেইনটিং সবই বিদেশি 

ল্যাণ্ডস্কেপচেরী গাছ, সামার হাউস, স্নো ফল, .

সফিক বলল, ছবিগুলি দেখছিস

ভাল করে দেখে রাখ, পরে এই সম্পর্কে বলবমনে করিয়ে দিসআজকাল কিছু মনে থাকে নাপ্রায়ই ব্রেইন শর্ট সার্কিট হয়ে যায়

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৭)-হুমায়ুন আহমেদ

আমরা বসে আছিসফিক নিচু গলায় বলল রূপা যদি সত্যি সত্যি নেমে আসে, তাহলে ট্যারা হয়ে যাবিআই ডিফেক্ট হয়ে যাবে। এরকম মেয়ে চোখে দেখতে পাওয়াও বড় ধরনের অভিজ্ঞতাতবে নেমে আসে কিনা সেটাও একটা কথামাঝে মাঝে মেজাজ খারাপ থাকেতখন দোতলা থেকে নামে না। 

আমি বললাম, এতাে বিরাট অপমানের ব্যাপার

সফিক বলল, দূর দূর, অপমানের কিছু নারূপার স্বভাবই এরকমপরিচয় হলেই তুই বুঝবি। 

যখন দেখা করে না, তখন কি করিস?| চাটা খেয়ে চলে যাইকি আর করবরূপার একটা ভাল গুণ কি জানিস? কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে এলেই চা দিতে বলেদেখা করুক আর না করুকচায়ের সঙ্গে সমুচা থাকেঅপূর্ব! রবীন্দ্রনাথের ছােটগল্পের মতােশেষ হয়েও শেষ হয় না, জিভে স্বাদ লেগে থাকে। 

মেয়েটা দেখা করে নাতারপরেও তুই এখানে আসিস ? এত সুন্দর মেয়ে, খানিকক্ষণ কথা বললে মনটা ভাল হয়ে যায়তাই আসিএখানে এলে লেখার একটা ইন্সপিরেশন হয়লেখকদের জন্যে ইন্সপিরিশন খুব দরকারইন্সপিরিশনের জন্যে একজন লেখক যা ইচ্ছা করতে পারেহট হজ এ্যালাউড

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৭)-হুমায়ুন আহমেদ

রূপা নামল নাতবে একজন কাজের ছেলে ট্রেতে করে চা এবং সমুচা নিয়ে এলসফিক বলল, তােকে বলেছিলাম না চা চলে আসবেঅবশ্যি এটা খারাপ সাইনতার মানে রূপা নামবে নাচা খাচা খেয়ে চলে যাবএই সমুচাগুলি বাড়ির স্পেশালভেরি ভেরি গুডখেয়ে দেখ। 

চা শেষ করবার আগেই রূপা নেমে এলআমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলামজীবনে এত অবাক হইনিমানুষ এত সুন্দর হয় ! সফিক নিচু গলায় বলল, বলেছিলাম না ট্যারা হয়ে যাবি ? এইভাবে তাকিয়ে থাকিস না, চোখে লাগছেখুব ক্যাজুয়েলি তাকিয়ে থাকযেন কিছুই না। 

রূপা সফিকের দিকে তাকিয়ে বলল, কোনাে কাজে এসেছেন, না চা সমুচাখাবার জন্যে এসেছেন

কাজে এসেছি। 

বলে ফেলুনআমি খুব বেশিক্ষণ সময় দিতে পারব নাসফিক নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, আমি আমার এই বন্ধুকে বলেছিলামএমন একজন মেয়ের কাছে তাকে নিয়ে যাব যাকে দেখলেই তার চোখ ট্যারা হয়ে যাবেরূপা আমার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, আপনার চোখ কি ট্যারা হয়েছে ? ১১আমি কিছু বললাম নাতাকিয়ে রইলাম

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৭)-হুমায়ুন আহমেদ

মেয়েটি সফিকের কথায় মােটেও বিব্রত বােধ করছে নাআমার দিকে তাকিয়ে আছে অসঙ্কোচেসে আমার দিকে তাকিয়ে হালকা গলায় বলল, আচ্ছা আপনি কি কবি

আমি বললাম, নাবাঁচালেনকবি হলে খানিকটা সমস্যা হত। 

বলেই সে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলআগ্রহের কারণ, সে অপেক্ষা করছে আমি জিজ্ঞেস করবকি সমস্যা? আমি তা করলাম নারূপা বলল, কি সমস্যা জানেন? কবি হলেই পরের দিন আপনি আবার আসতেন, পকেটে থাকত কবিতাসেই কবিতা আমাকে নিয়ে লেখাআমাকে শান্তমুখে সেই কবিতা শুনতে হতএবং আবেগজর্জরিত কবিকে সমুচা খাওয়াতে হতআপনি কি সমুচা খেয়েছেন

কেমন লাগল?is 

আমি জবাব দিলাম নারূপা বলল, সফিক সাহেবের মতে সমুচাগুলি রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের মতােআমি রবীন্দ্রনাথের ছােটগল্প পড়িনি, কাজেই বলতে পারছি না ব্যাপারটা কি? আপনি কি পড়েছেন

একটা পড়েছিশুধুই একটা ?হুঁ, হৈমন্তীপাঠ্য ছিল। 

সফিক সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, মজার ব্যাপার কি জান? হৈমন্তী গল্পটা রঞ্জুর মুখস্থদাড়ি সেমিকোলনসহ। 

হ্যা, সত্যিতার যখন কিছু পছন্দ হয় সে মুখস্থ করে ফেলেসে রবীন্দ্রনাথের একটা গল্প পড়েছে, কিন্তু সেটা তার মুখস্থ। 

আমার বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যি

আমি জবাব দিলাম নাসফিককে বললাম, চল উঠি। 

রূপা আন্তরিক ভঙ্গিতে বলল, এখনই উঠবেন কিবসুনআরেক কাপ চা খানহৈমন্তী গল্পটা মুখস্থ বলুনপ্লীজপ্লীজবাসায় গল্পগুচ্ছ আছে, আমি বইনিয়ে মিলিয়ে দেখবযদি সত্যি সত্যি পারেন তাহলে ..

তাহলে কি ? রূপা হাসতে হাসতে বলল, তাহলে আপনার জন্য একটা প্রাইজ আছে। 

সফিক বলল, পারবে, ওর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত ভালআমার বরাবরই খারাপ ছিলএখন আরাে খারাপ হয়েছে

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *