আহমদ শরীফ এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

আহমদ শরীফ ছিলেন শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, চিন্তাবিদ, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গবেষক। আধুনিক সমাজ, জীবন, সংস্কৃতি এবং সাময়িক কালের বিভিন্ন ভাবনা নিয়ে নানা ধরনের প্রবন্ধ রচনা করলেও মূলত মধ্যযুগের সাহিত্য সম্পাদনার ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। তাঁরই বিশেষ প্রচেষ্টায় মধ্যযুগের বহু অপরিচিত কবি আমাদের পরিচয়ের বৃত্তে এসেছেন এবং অনেক উল্লেখযোগ্য কাব্য সম্পাদিত হয়ে প্রকাশ পেয়েছে।

আহমদ শরীফ এর জীবনী

সাহিত্যের তত্ত্বগত চিন্তা ও বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট রূপকারেরা যেমন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, কাজী আবদুল ওদুদ প্রমুখ তাঁর লেখায় গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি সমাজ-প্রগতির একজন পর্যবেক্ষকও ছিলেন। প্রতিদিনের বৈশ্বিক ও দৈশিক ঘটনাবলি তাঁর লেখকসত্তাকে নিয়ত আলোড়িত করত এবং তিনিও সেভাবে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেন, বিশেষ করে বাংলাদেশের চলমান জীবন সম্পর্কে। এসব নিয়ে তিনি শেষ জীবনে দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন। 

  • বিশিষ্ট এই লেখক জন্মগ্রহণ করেন – ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯২১ খ্রিষ্ট্রাব্দে।
  • বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদের পৈত্রিক নিবাস – চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার সুচক্রদন্ডী গ্রামে।
  • এই লেখকের পিতার নাম – আবদুল আজিজ এবং মাতার নাম মিরাজ খাতুন।
  • খ্যাতনামা পুথি সংগ্রাহক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন – তাঁর চাচা।
  • অন্যতম এই শিক্ষাবিদের শিক্ষাজীবন – তিনি ১৯৩৮ সালে পটিয়া আদর্শ উচ্চা বিদ্যালয় হতে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪০ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ হতে কৃতত্বের সঙ্গে স্নাতক পাশ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২য় বিভাগে ৪র্থ স্থান অধিকার করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
  • সৈয়দ সুলতান তাঁর গ্রন্থাবলী ও তাঁর যুগ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য  লাভ করেন – পিএইচডি ডিগ্রি।
  • তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন – ১৯৬৭ সালে।
  • ১৯৪৪ সালে – তিনি দুশ পঞ্চাশ টাকার বেতনে গ্রিভেন্সিভ অফিসার হিসেবে দুর্নীতি দমন বিভাগে চাকরি শুরু করেন।
  • তিনি ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাস হতে ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন – লাকসামের পশ্চিম গাঁও নওয়াব ফয়জুন্নেসা কলেজে।
  • তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগদান করেন – ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৫০ সালে।
  • ১৯৭২ সালে – তিনি প্রফেসর পদে উন্নীত হন।
  • ৩৩ বছর – তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

প্রাবন্ধিক আহমদ শরীফ এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

  • তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন – ৩০ জুন, ১৯৮৩ সালে।
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল অধ্যাপক পদে সমাসীন ছিলেন – দুবছরের (১৯৮৪-৮৬) জন্য।
  •  তিনি ছিলেন গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এর – সভাপতি।
  • তাঁর প্রথম সম্পাদিত গ্রন্থের নাম – ’লায়লী মজনু’।
  • তাঁর প্রথম সম্পাদিত গ্রন্থ ‘লায়লী মজনু’ প্রকাশিত হয় – ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে।
  • ’প্রতয় ও প্রত্যাশা’ গ্রন্থের রচয়িতা – আহমদ শরীফ।
  • ’প্রতয় ও প্রত্যাশা’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৭১ সালে।
  • ’বিচিত্র চিন্তা’ কোন জাতীয় রচনা – গবেষণা প্রবন্ধ।
  • ’বিচিত্র চিন্তা’ গবেষণা প্রবন্ধের রচয়িতা – আহমদ শরীফ
  • তাঁর রচিত ‘বিচিত্র চিন্তা’ গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয় – ১৯৮৬ সালে।
  • ’প্রত্যয় ও প্রত্যাশা’ গ্রন্থের রচয়িতা – প্রাবন্ধিক আহমদ শরীফ
  • ‘বিচিত্র চিন্তা’, ’সাহিত্য ও সংস্কৃতি চিন্তা’ এবং ‘স্বদেশ চিন্তা’ গ্রন্থের লেখক – প্রাবন্ধিক আহমদ শরীফ
  • ’বিশ শতকের বাঙালী’ কোন জাতীয় রচনা – গবেষণা প্রবন্ধ।
  • ’বিশ শতকের বাঙালী’ গবেষণা প্রবন্ধের রচয়িতা – আহমদ শরীফ।
  • ১৯৯৮ সালে – ’বিশ শতকের বাঙালী’ গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়।
  • তাঁর সংকলন গ্রন্থের সংখ্যা – চল্লিশোর্ধ্ব।

প্রাবন্ধিক আহমদ শরীফ এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

  • তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি’(১৯৬৯), ‘স্বদেশ অন্বেশা’(১৯৭০), ‘জীবনে সমাজে সাহিত্য’(১৯৭০), ‘যুগ যন্ত্রণা’(১৯৭৪), ‘বাঙালী ও বাঙলা সাহিত্য’ (১ম খন্ড ১৯৭৮ এবং ২য় খন্ড ১৯৮৩), ‘কালের দর্পণে স্বদেশ’(১৯৮৫), ’এদানীং আমরা’(১৯৮৬), ‘বাঙালীর চিন্তা-চেতনার বিবর্তন ধারা’(১৯৮৭), ‘বাঙলার বিপবী পটভূমি’(১৯৮৯), ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চালচিত্র’(১৯৯০), ‘একালে নজরুল’(১৯৯০), ‘মানবতা ও গণমুক্তি’(১৯৯০), ’বাঙালী ও বাঙালীত্ব’(১৯৯২), ‘প্রগতির বাধা ও পন্থ’(১৯৯৪), ‘এ শতকে আমাদের জীবনধারার রূপরেখা’(১৯৯৪), ‘সময় সমাজ মানুষ’(১৯৯৫), ‘স্বদেশ চিন্তা’(১৯৯৭), ‘জিজ্ঞাসা ও অন্বেষা’(১৯৯৭), এবং ‘বিশ্বাসবাদ, বিজ্ঞানবাদ, যুক্তিবাদ, মৌলবাদ(২০০০) ইত্যাদি।
  • ’একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়’ সম্পাদনা করেন – আহমদ শরীফ (১৯৮৭)।
  • তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – ‘সত্যকলি-বিপদ সংবাদ’(১৯৫৯), ‘মুহম্মদ কবীরের মধুমালতী’(১৯৬০), ‘মুসলিম কবির পদ সাহিত্য’(১৯৬১), ‘মধ্যযুগের বাংলা গীতি কবিতা’(১৯৬১), ‘মধ্যযুগের কাব্য সংগ্রহ’(১৯৬২), ‘রসুল বিজয়’(১৯৬৪), ‘শাহ বারিদ খানের গ্রন্থবলী’(১৯৬৬), ‘কোরেশি মাগন ঠাকুর চন্দ্রাবলী’(১৯৬৭), ‘দৌলত উজির বাহরাম খান বিরচিত লায়লী মজনু’(১৯৬৮), ‘আলাওল বিরচিত সিকানদার নামা’(১৯৭৭), ‘পুঁথি পরিচিত (আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ সংকলিত) সৈয়দ সুলতান বিরচিত নবীবংশ’(১৯৭৮), এবং ‘সৈয়দ সুলতানের রসুল বিজয়’(১৯৭৮) ইত্যাদি।
  • তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন – ১৯৬৮ সালে।
  • বিশিষ্ট এই লেখক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন – ১৯৯১ সালে।
  • তিনি গবেষণা, প্রবন্ধ ও চিন্তামূলক রচনার জন্য – দাউদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৯), বাংলাদেশ লেখিকা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮০), আলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯), লাভ করেন এবং কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি (১৯৯৩) লাভ করেন।
  • তিনি তাঁর মরদেহ উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন – চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য।
  • বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ মৃত্যুবরণ করেন – ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯ সালে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *